সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
বিদ্যমান ব্যবস্থাটা তরুণদের জানিয়ে দিয়েছে যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করার চেষ্টাই ভবিষ্যৎ গড়ার শ্রেষ্ঠ উপায় এবং উদ্যোগ। এটা আগেও ছিল, এখনো আছে। ব্রিটিশ আমলে সরকারি চাকরির চেয়ে বড় কাজ আর কী ছিল? পাকিস্তান আমলেও সেই বাস্তবতা অক্ষুণ্ন থেকেছে। ওদিকে রাষ্ট্রীয় চেষ্টাটা তো ছিল একটি পুঁজিবাদী ব্যবস্থা গড়ে তোলার। পুঁজিবাদে কিন্তু ব্যক্তিগত উদ্যোগ, উদ্যম ইত্যাদিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ব্যক্তিমালিকানাকে বিকশিত করাই এর লক্ষ্য। তাহলে? বাংলাদেশে সরকারি চাকরি কেন ব্যক্তিগত উদ্যোগকে ম্লান করে রেখেছে? এর কারণ নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রই হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রশক্তিই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
রাষ্ট্র তো রয়ে গেছে আগের মতোই আমলাতান্ত্রিক। স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্র যে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অধিক আমলাতান্ত্রিক, তাতে সন্দেহের কোনো সুযোগই নেই। বেসামরিক ও সামরিক আমলাতন্ত্রের হাতেই অদৃশ্য এবং দৃশ্যমান উভয় রূপে রাষ্ট্রের মূল ক্ষমতা ন্যস্ত। ক্ষমতা তো বটেই, সুযোগ-সুবিধাও আমলাতন্ত্রের হস্তেই ধৃত। তরুণেরা সে খবর রাখেন। প্রাইভেট সেক্টরে বেতন অধিক হতে পারে; কিন্তু ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত এবং উপরি-আয় চাইলে অতিরিক্ত পরিশ্রম আবশ্যক হয়।
পুলিশের ক্ষমতা কখন কম ছিল? ব্রিটিশ আমলেই এই বাহিনীর সৃষ্টি। তাদের দায়িত্ব ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, যাতে ব্রিটিশরাজ নির্বিঘ্নে শাসনের নামে শোষণ করতে পারে। ওই সুযোগে পুলিশ নিজেও শাসন-শোষণের ব্যাপারে কোনো কার্পণ্য করেনি। পুলিশের লাল পাগড়ি দেখলে হৃদকম্প বৃদ্ধি পেত না এমন সাহসী মানুষ সেকালে বিরল ছিল বৈকি। লাল পাগড়ি এখন নেই, ইউনিফর্ম বদল হয়েছে। সত্য-মিথ্যা জানি না, শুনেছি পুলিশের এবং র্যাবের ইউনিফর্ম ভাড়া করে নিয়ে ছিনতাই ইত্যাদি ঘটানো হয়ে থাকে। তবে ইউনিফর্মধারী পুলিশও যে আজকাল ছিনতাইয়ের অভিযোগে আটক হচ্ছে, এমন খবর তো খবরের কাগজেই পাওয়া যায়। যেমন এই খবরটা: ‘পুলিশের দুই সদস্য রিমান্ডে। অভিযোগ ৩৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ে অংশগ্রহণ’। ঘটনা ঢাকাতেই। এক ব্যবসায়ী যাচ্ছিলেন ওই টাকা নিয়ে, ব্যাংকে জমা দেবেন। পথে কয়েকজন মিলে তাঁকে তুলে নিল এক মাইক্রোবাসে, তাঁদের মধ্যে ইউনিফর্ম-পরিহিত ওই দুজন পুলিশ সদস্যও ছিলেন।
আরেকটি খবর, সেটাও ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার ব্যাপারেই; তবে বাইরে নয় ভেতরেই। ব্যাংকের ভেতরে দাঁড়িয়েছেন একজন, ২০ লাখ টাকা জমা দেবেন। ইউনিফর্ম-পরিহিত দুজন পুলিশ সদস্য তাঁকে বের করে নিয়ে গেলেন, মোটরসাইকেলে চড়ালেন এবং টাকাগুলো কেড়ে নিয়ে তাঁকে ফেলে দিলেন এক নির্জন স্থানে। ব্যাংকে লোক ছিল। ব্যাংকের লোক, ব্যাংকে আসা লোক; কেউ এগিয়ে আসেনি বাধা দিতে।
