করোনা মহামারিতে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সবই। সবচেয়ে বেশি দিন, প্রায় দেড় বছর বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা ছাড়াও এ সময়ে এসএসসি-এইচএসসি বা এ ধরনের কোনো পাবলিক পরীক্ষাও নেওয়া যায়নি। এখন করোনা সংক্রমণ কমে আসায় নতুন স্বাভাবিকে গতকাল রোববার প্রথমবারের মতো পাবলিক পরীক্ষায় বসল শিক্ষার্থীরা। করোনা পরিস্থিতির অবনতি না হলে পরের এসএসসি আগামী মে-জুন নাগাদ অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির দিকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার আগে ২০২০ সালের পরীক্ষাটা নেওয়া গিয়েছিল।

কিন্তু এ বছর আর সম্ভব হয়নি। করোনা পরিস্থিতি তখন ভয়ানক। তাই প্রায় ৯ মাস দেরিতে পরীক্ষায় বসল শিক্ষার্থীরা।

গতকাল থেকে শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশে ১১টি বোর্ডের অধীনে ২২ লাখ ৪৩ হাজার ২৫৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। সারা দেশের ৩ হাজার ৬৭৯টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হচ্ছে।

দীর্ঘ সময় পর অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষা নিয়ে সতর্ক অবস্থানে সংশ্লিষ্টরা। পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে কেউ গুজব ছড়ানো এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপচেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। রোববার রাজধানীর মতিঝিল বয়েজ স্কুল কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। আশা করি কোথাও প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে না। কিন্তু বরাবরের মতো গুজব ছড়ানোর মতো একটা চেষ্টা আছে। কেউ গুজবে কান দেবেন না। তবে যারা গুজব ছড়াবে কিংবা প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপচেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি জানান, ‘বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। এ অবস্থায় থাকলে পরবর্তী এসএসসি পরীক্ষা ফেব্রুয়ারি বা মার্চে নেওয়া সম্ভব না হলেও খুব বেশি বিলম্বে হবে না। শিক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ করার জন্য সময় দিতে হবে। সশরীরে শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের গুরুত্ব দিয়ে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, মে-জুন নাগাদ এ পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে।’

এদিকে যানজট এবং সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় রাজধানীর পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ভোগান্তিতে পড়তে দেখা গেছে। অনেক শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট সময়ের পরে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করেছে। যদিও শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনায় পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে।

এদিকে সারা দেশ থেকে আসা তথ্যে দেখা যায়, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী প্রথম দিনের পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। এ ক্ষেত্রে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে অনুপস্থিতির হার ছিল চোখে পড়ার মতো। এ শিক্ষা বোর্ডে ৯ হাজার ৮৯৪ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল, যা সর্বমোট পরীক্ষার্থীর ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এ বোর্ডের ১০ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়।

এ ছাড়া ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ৩ হাজার ৫৪৮ পরীক্ষার্থী প্রথম পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল, যা এসব শিক্ষা বোর্ডের সর্বমোট পরীক্ষার্থীর শূন্য দশমিক ৭৮ শতাংশ। পাশাপাশি এসব শিক্ষা বোর্ডের ২ জন পরীক্ষার্থী এবং ২ জন কক্ষ পরিদর্শককে বহিষ্কার করা হয়।