ইয়ুমনা রিজভি
মানবাধিকারবিষয়ক ইউরোপীয় আদালত যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’র সময় সংঘটিত নির্যাতনের জবাবদিহির প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ রুলিং দিয়েছেন। গত ১৬ জানুয়ারি এই রুলিং দেওয়া হয়। মুস্তাফা আল-হাওসাউই বনাম লিথুয়ানিয়া মামলায় আদালত প্রমাণ পেয়েছেন যে, সিআইএর গোপন আটক কর্মসূচিতে জড়িত থাকার এবং একজন সৌদি নাগরিক আল-হাওসাউইয়েকে নির্যাতন করার কারণে লিথুয়ানিয়ায় মানবাধিকার-সংক্রান্ত ইউরোপীয় সনদ লঙ্ঘিত হয়েছে।
আল-হাওসাউইয়েকে এক লাখের বেশি মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে লিথুয়ানিয়াকে আদেশ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য এ কারাগারটি লিথুয়ানিয়ায় অবস্থিত ছিল। আল-হাওসাউই বর্তমানে কিউবার গুয়ানতানামো বে কারাগারে অন্য ২৯ মুসলিম বন্দীর সঙ্গে আটক রয়েছেন।
নাইন-ইলেভেন-পরবর্তী নির্যাতনে জড়িত থাকার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোকে জবাবদিহি করার জন্য আদালত যে ধারাবাহিক রায় দিয়ে চলেছেন, এ রায়টি তারই সর্বশেষ সংযোজন। ইউরোপীয় আদালত এর আগে পোল্যান্ড, রোমানিয়া, ইতালি ও মেসিডোনিয়ার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন।
অন্যান্য ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও ইউরোপীয় কাউন্সিল, সেই সঙ্গে ইউরোপীয় দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। যদিও সেগুলো সব সময় যথার্থ না। যুক্তরাজ্য ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন হামলায় তার জড়িত থাকার সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও নির্যাতনের জন্য ইরাকি ভুক্তভোগীদের ২ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের বেশি ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।
এ ছাড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের মধ্যে গুয়ানতানামোতে আটক থাকা ব্রিটিশ নাগরিকদের এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের সহায়তায় অপহৃত ও নির্যাতিত দুটি লিবীয় পরিবারকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। তবে যুক্তরাজ্য তাদের বাহিনী কর্তৃক নাইন-ইলেভেন-পরবর্তী নির্যাতনের বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত বাতিল করেছে এবং ইরাকে অপরাধের অভিযোগ বিষয়ে তদন্ত বন্ধ করে দিয়েছে।
ইতালির একটি আদালত ২৩ আমেরিকানকে (সিআইএর এজেন্ট ও একজন বিমানবাহিনীর কর্নেলসহ) তাদের অনুপস্থিতিতে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। তাঁদের অপরাধ ছিল, মিলানে বসবাসকারী মিসরীয় ইমাম হাসান নাসরকে অপহরণ করে মিসরে হস্তান্তর করা। মিসরে তাঁকে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এই মামলায় জড়িত থাকার জন্য ইতালির ওই আদালত সাবেক সামরিক গোয়েন্দাপ্রধানকে ১০ বছর এবং তাঁর সাবেক সহকারীকে ৯ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন।
ফ্রান্স, পর্তুগাল এবং স্পেনও তাদের বিমানবন্দর ব্যবহার করে সিআইএর অপহরণের ঘটনা ঘটানোর বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। তবে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের হয়নি। পোল্যান্ডে সিআইএর কার্যক্রমের বিরুদ্ধে এখনো একটি তদন্ত চলছে।
কানাডাও গুয়ানতানামোয় ওমর খাদর নামের এক কানাডিয়ান নাগরিককে তাঁর কারাবাসের জন্য নিজের দায় স্বীকার করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে ৮১ লাখ ডলার। এ ছাড়া মাহের আরার নামের আরেক কানাডীয় নাগরিককেও একই পরিমাণ অর্থ দিয়েছে তারা, যাকে মার্কিন সরকারের সিদ্ধান্তে সিরিয়ায় পাঠানো হয়েছিল, যেখানে তাঁকে এক বছর আটক এবং নির্যাতন করা হয়েছিল।
আদালতের এসব রায় এবং আদালতের বাইরে মীমাংসাগুলো ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ চলাকালে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ইউরোপীয় ও অন্যান্য দেশকে বিচারের আওতায় আনার প্রচেষ্টাকে তুলে ধরে। কিন্তু একই সঙ্গে এসব ঘটনার প্রধান কারিগর যুক্তরাষ্ট্রের দায়বদ্ধ না থাকার অভাবকে আরও প্রকট করে তোলে।
‘নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অপমানজনক আচরণ ও শাস্তির বিরুদ্ধে চুক্তি’তে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র তার সরকারি বাহিনী পরিচালিত নির্যাতনের শিকারদের ক্ষতিপূরণ দিতে দায়বদ্ধ। তবে আইনি বাধা প্রায়ই নির্যাতিতদের মার্কিন আদালতে বিচার চাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করে।
যেমন সাম্প্রতিককালে ‘যুক্তরাষ্ট্র বনাম জুবায়দাহ’ মামলায় দেখা গেছে, ‘রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা অধিকার’ প্রয়োগ করে সরকার যেসব তথ্য জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সংবেদনশীল মনে করে, সেগুলো আদালতে উপস্থাপন করে না। গুয়ানতানামোয় বন্দী থাকা সৌদি আরবে জন্মগ্রহণকারী ফিলিস্তিনি আবু জুবায়দাহ দায়ের করা মামলায়, তাঁর ওপর নির্যাতনের প্রমাণাদি পেশ করার চেষ্টা করেন তাঁর আইনজীবীরা। কিন্তু সরকার জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষতি হবে বলে যুক্তি দেখিয়ে সেগুলো আদালতে উপস্থাপনে বাধা দেয়। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট সরকারের পক্ষে রায় দেয়।
ঐতিহাসিকভাবে, আদালতের মামলা খারিজের আরেকটি কারণ হলো মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে ‘কোনো দায় নেই’ দাবি করা। এই দাবির মাধ্যমে সরকার তাদের নিজস্ব বাহিনী এবং বেসরকারি ঠিকাদারদেরও রক্ষা করে থাকে।
বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বিচারব্যবস্থাকেও এড়িয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধের তদন্ত শুরু করলে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এ ছাড়া তারা মনে করে ‘অধিকার ও দায়িত্বের ব্যাপারে আমেরিকানদের ঘোষণা বাধ্যতামূলক নয়’; ফলে ইন্টার-আমেরিকান মানবাধিকার কমিশনের (আইএসিএইচআর) সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ মানাটাও বাধ্যতামূলক নয়। ২০২০ সালে আইএসিএইচআর গুয়ানতানামোর সাবেক বন্দী দজামেল আমেজিয়ানকে নির্যাতন, অপব্যবহার ও অনির্দিষ্টকাল ধরে আটকের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র যেন ওই ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেয়, এই সুপারিশও করা হয়। কিন্তু মার্কিন সরকার এখন পর্যন্ত তা করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের আইনব্যবস্থায় জবাবদিহি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে খুবই কম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আবু গারিব কারাগারে নির্যাতনের তদন্তের পর মাত্র ১১ জন নিম্নপদস্থ সেনাসদস্যের কোর্ট মার্শাল করা হয়েছিল। ওবামা প্রশাসনের আমলে ‘উন্নত জিজ্ঞাসাবাদ কৌশল’ ব্যবহার করে সিআইএর ১০১টি জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে মাত্র দুটিতে আরও তদন্তের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। আর ২০১২ সালে কোনো ব্যবস্থা না নিয়েই তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিদেশি নাগরিকদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানানোর জন্য গঠিত ‘ফরেন ক্লেইমস অ্যাক্ট’-এর অধীনে দাবি করা ৫০৬টি মামলার মধ্যে মাত্র একটির ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রেকর্ড পাওয়া যায়। ইরাকে অবৈধভাবে আটক রাখার জন্য মাত্র একজনকে এক হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
নির্যাতনের শিকার যারা, তাদের দায়ের করা মামলার মধ্যে বেসরকারি সামরিক ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে দুটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এমন একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৩ সালে আবু গারিব এবং অন্যান্য গোপন কারাগারে আটক থাকা ৭১ জন সাবেক বন্দীকে ৫২ লাখ ৮ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়। ২০১৭ সালে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন নির্যাতনের শিকার তিনজনের পক্ষে করা একটি মামলায় মনোবিজ্ঞানী জেমস মিচেল ও ব্রুস জেসেনের সঙ্গে একটি গোপনীয় সমঝোতায় পৌঁছায়। উল্লেখ্য, নির্যাতন কর্মসূচি তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই দুই মনোবিজ্ঞানীকে আট কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ দিয়েছিল।
১৮ বার খারিজের চেষ্টা করার পরও, আবু গারিব কারাগারে নির্যাতনের জন্য সরকারি ঠিকাদার সিএসিআই ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে নির্যাতনের শিকার চারজন ইরাকির দায়ের করা মামলাটি বিচারের জন্য উঠছে।
এই মামলা ও তদন্তগুলো ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ চলাকালে নির্যাতনের শিকারদের আঘাতের তীব্রতা ঠিকমতো বিবেচনা করতে পারেনি। ক্ষতিপূরণের অভাবে শারীরিক ও মানসিক আঘাতের শিকার লোকজনের কষ্ট আরও গভীর হয়েছে। আজ পর্যন্ত নাইন-ইলেভেন-পরবর্তী নীতি ও কর্মকাণ্ডের জন্য কোনো জ্যেষ্ঠ সরকারি বা সামরিক কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়নি।
এসব নির্যাতনের ঘটনার দায় নিতে যুক্তরাষ্ট্র এখনো অনিচ্ছুক। গুয়ানতানামো কারাগারে এখন পর্যন্ত ৩০ জন লোককে এমনভাবে আটকে রাখা হচ্ছে, যা নিষ্ঠুর আচরণের শামিল। দেরিতে হলেও এর বিচার হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং দেশটিকে বিচার এড়িয়ে যেতে দেওয়া যাবে না।
ইয়ুমনা রিজভি, সেন্টার ফর ভিকটিমস অব টর্চারের নীতি বিশ্লেষক
(আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
মানবাধিকারবিষয়ক ইউরোপীয় আদালত যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’র সময় সংঘটিত নির্যাতনের জবাবদিহির প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ রুলিং দিয়েছেন। গত ১৬ জানুয়ারি এই রুলিং দেওয়া হয়। মুস্তাফা আল-হাওসাউই বনাম লিথুয়ানিয়া মামলায় আদালত প্রমাণ পেয়েছেন যে, সিআইএর গোপন আটক কর্মসূচিতে জড়িত থাকার এবং একজন সৌদি নাগরিক আল-হাওসাউইয়েকে নির্যাতন করার কারণে লিথুয়ানিয়ায় মানবাধিকার-সংক্রান্ত ইউরোপীয় সনদ লঙ্ঘিত হয়েছে।
আল-হাওসাউইয়েকে এক লাখের বেশি মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে লিথুয়ানিয়াকে আদেশ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য এ কারাগারটি লিথুয়ানিয়ায় অবস্থিত ছিল। আল-হাওসাউই বর্তমানে কিউবার গুয়ানতানামো বে কারাগারে অন্য ২৯ মুসলিম বন্দীর সঙ্গে আটক রয়েছেন।
নাইন-ইলেভেন-পরবর্তী নির্যাতনে জড়িত থাকার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোকে জবাবদিহি করার জন্য আদালত যে ধারাবাহিক রায় দিয়ে চলেছেন, এ রায়টি তারই সর্বশেষ সংযোজন। ইউরোপীয় আদালত এর আগে পোল্যান্ড, রোমানিয়া, ইতালি ও মেসিডোনিয়ার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন।
অন্যান্য ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও ইউরোপীয় কাউন্সিল, সেই সঙ্গে ইউরোপীয় দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। যদিও সেগুলো সব সময় যথার্থ না। যুক্তরাজ্য ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন হামলায় তার জড়িত থাকার সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও নির্যাতনের জন্য ইরাকি ভুক্তভোগীদের ২ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের বেশি ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।
এ ছাড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের মধ্যে গুয়ানতানামোতে আটক থাকা ব্রিটিশ নাগরিকদের এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের সহায়তায় অপহৃত ও নির্যাতিত দুটি লিবীয় পরিবারকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। তবে যুক্তরাজ্য তাদের বাহিনী কর্তৃক নাইন-ইলেভেন-পরবর্তী নির্যাতনের বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত বাতিল করেছে এবং ইরাকে অপরাধের অভিযোগ বিষয়ে তদন্ত বন্ধ করে দিয়েছে।
ইতালির একটি আদালত ২৩ আমেরিকানকে (সিআইএর এজেন্ট ও একজন বিমানবাহিনীর কর্নেলসহ) তাদের অনুপস্থিতিতে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। তাঁদের অপরাধ ছিল, মিলানে বসবাসকারী মিসরীয় ইমাম হাসান নাসরকে অপহরণ করে মিসরে হস্তান্তর করা। মিসরে তাঁকে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এই মামলায় জড়িত থাকার জন্য ইতালির ওই আদালত সাবেক সামরিক গোয়েন্দাপ্রধানকে ১০ বছর এবং তাঁর সাবেক সহকারীকে ৯ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন।
ফ্রান্স, পর্তুগাল এবং স্পেনও তাদের বিমানবন্দর ব্যবহার করে সিআইএর অপহরণের ঘটনা ঘটানোর বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। তবে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের হয়নি। পোল্যান্ডে সিআইএর কার্যক্রমের বিরুদ্ধে এখনো একটি তদন্ত চলছে।
কানাডাও গুয়ানতানামোয় ওমর খাদর নামের এক কানাডিয়ান নাগরিককে তাঁর কারাবাসের জন্য নিজের দায় স্বীকার করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে ৮১ লাখ ডলার। এ ছাড়া মাহের আরার নামের আরেক কানাডীয় নাগরিককেও একই পরিমাণ অর্থ দিয়েছে তারা, যাকে মার্কিন সরকারের সিদ্ধান্তে সিরিয়ায় পাঠানো হয়েছিল, যেখানে তাঁকে এক বছর আটক এবং নির্যাতন করা হয়েছিল।
আদালতের এসব রায় এবং আদালতের বাইরে মীমাংসাগুলো ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ চলাকালে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ইউরোপীয় ও অন্যান্য দেশকে বিচারের আওতায় আনার প্রচেষ্টাকে তুলে ধরে। কিন্তু একই সঙ্গে এসব ঘটনার প্রধান কারিগর যুক্তরাষ্ট্রের দায়বদ্ধ না থাকার অভাবকে আরও প্রকট করে তোলে।
‘নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অপমানজনক আচরণ ও শাস্তির বিরুদ্ধে চুক্তি’তে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র তার সরকারি বাহিনী পরিচালিত নির্যাতনের শিকারদের ক্ষতিপূরণ দিতে দায়বদ্ধ। তবে আইনি বাধা প্রায়ই নির্যাতিতদের মার্কিন আদালতে বিচার চাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করে।
যেমন সাম্প্রতিককালে ‘যুক্তরাষ্ট্র বনাম জুবায়দাহ’ মামলায় দেখা গেছে, ‘রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা অধিকার’ প্রয়োগ করে সরকার যেসব তথ্য জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সংবেদনশীল মনে করে, সেগুলো আদালতে উপস্থাপন করে না। গুয়ানতানামোয় বন্দী থাকা সৌদি আরবে জন্মগ্রহণকারী ফিলিস্তিনি আবু জুবায়দাহ দায়ের করা মামলায়, তাঁর ওপর নির্যাতনের প্রমাণাদি পেশ করার চেষ্টা করেন তাঁর আইনজীবীরা। কিন্তু সরকার জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষতি হবে বলে যুক্তি দেখিয়ে সেগুলো আদালতে উপস্থাপনে বাধা দেয়। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট সরকারের পক্ষে রায় দেয়।
ঐতিহাসিকভাবে, আদালতের মামলা খারিজের আরেকটি কারণ হলো মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে ‘কোনো দায় নেই’ দাবি করা। এই দাবির মাধ্যমে সরকার তাদের নিজস্ব বাহিনী এবং বেসরকারি ঠিকাদারদেরও রক্ষা করে থাকে।
বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বিচারব্যবস্থাকেও এড়িয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধের তদন্ত শুরু করলে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এ ছাড়া তারা মনে করে ‘অধিকার ও দায়িত্বের ব্যাপারে আমেরিকানদের ঘোষণা বাধ্যতামূলক নয়’; ফলে ইন্টার-আমেরিকান মানবাধিকার কমিশনের (আইএসিএইচআর) সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ মানাটাও বাধ্যতামূলক নয়। ২০২০ সালে আইএসিএইচআর গুয়ানতানামোর সাবেক বন্দী দজামেল আমেজিয়ানকে নির্যাতন, অপব্যবহার ও অনির্দিষ্টকাল ধরে আটকের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র যেন ওই ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেয়, এই সুপারিশও করা হয়। কিন্তু মার্কিন সরকার এখন পর্যন্ত তা করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের আইনব্যবস্থায় জবাবদিহি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে খুবই কম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আবু গারিব কারাগারে নির্যাতনের তদন্তের পর মাত্র ১১ জন নিম্নপদস্থ সেনাসদস্যের কোর্ট মার্শাল করা হয়েছিল। ওবামা প্রশাসনের আমলে ‘উন্নত জিজ্ঞাসাবাদ কৌশল’ ব্যবহার করে সিআইএর ১০১টি জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে মাত্র দুটিতে আরও তদন্তের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। আর ২০১২ সালে কোনো ব্যবস্থা না নিয়েই তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিদেশি নাগরিকদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানানোর জন্য গঠিত ‘ফরেন ক্লেইমস অ্যাক্ট’-এর অধীনে দাবি করা ৫০৬টি মামলার মধ্যে মাত্র একটির ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রেকর্ড পাওয়া যায়। ইরাকে অবৈধভাবে আটক রাখার জন্য মাত্র একজনকে এক হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
নির্যাতনের শিকার যারা, তাদের দায়ের করা মামলার মধ্যে বেসরকারি সামরিক ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে দুটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এমন একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৩ সালে আবু গারিব এবং অন্যান্য গোপন কারাগারে আটক থাকা ৭১ জন সাবেক বন্দীকে ৫২ লাখ ৮ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়। ২০১৭ সালে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন নির্যাতনের শিকার তিনজনের পক্ষে করা একটি মামলায় মনোবিজ্ঞানী জেমস মিচেল ও ব্রুস জেসেনের সঙ্গে একটি গোপনীয় সমঝোতায় পৌঁছায়। উল্লেখ্য, নির্যাতন কর্মসূচি তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই দুই মনোবিজ্ঞানীকে আট কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ দিয়েছিল।
১৮ বার খারিজের চেষ্টা করার পরও, আবু গারিব কারাগারে নির্যাতনের জন্য সরকারি ঠিকাদার সিএসিআই ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে নির্যাতনের শিকার চারজন ইরাকির দায়ের করা মামলাটি বিচারের জন্য উঠছে।
এই মামলা ও তদন্তগুলো ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ চলাকালে নির্যাতনের শিকারদের আঘাতের তীব্রতা ঠিকমতো বিবেচনা করতে পারেনি। ক্ষতিপূরণের অভাবে শারীরিক ও মানসিক আঘাতের শিকার লোকজনের কষ্ট আরও গভীর হয়েছে। আজ পর্যন্ত নাইন-ইলেভেন-পরবর্তী নীতি ও কর্মকাণ্ডের জন্য কোনো জ্যেষ্ঠ সরকারি বা সামরিক কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়নি।
এসব নির্যাতনের ঘটনার দায় নিতে যুক্তরাষ্ট্র এখনো অনিচ্ছুক। গুয়ানতানামো কারাগারে এখন পর্যন্ত ৩০ জন লোককে এমনভাবে আটকে রাখা হচ্ছে, যা নিষ্ঠুর আচরণের শামিল। দেরিতে হলেও এর বিচার হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং দেশটিকে বিচার এড়িয়ে যেতে দেওয়া যাবে না।
ইয়ুমনা রিজভি, সেন্টার ফর ভিকটিমস অব টর্চারের নীতি বিশ্লেষক
(আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১৭ ঘণ্টা আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
২০ ঘণ্টা আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৮ দিন আগে