মহিউদ্দিন খান মোহন
‘হাজার টাকার বাগান খাইল পাঁচ টাকার ছাগলে’—আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদবাক্য। ছাগল একটি গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু। এমনিতে এটি একটি নিরীহ প্রাণী, ‘সাত চড়ে রা নেই’ ধরনের। তবে বুদ্ধিশুদ্ধি কম থাকায় এটা মাঝেমধ্যে মনিবের ক্ষতি করে ফেলে। অবলা প্রাণী, তার ওপর মাথায় মগজ কম।
তাই কখন যে মনিব বা অন্য কারও বাগানে ঢুকে গাছপালা উদরস্থ করে, তার ঠিক-ঠিকানা নেই। বোধকরি এ থেকেই উপরিউক্ত প্রবাদটির উৎপত্তি। আবার ‘ছাগল’ একটি প্রসিদ্ধ গালিও বটে। কেউ বোকার মতো কাজ করলে বা কথা বললে মানুষ তাকে ‘ছাগলের মতো কাজ করলি’ বা ‘ছাগলের মতো কথা বলিস না’ বলে তিরস্কার করে। যদিও ছাগল কথা বলে না। ছাগল কখনো আলোচনার বিষয় ছিল না।
অবশ্য কিছুদিন আগে ছাগল সংবাদ শিরোনাম হয়েছিল ‘দেশে ছাগলের সংখ্যা বেশি’—এই খবরে। গ্রামাঞ্চলের গেরস্তবাড়িতে দু-চারটা ছাগল পোষা হয়। আবার বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও ছাগল পালন করা হয়। কুষ্টিয়ার ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট’ প্রজাতির ছাগল অত্যন্ত প্রসিদ্ধ।
২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট’ পালন প্রকল্পের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। এর উদ্যোক্তা ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী। তবে সে প্রকল্পটি সফলতা পায়নি।
আমার আজকের রচনা কিন্তু ছাগল প্রকল্প নিয়ে নয়; বরং একটি দামি ছাগল কীভাবে দেশের একজন শীর্ষ দুর্নীতিবাজের মুখোশ উন্মোচন করে দিল, তা নিয়েই কথা বলতে চাইছি। সে ‘মহান ছাগলটির’ কথা এখন আর কারও জানতে বাকি নেই। সদ্য উদ্যাপিত ঈদুল আজহা উপলক্ষে এক কিশোর ১২ লাখ টাকা দামের একটি ছাগল ক্রয় করেছিল। ছাগলের গলা জড়িয়ে ধরে ফটো তুলে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে বাহবা কুড়াতে গিয়ে সে কুড়াল মারল তার পিতা ও পরিবারের পায়ে। সংগত কারণেই ১২ লাখের ছাগল চলে এল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সবাই জানতে ইচ্ছুক, কে এই ধনাঢ্য ক্রেতা যে ১২ লাখ টাকার ছাগল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছেন?
অবশেষে বেরিয়ে এল থলের বিড়াল। বলা যায় কেঁচো খুঁড়তে সাপ। জানা গেল, সেই ছাগল ক্রেতা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার কিশোর পুত্র! পুত্রের নাম মুশফিকুর রহমান ইফাত, আর তার পিতা মতিউর রহমান এনবিআরের ‘কাস্টমস এক্সাইজ ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের’ প্রেসিডেন্ট। সংবাদমাধ্যমে এ খবর বেরোনোর পর সবাই বিস্ময়ে হতভম্ব। প্রশ্ন উঠল, একজন সরকারি কর্মকর্তার কিশোর পুত্র ১২ লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনার ক্ষমতা রাখলে তার পিতৃদেব কত টাকার মালিক?
জবাব পেতে বেশি দেরি হয়নি। পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মতিউর রহমানের অঢেল সম্পদের যে বিবরণ বেরিয়েছে, তাতে সবাই একবাক্যে বলেছেন, এ যেন আরেক বেনজীর! খবরে বলা হয়েছে, চাকরিজীবনে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন মতিউর। মাত্র একটি ব্যাংকেই রয়েছে তাঁর ১১৭ কোটি টাকা। বসুন্ধরা, গুলশানের মতো অভিজাত আবাসিক এলাকায় রয়েছে বিলাসবহুল একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি। এ ছাড়া গাজীপুর, সাভার এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে রিসোর্টসহ বিপুল পরিমাণ জমি।
নরসিংদীতে মতিউরের যে রিসোর্টটি রয়েছে, তা তৈরি হয়েছে ৪০ বিঘা জমির ওপর। অর্থ-সম্পদের মতো মতিউর স্ত্রীর দিক দিয়েও সম্পদশালী। তাঁর দুই স্ত্রী। তাঁদের একজন আবার নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের নেত্রী এবং ওই জেলার রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। মতিউর তাঁর মেয়েকে ১০ কোটি টাকা দিয়ে কানাডায় বাড়ি করে দিয়েছেন। ছোট বউকে এক দিনেই নাকি দান করেছেন ৩০০ কোটি টাকার সম্পদ। বিস্ময়করই বটে! একমাত্র আলাদিনের চেরাগ ছাড়া অদৃশ্য উৎস থেকে কেউ এমন বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হতে পারে না।
এমন বিত্তশালী পিতার পুত্র ১২ লাখ টাকায় ছাগল কিনবে না তো কে কিনবে? তারপরও সবাই অবাক হয়েছেন ভিন্ন একটি কারণে। মতিউর রহমান রাজস্ব বিভাগের একজন কর্মকর্তা হয়ে দিনের পর দিন অবৈধভাবে সম্পদের পরিমাণ-পরিধি বাড়িয়েছেন, তাঁর ব্যাংক-ব্যালেন্স ভরা ভাদরের নদীর মতো ফুলেফেঁপে উঠেছে। অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কোনো খবরই রাখল না! সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিবছর আয়কর রিটার্নের সঙ্গে সম্পদ বিবরণীও জমা দিতে হয়। মতিউর কি তা দিয়েছেন? মনে হয় না। তবে দুর্ভাগ্য মতিউরের।
পুত্র ইফাত যদি ১২ লাখের ছাগলের সঙ্গে ছবির মাধ্যমে ভাইরাল না হতো, তাহলে মতিউরের অপকর্মের খবর কেউ জানতেই পারত না। বোধকরি একেই বলে ‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’। সন্দেহপ্রবণেরা বলছেন, এমন কতশত মতিউর সরকারি প্রশাসনের নানা স্তরে আসন গেড়ে বসে আছেন, তার হদিস কে রাখে? ‘দৈব দুর্বিপাকে’ যদি তাঁদের অপকর্মের খবর প্রকাশিত না হয়, তাহলে তাঁরা হয়তো ‘সাধুসন্ত’র ছদ্মবেশে আমাদের সমাজে সম্মানের আসন অলংকৃত করতে থাকবেন।
‘পুকুরচুরি’ বলে একটি কথা চালু আছে আমাদের সমাজে। সাধারণত বড়সড় দুর্নীতি বা আত্মসাতের ক্ষেত্রে এ উপমাটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। রাজস্বের মতিউর কিংবা সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ যা করেছেন, তাকে পুকুরচুরি না বলে ‘পুকুর ডাকাতি’ বলাই বোধকরি যুক্তিযুক্ত। এই পুকুর ডাকাতেরা এত দিন সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের সম্পদ-সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন।
দুর্ভাগ্য আমাদের, যাদের আমরা ভূত তাড়ানোর শর্ষে হিসেবে বিশ্বাস করি, তারা একেকজন ভূত সেজে বসে আছেন। যেভাবে একের পর এক ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির গোমর ফাঁস হচ্ছে, তাতে দেশে কজন সৎ কর্মকর্তা আছেন, সে ভাবনায় তালু গরম হওয়ার জোগাড়! দুর্নীতি আজ তার ডানায় গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রকে ঢেকে ফেলেছে। সরকারি প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, রাজস্ব বিভাগ, স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা বিভাগ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও দুর্নীতি তার থাবা বসিয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ভাইস চ্যান্সেলরের যেসব অনিয়ম-দুর্নীতির খবর এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে, তাতে অনুমান করা যায়, পচনের মাত্রা কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
সাবেক আইজিপি বেনজীরের পর পুলিশের আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিপুল অর্থ-সম্পদের খবর পাওয়া গেছে। তিনিও নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের রাজ্য। তাঁর এসব সম্পদের তথ্য নাকি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জিসানুল হক অনলাইন মিডিয়ায় সরবরাহ করেছেন। সে জন্য তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কারও দুর্নীতির খবর ফাঁস করে দেওয়া বাংলাদেশের ‘পেনাল কোডে’র কোন ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তা জানতে বড্ড ইচ্ছে করছে। যেখানে একজন সরকারি কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের খবর ফাঁস করে দেওয়ায় এডিসি জিসানুলের পুরস্কৃত হওয়ার কথা, সেখানে তিনি হলেন তিরস্কৃত।
পৃথিবীর কোনো দেশে এমন নজির আছে বলে মনে হয় না। অপরদিকে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বিবৃতি দিয়ে পুলিশের দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় গণমাধ্যমের প্রতি গোস্সা প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে লেখক-গবেষক চিররঞ্জন সরকার তাঁর কলামে যথার্থই মন্তব্য করেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করা কি তাঁকে হেয় করা? অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাব্যক্তিরা কেন দুর্নীতিবাজদের দায় নিচ্ছেন? নাকি তাঁরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত?’
(আজকের পত্রিকা, ২৫ জুন ২০২৪) চিন্তিত হওয়ারই কথা। কেননা, যেভাবে নানা ফাঁকফোকর দিয়ে বড় বড় কর্তার অবৈধ কায়কারবারের খবর বেরিয়ে আসছে, তাতে ভবিষ্যতে কার মুখে চুনকালি পড়ে কে জানে! মতিউরের থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে ছাগলকাণ্ডে, ভবিষ্যতে হয়তো হোটেল কিংবা রিসোর্টকাণ্ডে কারও কারও মুখোশ খুলে যেতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
‘হাজার টাকার বাগান খাইল পাঁচ টাকার ছাগলে’—আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদবাক্য। ছাগল একটি গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু। এমনিতে এটি একটি নিরীহ প্রাণী, ‘সাত চড়ে রা নেই’ ধরনের। তবে বুদ্ধিশুদ্ধি কম থাকায় এটা মাঝেমধ্যে মনিবের ক্ষতি করে ফেলে। অবলা প্রাণী, তার ওপর মাথায় মগজ কম।
তাই কখন যে মনিব বা অন্য কারও বাগানে ঢুকে গাছপালা উদরস্থ করে, তার ঠিক-ঠিকানা নেই। বোধকরি এ থেকেই উপরিউক্ত প্রবাদটির উৎপত্তি। আবার ‘ছাগল’ একটি প্রসিদ্ধ গালিও বটে। কেউ বোকার মতো কাজ করলে বা কথা বললে মানুষ তাকে ‘ছাগলের মতো কাজ করলি’ বা ‘ছাগলের মতো কথা বলিস না’ বলে তিরস্কার করে। যদিও ছাগল কথা বলে না। ছাগল কখনো আলোচনার বিষয় ছিল না।
অবশ্য কিছুদিন আগে ছাগল সংবাদ শিরোনাম হয়েছিল ‘দেশে ছাগলের সংখ্যা বেশি’—এই খবরে। গ্রামাঞ্চলের গেরস্তবাড়িতে দু-চারটা ছাগল পোষা হয়। আবার বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও ছাগল পালন করা হয়। কুষ্টিয়ার ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট’ প্রজাতির ছাগল অত্যন্ত প্রসিদ্ধ।
২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট’ পালন প্রকল্পের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। এর উদ্যোক্তা ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী। তবে সে প্রকল্পটি সফলতা পায়নি।
আমার আজকের রচনা কিন্তু ছাগল প্রকল্প নিয়ে নয়; বরং একটি দামি ছাগল কীভাবে দেশের একজন শীর্ষ দুর্নীতিবাজের মুখোশ উন্মোচন করে দিল, তা নিয়েই কথা বলতে চাইছি। সে ‘মহান ছাগলটির’ কথা এখন আর কারও জানতে বাকি নেই। সদ্য উদ্যাপিত ঈদুল আজহা উপলক্ষে এক কিশোর ১২ লাখ টাকা দামের একটি ছাগল ক্রয় করেছিল। ছাগলের গলা জড়িয়ে ধরে ফটো তুলে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে বাহবা কুড়াতে গিয়ে সে কুড়াল মারল তার পিতা ও পরিবারের পায়ে। সংগত কারণেই ১২ লাখের ছাগল চলে এল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সবাই জানতে ইচ্ছুক, কে এই ধনাঢ্য ক্রেতা যে ১২ লাখ টাকার ছাগল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছেন?
অবশেষে বেরিয়ে এল থলের বিড়াল। বলা যায় কেঁচো খুঁড়তে সাপ। জানা গেল, সেই ছাগল ক্রেতা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার কিশোর পুত্র! পুত্রের নাম মুশফিকুর রহমান ইফাত, আর তার পিতা মতিউর রহমান এনবিআরের ‘কাস্টমস এক্সাইজ ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের’ প্রেসিডেন্ট। সংবাদমাধ্যমে এ খবর বেরোনোর পর সবাই বিস্ময়ে হতভম্ব। প্রশ্ন উঠল, একজন সরকারি কর্মকর্তার কিশোর পুত্র ১২ লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনার ক্ষমতা রাখলে তার পিতৃদেব কত টাকার মালিক?
জবাব পেতে বেশি দেরি হয়নি। পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মতিউর রহমানের অঢেল সম্পদের যে বিবরণ বেরিয়েছে, তাতে সবাই একবাক্যে বলেছেন, এ যেন আরেক বেনজীর! খবরে বলা হয়েছে, চাকরিজীবনে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন মতিউর। মাত্র একটি ব্যাংকেই রয়েছে তাঁর ১১৭ কোটি টাকা। বসুন্ধরা, গুলশানের মতো অভিজাত আবাসিক এলাকায় রয়েছে বিলাসবহুল একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি। এ ছাড়া গাজীপুর, সাভার এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে রিসোর্টসহ বিপুল পরিমাণ জমি।
নরসিংদীতে মতিউরের যে রিসোর্টটি রয়েছে, তা তৈরি হয়েছে ৪০ বিঘা জমির ওপর। অর্থ-সম্পদের মতো মতিউর স্ত্রীর দিক দিয়েও সম্পদশালী। তাঁর দুই স্ত্রী। তাঁদের একজন আবার নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের নেত্রী এবং ওই জেলার রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। মতিউর তাঁর মেয়েকে ১০ কোটি টাকা দিয়ে কানাডায় বাড়ি করে দিয়েছেন। ছোট বউকে এক দিনেই নাকি দান করেছেন ৩০০ কোটি টাকার সম্পদ। বিস্ময়করই বটে! একমাত্র আলাদিনের চেরাগ ছাড়া অদৃশ্য উৎস থেকে কেউ এমন বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হতে পারে না।
এমন বিত্তশালী পিতার পুত্র ১২ লাখ টাকায় ছাগল কিনবে না তো কে কিনবে? তারপরও সবাই অবাক হয়েছেন ভিন্ন একটি কারণে। মতিউর রহমান রাজস্ব বিভাগের একজন কর্মকর্তা হয়ে দিনের পর দিন অবৈধভাবে সম্পদের পরিমাণ-পরিধি বাড়িয়েছেন, তাঁর ব্যাংক-ব্যালেন্স ভরা ভাদরের নদীর মতো ফুলেফেঁপে উঠেছে। অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কোনো খবরই রাখল না! সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিবছর আয়কর রিটার্নের সঙ্গে সম্পদ বিবরণীও জমা দিতে হয়। মতিউর কি তা দিয়েছেন? মনে হয় না। তবে দুর্ভাগ্য মতিউরের।
পুত্র ইফাত যদি ১২ লাখের ছাগলের সঙ্গে ছবির মাধ্যমে ভাইরাল না হতো, তাহলে মতিউরের অপকর্মের খবর কেউ জানতেই পারত না। বোধকরি একেই বলে ‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’। সন্দেহপ্রবণেরা বলছেন, এমন কতশত মতিউর সরকারি প্রশাসনের নানা স্তরে আসন গেড়ে বসে আছেন, তার হদিস কে রাখে? ‘দৈব দুর্বিপাকে’ যদি তাঁদের অপকর্মের খবর প্রকাশিত না হয়, তাহলে তাঁরা হয়তো ‘সাধুসন্ত’র ছদ্মবেশে আমাদের সমাজে সম্মানের আসন অলংকৃত করতে থাকবেন।
‘পুকুরচুরি’ বলে একটি কথা চালু আছে আমাদের সমাজে। সাধারণত বড়সড় দুর্নীতি বা আত্মসাতের ক্ষেত্রে এ উপমাটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। রাজস্বের মতিউর কিংবা সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ যা করেছেন, তাকে পুকুরচুরি না বলে ‘পুকুর ডাকাতি’ বলাই বোধকরি যুক্তিযুক্ত। এই পুকুর ডাকাতেরা এত দিন সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের সম্পদ-সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন।
দুর্ভাগ্য আমাদের, যাদের আমরা ভূত তাড়ানোর শর্ষে হিসেবে বিশ্বাস করি, তারা একেকজন ভূত সেজে বসে আছেন। যেভাবে একের পর এক ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির গোমর ফাঁস হচ্ছে, তাতে দেশে কজন সৎ কর্মকর্তা আছেন, সে ভাবনায় তালু গরম হওয়ার জোগাড়! দুর্নীতি আজ তার ডানায় গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রকে ঢেকে ফেলেছে। সরকারি প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, রাজস্ব বিভাগ, স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা বিভাগ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও দুর্নীতি তার থাবা বসিয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ভাইস চ্যান্সেলরের যেসব অনিয়ম-দুর্নীতির খবর এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে, তাতে অনুমান করা যায়, পচনের মাত্রা কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
সাবেক আইজিপি বেনজীরের পর পুলিশের আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিপুল অর্থ-সম্পদের খবর পাওয়া গেছে। তিনিও নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের রাজ্য। তাঁর এসব সম্পদের তথ্য নাকি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জিসানুল হক অনলাইন মিডিয়ায় সরবরাহ করেছেন। সে জন্য তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কারও দুর্নীতির খবর ফাঁস করে দেওয়া বাংলাদেশের ‘পেনাল কোডে’র কোন ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তা জানতে বড্ড ইচ্ছে করছে। যেখানে একজন সরকারি কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের খবর ফাঁস করে দেওয়ায় এডিসি জিসানুলের পুরস্কৃত হওয়ার কথা, সেখানে তিনি হলেন তিরস্কৃত।
পৃথিবীর কোনো দেশে এমন নজির আছে বলে মনে হয় না। অপরদিকে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বিবৃতি দিয়ে পুলিশের দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় গণমাধ্যমের প্রতি গোস্সা প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে লেখক-গবেষক চিররঞ্জন সরকার তাঁর কলামে যথার্থই মন্তব্য করেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করা কি তাঁকে হেয় করা? অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাব্যক্তিরা কেন দুর্নীতিবাজদের দায় নিচ্ছেন? নাকি তাঁরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত?’
(আজকের পত্রিকা, ২৫ জুন ২০২৪) চিন্তিত হওয়ারই কথা। কেননা, যেভাবে নানা ফাঁকফোকর দিয়ে বড় বড় কর্তার অবৈধ কায়কারবারের খবর বেরিয়ে আসছে, তাতে ভবিষ্যতে কার মুখে চুনকালি পড়ে কে জানে! মতিউরের থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে ছাগলকাণ্ডে, ভবিষ্যতে হয়তো হোটেল কিংবা রিসোর্টকাণ্ডে কারও কারও মুখোশ খুলে যেতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে