আজকের পত্রিকা: ইউপিএল তো এ দেশের প্রথম সারির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। আপনারা কীভাবে এ অবস্থায় পৌঁছালেন?
মাহ্রুখ মহিউদ্দিন: এই কৃতিত্ব প্রায় এককভাবে প্রাপ্য ইউপিএলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদের। লাহোরের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসে যুক্ত হন। স্বাধীনতার পর দেশে এসে কিছুদিন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের বাংলাদেশ শাখার দায়িত্ব নেন। এরপর এই শাখার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি দি ইউনিভার্সিটি প্রেস (ইউপিএল) প্রতিষ্ঠা করেন। অক্সফোর্ডে যে পেশাদারির প্রশিক্ষণ তাঁর হয়েছিল, সেটাই অব্যাহত রেখেছেন ইউপিএলে।কয়েকজন যোগ্য সহযোগী তিনি বেছে নিতে পেরেছিলেন। তাঁর পরিশ্রম, জ্ঞান ও সততার গুণে ইউপিএলকে তিনি একটা জায়গায় পৌঁছে দিতে পেরেছেন। আমরা সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করার চেষ্টা করেছি।
প্রধানত ইউপিএল একাডেমিক ও গবেষণামূলক বই প্রকাশ করে। বাংলাদেশে অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এমন বিশেষায়িত কাজে যুক্ত আছে। প্রয়াত মহিউদ্দিন আহমেদের তৈরি করা এই ধারাটা ধরে রাখা এবং এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাংলা ভাষায় আরও বেশি করে জ্ঞানবিজ্ঞানের বই প্রকাশ করার উদ্যোগ আরেকটু বৃদ্ধি করা—এটুকুই আমাদের কৃতিত্ব।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশে এত দিনেও প্রকাশনাশিল্পে পেশাদারি সৃষ্টি হলো না। কারণ কী?
মাহ্রুখ মহিউদ্দিন: এই প্রশ্নের দুটো উত্তর হতে পারে। এক. ইউপিএল সাধ্যমতো চেষ্টা করে প্রকাশনার সব মানদণ্ড বজায় রাখার। এই মানদণ্ডগুলো হলো—বিষয়বস্তু বাছাই, যথাযথ সম্পাদনা, লেখকের সঙ্গে পেশাদারি সম্পর্ক বজায় রাখা এবং কোনো রকম মেধাস্বত্ব আইন ভঙ্গ না করা। ফলে একদিক দিয়ে বলা যায়, পেশাদারি সৃষ্টি হয়নি, এ কথাটি ভুল।
দ্বিতীয় বিবেচনায়, বাংলাদেশে প্রকাশনার বাজার এত ছোট যে খুব বেশি প্রকাশকের পক্ষে পেশাদারি বজায় রাখা সম্ভব নয়। এমনকি ইউপিএলও এত ছোট বাজারে হিমশিম খায়। পেশাদারি প্রকাশনার মানদণ্ড হিসেবে যা যা বলেছি এর আগে, সবগুলোই অত্যন্ত ব্যয়বহুল।সাধারণ পাঠকের অর্থে বা ছোট বাজারে এগুলোর চর্চা কঠিন। ফলে প্রায়ই প্রকাশককে এর কোনো কোনো শর্ত ভাঙতে হয় টিকে থাকার জন্যই। এটার অবসানের ক্ষমতা প্রকাশকের হাতে নেই; বরং নীতিনির্ধারকেরা বইয়ের বাজার বৃদ্ধি করতে, বই কেনার দুর্নীতি বন্ধ করতে এবং অজস্র পাঠাগার তৈরি করে ভালো বইয়ের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে যেন বাধ্য হন, সেই বিষয়ে গণমাধ্যম আরও অনেক বেশি কার্যকর উদ্যোগ, অনুসন্ধান ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে। এর সুফল খানিকটা প্রকাশনাশিল্প ভোগ করবে, পুরো জাতি বেশি উপকৃত হবে।
আজকের পত্রিকা: এ দেশে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে মান নয়, অর্থই প্রাধান্য পাচ্ছে। এর কারণ এবং সমাধানের উপায় কী?
মাহ্রুখ মহিউদ্দিন: সারা পৃথিবীতেই বই প্রকাশের ক্ষেত্রে অর্থ প্রাধান্য পায়। মানের বিবেচনাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ; বরং সবার নিজস্ব চিন্তা প্রকাশের স্বাধীনতাটাই বেশি জরুরি। মানের আলাপে এই প্রসঙ্গটা হারিয়ে যায় প্রায়ই। একাডেমিক বইয়ের মতোই মানুষের বিনোদনের চাহিদা আছে বা নানান রকমের চিন্তা প্রকাশের আকুতি আছে। এগুলো সব দেশেই হয় এবং মনে হয় না কোথাও এই তথাকথিত মানহীন বই নিয়ে এত প্রশ্ন আমরা দেখি; বরং বিপদটা অন্যখানে। মানহীন বইয়ের শোরগোল আমরা যথেষ্ট করি, কিন্তু যাঁরা মানসম্মত বই প্রকাশ করেন, তাঁদের বইয়ের প্রচার কতটুকু আমরা দেখতে পাই?
একাডেমিক প্রকাশক হিসেবে টিকে থাকতে গেলে মানের একটা নিজস্ব বিবেচনা রাখতেই হয়। প্রায় ৫০ বছরে আমরা হাজারের ওপর একাডেমিক বই প্রকাশ করেছি। এর অধিকাংশ বইয়ের একাধিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনো বই দশকের পর দশক পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। ফলে আমাদের বইয়ের বিষয়ে আমরা বলতে পারি, এগুলোর একটা বড় অংশ সময়ের পরীক্ষায় অন্তত মধ্য মেয়াদে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু গণমাধ্যম যে সারা বছর আমাদের বইয়ের সংবাদ প্রচার করে বা অন্যদেরও মানসম্মত বইয়ের খুব প্রচার করে, সেটা বলা কঠিন। জনপ্রিয় বইয়ের প্রচার এবং কথিত মানহীন বইয়ের শোরগোল—এটাই বরং বেশি চোখে ভাসে।মানহীন বই নিয়ে তাই মন্তব্য করাটা খুব প্রয়োজন দেখি না; বরং মানসম্মত একাডেমিক বই নিয়ে আলাপ জরুরি, সেটা সবাইকে মনে করিয়ে দিই। আর এটা করতে হলে দ্বিতীয় প্রশ্নে যা যা কর্তব্য বলেছি, সেটাই একমাত্র করণীয়।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশে বইমেলায় নজরদারি, বই বাজেয়াপ্ত করা, পুলিশি হস্তক্ষেপ—এসব কতটা যৌক্তিক?
মাহ্রুখ মহিউদ্দিন: অযৌক্তিক তৎপরতা। এর প্রতিবাদ আমরা করেছি। কিন্তু প্রকাশক হিসেবে আমাদের প্রধান কর্তব্য ভালো বই প্রকাশ করা। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা ও প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সমাজের সব অংশের।
আজকের পত্রিকা: বাংলা একাডেমি বই সেন্সর করতে পারে, কিন্তু পুলিশ কি এটা করার এখতিয়ার রাখে?
মাহ্রুখ মহিউদ্দিন: দুঃখিত, বাংলা একাডেমিও বই সেন্সর করতে পারে না। এমন কোনো আইনি এখতিয়ার বাংলা একাডেমির থাকার কারণ নেই। এটা আছে আদালতের। তাঁদের আদেশ অনুযায়ী, আইনসংগতভাবে কোনো বইকে সেন্সর করতে পারার কথা। নৈতিকভাবে সেন্সর কত দূর গ্রহণযোগ্য, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।
আজকের পত্রিকা: বইমেলা বাংলা একাডেমির করা উচিত, নাকি প্রকাশক সমিতির?
মাহ্রুখ মহিউদ্দিন: বইমেলা নানান উদ্যোগে হতে পারে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও আরও বেশি করে বইমেলার উদ্যোগ নিতে পারে। আমরা এমন যেসব মেলায় অংশগ্রহণ করেছি, ভালো সাড়া মিলেছে। স্থানীয় সরকার পর্যায়েও মেলা হতে পারে, হয় এবং আরও হওয়া উচিত। পাড়ার সংস্থাগুলো যদি মিরপুর, পুরান ঢাকা বা গুলশানে মেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেয়, সেটাও খুব ভালো বিষয় হবে। সারা বছর এমন উদ্যোগ থাকলে একুশে বইমেলার ওপর নির্ভরতা কমবে প্রকাশকদের। ফলে কারা আয়োজন করছে, সেই ফিসফিসানিও গৌণ হয়ে যাবে; বরং সারা বছর মেলাগুলো যে কার্যকরভাবে আয়োজন করা হয় না ততটা বেশি করে, সেটাই দুঃখের বিষয়।
প্রকাশক সমিতি যদি সব প্রকাশকের স্বার্থ রক্ষা করে মেলা করতে পারে, সেটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হবে। সেটা ভিন্ন কোনো মেলা হওয়াই বেশি কাম্য হবে। একুশে মেলা একটা ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী মেলায় পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে ভাষা আন্দোলন, একুশে ফেব্রুয়ারি এবং বাংলা একাডেমির নামও যুক্ত হয়ে গেছে। ফলে এই ধারা অক্ষুণ্ন থাকলে তেমন ক্ষতি হওয়ার কারণ নেই। একাডেমির মূলত গবেষণাপ্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা, এটা সত্যি। কিন্তু গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের এই জ্ঞানদায়ী ভূমিকার কারণে এ ধরনের মেলার আয়োজন করতেই পারে; বিশেষ করে তা ঐতিহ্যে পরিণত হলে এবং ক্ষতিকর না হলে এতে কোনো সমস্যা নেই। লোকবলের সংকট? জনবল নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।
বাংলা একাডেমির আয়োজনের কারণে একুশে বইমেলার কোনো সমস্যা বা সীমাবদ্ধতা যদি দেখা যায়, সেটা আসলে একাডেমির কারণে নয়। এটা সমাজ ও রাষ্ট্রের সার্বিক পরিস্থিতিরই প্রতিফলন। বহুমুখী এই চাপের মাঝে থেকে যেকোনো কর্তৃপক্ষ, সংস্থা বা সমিতি এটা করুক না কেন, একই ফল হওয়ার কথা; বরং এই চাপ বৃদ্ধিও পেতে পারে।
একটা বিষয়ে আমরা বরাবর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই—বই এবং ভাষা নিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসকেন্দ্রিক আবেগপ্রবণ আলাপের চেয়ে অনেক বেশি ভালো হবে বছরজুড়েই এ প্রসঙ্গগুলো সজীব রাখা। বই আমরা শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে পড়ি না, বাংলাতেও আমরা শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই কথা বলি না। ফলে এগুলোকে শক্তিশালী করতে হলে সারা বছরই পুষ্টি জোগানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: ইউপিএল তো এ দেশের প্রথম সারির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। আপনারা কীভাবে এ অবস্থায় পৌঁছালেন?
মাহ্রুখ মহিউদ্দিন: এই কৃতিত্ব প্রায় এককভাবে প্রাপ্য ইউপিএলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদের। লাহোরের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসে যুক্ত হন। স্বাধীনতার পর দেশে এসে কিছুদিন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের বাংলাদেশ শাখার দায়িত্ব নেন। এরপর এই শাখার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি দি ইউনিভার্সিটি প্রেস (ইউপিএল) প্রতিষ্ঠা করেন। অক্সফোর্ডে যে পেশাদারির প্রশিক্ষণ তাঁর হয়েছিল, সেটাই অব্যাহত রেখেছেন ইউপিএলে।কয়েকজন যোগ্য সহযোগী তিনি বেছে নিতে পেরেছিলেন। তাঁর পরিশ্রম, জ্ঞান ও সততার গুণে ইউপিএলকে তিনি একটা জায়গায় পৌঁছে দিতে পেরেছেন। আমরা সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করার চেষ্টা করেছি।
প্রধানত ইউপিএল একাডেমিক ও গবেষণামূলক বই প্রকাশ করে। বাংলাদেশে অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এমন বিশেষায়িত কাজে যুক্ত আছে। প্রয়াত মহিউদ্দিন আহমেদের তৈরি করা এই ধারাটা ধরে রাখা এবং এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাংলা ভাষায় আরও বেশি করে জ্ঞানবিজ্ঞানের বই প্রকাশ করার উদ্যোগ আরেকটু বৃদ্ধি করা—এটুকুই আমাদের কৃতিত্ব।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশে এত দিনেও প্রকাশনাশিল্পে পেশাদারি সৃষ্টি হলো না। কারণ কী?
মাহ্রুখ মহিউদ্দিন: এই প্রশ্নের দুটো উত্তর হতে পারে। এক. ইউপিএল সাধ্যমতো চেষ্টা করে প্রকাশনার সব মানদণ্ড বজায় রাখার। এই মানদণ্ডগুলো হলো—বিষয়বস্তু বাছাই, যথাযথ সম্পাদনা, লেখকের সঙ্গে পেশাদারি সম্পর্ক বজায় রাখা এবং কোনো রকম মেধাস্বত্ব আইন ভঙ্গ না করা। ফলে একদিক দিয়ে বলা যায়, পেশাদারি সৃষ্টি হয়নি, এ কথাটি ভুল।
দ্বিতীয় বিবেচনায়, বাংলাদেশে প্রকাশনার বাজার এত ছোট যে খুব বেশি প্রকাশকের পক্ষে পেশাদারি বজায় রাখা সম্ভব নয়। এমনকি ইউপিএলও এত ছোট বাজারে হিমশিম খায়। পেশাদারি প্রকাশনার মানদণ্ড হিসেবে যা যা বলেছি এর আগে, সবগুলোই অত্যন্ত ব্যয়বহুল।সাধারণ পাঠকের অর্থে বা ছোট বাজারে এগুলোর চর্চা কঠিন। ফলে প্রায়ই প্রকাশককে এর কোনো কোনো শর্ত ভাঙতে হয় টিকে থাকার জন্যই। এটার অবসানের ক্ষমতা প্রকাশকের হাতে নেই; বরং নীতিনির্ধারকেরা বইয়ের বাজার বৃদ্ধি করতে, বই কেনার দুর্নীতি বন্ধ করতে এবং অজস্র পাঠাগার তৈরি করে ভালো বইয়ের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে যেন বাধ্য হন, সেই বিষয়ে গণমাধ্যম আরও অনেক বেশি কার্যকর উদ্যোগ, অনুসন্ধান ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে। এর সুফল খানিকটা প্রকাশনাশিল্প ভোগ করবে, পুরো জাতি বেশি উপকৃত হবে।
আজকের পত্রিকা: এ দেশে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে মান নয়, অর্থই প্রাধান্য পাচ্ছে। এর কারণ এবং সমাধানের উপায় কী?
মাহ্রুখ মহিউদ্দিন: সারা পৃথিবীতেই বই প্রকাশের ক্ষেত্রে অর্থ প্রাধান্য পায়। মানের বিবেচনাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ; বরং সবার নিজস্ব চিন্তা প্রকাশের স্বাধীনতাটাই বেশি জরুরি। মানের আলাপে এই প্রসঙ্গটা হারিয়ে যায় প্রায়ই। একাডেমিক বইয়ের মতোই মানুষের বিনোদনের চাহিদা আছে বা নানান রকমের চিন্তা প্রকাশের আকুতি আছে। এগুলো সব দেশেই হয় এবং মনে হয় না কোথাও এই তথাকথিত মানহীন বই নিয়ে এত প্রশ্ন আমরা দেখি; বরং বিপদটা অন্যখানে। মানহীন বইয়ের শোরগোল আমরা যথেষ্ট করি, কিন্তু যাঁরা মানসম্মত বই প্রকাশ করেন, তাঁদের বইয়ের প্রচার কতটুকু আমরা দেখতে পাই?
একাডেমিক প্রকাশক হিসেবে টিকে থাকতে গেলে মানের একটা নিজস্ব বিবেচনা রাখতেই হয়। প্রায় ৫০ বছরে আমরা হাজারের ওপর একাডেমিক বই প্রকাশ করেছি। এর অধিকাংশ বইয়ের একাধিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনো বই দশকের পর দশক পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। ফলে আমাদের বইয়ের বিষয়ে আমরা বলতে পারি, এগুলোর একটা বড় অংশ সময়ের পরীক্ষায় অন্তত মধ্য মেয়াদে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু গণমাধ্যম যে সারা বছর আমাদের বইয়ের সংবাদ প্রচার করে বা অন্যদেরও মানসম্মত বইয়ের খুব প্রচার করে, সেটা বলা কঠিন। জনপ্রিয় বইয়ের প্রচার এবং কথিত মানহীন বইয়ের শোরগোল—এটাই বরং বেশি চোখে ভাসে।মানহীন বই নিয়ে তাই মন্তব্য করাটা খুব প্রয়োজন দেখি না; বরং মানসম্মত একাডেমিক বই নিয়ে আলাপ জরুরি, সেটা সবাইকে মনে করিয়ে দিই। আর এটা করতে হলে দ্বিতীয় প্রশ্নে যা যা কর্তব্য বলেছি, সেটাই একমাত্র করণীয়।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশে বইমেলায় নজরদারি, বই বাজেয়াপ্ত করা, পুলিশি হস্তক্ষেপ—এসব কতটা যৌক্তিক?
মাহ্রুখ মহিউদ্দিন: অযৌক্তিক তৎপরতা। এর প্রতিবাদ আমরা করেছি। কিন্তু প্রকাশক হিসেবে আমাদের প্রধান কর্তব্য ভালো বই প্রকাশ করা। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা ও প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সমাজের সব অংশের।
আজকের পত্রিকা: বাংলা একাডেমি বই সেন্সর করতে পারে, কিন্তু পুলিশ কি এটা করার এখতিয়ার রাখে?
মাহ্রুখ মহিউদ্দিন: দুঃখিত, বাংলা একাডেমিও বই সেন্সর করতে পারে না। এমন কোনো আইনি এখতিয়ার বাংলা একাডেমির থাকার কারণ নেই। এটা আছে আদালতের। তাঁদের আদেশ অনুযায়ী, আইনসংগতভাবে কোনো বইকে সেন্সর করতে পারার কথা। নৈতিকভাবে সেন্সর কত দূর গ্রহণযোগ্য, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।
আজকের পত্রিকা: বইমেলা বাংলা একাডেমির করা উচিত, নাকি প্রকাশক সমিতির?
মাহ্রুখ মহিউদ্দিন: বইমেলা নানান উদ্যোগে হতে পারে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও আরও বেশি করে বইমেলার উদ্যোগ নিতে পারে। আমরা এমন যেসব মেলায় অংশগ্রহণ করেছি, ভালো সাড়া মিলেছে। স্থানীয় সরকার পর্যায়েও মেলা হতে পারে, হয় এবং আরও হওয়া উচিত। পাড়ার সংস্থাগুলো যদি মিরপুর, পুরান ঢাকা বা গুলশানে মেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেয়, সেটাও খুব ভালো বিষয় হবে। সারা বছর এমন উদ্যোগ থাকলে একুশে বইমেলার ওপর নির্ভরতা কমবে প্রকাশকদের। ফলে কারা আয়োজন করছে, সেই ফিসফিসানিও গৌণ হয়ে যাবে; বরং সারা বছর মেলাগুলো যে কার্যকরভাবে আয়োজন করা হয় না ততটা বেশি করে, সেটাই দুঃখের বিষয়।
প্রকাশক সমিতি যদি সব প্রকাশকের স্বার্থ রক্ষা করে মেলা করতে পারে, সেটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হবে। সেটা ভিন্ন কোনো মেলা হওয়াই বেশি কাম্য হবে। একুশে মেলা একটা ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী মেলায় পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে ভাষা আন্দোলন, একুশে ফেব্রুয়ারি এবং বাংলা একাডেমির নামও যুক্ত হয়ে গেছে। ফলে এই ধারা অক্ষুণ্ন থাকলে তেমন ক্ষতি হওয়ার কারণ নেই। একাডেমির মূলত গবেষণাপ্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা, এটা সত্যি। কিন্তু গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের এই জ্ঞানদায়ী ভূমিকার কারণে এ ধরনের মেলার আয়োজন করতেই পারে; বিশেষ করে তা ঐতিহ্যে পরিণত হলে এবং ক্ষতিকর না হলে এতে কোনো সমস্যা নেই। লোকবলের সংকট? জনবল নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।
বাংলা একাডেমির আয়োজনের কারণে একুশে বইমেলার কোনো সমস্যা বা সীমাবদ্ধতা যদি দেখা যায়, সেটা আসলে একাডেমির কারণে নয়। এটা সমাজ ও রাষ্ট্রের সার্বিক পরিস্থিতিরই প্রতিফলন। বহুমুখী এই চাপের মাঝে থেকে যেকোনো কর্তৃপক্ষ, সংস্থা বা সমিতি এটা করুক না কেন, একই ফল হওয়ার কথা; বরং এই চাপ বৃদ্ধিও পেতে পারে।
একটা বিষয়ে আমরা বরাবর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই—বই এবং ভাষা নিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসকেন্দ্রিক আবেগপ্রবণ আলাপের চেয়ে অনেক বেশি ভালো হবে বছরজুড়েই এ প্রসঙ্গগুলো সজীব রাখা। বই আমরা শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে পড়ি না, বাংলাতেও আমরা শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই কথা বলি না। ফলে এগুলোকে শক্তিশালী করতে হলে সারা বছরই পুষ্টি জোগানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১৭ ঘণ্টা আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
২০ ঘণ্টা আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৮ দিন আগে