টাঙ্গাইলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-সংকট প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পদে বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য রয়েছে। শিক্ষকস্বল্পতার কারণে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। শিক্ষক-সংকটে মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজারো শিক্ষার্থী। যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই সেসব বিদ্যালয়ে সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের চলতি দায়িত্বে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে পদায়ন করা হয়েছে। এতে করে বিপুলসংখ্যক সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য হয়ে পড়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ১ হাজার ৬২৩টি। তাঁদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ১ হাজার ২১৬ জন। ৪০৭টি পদ শূন্য রয়েছে। আর জেলায় সহকারী শিক্ষক পদ রয়েছে ৮ হাজার ৪৩৩ জন কর্মরত রয়েছেন ৭ হাজার ৭১৯ জন। শূন্য পদ রয়েছে ৭১৪টি। সহকারী ও প্রধান শিক্ষক মিলে জেলায় মোট ১ হাজার ১২১টি পদ শূন্য রয়েছে।

ঘাটাইলে প্রধান শিক্ষক পদে ১৭২ জনের মধ্যে রয়েছেন ১৩৭ জন। ৩৫ জনের পদ শূন্য রয়েছে। সহকারী শিক্ষক পদে ৯১৬ জনের মধ্যে রয়েছেন ৮২৮ জন। শূন্য রয়েছে ৮৮টি পদ। সখীপুরে প্রধান শিক্ষক পদে ১৪৭ জনের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ১৩৬ জন। ১১টি পদ শূন্য রয়েছে। সহকারী শিক্ষক পদে ৭০৮ জনের মধ্যে রয়েছেন ৬৪৭ জন। শূন্য রয়েছে ৬১টি পদ। গোপালপুরে প্রধান শিক্ষক পদে ১৬১ জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ১১৫ জন। শূন্য রয়েছে ৪৬টি পদ। সহকারী শিক্ষক পদে ৭৫৯ জনের মধ্যে রয়েছেন ৬৭৪ জন। ৮৫টি পদ শূন্য রয়েছে। বাসাইলে প্রধান শিক্ষক পদে ৭৯ জনের মধ্যে রয়েছেন ৬৬ জন। শূন্য রয়েছে ১৩টি পদ। সহকারী শিক্ষক পদে ৪৩৫ জনের মধ্যে রয়েছেন ৩৮৪ জন। ৫১টি পদ শূন্য রয়েছে।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় প্রধান শিক্ষক পদে ১৬৩টি পদের মধ্যে রয়েছেন ১৩২ জন। শূন্য রয়েছে ৩১টি। সহকারী শিক্ষক পদে ৮৭৩টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৮৩৪ জন শিক্ষক। শূন্য রয়েছে ৩৯টি পদ। দেলদুয়ারে প্রধান শিক্ষক পদে ১০০ জনের মধ্যে রয়েছেন ৭৩ জন। শূন্য রয়েছে ২৭টি পদ। সহকারী শিক্ষক পদে ৫২৯টি পদের মধ্যে রয়েছেন ৪৭১ জন। ৫৮টি পদ শূন্য রয়েছে। মির্জাপুরে প্রধান শিক্ষক পদে ১৭০ জনের মধ্যে রয়েছেন ১৪৮ জন। ২২ জনের পদ শূন্য রয়েছে। সহকারী শিক্ষক পদে ৯৪২ জনের মধ্যে ৮৪৯ জন কর্মরত রয়েছেন। ৯৩টি পদ শূন্য রয়েছে। কালিহাতীতে প্রধান শিক্ষক পদে ১৭০ জনের মধ্যে রয়েছেন ৮৮ জন। শূন্য রয়েছে ৮২টি। সহকারী শিক্ষক পদে ৯১৪ জনের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৮৯৪ জন। সেখানে ২০টি পদ খালি রয়েছে। মধুপুরে প্রধান শিক্ষক পদে ১১০ জনের মধ্যে রয়েছেন ৯০ জন। খালি রয়েছে ২০টি পদ। সহকারী শিক্ষক পদে ৫৪৯ জনের মধ্যে রয়েছেন ৫০১ জন। শূন্য রয়েছে ৪৮টি পদ। নাগরপুরে প্রধান শিক্ষক পদে ১৫৬ জনের মধ্যে রয়েছেন ১১১ জন। ৪৫টি পদ শূন্য রয়েছে। সহকারী শিক্ষক পদে ৮০৩ জনের মধ্যে রয়েছে ৭১৪ জন। ৮৯টি পদ শূন্য রয়েছে। ভূঞাপুরে প্রধান শিক্ষক পদে ১১০ জনের মধ্যে রয়েছেন ৮২ জন। শূন্য রয়েছে ২৮টি। সহকারী শিক্ষক পদে ৫৯৮ জনর মধ্যে রয়েছেন ৫২৯ জন। ৬৯ জনের পদ শূন্য রয়েছে। ধনবাড়িতে প্রধান শিক্ষক পদে ৮৫ জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ৩৮ জন। শূন্য রয়েছে ৪৭ পদ। আর সহকারী শিক্ষক পদে ১৩টি পদ শূন্য রয়েছে।

সদর উপজেলার গোপাল কিউটিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আল মামুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ে তিনসহ তিনজন শিক্ষক কর্মরত আছেন। সেই সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় তাঁকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ক্লাসও নিতে হয়। দাপ্তরিক কাজে তাঁকে উপজেলায় যেতে হলে তখন দুজন শিক্ষককে তিনটি শ্রেণির পাঠদান পরিচালনা করতে হয়। এ নিয়ে অনেক সময় সমস্যার সৃষ্টি হয়। তারপরও তাঁরা শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল্লাহ সরকার বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ বন্ধ থাকায় শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে। এর পর অনেক সিনিয়র সহকারী শিক্ষকই প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। এতে অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট হওয়ায় মানসম্মত পাঠদানে ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে শিক্ষার গুণগত মান ও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। এ সময় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এতে পাঠদানে ক্ষতি হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রধান ও সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’