গায়ে ইউনিফর্ম থাকলে নিজের ঘরেও দাপট দেখানো সম্ভব। যেমন নারায়ণগঞ্জে একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর দেখিয়েছেন বলে অভিযুক্ত হয়েছেন এবং তাঁর কারাদণ্ডাদেশ হয়েছে তিন মাসের। অভিযোগকারী অন্য কেউ নন, পুলিশ সাহেবের স্ত্রী, যিনি নিজে একজন আইনজীবী। অফিসারটি নাকি স্ত্রীকে নিয়মিত চাপ দিতেন বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেওয়ার জন্য, ঘুমের মধ্যে বালিশ চেপে ধরে হত্যারও চেষ্টা নাকি করেছেন স্ত্রীকে। একসময় ছিলেন, এখন নেই, সাবেক হয়ে গেছেন, এমন একজন পুলিশ ও সেনাসদস্য ডাকাতিতে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন ঢাকার শ্যামপুর এলাকায়।
তবে এটা ঠিক যে পুলিশের কাজে চাপও কম নয়। আসামি ধরতে গিয়েও বিঘ্ন ঘটে; পথে আসামি ছিনতাইও হয়ে যায়। আর এমন মর্মান্তিক খবরও তো জানতে পাই, মাইক্রোবাসে আসামি গ্রেপ্তার অভিযানে বের হয়ে রেললাইনে আটকে পড়ে একসঙ্গে তিনজন পুলিশ সদস্যের মৃত্যু ঘটেছে।
বাংলাদেশে কে কাকে নিরাপত্তা দেয়? বিশেষ করে যখন কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন দেখা দেয়, তখন তো কথাই নেই, পুলিশের জন্য রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। মামলা দিতে হয় অতিদ্রুত; তাতে আসামি করতে হয় জানা-অজানা নানা অপরাধীকে। মৃত, কারাগারে বন্দী, বিদেশে প্রবাসীরাও বাদ পড়েন না। বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তারের অভিযানেও বের হতে হয়। গ্রেপ্তারের ব্যাপারটা অবশ্য কারও কারও জন্য কখনো কখনো সুবিধাও এনে দেয়। পুলিশের ‘গ্রেপ্তার-বাণিজ্য’ যে আগে ছিল না তা নয়, তবে এখন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। এই বাণিজ্যের প্রসারে অবশ্য বিস্ময়ের কোনো অবকাশ নেই; বাণিজ্যই যে আমাদের অর্থনীতির মূল বৈশিষ্ট্য, তাতে একবিন্দু সন্দেহ নেই; সব বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে, আর পুলিশের গ্রেপ্তার-বাণিজ্য পেছনে পড়ে থাকবে, এ তো ভারি অন্যায় আবদার। অন্যদের মতো তাঁরাও চাঁদাবাজি করে থাকেন।
ভালো কথা, পুলিশ যদি গ্রেপ্তার-বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি করতে পারে, তবে সরকার-সমর্থক ছাত্রনেতারাও বসে থাকবেন কেন? গ্রেপ্তার-বাণিজ্য না হোক, তাঁরা নিয়োগ-বাণিজ্য করে থাকেন। আর ছিনতাই তো চলছেই। ঢাকার চকবাজারের এক ব্যবসায়ী টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন ব্যাংকে, জমা দেবেন বলে। চার-পাঁচজন যুবক তাঁকে ঘিরে ফেলল, ‘ব্যাটা তুই বিএনপি-জামায়াত করিস’ বলে আর কোনো কথা নেই টেনেহিঁচড়ে রিকশায় তুলে তাঁকে একটি নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে গিয়ে টাকাগুলো কেড়ে নিল। সাধে কী আর একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি বলেছেন, লাগলে কোটি টাকা দেবেন, তবুও কমিটি তাঁর চাই!
আর এটা তো এখন কোনো খবরই নয় যে স্ত্রীকে হত্যা করে লাশ মাটিচাপা দিয়েছেন স্বামী। এমনকি এই খবরটাও আমাদের বিস্মিত করার ক্ষমতা হারিয়েছে যে শরীয়তপুরের আমেনা বেগম তিন সন্তানকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন; দুই সন্তানকে উদ্ধার করেছে স্থানীয় মানুষেরা, মা ও বড় ছেলের লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমেনা বেগমের বেকার স্বামী চাপ দিচ্ছিলেন শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য; কারণ তিনি বিদেশে যাবেন। স্ত্রী কী করে টাকা আনবেন তাঁর বাবার কাছ থেকে? বাবা তো শ্রমজীবী। টাকা আনতে না-পারার অপরাধে স্বামী স্ত্রীকে বলেছেন ঘর ছেড়ে চলে যেতে। কোথায় যাবেন, স্ত্রীর এই প্রশ্নের জবাবে স্বামী বলেছেন, ‘যাবার জায়গা না থাকলে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মর।’ স্ত্রী সেটাই করেছেন। আর এই খবরটাও তো আমাদের চমকে দেয় না; যাতে বলা হচ্ছে যে বিছানায় পড়েছিল কাঁথায় জড়ানো স্ত্রীর রক্তাক্ত মরদেহ, আর পাশে শুয়েছিলেন স্বামী। ছেলে ঘুমাচ্ছিল পাশের কামরায়। ঘটনার কারণ নাকি স্বামী সন্দেহ করতেন তাঁর স্ত্রীকে। এ খবরও মোটেই চাঞ্চল্যকর নয় যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঝগড়া করে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে আত্মহত্যা করেছেন।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রতিবাদের কথাও শোনা যায়, খুবই অল্প যদিও। যেমন জাতীয় নদী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রতিবাদ করেছেন, নদীর বালুখেকোদের বিরুদ্ধে। ফল হয়েছে এই, তিনি তাঁর চাকরিটি হারিয়েছেন। তিনি অবশ্য তাতে হতাশ হননি। বলেছেন, ‘আমি সততার সঙ্গে কাজ করেছি। কাজের কোনো শৈথিল্য ছিল কি না, সেটা জনগণ দেখবে। তবে এটা বলতে পারি, পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ সব নদ-নদীতে জলদস্যু, বালুখেকো, দখলদারদের বিজয় হয়েছে।’ ওদের বিজয় মানে যে জনগণের পরাজয় তাতে তো কোনো সন্দেহ নেই। আর তাঁর পদচ্যুতি কেবল যে তাঁর ব্যক্তিগত শাস্তি তা তো নয়, অন্যদের জন্যও সতর্কবাণী বটে। জনগণ সংগ্রামও করেছে, সাময়িক বিজয়ও লাভ করেছে, কিন্তু চূড়ান্ত বিজয় দেখা যাচ্ছে পুঁজিবাদেরই। তবে পুঁজিবাদের চূড়ান্ত পরাজয় যে আসন্ন, এমন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে—কেবল আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর সর্বত্র।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বিদ্যমান ব্যবস্থাটা তরুণদের জানিয়ে দিয়েছে যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করার চেষ্টাই ভবিষ্যৎ গড়ার শ্রেষ্ঠ উপায় এবং উদ্যোগ। এটা আগেও ছিল, এখনো আছে। ব্রিটিশ আমলে সরকারি চাকরির চেয়ে বড় কাজ আর কী ছিল? পাকিস্তান আমলেও সেই বাস্তবতা অক্ষুণ্ন থেকেছে। ওদিকে রাষ্ট্রীয় চেষ্টাটা তো ছিল একটি পুঁজিবাদী ব্যবস্থা গড়ে তোলার। পুঁজিবাদে কিন্তু ব্যক্তিগত উদ্যোগ, উদ্যম ইত্যাদিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ব্যক্তিমালিকানাকে বিকশিত করাই এর লক্ষ্য। তাহলে? বাংলাদেশে সরকারি চাকরি কেন ব্যক্তিগত উদ্যোগকে ম্লান করে রেখেছে? এর কারণ নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রই হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রশক্তিই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
রাষ্ট্র তো রয়ে গেছে আগের মতোই আমলাতান্ত্রিক। স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্র যে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অধিক আমলাতান্ত্রিক, তাতে সন্দেহের কোনো সুযোগই নেই। বেসামরিক ও সামরিক আমলাতন্ত্রের হাতেই অদৃশ্য এবং দৃশ্যমান উভয় রূপে রাষ্ট্রের মূল ক্ষমতা ন্যস্ত। ক্ষমতা তো বটেই, সুযোগ-সুবিধাও আমলাতন্ত্রের হস্তেই ধৃত। তরুণেরা সে খবর রাখেন। প্রাইভেট সেক্টরে বেতন অধিক হতে পারে; কিন্তু ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত এবং উপরি-আয় চাইলে অতিরিক্ত পরিশ্রম আবশ্যক হয়।
পুলিশের ক্ষমতা কখন কম ছিল? ব্রিটিশ আমলেই এই বাহিনীর সৃষ্টি। তাদের দায়িত্ব ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, যাতে ব্রিটিশরাজ নির্বিঘ্নে শাসনের নামে শোষণ করতে পারে। ওই সুযোগে পুলিশ নিজেও শাসন-শোষণের ব্যাপারে কোনো কার্পণ্য করেনি। পুলিশের লাল পাগড়ি দেখলে হৃদকম্প বৃদ্ধি পেত না এমন সাহসী মানুষ সেকালে বিরল ছিল বৈকি। লাল পাগড়ি এখন নেই, ইউনিফর্ম বদল হয়েছে। সত্য-মিথ্যা জানি না, শুনেছি পুলিশের এবং র্যাবের ইউনিফর্ম ভাড়া করে নিয়ে ছিনতাই ইত্যাদি ঘটানো হয়ে থাকে। তবে ইউনিফর্মধারী পুলিশও যে আজকাল ছিনতাইয়ের অভিযোগে আটক হচ্ছে, এমন খবর তো খবরের কাগজেই পাওয়া যায়। যেমন এই খবরটা: ‘পুলিশের দুই সদস্য রিমান্ডে। অভিযোগ ৩৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ে অংশগ্রহণ’। ঘটনা ঢাকাতেই। এক ব্যবসায়ী যাচ্ছিলেন ওই টাকা নিয়ে, ব্যাংকে জমা দেবেন। পথে কয়েকজন মিলে তাঁকে তুলে নিল এক মাইক্রোবাসে, তাঁদের মধ্যে ইউনিফর্ম-পরিহিত ওই দুজন পুলিশ সদস্যও ছিলেন।
আরেকটি খবর, সেটাও ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার ব্যাপারেই; তবে বাইরে নয় ভেতরেই। ব্যাংকের ভেতরে দাঁড়িয়েছেন একজন, ২০ লাখ টাকা জমা দেবেন। ইউনিফর্ম-পরিহিত দুজন পুলিশ সদস্য তাঁকে বের করে নিয়ে গেলেন, মোটরসাইকেলে চড়ালেন এবং টাকাগুলো কেড়ে নিয়ে তাঁকে ফেলে দিলেন এক নির্জন স্থানে। ব্যাংকে লোক ছিল। ব্যাংকের লোক, ব্যাংকে আসা লোক; কেউ এগিয়ে আসেনি বাধা দিতে।
গায়ে ইউনিফর্ম থাকলে নিজের ঘরেও দাপট দেখানো সম্ভব। যেমন নারায়ণগঞ্জে একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর দেখিয়েছেন বলে অভিযুক্ত হয়েছেন এবং তাঁর কারাদণ্ডাদেশ হয়েছে তিন মাসের। অভিযোগকারী অন্য কেউ নন, পুলিশ সাহেবের স্ত্রী, যিনি নিজে একজন আইনজীবী। অফিসারটি নাকি স্ত্রীকে নিয়মিত চাপ দিতেন বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেওয়ার জন্য, ঘুমের মধ্যে বালিশ চেপে ধরে হত্যারও চেষ্টা নাকি করেছেন স্ত্রীকে। একসময় ছিলেন, এখন নেই, সাবেক হয়ে গেছেন, এমন একজন পুলিশ ও সেনাসদস্য ডাকাতিতে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন ঢাকার শ্যামপুর এলাকায়।
তবে এটা ঠিক যে পুলিশের কাজে চাপও কম নয়। আসামি ধরতে গিয়েও বিঘ্ন ঘটে; পথে আসামি ছিনতাইও হয়ে যায়। আর এমন মর্মান্তিক খবরও তো জানতে পাই, মাইক্রোবাসে আসামি গ্রেপ্তার অভিযানে বের হয়ে রেললাইনে আটকে পড়ে একসঙ্গে তিনজন পুলিশ সদস্যের মৃত্যু ঘটেছে।
বাংলাদেশে কে কাকে নিরাপত্তা দেয়? বিশেষ করে যখন কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন দেখা দেয়, তখন তো কথাই নেই, পুলিশের জন্য রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। মামলা দিতে হয় অতিদ্রুত; তাতে আসামি করতে হয় জানা-অজানা নানা অপরাধীকে। মৃত, কারাগারে বন্দী, বিদেশে প্রবাসীরাও বাদ পড়েন না। বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তারের অভিযানেও বের হতে হয়। গ্রেপ্তারের ব্যাপারটা অবশ্য কারও কারও জন্য কখনো কখনো সুবিধাও এনে দেয়। পুলিশের ‘গ্রেপ্তার-বাণিজ্য’ যে আগে ছিল না তা নয়, তবে এখন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। এই বাণিজ্যের প্রসারে অবশ্য বিস্ময়ের কোনো অবকাশ নেই; বাণিজ্যই যে আমাদের অর্থনীতির মূল বৈশিষ্ট্য, তাতে একবিন্দু সন্দেহ নেই; সব বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে, আর পুলিশের গ্রেপ্তার-বাণিজ্য পেছনে পড়ে থাকবে, এ তো ভারি অন্যায় আবদার। অন্যদের মতো তাঁরাও চাঁদাবাজি করে থাকেন।
ভালো কথা, পুলিশ যদি গ্রেপ্তার-বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি করতে পারে, তবে সরকার-সমর্থক ছাত্রনেতারাও বসে থাকবেন কেন? গ্রেপ্তার-বাণিজ্য না হোক, তাঁরা নিয়োগ-বাণিজ্য করে থাকেন। আর ছিনতাই তো চলছেই। ঢাকার চকবাজারের এক ব্যবসায়ী টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন ব্যাংকে, জমা দেবেন বলে। চার-পাঁচজন যুবক তাঁকে ঘিরে ফেলল, ‘ব্যাটা তুই বিএনপি-জামায়াত করিস’ বলে আর কোনো কথা নেই টেনেহিঁচড়ে রিকশায় তুলে তাঁকে একটি নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে গিয়ে টাকাগুলো কেড়ে নিল। সাধে কী আর একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি বলেছেন, লাগলে কোটি টাকা দেবেন, তবুও কমিটি তাঁর চাই!
আর এটা তো এখন কোনো খবরই নয় যে স্ত্রীকে হত্যা করে লাশ মাটিচাপা দিয়েছেন স্বামী। এমনকি এই খবরটাও আমাদের বিস্মিত করার ক্ষমতা হারিয়েছে যে শরীয়তপুরের আমেনা বেগম তিন সন্তানকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন; দুই সন্তানকে উদ্ধার করেছে স্থানীয় মানুষেরা, মা ও বড় ছেলের লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমেনা বেগমের বেকার স্বামী চাপ দিচ্ছিলেন শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য; কারণ তিনি বিদেশে যাবেন। স্ত্রী কী করে টাকা আনবেন তাঁর বাবার কাছ থেকে? বাবা তো শ্রমজীবী। টাকা আনতে না-পারার অপরাধে স্বামী স্ত্রীকে বলেছেন ঘর ছেড়ে চলে যেতে। কোথায় যাবেন, স্ত্রীর এই প্রশ্নের জবাবে স্বামী বলেছেন, ‘যাবার জায়গা না থাকলে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মর।’ স্ত্রী সেটাই করেছেন। আর এই খবরটাও তো আমাদের চমকে দেয় না; যাতে বলা হচ্ছে যে বিছানায় পড়েছিল কাঁথায় জড়ানো স্ত্রীর রক্তাক্ত মরদেহ, আর পাশে শুয়েছিলেন স্বামী। ছেলে ঘুমাচ্ছিল পাশের কামরায়। ঘটনার কারণ নাকি স্বামী সন্দেহ করতেন তাঁর স্ত্রীকে। এ খবরও মোটেই চাঞ্চল্যকর নয় যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঝগড়া করে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে আত্মহত্যা করেছেন।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রতিবাদের কথাও শোনা যায়, খুবই অল্প যদিও। যেমন জাতীয় নদী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রতিবাদ করেছেন, নদীর বালুখেকোদের বিরুদ্ধে। ফল হয়েছে এই, তিনি তাঁর চাকরিটি হারিয়েছেন। তিনি অবশ্য তাতে হতাশ হননি। বলেছেন, ‘আমি সততার সঙ্গে কাজ করেছি। কাজের কোনো শৈথিল্য ছিল কি না, সেটা জনগণ দেখবে। তবে এটা বলতে পারি, পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ সব নদ-নদীতে জলদস্যু, বালুখেকো, দখলদারদের বিজয় হয়েছে।’ ওদের বিজয় মানে যে জনগণের পরাজয় তাতে তো কোনো সন্দেহ নেই। আর তাঁর পদচ্যুতি কেবল যে তাঁর ব্যক্তিগত শাস্তি তা তো নয়, অন্যদের জন্যও সতর্কবাণী বটে। জনগণ সংগ্রামও করেছে, সাময়িক বিজয়ও লাভ করেছে, কিন্তু চূড়ান্ত বিজয় দেখা যাচ্ছে পুঁজিবাদেরই। তবে পুঁজিবাদের চূড়ান্ত পরাজয় যে আসন্ন, এমন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে—কেবল আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর সর্বত্র।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
১ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে