অরুণ কর্মকার
কথাটা আসলে দশ কথার এক কথা। নতুন সরকারের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। কোন পথ কুসুমাস্তীর্ণ? মানুষের জীবন চলার পথ, তা সে ব্যক্তিগত জীবন হোক কিংবা হোক সামাজিক বা রাজনৈতিক জীবন? এমন কোনো পথ কি আছে, যেখানে শুধুই ফুল বিছানো থাকে? কাঁটা থাকে না? তাহলে কোনো সরকারের পথই-বা কুসুমাস্তীর্ণ হবে কেন! সরকারকে তো একটা রাষ্ট্র সামলানোর জন্য যাবতীয় কাজ করতে হয়। নিশ্চয়ই তাতে অনেক বাধা-প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ থাকে। সেগুলো মোকাবিলা করেই তো সরকার পথ চলে। নতুন সরকারও নিশ্চয় তাই করবে।
সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই পথের কথাটা তুলেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছিলেন, এই নির্বাচনের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। কিন্তু সেই নির্বাচনও তো হয়ে গেছে। আটকে তো থাকেনি। সব পথের ব্যাপার-স্যাপার এ রকমই। তারপরও পথের কথাটা ওঠে। বলতে হয়। কারণ, এটি জনসাধারণের দিক থেকে সরকারের জন্য একটি সাবধানবাণী বা সতর্কসংকেত। এর চেয়েও বড় কথা, এটা সরকারের সঙ্গে জনগণের মতবিনিময়। যদিও সরকার সবকিছুই জানে। তবে জনগণ তাঁদের নিজেদের জীবনের কথা যতটা জানে, সরকার হয়তো সব সময় ততটা জানে না। জানা সম্ভবও নয়। তাই জনগণকেই উদ্যোগী হতে হয় নিজেদের সেই সব কথা সরকারের কানে পৌঁছানোর জন্য।
তা ছাড়া ওই যে বলা হলো, নির্বাচন হয়ে গেছে। আটকে থাকেনি। এটা যেমন সত্য, তেমনি হয়ে যাওয়ার পরও নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে যে কাটাছেঁড়া কম হচ্ছে না, সেটাও তো সত্য। আরও বড় সত্য হলো, এই কাটাছেঁড়া চলতে থাকবে অনেক দিন ধরে। সরকারের চলার পথে এটাও কিন্তু কাঁটা। যদিও এই কাঁটা রাজনৈতিক। সরকার রাজনৈতিকভাবেই তা মোকাবিলা করবে। কিন্তু জনজীবন-সম্পৃক্ত কাঁটাও রয়েছে অনেক। এর মধ্যে প্রথম ও প্রধান হচ্ছে, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা।
কোভিড-১৯-পরবর্তী বৈশ্বিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সর্বশেষ ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ পুরো পৃথিবীর অর্থনীতিকেই চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশের মতো আমদানিনির্ভর দেশের জন্য সেই চাপ সামাল দেওয়া খুবই কঠিন। এর ওপর দেশে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত দুর্নীতি, খেলাপি ঋণের ফাঁদে ফেলে ব্যাংকব্যবস্থাকে পর্যুদস্ত করে তোলা এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের ফলে সমগ্র অর্থনীতি নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়েছে। দেশীয় জ্বালানি সম্পদ আহরণ ও উত্তোলনকে উপেক্ষা করায় এ খাত আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি আমদানি করা যায়নি। যাচ্ছে না। ফলে জ্বালানির সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় দেশীয় উৎপাদন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে রপ্তানির ওপর।
অর্থ পাচার এবং হুন্ডির দুষ্টচক্র দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারে টানাটানি ফেলে দিয়েছে। ফলে জ্বালানি এবং গমের মতো কিছু কিছু প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিও সীমিত বা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য মূল্যস্ফীতি হয়ে উঠেছে অসহনীয়। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণের বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জ্বালানির দাম নির্ধারণে বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রাধান্য পাওয়ায় উৎপাদন খাত স্থবির হয়ে পড়েছে।
বেসরকারি খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান রুগ্ণ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও মাসিক বেতন-ভাতা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। বেসরকারি এবং যৌথ উদ্যোগের বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর বিপুল অঙ্কের বিল বাকি পড়ে আছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যও প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমছে। এগুলো সবই নতুন সরকারের পথের কাঁটা। এগুলো অপসারণ করা খুব সহজ কাজ নয়। কিন্তু দক্ষতার সঙ্গে তা করতে না পারলে, দেশ এবং সরকার বড় রকম বেকায়দায় পড়বে।
নতুন সরকারের সামনে আরও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জিং কাজ করার আছে। যেমন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও সমাজে ধনবৈষম্য কমিয়ে আনা। যদিও নতুন সরকারের তরফে এরই মধ্যে বলা হয়েছে যে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হবে তাদের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজ। কিন্তু বিদ্যমান অর্থনৈতিক দুরবস্থার অবসান না ঘটিয়ে, ব্যবসা-বাণিজ্য ভালোভাবে সচল করা না গেলে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি কখনোই সম্ভব হবে না। দারিদ্র্য নিরসন নতুন সরকারের আরেকটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। এর সঙ্গেও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং অর্থনীতিকে গতিশীল করার নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান।
দুর্নীতি প্রশমনের কাজটি একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জিং এবং অপরিহার্য। দেশে দুর্নীতি এখন বলতে গেলে একটি সর্বজনীন বিষয় হয়ে গেছে। কোন খাতে যে দুর্নীতি নেই, তা বলাটাই এখন অসম্ভব ব্যাপার। সমাজেও দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় রয়েছে। দুর্নীতি এখন আর এ দেশে গর্হিত কোনো বিষয় নয়। সমাজের সর্বত্র বিস্তৃত দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ তাই যথেষ্ট কষ্টসাধ্য কাজ।
সুশাসন প্রতিষ্ঠাও নতুন সরকারের একটি বড় চ্যালেঞ্জিং কাজ। দুর্নীতির মতোই সুশাসনের অভাবও দেশের সর্বত্র এবং সব পর্যায়ে দৃশ্যমান একটি বিষয়। কখনো কখনো বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অনেককে এমনও বলতে শোনা যায়, দেশে কি কোনো সরকার নেই! যেকোনো দেশের সরকারের প্রধান মৌলিক কাজই হলো সুশাসন (গভর্ন্যান্স) প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে সুশাসন নেই, সেখানে কার্যত সরকারও নেই। শাসনব্যবস্থার এহেন পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। তাই নতুন সরকারকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হবে, যা মোটেই সহজ কোনো কাজ নয়। এই যে ঘাটতিগুলো, এর সবই পূরণ করার দায়িত্ব নতুন সরকারের কাঁধে। এগুলো করার জন্য যে পথে সরকারকে হাঁটতে হবে, তা যে কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না; বরং এর প্রতিটি পথই কণ্টকাকীর্ণ।
সর্বোপরি দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন সর্বসাধারণের প্রত্যাশিত বিষয়। আর বেশি দিন বোধ হয় নিয়ন্ত্রিত বা সীমিত গণতন্ত্র নিয়ে পথ চলা আমাদের পক্ষে শোভন হবে না। হয়তো সম্ভবও হবে না। এ বিষয়টির সঙ্গে আমাদের উন্নয়ন সহযোগী বন্ধুদেরও নিবিড় সম্পৃক্ততা। তাদের হাত ধরে আবার চলে আসে আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্যের বাজার রক্ষা ও সম্প্রসারণের স্বার্থ। সুতরাং বিষয়টি কোনোভাবে উপেক্ষা করার তো প্রশ্নই ওঠে না, এড়িয়ে যাওয়াও উচিত হবে না।
মাত্র দুদিন হলো নতুন সরকার শপথ নিয়েছে। নতুন সরকার গঠনে অনেক নতুনত্ব আছে। বিস্মিত হওয়ার মতো উপাদানও যে নেই, তেমন নয়। এই নতুন সরকার এবং তার সামনের করণীয় বিষয়ে শেষ পর্যন্ত যা দেখা যায়, তাতে নতুন সরকারের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয় না বলে বরং বলা উচিত, নতুন সরকারের পথ কণ্টকাকীর্ণ এবং কঠিন সব চ্যালেঞ্জে ভরপুর। এই সরকার যখনই কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাফল্য দেখাতে পারবে, তখনই কেবল সে ফুলের দেখা পেতে পারে। অন্যথায় নয়। এ কথা মনে রেখেই পথ চলতে হবে নতুন সরকারকে। সেই চলার পথে আমরা নতুন সরকারের সাফল্যই কামনা করব।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
কথাটা আসলে দশ কথার এক কথা। নতুন সরকারের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। কোন পথ কুসুমাস্তীর্ণ? মানুষের জীবন চলার পথ, তা সে ব্যক্তিগত জীবন হোক কিংবা হোক সামাজিক বা রাজনৈতিক জীবন? এমন কোনো পথ কি আছে, যেখানে শুধুই ফুল বিছানো থাকে? কাঁটা থাকে না? তাহলে কোনো সরকারের পথই-বা কুসুমাস্তীর্ণ হবে কেন! সরকারকে তো একটা রাষ্ট্র সামলানোর জন্য যাবতীয় কাজ করতে হয়। নিশ্চয়ই তাতে অনেক বাধা-প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ থাকে। সেগুলো মোকাবিলা করেই তো সরকার পথ চলে। নতুন সরকারও নিশ্চয় তাই করবে।
সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই পথের কথাটা তুলেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছিলেন, এই নির্বাচনের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। কিন্তু সেই নির্বাচনও তো হয়ে গেছে। আটকে তো থাকেনি। সব পথের ব্যাপার-স্যাপার এ রকমই। তারপরও পথের কথাটা ওঠে। বলতে হয়। কারণ, এটি জনসাধারণের দিক থেকে সরকারের জন্য একটি সাবধানবাণী বা সতর্কসংকেত। এর চেয়েও বড় কথা, এটা সরকারের সঙ্গে জনগণের মতবিনিময়। যদিও সরকার সবকিছুই জানে। তবে জনগণ তাঁদের নিজেদের জীবনের কথা যতটা জানে, সরকার হয়তো সব সময় ততটা জানে না। জানা সম্ভবও নয়। তাই জনগণকেই উদ্যোগী হতে হয় নিজেদের সেই সব কথা সরকারের কানে পৌঁছানোর জন্য।
তা ছাড়া ওই যে বলা হলো, নির্বাচন হয়ে গেছে। আটকে থাকেনি। এটা যেমন সত্য, তেমনি হয়ে যাওয়ার পরও নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে যে কাটাছেঁড়া কম হচ্ছে না, সেটাও তো সত্য। আরও বড় সত্য হলো, এই কাটাছেঁড়া চলতে থাকবে অনেক দিন ধরে। সরকারের চলার পথে এটাও কিন্তু কাঁটা। যদিও এই কাঁটা রাজনৈতিক। সরকার রাজনৈতিকভাবেই তা মোকাবিলা করবে। কিন্তু জনজীবন-সম্পৃক্ত কাঁটাও রয়েছে অনেক। এর মধ্যে প্রথম ও প্রধান হচ্ছে, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা।
কোভিড-১৯-পরবর্তী বৈশ্বিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সর্বশেষ ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ পুরো পৃথিবীর অর্থনীতিকেই চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশের মতো আমদানিনির্ভর দেশের জন্য সেই চাপ সামাল দেওয়া খুবই কঠিন। এর ওপর দেশে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত দুর্নীতি, খেলাপি ঋণের ফাঁদে ফেলে ব্যাংকব্যবস্থাকে পর্যুদস্ত করে তোলা এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের ফলে সমগ্র অর্থনীতি নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়েছে। দেশীয় জ্বালানি সম্পদ আহরণ ও উত্তোলনকে উপেক্ষা করায় এ খাত আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি আমদানি করা যায়নি। যাচ্ছে না। ফলে জ্বালানির সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় দেশীয় উৎপাদন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে রপ্তানির ওপর।
অর্থ পাচার এবং হুন্ডির দুষ্টচক্র দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারে টানাটানি ফেলে দিয়েছে। ফলে জ্বালানি এবং গমের মতো কিছু কিছু প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিও সীমিত বা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য মূল্যস্ফীতি হয়ে উঠেছে অসহনীয়। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণের বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জ্বালানির দাম নির্ধারণে বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রাধান্য পাওয়ায় উৎপাদন খাত স্থবির হয়ে পড়েছে।
বেসরকারি খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান রুগ্ণ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও মাসিক বেতন-ভাতা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। বেসরকারি এবং যৌথ উদ্যোগের বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর বিপুল অঙ্কের বিল বাকি পড়ে আছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যও প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমছে। এগুলো সবই নতুন সরকারের পথের কাঁটা। এগুলো অপসারণ করা খুব সহজ কাজ নয়। কিন্তু দক্ষতার সঙ্গে তা করতে না পারলে, দেশ এবং সরকার বড় রকম বেকায়দায় পড়বে।
নতুন সরকারের সামনে আরও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জিং কাজ করার আছে। যেমন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও সমাজে ধনবৈষম্য কমিয়ে আনা। যদিও নতুন সরকারের তরফে এরই মধ্যে বলা হয়েছে যে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হবে তাদের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজ। কিন্তু বিদ্যমান অর্থনৈতিক দুরবস্থার অবসান না ঘটিয়ে, ব্যবসা-বাণিজ্য ভালোভাবে সচল করা না গেলে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি কখনোই সম্ভব হবে না। দারিদ্র্য নিরসন নতুন সরকারের আরেকটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। এর সঙ্গেও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং অর্থনীতিকে গতিশীল করার নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান।
দুর্নীতি প্রশমনের কাজটি একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জিং এবং অপরিহার্য। দেশে দুর্নীতি এখন বলতে গেলে একটি সর্বজনীন বিষয় হয়ে গেছে। কোন খাতে যে দুর্নীতি নেই, তা বলাটাই এখন অসম্ভব ব্যাপার। সমাজেও দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় রয়েছে। দুর্নীতি এখন আর এ দেশে গর্হিত কোনো বিষয় নয়। সমাজের সর্বত্র বিস্তৃত দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ তাই যথেষ্ট কষ্টসাধ্য কাজ।
সুশাসন প্রতিষ্ঠাও নতুন সরকারের একটি বড় চ্যালেঞ্জিং কাজ। দুর্নীতির মতোই সুশাসনের অভাবও দেশের সর্বত্র এবং সব পর্যায়ে দৃশ্যমান একটি বিষয়। কখনো কখনো বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অনেককে এমনও বলতে শোনা যায়, দেশে কি কোনো সরকার নেই! যেকোনো দেশের সরকারের প্রধান মৌলিক কাজই হলো সুশাসন (গভর্ন্যান্স) প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে সুশাসন নেই, সেখানে কার্যত সরকারও নেই। শাসনব্যবস্থার এহেন পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। তাই নতুন সরকারকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হবে, যা মোটেই সহজ কোনো কাজ নয়। এই যে ঘাটতিগুলো, এর সবই পূরণ করার দায়িত্ব নতুন সরকারের কাঁধে। এগুলো করার জন্য যে পথে সরকারকে হাঁটতে হবে, তা যে কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না; বরং এর প্রতিটি পথই কণ্টকাকীর্ণ।
সর্বোপরি দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন সর্বসাধারণের প্রত্যাশিত বিষয়। আর বেশি দিন বোধ হয় নিয়ন্ত্রিত বা সীমিত গণতন্ত্র নিয়ে পথ চলা আমাদের পক্ষে শোভন হবে না। হয়তো সম্ভবও হবে না। এ বিষয়টির সঙ্গে আমাদের উন্নয়ন সহযোগী বন্ধুদেরও নিবিড় সম্পৃক্ততা। তাদের হাত ধরে আবার চলে আসে আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্যের বাজার রক্ষা ও সম্প্রসারণের স্বার্থ। সুতরাং বিষয়টি কোনোভাবে উপেক্ষা করার তো প্রশ্নই ওঠে না, এড়িয়ে যাওয়াও উচিত হবে না।
মাত্র দুদিন হলো নতুন সরকার শপথ নিয়েছে। নতুন সরকার গঠনে অনেক নতুনত্ব আছে। বিস্মিত হওয়ার মতো উপাদানও যে নেই, তেমন নয়। এই নতুন সরকার এবং তার সামনের করণীয় বিষয়ে শেষ পর্যন্ত যা দেখা যায়, তাতে নতুন সরকারের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয় না বলে বরং বলা উচিত, নতুন সরকারের পথ কণ্টকাকীর্ণ এবং কঠিন সব চ্যালেঞ্জে ভরপুর। এই সরকার যখনই কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাফল্য দেখাতে পারবে, তখনই কেবল সে ফুলের দেখা পেতে পারে। অন্যথায় নয়। এ কথা মনে রেখেই পথ চলতে হবে নতুন সরকারকে। সেই চলার পথে আমরা নতুন সরকারের সাফল্যই কামনা করব।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
১ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে