দেড় বছরের কাজ ঝুলছে তিন বছরেও

ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ২২
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ১৩

চট্টগ্রামের গহিরা-ফটিকছড়ি সড়কের উন্নয়নকাজ তিন বছরেও শেষ হয়নি। ভাঙা সড়কে ধুলাবালুর কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে দুই উপজেলার অন্তত ৫ লাখ মানুষ। । এই অবস্থা থেকে দ্রুত নিস্তার চান স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা এই কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন।

চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরা থেকে ফটিকছড়ি সদর পর্যন্ত সড়কটি ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। সড়কটি পার্বত্য রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি-ঢাকা সড়কের বিকল্প হিসেবে দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া এখান দিয়ে যাওয়া যায় মাইজভান্ডার শরিফেও। বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই সড়কটি ১২ ফুট থেকে ১৮ ফুটে উন্নীত করতে ১০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। এতে ৩৮টি ব্রিজ, কালভার্ট, ইউ ড্রেন, গাইড ওয়াল ও হাটবাজার এলাকায় সিসি ঢালাইসহ সড়ক করার কথা। এই কাজ পায় মেসার্স আল আমিন অ্যান্ড এম এইচ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা ১৮ মাসের কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করে। পরে সময় বাড়িয়েও তিন বছরে এর সিংহভাগ কাজ শেষ করতে পারেনি তারা। ১৫টি কালভার্টের কাজ অর্ধেক হয়ে পড়ে আছে। ৬ ফুট সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য অনেক স্থানে মেকাডম হয়নি। আগের কার্পেটিং নষ্ট হওয়ায় সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ব্রিজ-কালভার্টের লোহা পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে। ব্রিজের সিসি ঢালাইয়ে নিম্নমানের ইট ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অবহেলার অভিযোগ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বখতপুর এলাকার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম আকাশ। তিনি বলেন, উপজেলার ছারা বটতলের পশ্চিম পাশে কালভার্ট তৈরির জন্য নিম্নমানের ভাঙা ইট ব্যবহার হচ্ছে। সওজের নীরবতায় ঠিকাদার এমন অনিয়ম করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি

লেলাং এলাকার বাসিন্দা মো. কামরুল মোস্তফা বলেন, দেড় বছরের কাজ তিন বছরেও শেষ হয়নি। এখনো ব্রিজ-কালভার্টগুলো তৈরি করতে পারেনি। এই প্রতিষ্ঠানের কাজের মান খুবই খারাপ।

ফটিকছড়ি পৌরসভার মেয়র মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই সড়কে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তিন বছরেও পৌর এলাকার ব্রিজ, কালভার্ট ও সড়কের উন্নয়ন শেষ করতে পারেনি। বৃষ্টিতে ভিজে, পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে লোহা। এই লোহায় তৈরি ব্রিজ-কালভার্ট কতটুকু টেকসই হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিনুল হাসান বলেন, সওজকে সড়কের কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে। তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দিচ্ছে।

প্রকল্পের প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবিরের দাবি অবশ্য ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘কাজের গুণগত মান ভালো। তবে কিছু স্থানে কাজ যে ধীরগতিতে হচ্ছে, তা অস্বীকার করব না।’ আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পের সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে পুরোদমে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

সওজ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, ‘গহিরা-ফটিকছড়ি সড়কের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনেক অনিয়মের সংবাদ পেয়েছি। তাদের দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য বারবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। বর্ধিত সময়ে কাজ শেষ না করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত