সৈয়দ জাকির হোসাইন
বায়ান্নর অমর একুশের বহুমাত্রিক উৎসৃজনে আমাদের বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতা-উত্তর সৃজনে নন্দনের অন্যতম প্রকাশ বই নিয়ে শুরু হলো একুশে বইমেলা। বর্তমানে বাংলা ভাষার লেখক ও প্রকাশককে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমির নেতৃত্বে এই জাতির এটাই সবচেয়ে বড় সাহিত্য-সাংস্কৃতিক উৎসব, যার সঙ্গে বাৎসরিক ব্যাপক সৃজনশীলতার পেশা সংশ্লিষ্ট। যেমন লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক, প্রুফরিডার, কাগজ ব্যবসায়ী, অঙ্কনশিল্পী, ই-মিডিয়ার কর্মী, মেলার মাঠের কর্মী, প্রেস, বাঁধাই, প্রেসের প্লেট গ্রাফিকস, কম্পিউটার ও কম্পিউটার বিভাগ, ডেটা, ওয়েব, সবকিছুই ব্যাপকভাবে এখন সম্পৃক্ত ও সংযুক্ত।
আশির দশকের আগে থেকেই পরপর এই বইমেলার প্রভাবে সাহিত্য ও প্রকাশনা বিশেষ পেশার মর্যাদায় চলে আসে। পাশাপাশি নানা চ্যালেঞ্জেও আসে। এখানে পেশাদার লেখক-প্রকাশকের উত্থান ঘটে, পাশাপাশি মৌসুমি জৌলুশও ঢুকে যায়, যা বর্তমানে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। বইমেলা বড় হতে হতে বাংলা একাডেমি চত্বর পেরিয়ে রাস্তা এবং সেটা পেরিয়েও এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এত বড় আয়োজন দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে অনেকটা পুরো রাষ্ট্র একাকার হলেও বাংলা একাডেমি সব সময় একই রকমের ধারাবাহিতা রাখতে পারে না।
এখন সময়ের দাবি, একুশে বইমেলা কর্তৃপক্ষ বা বাংলা একাডেমিতে অংশীজনদের তত্ত্বাবধানে আলাদা স্বয়ংসম্পূর্ণ বিভাগ করা, যার জন্য প্রয়োজন একটি বাৎসরিক বাজেট, আয়-ব্যয়ের সমন্বয় ও কার্যকরী আর্থিক শক্তিমত্তা, ব্যয় অনুযায়ী আয়েরও ব্যবস্থা ও জবাবদিহি। একটি কমিশনের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত সরকার বা শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নিতে পারে। শিক্ষা ও সংস্কৃতির বলয়ে এই কাজ জাতির ভবিষ্যৎ মননশীলতা তৈরিতে অবদান রাখবে দীর্ঘ মেয়াদে। শিক্ষাব্যবস্থার দৈন্য আমাদের প্রকাশনা সেক্টরে ব্যাপক প্রভাবের কারণে মৌলিক ও সৃষ্টিশীল বইয়ের পাঠক খুবই সীমিত। এখন বইমেলা যেন নিউ মিডিয়া সেলিব্রেটির দখলে। পাঠক বিভ্রান্ত, ঠিক কোন বইটি তারা পড়বে বা পড়তে চায়।
আমি নিজেই পেশাদার শতভাগ প্রকাশনা পেশায় চলে আসি, একুশে বইমেলার সুন্দর ও নান্দনিক গতিমুখের প্রভাবে। এখনকার তরুণেরা কি এটা ভাবতেও পারে? তবু অনেকে নতুন নতুন আসছে, তাদের জন্য নতুন বাজারও হয়তো সৃষ্টি হয়েছে। তবে মৌসুমি এক মাসের লেখক বা প্রকাশক দিয়ে প্রায় ১৮ কোটি মানুষের বইয়ের জগৎ—এমন তো হওয়ার কথা নয়! আমাদের সবারই এখন ভাবার সময়। একুশে বইমেলা জাতির জন্য কেন, কেমন হওয়া চাই—দীর্ঘ মেয়াদের একজন লেখককে যেমন ভাবতে হবে, তেমন ভাবতে হবে প্রকাশক ও বাংলা একাডেমি তথা রাষ্ট্রকেও।
এখনো এমন অনেক সুযোগ আছে, ব্যাপক শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে আরও আরও বইয়ের কাছাকাছি আনার। একুশে বইমেলার তথ্যগত ইতিহাস নিয়ে বাংলা একাডেমি থেকে ড. জালাল আহমদ একটি বই লিখেছেন। আসলে এই একুশে বইমেলা নিয়ে দশক দশক হিসেবে একটি ব্যাপক গবেষণা হওয়া দরকার, যা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে হওয়া চাই। তাহলে আমরা এই একুশে বইমেলার সার্বিক দৃষ্টিপট থেকে অনেক কিছু জানতে সক্ষম হব। যেটার সময় এখনই। বাংলা একাডেমির তথ্যমতে, মেলার বয়স এখন ৫০ পার হয়ে যাবে যাবে অবস্থা। এই অবস্থায় তো এমন বিষয় ভাবাই যায়।
‘লেখকের নাম বা ছবি, এমনকি বইয়ের আকর্ষণীয় নাম, সুন্দর প্রচ্ছদ বা প্রডাকশন দেখেও নয়; যেকোনো বইয়ের কয়েক পৃষ্ঠা পড়ে, তারপর বইটি কেনার সিদ্ধান্ত নিন। মেলার বইয়ের বেলায় এটা আরও জরুরি।’ বইয়ের মানুষ গবেষক, প্রফেসর ড. মোরশেদ শফিউল হাসান তাঁর এক ফেসবুক পোস্টে এমন পরামর্শ দিয়েছেন। কেন তিনি এই পোস্ট দিলেন? একুশে বইমেলা অনেক বড় হয়েছে, অনেক অনেক বই মুদ্রিত হয়ে আসছে বলেই বলছেন। সত্যি, পাঠক খুবই বিভ্রান্ত ও প্রতারিত হচ্ছে এই বইমেলায় বই সংগ্রহ করে! আমি বলব, সত্যিকার অর্থে পাঠক যদি মনোযোগ দিয়ে বই পড়ত, আমাদের পেশাদারিত্বের যোগ্যতা প্রকাশ পেয়ে যেত। আমরা আমাদের দায়িত্বহীনতায় লজ্জা পাওয়ার কথা।
অনেকবার বাংলা একাডেমিকে খুবই ছোট একটা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে চেয়েছি:
১. যে বই আসলে প্রকাশিতই হয়নি, এমন বইয়ের ‘ভুয়া’ মোড়ক উন্মোচন ও প্রচারের ব্যবস্থা যেন বন্ধ হয়।
২. প্রচারের জন্য জমা হওয়া বইয়ের প্রথম ফর্মা একজন প্রুফরিডার পড়ে দেখবেন। কোনো ভুল থাকলে সেই বইয়ের প্রচার মাইকে আসবে না, প্রকাশক বা লেখক তাঁর দায়িত্বে বিক্রি করুক। এমন প্রচার বইটি প্রকাশনার একধরনের স্বীকৃতি, এটা কর্তৃপক্ষের বোঝা উচিত।
৩. যে বই প্রচার করা হবে, তার নিয়মিত তালিকা অনলাইনে, বইমেলার ওয়েবসাইটে থাকবে এবং বইগুলো বাংলা একাডেমির বিশেষ পাঠাগারে স্থান পাবে।
৪. বইমেলায় কয়েকটি ‘ওপেন’ বা ‘ইনডোর বুথ’ থাকা দরকার, যেখানে ৫০-৬০ জন অন্তত বসার জায়গা পাবেন, মাইক্রোফোন থাকবে। এক ঘণ্টা করে জায়গাগুলো ভাড়া দেওয়া হবে। লেখক বা প্রকাশক বা অনুবাদক বা কবি এই জায়গাগুলো ভাড়া নিয়ে, বই নিয়ে চর্চা বা আলোচনার ব্যবস্থা করতে পারেন।
৫. বইমেলায় এক-দুইটা স্টুডিও থাকতে পারে, যা ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করে নিউ মিডিয়ায় বইয়ের প্রচারে কাজে লাগাতে পারেন। এসব কার্যক্রম অবশই মনিটর করবে বাংলা একাডেমির বিশেষ দল।
একুশে বইমেলায় একটা অন্তরাল বিশেষ গবেষক দল থাকা দরকার, যাঁরা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বই প্রকাশের স্টাইল, ব্যবসার স্টাইল, লেখক নিয়ে কার্যক্রম, বই নিয়ে কার্যক্রম, প্রকাশকের পেশাদারিত্ব, প্রকাশক-লেখকের সৃজনশীলতা ও মননশীলতা পর্যবেক্ষণ করবেন। এখান থেকে সম্ভাবনাময় লেখক, প্রকাশক, অনুবাদক খুঁজে বের করে বাংলা একাডেমির কিছু কিছু কাজের সঙ্গে যুক্ত করে তাঁদের দক্ষতা ও সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। আরেকটি বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া যায়—লেখক-প্রকাশক কপিরাইট মেনে চলছেন কি না, তা দেখা।
একুশে বইমেলা যেহেতু মাসব্যাপী হয়, লেখক-প্রকাশক বিশাল সময় পান। এই সময়টাকে নানাভাবে কাজে লাগাতে চেষ্টা করার সুযোগ থাকা দরকার। বিশেষ করে প্রকাশনা জগতে নতুন পেশাদার জনশক্তি তৈরিতে অবদান। এখনো কোনো কোনো প্রকাশক তা করে থাকেন, তবে সমন্বয়ের মাধ্যমে করলে, বইমেলার সময় বইকর্মীদের যৌথ ওরিয়েন্টেশনের উদ্যোগ নিলে, বইমেলার অনেক অসংগতি, অজ্ঞতা কমে যাবে। সবাই যে বইমেলার অংশ তা জানার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যেও পেশাদারি প্রতিযোগিতা বাড়াতে সহায়ক হবে।
এ বছর থেকে মেট্রোরেল বইমেলায় একটা প্রভাব ফেলেছে। সেটা আরও বাড়াতে বইমেলা চলাকালীন শুক্রবার বা বন্ধের দিনও মেট্রোরেল চালু রাখার ব্যবস্থা করা যায়।সৃজনশীল ও মননশীল গ্রন্থ প্রকাশনা একটি বিশেষায়িত কাজ বা সাধনা। গত তিন দশকের বই প্রকাশনার পথচলায় যাঁরা না হলে আমাদের অন্তরশক্তির শ্রীবৃদ্ধির পথ তৈরিই করা যেত না, তাঁদের স্মরণ করছি...অধ্যাপক আবু রুশদ, বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক শামসুজ্জমান খান, কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী, অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, অধ্যাপক ড. আবদুল করিম, অধ্যাপক আফিয়া দিল, অধ্যাপক আনোয়ার দিল, অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, শিল্পী মুর্তজা বশীর, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, কবি সম্পাদক আবদুল মান্নান সৈয়দ, সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, শিল্পী সৈয়দ লুৎফুল হক, সৈয়দ নুরুল হুদা, অধ্যাপক শামসুল আলম সাঈদ, অধ্যাপক খালেদা হানুম, অনুবাদক জাফর আলম, বিচারপতি গোলাম রাব্বানী, ড. মাহফুজুর রহমান, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, প্রফেসর সালাহ্উদ্দীন আহমদ, নৃত্যশিল্পী আফরোজা বুলবুল, নুরুল করিম নাসিম, সাংবাদিক হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী, রাশেদ হোসেন, মোহাম্মদ মোকসেদ, লুৎফুর রহমান সরকার, আ জ ম তকীয়ূল্লাহ, সাংবাদিক আমির হোসেন, সাদেকা শফিউল্লাহ, অধ্যাপক এ বি এম হোসেন, নূর মোহাম্মদ, মুহম্মদ জাহাঙ্গীর, মোমিনুল হক, জাকারিয়া সিরাজী, খালেদ বেলাল, নূর মোহাম্মদ রফিক, ড. আবদুন নূর, আবদুল হাফিজ, কবি সাযযাদ কাদির, ফয়েজ আহমদ, রফিকুল হক দাদুভাই, আমজাদ হোসেন, আলম তালুকদার, কবি দিলওয়ার, আবদুস শাকুর, অধ্যাপক ভুঁইয়া ইকবাল, ড. ফজলুল আলম, আমানুল্লাহ কবীর, শহীদুল হক খান, পার্থ প্রতিম চৌধুরী, মে. জে. মঈনুল হোসেন চৌধুরী, মাহবুব তালুকদার প্রমুখ। গত তিন দশকে তাঁরা আমাদের সঙ্গে ছিলেন, এখনো কাজের অবদানে আছেন।
একুশে বইমেলা আমাদের যা দিয়েছে তা-ই এখন ‘বর্ণে বর্ণে সভ্যতা, বর্ণে বর্ণে ভালোবাসা’।
লেখক: প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন
বায়ান্নর অমর একুশের বহুমাত্রিক উৎসৃজনে আমাদের বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতা-উত্তর সৃজনে নন্দনের অন্যতম প্রকাশ বই নিয়ে শুরু হলো একুশে বইমেলা। বর্তমানে বাংলা ভাষার লেখক ও প্রকাশককে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমির নেতৃত্বে এই জাতির এটাই সবচেয়ে বড় সাহিত্য-সাংস্কৃতিক উৎসব, যার সঙ্গে বাৎসরিক ব্যাপক সৃজনশীলতার পেশা সংশ্লিষ্ট। যেমন লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক, প্রুফরিডার, কাগজ ব্যবসায়ী, অঙ্কনশিল্পী, ই-মিডিয়ার কর্মী, মেলার মাঠের কর্মী, প্রেস, বাঁধাই, প্রেসের প্লেট গ্রাফিকস, কম্পিউটার ও কম্পিউটার বিভাগ, ডেটা, ওয়েব, সবকিছুই ব্যাপকভাবে এখন সম্পৃক্ত ও সংযুক্ত।
আশির দশকের আগে থেকেই পরপর এই বইমেলার প্রভাবে সাহিত্য ও প্রকাশনা বিশেষ পেশার মর্যাদায় চলে আসে। পাশাপাশি নানা চ্যালেঞ্জেও আসে। এখানে পেশাদার লেখক-প্রকাশকের উত্থান ঘটে, পাশাপাশি মৌসুমি জৌলুশও ঢুকে যায়, যা বর্তমানে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। বইমেলা বড় হতে হতে বাংলা একাডেমি চত্বর পেরিয়ে রাস্তা এবং সেটা পেরিয়েও এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এত বড় আয়োজন দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে অনেকটা পুরো রাষ্ট্র একাকার হলেও বাংলা একাডেমি সব সময় একই রকমের ধারাবাহিতা রাখতে পারে না।
এখন সময়ের দাবি, একুশে বইমেলা কর্তৃপক্ষ বা বাংলা একাডেমিতে অংশীজনদের তত্ত্বাবধানে আলাদা স্বয়ংসম্পূর্ণ বিভাগ করা, যার জন্য প্রয়োজন একটি বাৎসরিক বাজেট, আয়-ব্যয়ের সমন্বয় ও কার্যকরী আর্থিক শক্তিমত্তা, ব্যয় অনুযায়ী আয়েরও ব্যবস্থা ও জবাবদিহি। একটি কমিশনের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত সরকার বা শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নিতে পারে। শিক্ষা ও সংস্কৃতির বলয়ে এই কাজ জাতির ভবিষ্যৎ মননশীলতা তৈরিতে অবদান রাখবে দীর্ঘ মেয়াদে। শিক্ষাব্যবস্থার দৈন্য আমাদের প্রকাশনা সেক্টরে ব্যাপক প্রভাবের কারণে মৌলিক ও সৃষ্টিশীল বইয়ের পাঠক খুবই সীমিত। এখন বইমেলা যেন নিউ মিডিয়া সেলিব্রেটির দখলে। পাঠক বিভ্রান্ত, ঠিক কোন বইটি তারা পড়বে বা পড়তে চায়।
আমি নিজেই পেশাদার শতভাগ প্রকাশনা পেশায় চলে আসি, একুশে বইমেলার সুন্দর ও নান্দনিক গতিমুখের প্রভাবে। এখনকার তরুণেরা কি এটা ভাবতেও পারে? তবু অনেকে নতুন নতুন আসছে, তাদের জন্য নতুন বাজারও হয়তো সৃষ্টি হয়েছে। তবে মৌসুমি এক মাসের লেখক বা প্রকাশক দিয়ে প্রায় ১৮ কোটি মানুষের বইয়ের জগৎ—এমন তো হওয়ার কথা নয়! আমাদের সবারই এখন ভাবার সময়। একুশে বইমেলা জাতির জন্য কেন, কেমন হওয়া চাই—দীর্ঘ মেয়াদের একজন লেখককে যেমন ভাবতে হবে, তেমন ভাবতে হবে প্রকাশক ও বাংলা একাডেমি তথা রাষ্ট্রকেও।
এখনো এমন অনেক সুযোগ আছে, ব্যাপক শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে আরও আরও বইয়ের কাছাকাছি আনার। একুশে বইমেলার তথ্যগত ইতিহাস নিয়ে বাংলা একাডেমি থেকে ড. জালাল আহমদ একটি বই লিখেছেন। আসলে এই একুশে বইমেলা নিয়ে দশক দশক হিসেবে একটি ব্যাপক গবেষণা হওয়া দরকার, যা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে হওয়া চাই। তাহলে আমরা এই একুশে বইমেলার সার্বিক দৃষ্টিপট থেকে অনেক কিছু জানতে সক্ষম হব। যেটার সময় এখনই। বাংলা একাডেমির তথ্যমতে, মেলার বয়স এখন ৫০ পার হয়ে যাবে যাবে অবস্থা। এই অবস্থায় তো এমন বিষয় ভাবাই যায়।
‘লেখকের নাম বা ছবি, এমনকি বইয়ের আকর্ষণীয় নাম, সুন্দর প্রচ্ছদ বা প্রডাকশন দেখেও নয়; যেকোনো বইয়ের কয়েক পৃষ্ঠা পড়ে, তারপর বইটি কেনার সিদ্ধান্ত নিন। মেলার বইয়ের বেলায় এটা আরও জরুরি।’ বইয়ের মানুষ গবেষক, প্রফেসর ড. মোরশেদ শফিউল হাসান তাঁর এক ফেসবুক পোস্টে এমন পরামর্শ দিয়েছেন। কেন তিনি এই পোস্ট দিলেন? একুশে বইমেলা অনেক বড় হয়েছে, অনেক অনেক বই মুদ্রিত হয়ে আসছে বলেই বলছেন। সত্যি, পাঠক খুবই বিভ্রান্ত ও প্রতারিত হচ্ছে এই বইমেলায় বই সংগ্রহ করে! আমি বলব, সত্যিকার অর্থে পাঠক যদি মনোযোগ দিয়ে বই পড়ত, আমাদের পেশাদারিত্বের যোগ্যতা প্রকাশ পেয়ে যেত। আমরা আমাদের দায়িত্বহীনতায় লজ্জা পাওয়ার কথা।
অনেকবার বাংলা একাডেমিকে খুবই ছোট একটা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে চেয়েছি:
১. যে বই আসলে প্রকাশিতই হয়নি, এমন বইয়ের ‘ভুয়া’ মোড়ক উন্মোচন ও প্রচারের ব্যবস্থা যেন বন্ধ হয়।
২. প্রচারের জন্য জমা হওয়া বইয়ের প্রথম ফর্মা একজন প্রুফরিডার পড়ে দেখবেন। কোনো ভুল থাকলে সেই বইয়ের প্রচার মাইকে আসবে না, প্রকাশক বা লেখক তাঁর দায়িত্বে বিক্রি করুক। এমন প্রচার বইটি প্রকাশনার একধরনের স্বীকৃতি, এটা কর্তৃপক্ষের বোঝা উচিত।
৩. যে বই প্রচার করা হবে, তার নিয়মিত তালিকা অনলাইনে, বইমেলার ওয়েবসাইটে থাকবে এবং বইগুলো বাংলা একাডেমির বিশেষ পাঠাগারে স্থান পাবে।
৪. বইমেলায় কয়েকটি ‘ওপেন’ বা ‘ইনডোর বুথ’ থাকা দরকার, যেখানে ৫০-৬০ জন অন্তত বসার জায়গা পাবেন, মাইক্রোফোন থাকবে। এক ঘণ্টা করে জায়গাগুলো ভাড়া দেওয়া হবে। লেখক বা প্রকাশক বা অনুবাদক বা কবি এই জায়গাগুলো ভাড়া নিয়ে, বই নিয়ে চর্চা বা আলোচনার ব্যবস্থা করতে পারেন।
৫. বইমেলায় এক-দুইটা স্টুডিও থাকতে পারে, যা ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করে নিউ মিডিয়ায় বইয়ের প্রচারে কাজে লাগাতে পারেন। এসব কার্যক্রম অবশই মনিটর করবে বাংলা একাডেমির বিশেষ দল।
একুশে বইমেলায় একটা অন্তরাল বিশেষ গবেষক দল থাকা দরকার, যাঁরা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বই প্রকাশের স্টাইল, ব্যবসার স্টাইল, লেখক নিয়ে কার্যক্রম, বই নিয়ে কার্যক্রম, প্রকাশকের পেশাদারিত্ব, প্রকাশক-লেখকের সৃজনশীলতা ও মননশীলতা পর্যবেক্ষণ করবেন। এখান থেকে সম্ভাবনাময় লেখক, প্রকাশক, অনুবাদক খুঁজে বের করে বাংলা একাডেমির কিছু কিছু কাজের সঙ্গে যুক্ত করে তাঁদের দক্ষতা ও সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। আরেকটি বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া যায়—লেখক-প্রকাশক কপিরাইট মেনে চলছেন কি না, তা দেখা।
একুশে বইমেলা যেহেতু মাসব্যাপী হয়, লেখক-প্রকাশক বিশাল সময় পান। এই সময়টাকে নানাভাবে কাজে লাগাতে চেষ্টা করার সুযোগ থাকা দরকার। বিশেষ করে প্রকাশনা জগতে নতুন পেশাদার জনশক্তি তৈরিতে অবদান। এখনো কোনো কোনো প্রকাশক তা করে থাকেন, তবে সমন্বয়ের মাধ্যমে করলে, বইমেলার সময় বইকর্মীদের যৌথ ওরিয়েন্টেশনের উদ্যোগ নিলে, বইমেলার অনেক অসংগতি, অজ্ঞতা কমে যাবে। সবাই যে বইমেলার অংশ তা জানার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যেও পেশাদারি প্রতিযোগিতা বাড়াতে সহায়ক হবে।
এ বছর থেকে মেট্রোরেল বইমেলায় একটা প্রভাব ফেলেছে। সেটা আরও বাড়াতে বইমেলা চলাকালীন শুক্রবার বা বন্ধের দিনও মেট্রোরেল চালু রাখার ব্যবস্থা করা যায়।সৃজনশীল ও মননশীল গ্রন্থ প্রকাশনা একটি বিশেষায়িত কাজ বা সাধনা। গত তিন দশকের বই প্রকাশনার পথচলায় যাঁরা না হলে আমাদের অন্তরশক্তির শ্রীবৃদ্ধির পথ তৈরিই করা যেত না, তাঁদের স্মরণ করছি...অধ্যাপক আবু রুশদ, বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক শামসুজ্জমান খান, কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী, অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, অধ্যাপক ড. আবদুল করিম, অধ্যাপক আফিয়া দিল, অধ্যাপক আনোয়ার দিল, অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, শিল্পী মুর্তজা বশীর, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, কবি সম্পাদক আবদুল মান্নান সৈয়দ, সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, শিল্পী সৈয়দ লুৎফুল হক, সৈয়দ নুরুল হুদা, অধ্যাপক শামসুল আলম সাঈদ, অধ্যাপক খালেদা হানুম, অনুবাদক জাফর আলম, বিচারপতি গোলাম রাব্বানী, ড. মাহফুজুর রহমান, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, প্রফেসর সালাহ্উদ্দীন আহমদ, নৃত্যশিল্পী আফরোজা বুলবুল, নুরুল করিম নাসিম, সাংবাদিক হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী, রাশেদ হোসেন, মোহাম্মদ মোকসেদ, লুৎফুর রহমান সরকার, আ জ ম তকীয়ূল্লাহ, সাংবাদিক আমির হোসেন, সাদেকা শফিউল্লাহ, অধ্যাপক এ বি এম হোসেন, নূর মোহাম্মদ, মুহম্মদ জাহাঙ্গীর, মোমিনুল হক, জাকারিয়া সিরাজী, খালেদ বেলাল, নূর মোহাম্মদ রফিক, ড. আবদুন নূর, আবদুল হাফিজ, কবি সাযযাদ কাদির, ফয়েজ আহমদ, রফিকুল হক দাদুভাই, আমজাদ হোসেন, আলম তালুকদার, কবি দিলওয়ার, আবদুস শাকুর, অধ্যাপক ভুঁইয়া ইকবাল, ড. ফজলুল আলম, আমানুল্লাহ কবীর, শহীদুল হক খান, পার্থ প্রতিম চৌধুরী, মে. জে. মঈনুল হোসেন চৌধুরী, মাহবুব তালুকদার প্রমুখ। গত তিন দশকে তাঁরা আমাদের সঙ্গে ছিলেন, এখনো কাজের অবদানে আছেন।
একুশে বইমেলা আমাদের যা দিয়েছে তা-ই এখন ‘বর্ণে বর্ণে সভ্যতা, বর্ণে বর্ণে ভালোবাসা’।
লেখক: প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
১ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৮ দিন আগে