বিধান রিবেরু
আমরা এখন বাস করছি প্রাচুর্যের যুগে। চারদিকে জীবনের এত আয়োজন যে আমাদের মন বিগলিত হয়, চোখ ধাঁধিয়ে যায়। নৈর্ব্যক্তিক বৈশিষ্ট্যের সম্প্রসারণ এমন মাত্রায় ঘটেছে, যাতে আপাতদৃষ্টে মনে হয় বেশ ভালোই হলো। কিন্তু আখেরে আমার মনে হয় ক্ষতিটা যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। খেয়াল করে দেখুন, রেস্তোরাঁয় ‘আ লা কাখ্ত’ ভালো, না ‘বুফে’? খাবারের তালিকা দেখে ফরমাশ দেওয়ার চেয়ে অনেকেই ইদানীং সামনে সাজিয়ে রাখা অর্ধশতাধিক খাবারের থালা থেকে মনের পছন্দ অনুযায়ী খাবার বেছে নিতে চান। এতে হয় কী, এক ক্যুইজিনের সঙ্গে আরেক ক্যুইজিনের রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়ে যায়। থাই, চীনা, মোগলাই ও বাঙালি খাবারের রন্ধনপ্রণালি এক নয়, তাই এদের রসায়নটাও ভিন্ন। কিন্তু কেউ যদি একই সময়ে তিন-চার রন্ধনপ্রণালির একাধিক খাবার পেটে চালান করে দেন, তাহলে বদহজম হওয়ার শঙ্কা বেড়ে যায়। একই ব্যাপার ঘটতে পারে দৃশ্যমাধ্যমের ক্ষেত্রেও।
আগে একটি মাত্র টেলিভিশন ছিল, সেটার মধ্যেই বিচিত্র অনুষ্ঠান। এখন বিচিত্র টিভি চ্যানেলে নানানমাত্রিক অনুষ্ঠান চলে। ঘরের বৈঠকখানায় বসে আমরা একের পর এক চ্যানেল পাল্টাতে থাকি। স্থির হতে পারি না কোথাও। একই ঘটনা ঘটেছে চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও। সিঙ্গেল স্ক্রিন বিদায়, এসেছে মাল্টিস্ক্রিন। সিনেপ্লেক্সে অনেক সিনেমা চলে, বেছে নিতে হয় তার মধ্য থেকে একটি। এটি যেন সিনেমার বুফে। আর চাহিদা ও চাঁদাভিত্তিক ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্ল্যাটফর্মের কথা তো বলাই বাহুল্য। সেখানে কোন সিরিজ বা সিনেমা দেখবেন, তা ঠিক করতে করতেই আধঘণ্টা চলে যায়। এই প্রাচুর্য আমাদের অস্থির করে তুলেছে তো বটেই, স্থিরতাকেও নষ্ট করেছে। অনেকেই এই বাছাই করতে করতে দেখা যায় ক্লান্ত হয়ে হারিয়ে ফেলে সিনেমা বা সিরিজ দেখার আগ্রহ। আসলে এত বিকল্প আমাদের সামনে, আমরা সেসব নিয়ে প্রায়ই ধন্দে পড়ে যাই। গোলকধাঁধার ভেতরে ঘুরতে ঘুরতে শেষমেশ দেখা যায় আর কিছুই দেখা হলো না, ছুটির দিনের বিকেলটাই পণ্ড!
প্রশ্ন হলো, এত প্রাচুর্য বা বিকল্প কি আমাদের দরকার? কী করব এত এত সিনেমা ও সিরিজ দিয়ে? সেসব যদি আবার হয় অধিকাংশই ছক বা কাঠামো ধরে বানানো? হরর ছবির কাটতি বেশি, তো দেখা যায় বিভিন্ন ওটিটিতে আপ হয়ে যাচ্ছে দুনিয়ার হরেক রকমের হরর ছবি। মারামারি-কাটাকাটি মানুষ দেখে, তো ওটিটি নিজেই প্রযোজনা করে বানিয়ে নিচ্ছে অ্যাকশন ও ভায়োলেন্সে ভরপুর সিনেমা ও সিরিজ। আর যৌনতার কথা আলাদা করে কী আর বলব! ১৮ প্লাস কনটেন্টের চাহিদা সব সময়ই থাকে শীর্ষে। এসব ভিড়ের চাপে চিড়েচ্যাপটা হওয়ার জোগাড় হয় ভালো চলচ্চিত্র ও ধারাবাহিকের। মুখে মুখে যদি কিছু ভালো কনটেন্টের কথা ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে মানুষ সেটি দেখে। নয়তো নিজে থেকে কনটেন্ট ঘেঁটে দেখা এবং দেখার পর ভালোমন্দ রায় দেওয়া দর্শকের সংখ্যা খুবই কম। ওটিটির অধিকাংশ দর্শকই দেখা যায় টিভি দেখতে দেখতে বিরক্ত, যাঁদের সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখার ফুরসত নেই, তাঁরা নিজের মোবাইল ফোনে ওটিটির অ্যাপটি খুলে বসেন। আর অনেকেই হয়তো বৈঠকখানার টিভিতে ওটিটির সঙ্গে সংযুক্ত হন। এই সংখ্যাও খুব কম। কারণ ওটিটি আর যৌথভাবে চলচ্চিত্র দেখার চর্চার ভেতরে নেই। এই প্ল্যাটফর্মের অধিকাংশ কনটেন্টই ওই চিপসের বিজ্ঞাপনের মতো: ‘একা একা খেতে চাও? দরজা বন্ধ করে খাও।’ অর্থাৎ যৌথতার চর্চা শেষ!
প্রেক্ষাগৃহে গেলে এক তো যৌথভাবে ছবিটি দেখা হয়; সেটার ভালো দিক আছে, খারাপ দিকও আছে। ভালো দিকটি হলো: প্রেক্ষাগৃহে আপনি কিছুক্ষণ পরপর ‘পজ’ বাটন চেপে কনটেন্ট বন্ধ করে এটা-সেটা করতে পারেন না। আপনাকে অখণ্ড মনোযোগ দিয়েই ছবিটি দেখতে হয় এবং একটানা দেখতে হয়। ছবি দেখার সময় অন্য কেউ এসে আপনাকে বিরক্ত করবে না। আপনি একমনে ছবি দেখতে পারবেন। তবে প্রেক্ষাগৃহেও আজকাল অখণ্ড মনোযোগ দিয়ে ছবি দেখা লোকের সংখ্যা কমছে। আপনি হয়তো গেলেন খুব গভীর মনোসংযোগ নিয়ে ছবিটি দেখতে। দেখবেন আপনার সামনের সারিতে বসা একাধিকজন, ছবির ক্লাইমেক্সের ভেতরেই ফেসবুক বের করে স্ক্রল করছে, চ্যাটিং করছে। স্ক্রিনের তীব্র আলো আপনার চোখে এসে হুল ফোটাচ্ছে। আর ফোনের রিংটোন বাজা এবং জোরে কথা বলা তো আছেই। সময় যেহেতু পাল্টে গেছে, তাই আগের সেই যৌথতা চর্চার বিষয়টিও এক জায়গায় আটকে নেই। মাঝে মাঝে তাই প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখতে গেলে অন্যরা উল্টো বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে চলচ্চিত্র যদি আপনার ধ্যানজ্ঞানের বিষয় হয়, তাহলে বড় পর্দায় চলচ্চিত্র দেখার আসলে কোনো বিকল্প নেই।
তা ছাড়া বেশির ভাগ ছবি আগে মুক্তি দেওয়া হয় প্রেক্ষাগৃহে, তারপর ওটিটিতে। তাই এখনো মানুষ ভিড় করে সিনেমা হলে। সিনেমা উপভোগ করার জন্য তো বটেই, নতুন ছবি সবার আগে দেখার তাগিদও কাজ করে সবার ভেতরে। আগেই বলেছি, অনেকটা বাধ্যতামূলকভাবেই ছবিটি পুরো শেষ করে উঠতে
হয় হলে, ফলে মনোযোগ ছুটে গিয়ে ছবিটি ‘পরে দেখে নেব’—এই কোটায় ঢুকে পড়ে। আর এই কোটায় ঢুকে পড়া ছবি অধিকাংশ সময়েই আর পুরোপুরি দেখা হয়ে ওঠে না।
একটা বিষয় কিন্তু খেয়াল করার মতো। মানুষের হাতে, শোয়ার ঘরে ও বৈঠকখানায় একা একা অথবা পরিজন ও বন্ধুদের নিয়ে বাসার বড় টিভি স্ক্রিনে ছবি দেখার সুযোগ রয়েছে। তার পরও কেন মানুষ সিনেমা হলে যায়? খেয়াল করলে দেখা যাবে, এখানেও কাজ করে বাছাইপ্রক্রিয়া। সিনেমা হলে আজকাল সিনেমা দেখতে যাওয়াটা ‘আউটিং’য়ের মধ্যে পড়ে। সিনেমা, পপকর্ন, সফট ড্রিংক, উইন্ডো শপিং, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ—সব মিলিয়ে যেন একটা প্যাকেজ। এই প্যাকেজে সিনেমা আর একক ‘সত্তা’ হিসেবে নেই। অন্যদিকে, কেউ কেউ ভাবেন আজ অলস দিন, অথবা সারা দিন কাজ শেষে ফিরে টিভিতে কিছু দেখার নেই, তখন তিনি ওটিটির জানালা খুলে বসেন।
হাতে গোনা কিছু লোক শুধু সিনেমা ভালোবেসে অথবা পেশাদারত্বের জায়গা থেকে একা একা সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখেন অথবা নিজের বাসায় ওটিটি দেখেন। এই স্বল্পসংখ্যকের মধ্যে সিনেফিল যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছেন চলচ্চিত্র সমালোচক, সাংবাদিক ও ইন্ডাস্ট্রি-সংশ্লিষ্ট মানুষ। এ ছাড়া চলচ্চিত্র বলি বা ধারাবাহিক, মানুষ এগুলো দেখে বিনোদনের অংশ হিসেবেই। নির্মাতারাও তাই বিনোদনই দিয়ে যাচ্ছেন। গত শতাব্দীর ষাট কি সত্তরের দশকের সেই উপলব্ধি এখন আর কোথায় পাওয়া যাবে? চলচ্চিত্র হলো নিজের মত প্রকাশের হাতিয়ার। ধ্বনিচিত্র দিয়ে নির্মিত প্রায় সবকিছুই এখন চিত্তবিনোদনের নিমিত্তে। চিত্তকে জাগানোর জন্য সেই প্রযোজক ও পরিচালক পাওয়া এখন দুষ্কর। নেই বলব না, বলব বিরল।
যে প্রসঙ্গ দিয়ে শুরু করেছিলাম, এই যে এত বেছে নেওয়ার সুযোগ, এত বিকল্প—এগুলো নিয়ে আমরা কী করব? বাছাইপ্রক্রিয়াকে সংকুচিত করে ফেলব? সেন্সর করব? সেটা তো অগণতান্ত্রিক আচরণ হয়ে গেল। তাহলে কি ধ্বনিচিত্রের সাগরে আমরা হাবুডুবু খাব? নাকি দেখাটেখাই বাদ দিয়ে দেব? না, সেসবের কিছুই করার প্রয়োজন নেই। আমাদের সামনে বিকল্প অনেক আমরা জানি, কিন্তু একটু বুদ্ধিমান লোকেরা কোনো কনটেন্ট দেখার আগে সেটির রেটিং ও রিভিউ পড়ে নিয়ে দেখতে বসেন, যাতে সময় নষ্ট না হয়। আর আরেকটু বেশি বুদ্ধিমান লোকেরা ওটিটি ও সিনেপ্লেক্সে গিয়ে ছবি বাছাই করেন না, বরং কোন ছবি দেখবেন, সেটা স্থির করে ওটিটি বা সিনেপ্লেক্সে গিয়ে দেখে আসেন। অর্থাৎ, সময় বাঁচাতে চাইলে একটু সতর্ক হয়ে, সিদ্ধান্ত নিয়ে ছবি দেখতে বসা ও যাওয়াই উত্তম। ঠিক যেমনটা করা উচিত রেস্তোরাঁয়, বুফের আয়োজনে। আগে ঠিক করে নিতে হবে মোগলাই হবে, না থাই। এরপর খাবারের সামনে গিয়ে পাতে পদ তুলে নেওয়া পেটের জন্য উত্তম। চলচ্চিত্র ও ধারাবাহিকের বেলায়ও সেই একই পদ্ধতি প্রয়োগ করলে আশা করি একই সঙ্গে সময় বাঁচবে এবং বাছাবাছির ক্লান্তিকর পরিস্থিতি থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে।
লেখক: বিধান রিবেরু, প্রাবন্ধিক ও চলচ্চিত্র লেখক
আমরা এখন বাস করছি প্রাচুর্যের যুগে। চারদিকে জীবনের এত আয়োজন যে আমাদের মন বিগলিত হয়, চোখ ধাঁধিয়ে যায়। নৈর্ব্যক্তিক বৈশিষ্ট্যের সম্প্রসারণ এমন মাত্রায় ঘটেছে, যাতে আপাতদৃষ্টে মনে হয় বেশ ভালোই হলো। কিন্তু আখেরে আমার মনে হয় ক্ষতিটা যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। খেয়াল করে দেখুন, রেস্তোরাঁয় ‘আ লা কাখ্ত’ ভালো, না ‘বুফে’? খাবারের তালিকা দেখে ফরমাশ দেওয়ার চেয়ে অনেকেই ইদানীং সামনে সাজিয়ে রাখা অর্ধশতাধিক খাবারের থালা থেকে মনের পছন্দ অনুযায়ী খাবার বেছে নিতে চান। এতে হয় কী, এক ক্যুইজিনের সঙ্গে আরেক ক্যুইজিনের রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়ে যায়। থাই, চীনা, মোগলাই ও বাঙালি খাবারের রন্ধনপ্রণালি এক নয়, তাই এদের রসায়নটাও ভিন্ন। কিন্তু কেউ যদি একই সময়ে তিন-চার রন্ধনপ্রণালির একাধিক খাবার পেটে চালান করে দেন, তাহলে বদহজম হওয়ার শঙ্কা বেড়ে যায়। একই ব্যাপার ঘটতে পারে দৃশ্যমাধ্যমের ক্ষেত্রেও।
আগে একটি মাত্র টেলিভিশন ছিল, সেটার মধ্যেই বিচিত্র অনুষ্ঠান। এখন বিচিত্র টিভি চ্যানেলে নানানমাত্রিক অনুষ্ঠান চলে। ঘরের বৈঠকখানায় বসে আমরা একের পর এক চ্যানেল পাল্টাতে থাকি। স্থির হতে পারি না কোথাও। একই ঘটনা ঘটেছে চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও। সিঙ্গেল স্ক্রিন বিদায়, এসেছে মাল্টিস্ক্রিন। সিনেপ্লেক্সে অনেক সিনেমা চলে, বেছে নিতে হয় তার মধ্য থেকে একটি। এটি যেন সিনেমার বুফে। আর চাহিদা ও চাঁদাভিত্তিক ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্ল্যাটফর্মের কথা তো বলাই বাহুল্য। সেখানে কোন সিরিজ বা সিনেমা দেখবেন, তা ঠিক করতে করতেই আধঘণ্টা চলে যায়। এই প্রাচুর্য আমাদের অস্থির করে তুলেছে তো বটেই, স্থিরতাকেও নষ্ট করেছে। অনেকেই এই বাছাই করতে করতে দেখা যায় ক্লান্ত হয়ে হারিয়ে ফেলে সিনেমা বা সিরিজ দেখার আগ্রহ। আসলে এত বিকল্প আমাদের সামনে, আমরা সেসব নিয়ে প্রায়ই ধন্দে পড়ে যাই। গোলকধাঁধার ভেতরে ঘুরতে ঘুরতে শেষমেশ দেখা যায় আর কিছুই দেখা হলো না, ছুটির দিনের বিকেলটাই পণ্ড!
প্রশ্ন হলো, এত প্রাচুর্য বা বিকল্প কি আমাদের দরকার? কী করব এত এত সিনেমা ও সিরিজ দিয়ে? সেসব যদি আবার হয় অধিকাংশই ছক বা কাঠামো ধরে বানানো? হরর ছবির কাটতি বেশি, তো দেখা যায় বিভিন্ন ওটিটিতে আপ হয়ে যাচ্ছে দুনিয়ার হরেক রকমের হরর ছবি। মারামারি-কাটাকাটি মানুষ দেখে, তো ওটিটি নিজেই প্রযোজনা করে বানিয়ে নিচ্ছে অ্যাকশন ও ভায়োলেন্সে ভরপুর সিনেমা ও সিরিজ। আর যৌনতার কথা আলাদা করে কী আর বলব! ১৮ প্লাস কনটেন্টের চাহিদা সব সময়ই থাকে শীর্ষে। এসব ভিড়ের চাপে চিড়েচ্যাপটা হওয়ার জোগাড় হয় ভালো চলচ্চিত্র ও ধারাবাহিকের। মুখে মুখে যদি কিছু ভালো কনটেন্টের কথা ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে মানুষ সেটি দেখে। নয়তো নিজে থেকে কনটেন্ট ঘেঁটে দেখা এবং দেখার পর ভালোমন্দ রায় দেওয়া দর্শকের সংখ্যা খুবই কম। ওটিটির অধিকাংশ দর্শকই দেখা যায় টিভি দেখতে দেখতে বিরক্ত, যাঁদের সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখার ফুরসত নেই, তাঁরা নিজের মোবাইল ফোনে ওটিটির অ্যাপটি খুলে বসেন। আর অনেকেই হয়তো বৈঠকখানার টিভিতে ওটিটির সঙ্গে সংযুক্ত হন। এই সংখ্যাও খুব কম। কারণ ওটিটি আর যৌথভাবে চলচ্চিত্র দেখার চর্চার ভেতরে নেই। এই প্ল্যাটফর্মের অধিকাংশ কনটেন্টই ওই চিপসের বিজ্ঞাপনের মতো: ‘একা একা খেতে চাও? দরজা বন্ধ করে খাও।’ অর্থাৎ যৌথতার চর্চা শেষ!
প্রেক্ষাগৃহে গেলে এক তো যৌথভাবে ছবিটি দেখা হয়; সেটার ভালো দিক আছে, খারাপ দিকও আছে। ভালো দিকটি হলো: প্রেক্ষাগৃহে আপনি কিছুক্ষণ পরপর ‘পজ’ বাটন চেপে কনটেন্ট বন্ধ করে এটা-সেটা করতে পারেন না। আপনাকে অখণ্ড মনোযোগ দিয়েই ছবিটি দেখতে হয় এবং একটানা দেখতে হয়। ছবি দেখার সময় অন্য কেউ এসে আপনাকে বিরক্ত করবে না। আপনি একমনে ছবি দেখতে পারবেন। তবে প্রেক্ষাগৃহেও আজকাল অখণ্ড মনোযোগ দিয়ে ছবি দেখা লোকের সংখ্যা কমছে। আপনি হয়তো গেলেন খুব গভীর মনোসংযোগ নিয়ে ছবিটি দেখতে। দেখবেন আপনার সামনের সারিতে বসা একাধিকজন, ছবির ক্লাইমেক্সের ভেতরেই ফেসবুক বের করে স্ক্রল করছে, চ্যাটিং করছে। স্ক্রিনের তীব্র আলো আপনার চোখে এসে হুল ফোটাচ্ছে। আর ফোনের রিংটোন বাজা এবং জোরে কথা বলা তো আছেই। সময় যেহেতু পাল্টে গেছে, তাই আগের সেই যৌথতা চর্চার বিষয়টিও এক জায়গায় আটকে নেই। মাঝে মাঝে তাই প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখতে গেলে অন্যরা উল্টো বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে চলচ্চিত্র যদি আপনার ধ্যানজ্ঞানের বিষয় হয়, তাহলে বড় পর্দায় চলচ্চিত্র দেখার আসলে কোনো বিকল্প নেই।
তা ছাড়া বেশির ভাগ ছবি আগে মুক্তি দেওয়া হয় প্রেক্ষাগৃহে, তারপর ওটিটিতে। তাই এখনো মানুষ ভিড় করে সিনেমা হলে। সিনেমা উপভোগ করার জন্য তো বটেই, নতুন ছবি সবার আগে দেখার তাগিদও কাজ করে সবার ভেতরে। আগেই বলেছি, অনেকটা বাধ্যতামূলকভাবেই ছবিটি পুরো শেষ করে উঠতে
হয় হলে, ফলে মনোযোগ ছুটে গিয়ে ছবিটি ‘পরে দেখে নেব’—এই কোটায় ঢুকে পড়ে। আর এই কোটায় ঢুকে পড়া ছবি অধিকাংশ সময়েই আর পুরোপুরি দেখা হয়ে ওঠে না।
একটা বিষয় কিন্তু খেয়াল করার মতো। মানুষের হাতে, শোয়ার ঘরে ও বৈঠকখানায় একা একা অথবা পরিজন ও বন্ধুদের নিয়ে বাসার বড় টিভি স্ক্রিনে ছবি দেখার সুযোগ রয়েছে। তার পরও কেন মানুষ সিনেমা হলে যায়? খেয়াল করলে দেখা যাবে, এখানেও কাজ করে বাছাইপ্রক্রিয়া। সিনেমা হলে আজকাল সিনেমা দেখতে যাওয়াটা ‘আউটিং’য়ের মধ্যে পড়ে। সিনেমা, পপকর্ন, সফট ড্রিংক, উইন্ডো শপিং, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ—সব মিলিয়ে যেন একটা প্যাকেজ। এই প্যাকেজে সিনেমা আর একক ‘সত্তা’ হিসেবে নেই। অন্যদিকে, কেউ কেউ ভাবেন আজ অলস দিন, অথবা সারা দিন কাজ শেষে ফিরে টিভিতে কিছু দেখার নেই, তখন তিনি ওটিটির জানালা খুলে বসেন।
হাতে গোনা কিছু লোক শুধু সিনেমা ভালোবেসে অথবা পেশাদারত্বের জায়গা থেকে একা একা সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখেন অথবা নিজের বাসায় ওটিটি দেখেন। এই স্বল্পসংখ্যকের মধ্যে সিনেফিল যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছেন চলচ্চিত্র সমালোচক, সাংবাদিক ও ইন্ডাস্ট্রি-সংশ্লিষ্ট মানুষ। এ ছাড়া চলচ্চিত্র বলি বা ধারাবাহিক, মানুষ এগুলো দেখে বিনোদনের অংশ হিসেবেই। নির্মাতারাও তাই বিনোদনই দিয়ে যাচ্ছেন। গত শতাব্দীর ষাট কি সত্তরের দশকের সেই উপলব্ধি এখন আর কোথায় পাওয়া যাবে? চলচ্চিত্র হলো নিজের মত প্রকাশের হাতিয়ার। ধ্বনিচিত্র দিয়ে নির্মিত প্রায় সবকিছুই এখন চিত্তবিনোদনের নিমিত্তে। চিত্তকে জাগানোর জন্য সেই প্রযোজক ও পরিচালক পাওয়া এখন দুষ্কর। নেই বলব না, বলব বিরল।
যে প্রসঙ্গ দিয়ে শুরু করেছিলাম, এই যে এত বেছে নেওয়ার সুযোগ, এত বিকল্প—এগুলো নিয়ে আমরা কী করব? বাছাইপ্রক্রিয়াকে সংকুচিত করে ফেলব? সেন্সর করব? সেটা তো অগণতান্ত্রিক আচরণ হয়ে গেল। তাহলে কি ধ্বনিচিত্রের সাগরে আমরা হাবুডুবু খাব? নাকি দেখাটেখাই বাদ দিয়ে দেব? না, সেসবের কিছুই করার প্রয়োজন নেই। আমাদের সামনে বিকল্প অনেক আমরা জানি, কিন্তু একটু বুদ্ধিমান লোকেরা কোনো কনটেন্ট দেখার আগে সেটির রেটিং ও রিভিউ পড়ে নিয়ে দেখতে বসেন, যাতে সময় নষ্ট না হয়। আর আরেকটু বেশি বুদ্ধিমান লোকেরা ওটিটি ও সিনেপ্লেক্সে গিয়ে ছবি বাছাই করেন না, বরং কোন ছবি দেখবেন, সেটা স্থির করে ওটিটি বা সিনেপ্লেক্সে গিয়ে দেখে আসেন। অর্থাৎ, সময় বাঁচাতে চাইলে একটু সতর্ক হয়ে, সিদ্ধান্ত নিয়ে ছবি দেখতে বসা ও যাওয়াই উত্তম। ঠিক যেমনটা করা উচিত রেস্তোরাঁয়, বুফের আয়োজনে। আগে ঠিক করে নিতে হবে মোগলাই হবে, না থাই। এরপর খাবারের সামনে গিয়ে পাতে পদ তুলে নেওয়া পেটের জন্য উত্তম। চলচ্চিত্র ও ধারাবাহিকের বেলায়ও সেই একই পদ্ধতি প্রয়োগ করলে আশা করি একই সঙ্গে সময় বাঁচবে এবং বাছাবাছির ক্লান্তিকর পরিস্থিতি থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে।
লেখক: বিধান রিবেরু, প্রাবন্ধিক ও চলচ্চিত্র লেখক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে