জীর্ণ সেতু, পারাপারে ঝুঁকি

লক্ষ্মীপুর ও রায়পুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ৪৮

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ভুলুয়া নদীর সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ রয়েছে। সেতুর পাটাতন ও রেলিং ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভাঙা ও নড়বড়ে এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং চার উপজেলার কয়েক হাজার পথচারী। পারাপার হচ্ছে ছোট-বড় যানবাহন।

এ ছাড়া সেতুর দক্ষিণ-পূর্ব পাশে রয়েছে চরঠিকা আশ্রয় কেন্দ্র। কেন্দ্রের শত শত লোক সেতু দিয়েই চলাফেরা করে। যেকোনো মুহূর্তে সেতু ভেঙে চরঠিকা-চরবসু সড়কের যাতায়াত বন্ধসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। জরাজীর্ণ সেতুটি ভেঙে নতুন একটি নির্মাণ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে তারা।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, উপজেলার হাজিরহাট, করুনানগর, ফজুমিয়ারহাট ও চরবসু যাতায়াতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চরঠিকা-চরবসু সড়কের ভুলুয়া নদীর ওপর প্রায় দুই যুগ আগে সেতুটি নির্মিত হয়। ৪০ মিটার দৈর্ঘ্য ও আড়াই মিটার প্রস্থের এ সেতু দিয়ে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর, রামগতিসহ পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী জেলার সদর ও সুবর্ণচর উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করছে। প্রতিদিন চলাচলের জন্য সেতুটি ব্যবহার করতে হয় চারটি কলেজ, তিনটি বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসার কয়েক শ শিক্ষার্থীকে।

তা ছাড়া যাত্রীবাহী পরিবহন, কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী ছোট-বড় অনেক যানবাহনের যাতায়াতও এ সেতু দিয়ে। কিন্তু প্রায় ছয় বছর আগে এ সেতুতে ভাঙন দেখা দেয়। পাটাতন ও রেলিংয়ের কংক্রিট খসে রড বেরিয়ে যায়। ইতিমধ্যে বেশির ভাগ অংশের রেলিং ভেঙে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এবং পাটাতনের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্তের মতো সৃষ্টি হয়েছে। সেতুটি একদিকে জরাজীর্ণ, অন্যদিকে একেবারে সংকুচিত। ফলে পণ্যবাহী কোনো যান সেতুতে সহজে চলাচল করতে পারছে না।

স্থানীয় কলেজশিক্ষার্থী মো. হাসান বলেন, প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতু পার হয়ে তাঁকে কলেজে আসা-যাওয়া করতে হয়। তা ছাড়া স্থানীয় শান্তিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফজুমিয়ারহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাতাব্বরনগর দারুচ্ছুন্না আলিম মাদ্রাসা, চরজাঙ্গালীয় এসসি উচ্চবিদ্যালয়, তোয়াহা-ই আইয়ুব মহিলা কলেজ, হাজিরহাট উপকূল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাতটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কয়েক শ লোককে যাতায়াতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতু ব্যবহার করতে হয়। শিক্ষার্থীদের জীবনের কথা চিন্তা করে হলেও ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটির জায়গায় নতুন একটি সেতু নির্মাণের দাবি তাঁর।

স্থানীয় কৃষক আব্দুল কাদের, শাহজাহান সরদার ও কালু মুন্সী বলেন, তাঁদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে তুলতে সেতুটি ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে গেলে কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া বন্ধ হয়ে পড়বে।

চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ইদ্রিস মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারপরও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ওই সেতু পার হয়েই তাঁকে উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সরকার দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে বড় বড় অনেক সেতু নির্মাণ করছে। এ এলাকার হাজারো মানুষের কথা চিন্তা করে এখানে নতুন একটি সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

কমলনগর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সোহেল আনোয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ওই সেতুর স্থলে একটি নতুন সেতু নির্মাণের প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে সেখানে ৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং সাড়ে ৫ মিটার প্রস্থের সেতু নির্মাণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত