মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়েছে শহীদ পরিবারগুলো। সঠিক বিচারের জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনেরও দাবি তাঁদের।

গতকাল বুধবার রাজধানীর চকবাজার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে শহীদ তাজউদ্দীনের পরিবারের পক্ষ থেকে এ দাবি করেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও তাজউদ্দীনের ছেলে সোহেল তাজ।

সোহেল তাজ বলেন, ‘আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার চাই, এ জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা দরকার।’

সোহেল তাজ মনে করেন, সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে জাতীয় চার নেতার জীবনী নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা উচিত। এ জন্য স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে তাঁদের জীবনীযুক্ত করার দাবি জানান তিনি।

শহীদ তাজউদ্দীনের মেয়ে ও গাজীপুর-৪-এর সাংসদ সিমিন হোসেন রিমি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকারী এক ও অভিন্ন। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চান উল্লেখ করে তিনিও স্বাধীন কমিশন গঠনের পক্ষে মত দেন।

আরেক শহীদ এম মনসুর আলীর ছেলে রেজাউল করিমও তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান। তাঁর মতে, এত বছর পরেও এই দাবি করতে হচ্ছে, এটা দুঃখজনক। তৎকালীন জেল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও নানা প্রশ্ন আছে বলে মনে করেন তিনি।

খুনিদের পুরস্কৃত করেছিলেন জিয়া: ওবায়দুল কাদের

জেলহত্যা দিবসের আরেকটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগকে অভিভাবক শূন্য করতে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার খুনিদের পুরস্কৃত ও পুনর্বাসিত করেছিলেন জিয়াউর রহমান। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী।

এর আগে সকালে বনানীতে জাতীয় তিন নেতার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। সেখানে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে।

রাজশাহীতে আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের কবরেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পাশাপাশি সুরা ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও মোনাজাত করা হয়।

পলাতকদেরও ফাঁসি হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ১৯৭৫ সালের জেলহত্যাকাণ্ডের বিচারের রায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের খুঁজে সাজা কার্যকর করা হবে। গতকাল সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোনাজাতে অংশ নেন।

এ সময় আরও শ্রদ্ধা জানান শহীদ পরিবারের সদস্য, সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্য ও পরিবারবর্গ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, মহানগর দক্ষিণ যুবলীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মম হত্যার শিকার হন চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামান।