বিতর্কিত শিল্পপতি গৌতম আদানিদের বিষয়ে আলোচনার দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের জাতীয় সংসদ অচল করে দিয়েছে বিরোধী দলগুলো। এ দিন সকালে অধিবেশন শুরুর আগেই কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গের কক্ষে বৈঠক করেন ১৩টি বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা। এরপর আদানিদের শেয়ার জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ৯টি দলের তরফে পৃথক পৃথক মুলতবি প্রস্তাবও দেওয়া হয় সংসদে, যাতে সব বিষয় স্থগিত রেখে আদানির বিষয়ে আলোচনা করা যায়। কিন্তু সরকার পক্ষ সেই দাবি না মানায় শুরু থেকেই হইচই শুরু করেন বিরোধী সংসদ সদস্যরা (এমপি)। তাই লোকসভা ও রাজ্যসভা প্রথমে মধ্যাহ্নভোজ পর্যন্ত এবং পরে দিনের মতো মুলতবি ঘোষিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত শিল্পপতি গৌতম আদানিকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ গ্রুপের প্রতিবেদনকে ঘিরে ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এই উত্তেজনার আঁচ জাতীয় সংসদেও উপলব্ধ হয় গতকাল।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের দাবি, আদানিদের কেলেঙ্কারির সঙ্গে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি এলআইসি, এসবিআইয়ের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার স্বার্থও জড়িত রয়েছে। তাই তাঁরা জরুরি ভিত্তিতে সংসদের আলোচনার দাবি তুললেও লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা এবং রাজ্যসভার চেয়ারপারসন জগদীপ ধনকর সেই দাবি খারিজ করে দেন। ফলে সংসদে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।

এদিকে, আদানিদের শেয়ারবাজারে ধস নামায় কোম্পানিটির তরফে নতুন শেয়ার ছাড়া বা এফপিওর বিষয়টি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। যদিও আদানি গোষ্ঠীর তরফে জানানো হয়েছে, বিনিয়োগকারীদের লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে এফপিও প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

• আদানির শেয়ার ডুবছে, লোকসভায় তোলপাড়ও চলছে  

এক সপ্তাহ আগেও বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী ছিলেন ভারতের আদানি গ্রুপের কর্ণধার গৌতম আদানি। কিন্তু হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও শেয়ার কারসাজির বিস্ফোরক অভিযোগ আনার এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বাজার মূলধন হারিয়েছে ১০৮ বিলিয়ন ডলার।

ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনের পর গৌতম আদানির ব্যক্তিগত সম্পদ কমেছে প্রায় ৫৭ বিলিয়ন ডলার। এশিয়ার শীর্ষ ধনীর অবস্থানটিও হারিয়েছেন তিনি।

আদানি গ্রুপের ফ্ল্যাগশিপ ভেঞ্চার আদানি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের শেয়ার গত বৃহস্পতিবার এক দিনেই দর হারিয়েছে ২৭ শতাংশ। এর আগে এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের বাজার দর কমেছে ২৮ শতাংশ। হিন্ডেনবার্গ-ঝড়ে আদানি গ্রুপের বন্ডের দামও কমে গেছে রেকর্ড পরিমাণ। আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেডের ডলার বন্ড যেটা বাজারে আসার কথা ২০২৪ সালে, সেটাও হিন্ডেনবার্গের থাবা থেকে বাদ যায়নি।