আব্দুর রাজ্জাক
আমাদের সমাজে প্রচলিত কিছু দৈনন্দিন কাজকর্ম সবারই করতে হয়। পথচলা থেকে শুরু করে সাংসারিক, ব্যক্তিজীবনে ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম করতেই হয়। সাধারণ কাজ যেটা আমরা সব সময় করি বা করতে বাধ্য হই, সেখানে আপনি একটু লক্ষ করলে দেখবেন, যেটা অনিয়ম, যেটা অন্যায়, সেটা নিয়মে পরিণত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রথমে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে নিজের কাজের উদ্দেশ্যে রাস্তায় বের হবেন, যদি রাস্তা পারাপার হতে হয়, প্রথমেই দেখবেন ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে যত্রতত্র মানুষ পারাপার হচ্ছে, এক হাতে মোবাইল কানে দিয়ে আরেক হাত উঁচু করে রাস্তা পার হচ্ছে অবলীলায়। জেব্রা ক্রসিং কোথায় আছে, এখন কেউ এটা খেয়াল করে না। যেখানে ওভারব্রিজ আছে, সেখানে ব্রিজের নিচ দিয়ে চলছে মানুষ হাত জাগিয়ে। গাড়ি হর্ন বাজাচ্ছে, কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই; অর্থাৎ রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে নিয়মের কোনো বালাই নেই, স্বেচ্ছাচারী অনিয়মটাই জীবন চলার পথে আমাদের নিয়মে পরিণত হয়েছে।
আপনার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাবেন, মাসে মাসে টাকা দেবেন, স্কুল থেকে আপনাকে বড় একটি তালিকা দেওয়া হবে করণীয় সম্পর্কে। তালিকায় থাকবে বই, খাতা, কাগজ, কলম কোনখান থেকে কিনবেন, ছেলেমেয়ের ইউনিফর্ম কত টাকা দিয়ে কোনখান থেকে কিনবেন, এসবের বিরাট একটি তালিকা পাবেন। কোন কোন সিলেবাস কোন কোন মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে, কোন কোন বিষয় কত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে—সবকিছুই লেখা থাকবে সুন্দর পরিপাটিভাবে। যা কিছু আছে, সবকিছুই আপনাকে কিনতে হবে।
স্কুলের মাইনা মাসে মাসে পরিশোধ করতে হবে ১০ তারিখের আগে, তারিখ পার হয়ে গেলে গুনতে হবে জরিমানা; অর্থাৎ স্কুল থেকেই আপনাকে সবকিছু ব্যবস্থা করে দেবে আপনার সন্তানের ভর্তির পর থেকে পরীক্ষার আগপর্যন্ত। তবে একটা কথা, শুধু পড়াশোনাটা স্কুল করিয়ে দেবে না, এটা আপনার কিনতে হবে প্রাইভেট টিউটর দিয়ে, এটাও কিন্তু নিজের বুঝে নিতে হবে স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে। হায়রে কপাল! বড় বড় স্কুলের কত কঠোর নিয়মকানুন, শুধু লেখাপড়াটা কিনতে হয় বাইরের টিউটরের কাছ থেকে!
সরকারি কোনো দপ্তরে যান। যেসব ব্যক্তি বসে আছেন কেরানি থেকে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত, এখানে যাওয়ার পরে আপনার মনেই হবে না তারা কোনো সেবা প্রদানকারী সংস্থা। মুখ গোমড়া করে মারমুখো অবস্থায় বসে আছেন সবাই। আপনি তাঁদের সঙ্গে কথা বলার পরে প্রথমেই এমন অবস্থা করা হবে, আপনি যে কাজের জন্য সেখানে গেছেন, সেটা করা তাঁদের পক্ষে অসম্ভব। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন কথা বলবেন—সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠিয়ে দিতে পারবে, পূর্ব দিকে নমিত করতে পারবে, তবে আপনার কাজটি তার চেয়েও কঠিন, এটা করা প্রায় অসম্ভব। ঘাটে ঘাটে নির্দিষ্ট করে একটা চাঁদা আছে। কেরানি সাহেবের জন্য ধার্য আছে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা। পরের ধাপের জন্য একটু বেশি পরিমাণে, এর পরের ধাপের জন্য আরেকটু বেশি পরিমাণে।
এ রকম তিন-চার ধাপ পার হওয়ার পরে আপনার কাজ হতেও পারে, তবে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা আপনাকে দিতেই হবে। অফিসের কর্তাব্যক্তিরা এর নাম দিয়েছেন ‘স্পিড মানি’। এখন এই ‘স্পিড মানি’ যেন আইনে পরিণত হয়েছে, আপনাকে এটা মেনেই সব কাজ করতে হবে। জমিজমা-সংক্রান্ত কোনো রেজিস্ট্রি অফিসে যান, দলিল মূল্যের ২ শতাংশ স্পিড মানি দিতে হবে। এটা হিসাব করা।
আপনি ঠিকাদারি করছেন—এলজিইডি, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে, গণপূর্ত, পাবলিক হেলথ, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অথবা যেকোনো ঠিকাদারি কাজের। পদবি দপ্তর অনুসারে আপনার জন্য ঠিক করা আছে, আপনি কত টাকা কোন কোন পদের জন্য কাকে কাকে দেবেন।
ঘুণাক্ষরেও ভুলে যাবেন না যেন ছোট কাজ ও বড় কাজের জন্য একই টাকা দিতে হবে। আমাদের দেশের কর্মকর্তারা অঙ্কে খুবই ভালো। তাঁরা কিন্তু আপনার জন্য ক্যালকুলেটর নিয়ে কাজের টাকার অঙ্কের পার্সেন্টেজ ধরে আপনার কাছ থেকে গুনে গুনে কড়ায়গন্ডায় উশুল করে নেবেন। এই টাকা যখন দেবেন, তখন দেখতে পাবেন কর্মকর্তাদের চেহারা গম্ভীর, গলায় শুধু একটু ‘হ্যাঁ-না’ বলবেন, চোখ দুটি তখন তাঁদের থাকবে দুপুরের সূর্যের মতো। ভাবখানা এমন দেখাবে যে আপনাকে তিনি দয়া করছেন, সামান্য যা টাকা দিয়েছেন তার চেয়ে আপনি অনেক বেশি কাজ তাঁর থেকে করিয়ে নিয়েছেন।
তারপর হয়তো আপনি তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিতে সালাম দেবেন, সালামের উত্তর তিনি না-ও দিতে পারেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টাকাটি নেওয়ার পরে আদর করে আপনার পশ্চাৎদেশে একটু আঘাতও করতে পারে বৈকি! আপনি পরবর্তী কাজের জন্য এটা হাসিমুখে দয়া করে মেনে নিয়েন!
প্রতি মাসে আপনি ভ্যাট দিতে যান, ভ্যাট চালানোর সঙ্গে ভ্যাট অফিসের কর্তাব্যক্তিদের নির্দিষ্ট হারে কিছু টাকা দিতে হবে স্পিড মানি হিসেবে। কাস্টমসের বিভিন্ন দপ্তরে পণ্য খালাস করতে যান, বিলআপ এন্ট্রির সঙ্গে অত্র দপ্তরের চার থেকে পাঁচটি হাতে নির্দিষ্ট হারে স্পিড মানি দিতে হবে। সেটেলমেন্ট অফিসে যান, নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা ধার্য করা আছে, সেটা পরিশোধ করে আপনি কাজটি করে নিয়ে চলে আসেন। এসি ল্যান্ড অফিসে যান নামজারির জন্য, একেবারে আপনার জন্য সুরক্ষিতভাবে সন্তোষজনক উপায়ে একটি টাকার হিসাব করাই আছে, শুধু টাকাটি পরিশোধ করে কাজটি করিয়ে নিয়ে আসবেন।
আপনি সারা জীবন সরকারি চাকরি করেছেন, বড় পদে ছিলেন, নিজেই স্পিড মানি নিয়েছেন, হয়তো কোনো সময় কাউকে সাহায্য করেছেন। তৃপ্তির হাসি হেসে যখন আপনি পেনশন নিতে গেলেন, বড়কর্তা সাহেব মনে রাখবেন, আপনার পেনশন যখন আপনি আনতে এজি অফিসে যাবেন, আপনাকেও নির্দিষ্ট হারে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে স্পিড মানি দিয়ে কাজ করাতে হবে।
আপনি নতুন একটা ব্যবসা শুরু করেন, আপনি এখনো কোনো মুনাফার মুখ দেখেননি। প্রথমে অফিস ভাড়া বা অফিস নির্মাণ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া, ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু হলো আপনার কাজ।
পরে টিন নম্বর নেবেন, রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেবেন। নির্দিষ্ট হারে টাকা দিতে দিতে আপনি কিছুটা ক্লান্তি বোধ করবেন। এখানে একটা সুবিধা আছে, আপনি ধাতস্থ হয়ে গেলেন, ভবিষ্যতে আপনি যত ব্যবসা করবেন নির্দিষ্ট হারের স্পিড মানি আপনার দিতেই হবে।
ওপরে আমাদের সমাজের সামান্য কিছু অনিয়ম বললাম, যেটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। ওপর পর্যায়ে, অর্থাৎ মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বড় বড় কাজ, বড় বড় প্রকল্প, মহাপ্রকল্প প্রণয়নে কী ধরনের নিয়মবহির্ভূত অনিয়ম হয়, সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই ঊহ্য থাকে। আমাদের মতো চুনোপুঁটিরা এসব জানতেও পারি না। তবে এই প্রকল্প যখন প্রান্তিক পর্যায়ে যায়, তখন প্রান্তিক পর্যায়ের কর্মকর্তারা এবং ঠিকাদার ভাইয়েরা বলেন প্রকল্প পাস করাতে খবর হয়েছে, ওখানে অনেক কিছুই আগের থেকে ম্যানেজ করতে হয়েছে।
এখন বোঝেন ঠেলা, উচ্চপর্যায় থেকে নিম্নপর্যায়ে এই অনিয়ম আমাদের সমাজে নিয়মে পরিণত করে দিয়েছে! আমাদের এখন একটাই দাবি—টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, সুনামগঞ্জ থেকে সুন্দরবন, সবাই একযোগে বলি: ‘ভাই, অনিয়মটা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে, আমরাই করে দিয়েছি, এই অনিয়মটাকে এখন দয়া করে পার্লামেন্টে বসে আইনে রূপান্তরিত করে দিন, আমাদের যেন আর এই অনিয়মটা করতে বিবেকের কাছে জবাবদিহি করতে না হয়।’
কথাগুলো বললাম এই কারণে যে অনিয়ম রোধ করার জন্য আপাতত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখছি না। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে, নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে, সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না, আর ভবিষ্যতে নেওয়া হবে বলে তেমন কোনো লক্ষণও দেখতে পাচ্ছি না। অন্তত আমি দেখতে পাচ্ছি না। আপনি যদি কোনো লক্ষণ দেখেন, দয়া করে আমাদের জানান। আমরা আপনার সঙ্গে শরিক হই।
লেখক: প্রকৌশলী
আমাদের সমাজে প্রচলিত কিছু দৈনন্দিন কাজকর্ম সবারই করতে হয়। পথচলা থেকে শুরু করে সাংসারিক, ব্যক্তিজীবনে ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম করতেই হয়। সাধারণ কাজ যেটা আমরা সব সময় করি বা করতে বাধ্য হই, সেখানে আপনি একটু লক্ষ করলে দেখবেন, যেটা অনিয়ম, যেটা অন্যায়, সেটা নিয়মে পরিণত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রথমে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে নিজের কাজের উদ্দেশ্যে রাস্তায় বের হবেন, যদি রাস্তা পারাপার হতে হয়, প্রথমেই দেখবেন ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে যত্রতত্র মানুষ পারাপার হচ্ছে, এক হাতে মোবাইল কানে দিয়ে আরেক হাত উঁচু করে রাস্তা পার হচ্ছে অবলীলায়। জেব্রা ক্রসিং কোথায় আছে, এখন কেউ এটা খেয়াল করে না। যেখানে ওভারব্রিজ আছে, সেখানে ব্রিজের নিচ দিয়ে চলছে মানুষ হাত জাগিয়ে। গাড়ি হর্ন বাজাচ্ছে, কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই; অর্থাৎ রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে নিয়মের কোনো বালাই নেই, স্বেচ্ছাচারী অনিয়মটাই জীবন চলার পথে আমাদের নিয়মে পরিণত হয়েছে।
আপনার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাবেন, মাসে মাসে টাকা দেবেন, স্কুল থেকে আপনাকে বড় একটি তালিকা দেওয়া হবে করণীয় সম্পর্কে। তালিকায় থাকবে বই, খাতা, কাগজ, কলম কোনখান থেকে কিনবেন, ছেলেমেয়ের ইউনিফর্ম কত টাকা দিয়ে কোনখান থেকে কিনবেন, এসবের বিরাট একটি তালিকা পাবেন। কোন কোন সিলেবাস কোন কোন মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে, কোন কোন বিষয় কত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে—সবকিছুই লেখা থাকবে সুন্দর পরিপাটিভাবে। যা কিছু আছে, সবকিছুই আপনাকে কিনতে হবে।
স্কুলের মাইনা মাসে মাসে পরিশোধ করতে হবে ১০ তারিখের আগে, তারিখ পার হয়ে গেলে গুনতে হবে জরিমানা; অর্থাৎ স্কুল থেকেই আপনাকে সবকিছু ব্যবস্থা করে দেবে আপনার সন্তানের ভর্তির পর থেকে পরীক্ষার আগপর্যন্ত। তবে একটা কথা, শুধু পড়াশোনাটা স্কুল করিয়ে দেবে না, এটা আপনার কিনতে হবে প্রাইভেট টিউটর দিয়ে, এটাও কিন্তু নিজের বুঝে নিতে হবে স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে। হায়রে কপাল! বড় বড় স্কুলের কত কঠোর নিয়মকানুন, শুধু লেখাপড়াটা কিনতে হয় বাইরের টিউটরের কাছ থেকে!
সরকারি কোনো দপ্তরে যান। যেসব ব্যক্তি বসে আছেন কেরানি থেকে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত, এখানে যাওয়ার পরে আপনার মনেই হবে না তারা কোনো সেবা প্রদানকারী সংস্থা। মুখ গোমড়া করে মারমুখো অবস্থায় বসে আছেন সবাই। আপনি তাঁদের সঙ্গে কথা বলার পরে প্রথমেই এমন অবস্থা করা হবে, আপনি যে কাজের জন্য সেখানে গেছেন, সেটা করা তাঁদের পক্ষে অসম্ভব। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন কথা বলবেন—সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠিয়ে দিতে পারবে, পূর্ব দিকে নমিত করতে পারবে, তবে আপনার কাজটি তার চেয়েও কঠিন, এটা করা প্রায় অসম্ভব। ঘাটে ঘাটে নির্দিষ্ট করে একটা চাঁদা আছে। কেরানি সাহেবের জন্য ধার্য আছে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা। পরের ধাপের জন্য একটু বেশি পরিমাণে, এর পরের ধাপের জন্য আরেকটু বেশি পরিমাণে।
এ রকম তিন-চার ধাপ পার হওয়ার পরে আপনার কাজ হতেও পারে, তবে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা আপনাকে দিতেই হবে। অফিসের কর্তাব্যক্তিরা এর নাম দিয়েছেন ‘স্পিড মানি’। এখন এই ‘স্পিড মানি’ যেন আইনে পরিণত হয়েছে, আপনাকে এটা মেনেই সব কাজ করতে হবে। জমিজমা-সংক্রান্ত কোনো রেজিস্ট্রি অফিসে যান, দলিল মূল্যের ২ শতাংশ স্পিড মানি দিতে হবে। এটা হিসাব করা।
আপনি ঠিকাদারি করছেন—এলজিইডি, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে, গণপূর্ত, পাবলিক হেলথ, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অথবা যেকোনো ঠিকাদারি কাজের। পদবি দপ্তর অনুসারে আপনার জন্য ঠিক করা আছে, আপনি কত টাকা কোন কোন পদের জন্য কাকে কাকে দেবেন।
ঘুণাক্ষরেও ভুলে যাবেন না যেন ছোট কাজ ও বড় কাজের জন্য একই টাকা দিতে হবে। আমাদের দেশের কর্মকর্তারা অঙ্কে খুবই ভালো। তাঁরা কিন্তু আপনার জন্য ক্যালকুলেটর নিয়ে কাজের টাকার অঙ্কের পার্সেন্টেজ ধরে আপনার কাছ থেকে গুনে গুনে কড়ায়গন্ডায় উশুল করে নেবেন। এই টাকা যখন দেবেন, তখন দেখতে পাবেন কর্মকর্তাদের চেহারা গম্ভীর, গলায় শুধু একটু ‘হ্যাঁ-না’ বলবেন, চোখ দুটি তখন তাঁদের থাকবে দুপুরের সূর্যের মতো। ভাবখানা এমন দেখাবে যে আপনাকে তিনি দয়া করছেন, সামান্য যা টাকা দিয়েছেন তার চেয়ে আপনি অনেক বেশি কাজ তাঁর থেকে করিয়ে নিয়েছেন।
তারপর হয়তো আপনি তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিতে সালাম দেবেন, সালামের উত্তর তিনি না-ও দিতে পারেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টাকাটি নেওয়ার পরে আদর করে আপনার পশ্চাৎদেশে একটু আঘাতও করতে পারে বৈকি! আপনি পরবর্তী কাজের জন্য এটা হাসিমুখে দয়া করে মেনে নিয়েন!
প্রতি মাসে আপনি ভ্যাট দিতে যান, ভ্যাট চালানোর সঙ্গে ভ্যাট অফিসের কর্তাব্যক্তিদের নির্দিষ্ট হারে কিছু টাকা দিতে হবে স্পিড মানি হিসেবে। কাস্টমসের বিভিন্ন দপ্তরে পণ্য খালাস করতে যান, বিলআপ এন্ট্রির সঙ্গে অত্র দপ্তরের চার থেকে পাঁচটি হাতে নির্দিষ্ট হারে স্পিড মানি দিতে হবে। সেটেলমেন্ট অফিসে যান, নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা ধার্য করা আছে, সেটা পরিশোধ করে আপনি কাজটি করে নিয়ে চলে আসেন। এসি ল্যান্ড অফিসে যান নামজারির জন্য, একেবারে আপনার জন্য সুরক্ষিতভাবে সন্তোষজনক উপায়ে একটি টাকার হিসাব করাই আছে, শুধু টাকাটি পরিশোধ করে কাজটি করিয়ে নিয়ে আসবেন।
আপনি সারা জীবন সরকারি চাকরি করেছেন, বড় পদে ছিলেন, নিজেই স্পিড মানি নিয়েছেন, হয়তো কোনো সময় কাউকে সাহায্য করেছেন। তৃপ্তির হাসি হেসে যখন আপনি পেনশন নিতে গেলেন, বড়কর্তা সাহেব মনে রাখবেন, আপনার পেনশন যখন আপনি আনতে এজি অফিসে যাবেন, আপনাকেও নির্দিষ্ট হারে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে স্পিড মানি দিয়ে কাজ করাতে হবে।
আপনি নতুন একটা ব্যবসা শুরু করেন, আপনি এখনো কোনো মুনাফার মুখ দেখেননি। প্রথমে অফিস ভাড়া বা অফিস নির্মাণ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া, ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু হলো আপনার কাজ।
পরে টিন নম্বর নেবেন, রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেবেন। নির্দিষ্ট হারে টাকা দিতে দিতে আপনি কিছুটা ক্লান্তি বোধ করবেন। এখানে একটা সুবিধা আছে, আপনি ধাতস্থ হয়ে গেলেন, ভবিষ্যতে আপনি যত ব্যবসা করবেন নির্দিষ্ট হারের স্পিড মানি আপনার দিতেই হবে।
ওপরে আমাদের সমাজের সামান্য কিছু অনিয়ম বললাম, যেটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। ওপর পর্যায়ে, অর্থাৎ মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বড় বড় কাজ, বড় বড় প্রকল্প, মহাপ্রকল্প প্রণয়নে কী ধরনের নিয়মবহির্ভূত অনিয়ম হয়, সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই ঊহ্য থাকে। আমাদের মতো চুনোপুঁটিরা এসব জানতেও পারি না। তবে এই প্রকল্প যখন প্রান্তিক পর্যায়ে যায়, তখন প্রান্তিক পর্যায়ের কর্মকর্তারা এবং ঠিকাদার ভাইয়েরা বলেন প্রকল্প পাস করাতে খবর হয়েছে, ওখানে অনেক কিছুই আগের থেকে ম্যানেজ করতে হয়েছে।
এখন বোঝেন ঠেলা, উচ্চপর্যায় থেকে নিম্নপর্যায়ে এই অনিয়ম আমাদের সমাজে নিয়মে পরিণত করে দিয়েছে! আমাদের এখন একটাই দাবি—টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, সুনামগঞ্জ থেকে সুন্দরবন, সবাই একযোগে বলি: ‘ভাই, অনিয়মটা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে, আমরাই করে দিয়েছি, এই অনিয়মটাকে এখন দয়া করে পার্লামেন্টে বসে আইনে রূপান্তরিত করে দিন, আমাদের যেন আর এই অনিয়মটা করতে বিবেকের কাছে জবাবদিহি করতে না হয়।’
কথাগুলো বললাম এই কারণে যে অনিয়ম রোধ করার জন্য আপাতত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখছি না। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে, নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে, সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না, আর ভবিষ্যতে নেওয়া হবে বলে তেমন কোনো লক্ষণও দেখতে পাচ্ছি না। অন্তত আমি দেখতে পাচ্ছি না। আপনি যদি কোনো লক্ষণ দেখেন, দয়া করে আমাদের জানান। আমরা আপনার সঙ্গে শরিক হই।
লেখক: প্রকৌশলী
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে