আমীন আল রশীদ
টেলিভিশনে রাজনৈতিক ইস্যুতে একটি আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য একজন আইনজীবীকে ফোন করলে তিনি জানতে চান, তাঁর সঙ্গে আর কে থাকবেন। তাঁকে যখন নামটি বললাম, তিনি কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করে বললেন, ‘তিনি তো অ্যান্টি আওয়ামী লীগ।’
প্রশ্ন হলো, দেশে অ্যান্টি আওয়ামী লীগ বা আওয়ামীবিরোধী লোক থাকতে পারবে না? দেশের ১৭ কোটি মানুষকেই আওয়ামী লীগ করতে হবে? সেটি কি দেশ বা রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্যও কল্যাণকর?
১৯৭৪ সালের ২০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদকের ভাষণে অতি উৎসাহীদের ইঙ্গিত করে তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘ওরা একসময় বলেছিল যে বঙ্গবন্ধুকে আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়া দরকার। এই মন্ত্রীটন্ত্রীরা খুব বেশি সুবিধার নয়। তাদের আসল মতলব ছিল বঙ্গবন্ধুকে আস্তে আস্তে একা করে ফেলা—যেটা আমাদের শ্রদ্ধেয় সৈয়দ নজরুল সাহেব বললেন। একা করে একটু বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া এক লোককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া খুব সহজ।’ (তাজউদ্দীন আহমদ, সমাজ ও রাষ্ট্রভাবনা, প্রথমা/ ২০২৩, পৃ. ৯৪)
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের ছয় বছর পরে ১৯৫৫ সালের ২১ অক্টোবর ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে যে আওয়ামী লীগ গঠন করা হয়, সেই দলের নেতৃত্বে এখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর সময়ে যেমন তাঁর স্তাবকের অভাব ছিল না এবং যাঁরা প্রশংসা করতে করতে বঙ্গবন্ধুকে অতিমানবের পর্যায়ে নিতে যেতেন, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগেও সে রকম অতি উৎসাহী লোকের অভাব নেই। মূলত এই অতি উৎসাহের পেছনে থাকে নানা রকম ব্যক্তিগত ধান্দা ও স্বার্থসিদ্ধি।
অনেক সময়ই প্রশ্ন ওঠে, টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে সংখ্যার দিক দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকের সংখ্যা যে হারে বেড়েছে, সেখানে আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে কিংবা বঙ্গবন্ধু অথবা শেখ হাসিনাকে ভালোবেসে কতজন এই দলে যোগ দিয়েছেন, আর কতজন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য? কেননা, স্থানীয় পর্যায়ে এখন যাঁরা আওয়ামী লীগের কোনো না কোনো পর্যায়ের নেতৃত্ব দেন, তাঁদের বিরাট অংশই যে বসন্তের কোকিল বা ভুঁইফোড় তথা ‘হাইব্রিড’—সে ইঙ্গিত অনেক সময় দলের শীর্ষ পর্যায় থেকেও দেওয়া হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন পেশাজীবী এমনকি যে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বেশি নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকার কথা, তাঁদের মধ্যেও ‘কে কত বড় আওয়ামী লীগার’—সেটি প্রমাণের জন্য একটি অলিখিত প্রতিযোগিতা চলছে। সরকারি দায়িত্বে থাকা অবস্থায়ও তাঁদের অনেকে এমন সব অতি উৎসাহী কথাবার্তা বলেন, যাতে ঠিক বোঝা যায় না তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নাকি দলীয় কর্মী। এমনকি তাঁদের অনেকের কথাবার্তা দলীয় নেতা-কর্মীকেও ছাড়িয়ে যায়। বাস্তবতা হলো, এই লোকগুলোই সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক—যাঁদের তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন ‘বর্ণচোরা’।
১৯৭৪ সালের ওই বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘এমন অনেক জায়গায় আছে, দিনে আওয়ামী লীগ করে, রাতে অন্য দলের সঙ্গে যোগ রাখে। এই বর্ণচোরদের আপনাদের ঠিক করতে হবে। এটা যদি করা না যায়, তবে অসম্ভব, কিছু করা যাবে না।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সরকার তথা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অন্যতম প্রধান অভিযোগ, অতিমাত্রায় আমলানির্ভরতা। ফলে দলের অনেক ত্যাগী ও প্রয়োজনীয় নেতারাও দলের ভেতরে কোণঠাসা—এমন কথাও শোনা যায়। বাস্তবতা হলো, কোনো দেশের ক্ষমতাসীন দল যখন তার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অরাজনৈতিক শক্তির ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তখন জনগণের সঙ্গে তার দূরত্ব বাড়তে থাকে। জনগণের সঙ্গে দূরত্ব বাড়লে সেই রাজনৈতিক দল ভেতরে-ভেতরে দুর্বল হতে থাকে এবং যখন কোনো কারণে ওই সব অরাজনৈতিক শক্তি তার বিরুদ্ধে চলে যায় বা তার পক্ষে না থাকে, তখন যে জনগণের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সেই জনগণকেও সে তার বিপদের দিনে পাশে পায় না।
দেশের সব মানুষ আওয়ামী লীগ করবে বা আওয়ামী লীগের সমর্থন করবে, এটি যেমন কোনো স্বাস্থ্যকর বিষয় নয়, তেমনি আওয়ামী লীগের সমর্থন না করলেই তিনি সরকারবিরোধী বা দেশবিরোধী—এমন সরলীকরণেরও সুযোগ নেই। অথচ এখন এই প্রবণতাটাই বাড়ছে যে যিনি সরকারের সব কাজে নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছেন না, তিনিই সরকারবিরোধী, তিনিই আওয়ামী লীগ এবং তিনিই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি। এমনকি পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতিবিরোধী কোনো উন্নয়নকাজের সমালোচনা করলেও তাঁকে সরকার ও আওয়ামীবিরোধী ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে—যা প্রকারান্তরে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকেই ভেতরে-ভেতরে দুর্বল করে দিচ্ছে।
আরেকটি অভিযোগ, যে অসাম্প্রদায়িক চিন্তা থেকে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ করা হয়েছে, সেই চিন্তা তথা মুক্তবুদ্ধির অনেক মানুষ—যাঁরা সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী না হলেও প্রকারান্তরে যাঁদের চিন্তা ও দর্শন আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শকে সমর্থন করে, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই সরকার তথা ক্ষমতাসীন দলের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কেননা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আওয়ামী লীগ ভিন্ন চিন্তা ও মতাদর্শের ব্যাপারে অনেক বেশি কঠোর হয়েছে। সে এখন নিঃশর্ত আনুগত্য চায়।
কিন্তু মেরুদণ্ডসম্পন্ন লোক কোনো ব্যক্তি বা দলের প্রতি নিঃশর্ত অনুগত হতে পারে না। কেননা তাঁকে দেশ ও জনকল্যাণবিরোধী যেকোনো সিদ্ধান্ত, নীতি ও পরিকল্পনার বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করতে হয়। নিঃশর্ত অনুগত হলে তাঁকে সব বিষয়ে হ্যাঁ বলতে হয়।
নিঃশর্ত আনুগত্য রাজনীতির জন্যও কল্যাণকর নয়। দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিঃশর্ত আনুগত্য একটি দলকে অগণতান্ত্রিক, অসহিষ্ণু ও বেপরোয়া করে তোলে। নির্ভয় করে তোলে। মনে রাখতে হবে, দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকের সংখ্যা যা-ই হোক না কেন, দিন শেষে তাদের সাধারণ মানুষের কাছেই যেতে হয়। যারা সংখ্যাগুরু। সেই সংখ্যাগুরুদের প্রতি সম্মান, ভালোবাসা এবং একই সঙ্গে ভয় থাকতে হয়। রাজনৈতিক দলগুলো যদি জনগণকে ভালো না বাসে এবং একই সঙ্গে তাদের সমীহ না করে, তাহলে সেই দেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। রাজনীতি অন্ধকার গলিতে ঢুকে গেলে এমন সব পক্ষ সেই অন্ধকারের সুযোগ নেয়, যারা পুরো দেশকেই অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারে।
পরিশেষে, আওয়ামী লীগের মতো একটি প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী এবং সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলের জন্মদিন তথা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শুধু তার নিজের উদ্যাপনের বিষয় নয়; বরং এটি দেশের আপামর জনসাধারণেরও আনন্দের উপলক্ষ। অতএব দেশের মানুষ যাতে দলমত-নির্বিশেষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আওয়ামী লীগের জন্মদিন বা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে পারে, আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব তো বটেই, স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদেরও সেভাবেই নিজেদের গড়ে তোলা দরকার। প্রশাসন বা বন্দুকের জোরে নয়; বরং আওয়ামী লীগ যে জনগণের শক্তিতেই টিকে আছে—সেটিও জোর গলায় বলতে পারার মতো নৈতিক জোর থাকা দরকার।
সাংবাদিক ও লেখক
টেলিভিশনে রাজনৈতিক ইস্যুতে একটি আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য একজন আইনজীবীকে ফোন করলে তিনি জানতে চান, তাঁর সঙ্গে আর কে থাকবেন। তাঁকে যখন নামটি বললাম, তিনি কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করে বললেন, ‘তিনি তো অ্যান্টি আওয়ামী লীগ।’
প্রশ্ন হলো, দেশে অ্যান্টি আওয়ামী লীগ বা আওয়ামীবিরোধী লোক থাকতে পারবে না? দেশের ১৭ কোটি মানুষকেই আওয়ামী লীগ করতে হবে? সেটি কি দেশ বা রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্যও কল্যাণকর?
১৯৭৪ সালের ২০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদকের ভাষণে অতি উৎসাহীদের ইঙ্গিত করে তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘ওরা একসময় বলেছিল যে বঙ্গবন্ধুকে আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়া দরকার। এই মন্ত্রীটন্ত্রীরা খুব বেশি সুবিধার নয়। তাদের আসল মতলব ছিল বঙ্গবন্ধুকে আস্তে আস্তে একা করে ফেলা—যেটা আমাদের শ্রদ্ধেয় সৈয়দ নজরুল সাহেব বললেন। একা করে একটু বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া এক লোককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া খুব সহজ।’ (তাজউদ্দীন আহমদ, সমাজ ও রাষ্ট্রভাবনা, প্রথমা/ ২০২৩, পৃ. ৯৪)
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের ছয় বছর পরে ১৯৫৫ সালের ২১ অক্টোবর ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে যে আওয়ামী লীগ গঠন করা হয়, সেই দলের নেতৃত্বে এখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর সময়ে যেমন তাঁর স্তাবকের অভাব ছিল না এবং যাঁরা প্রশংসা করতে করতে বঙ্গবন্ধুকে অতিমানবের পর্যায়ে নিতে যেতেন, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগেও সে রকম অতি উৎসাহী লোকের অভাব নেই। মূলত এই অতি উৎসাহের পেছনে থাকে নানা রকম ব্যক্তিগত ধান্দা ও স্বার্থসিদ্ধি।
অনেক সময়ই প্রশ্ন ওঠে, টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে সংখ্যার দিক দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকের সংখ্যা যে হারে বেড়েছে, সেখানে আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে কিংবা বঙ্গবন্ধু অথবা শেখ হাসিনাকে ভালোবেসে কতজন এই দলে যোগ দিয়েছেন, আর কতজন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য? কেননা, স্থানীয় পর্যায়ে এখন যাঁরা আওয়ামী লীগের কোনো না কোনো পর্যায়ের নেতৃত্ব দেন, তাঁদের বিরাট অংশই যে বসন্তের কোকিল বা ভুঁইফোড় তথা ‘হাইব্রিড’—সে ইঙ্গিত অনেক সময় দলের শীর্ষ পর্যায় থেকেও দেওয়া হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন পেশাজীবী এমনকি যে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বেশি নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকার কথা, তাঁদের মধ্যেও ‘কে কত বড় আওয়ামী লীগার’—সেটি প্রমাণের জন্য একটি অলিখিত প্রতিযোগিতা চলছে। সরকারি দায়িত্বে থাকা অবস্থায়ও তাঁদের অনেকে এমন সব অতি উৎসাহী কথাবার্তা বলেন, যাতে ঠিক বোঝা যায় না তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নাকি দলীয় কর্মী। এমনকি তাঁদের অনেকের কথাবার্তা দলীয় নেতা-কর্মীকেও ছাড়িয়ে যায়। বাস্তবতা হলো, এই লোকগুলোই সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক—যাঁদের তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন ‘বর্ণচোরা’।
১৯৭৪ সালের ওই বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘এমন অনেক জায়গায় আছে, দিনে আওয়ামী লীগ করে, রাতে অন্য দলের সঙ্গে যোগ রাখে। এই বর্ণচোরদের আপনাদের ঠিক করতে হবে। এটা যদি করা না যায়, তবে অসম্ভব, কিছু করা যাবে না।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সরকার তথা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অন্যতম প্রধান অভিযোগ, অতিমাত্রায় আমলানির্ভরতা। ফলে দলের অনেক ত্যাগী ও প্রয়োজনীয় নেতারাও দলের ভেতরে কোণঠাসা—এমন কথাও শোনা যায়। বাস্তবতা হলো, কোনো দেশের ক্ষমতাসীন দল যখন তার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অরাজনৈতিক শক্তির ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তখন জনগণের সঙ্গে তার দূরত্ব বাড়তে থাকে। জনগণের সঙ্গে দূরত্ব বাড়লে সেই রাজনৈতিক দল ভেতরে-ভেতরে দুর্বল হতে থাকে এবং যখন কোনো কারণে ওই সব অরাজনৈতিক শক্তি তার বিরুদ্ধে চলে যায় বা তার পক্ষে না থাকে, তখন যে জনগণের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সেই জনগণকেও সে তার বিপদের দিনে পাশে পায় না।
দেশের সব মানুষ আওয়ামী লীগ করবে বা আওয়ামী লীগের সমর্থন করবে, এটি যেমন কোনো স্বাস্থ্যকর বিষয় নয়, তেমনি আওয়ামী লীগের সমর্থন না করলেই তিনি সরকারবিরোধী বা দেশবিরোধী—এমন সরলীকরণেরও সুযোগ নেই। অথচ এখন এই প্রবণতাটাই বাড়ছে যে যিনি সরকারের সব কাজে নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছেন না, তিনিই সরকারবিরোধী, তিনিই আওয়ামী লীগ এবং তিনিই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি। এমনকি পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতিবিরোধী কোনো উন্নয়নকাজের সমালোচনা করলেও তাঁকে সরকার ও আওয়ামীবিরোধী ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে—যা প্রকারান্তরে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকেই ভেতরে-ভেতরে দুর্বল করে দিচ্ছে।
আরেকটি অভিযোগ, যে অসাম্প্রদায়িক চিন্তা থেকে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ করা হয়েছে, সেই চিন্তা তথা মুক্তবুদ্ধির অনেক মানুষ—যাঁরা সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী না হলেও প্রকারান্তরে যাঁদের চিন্তা ও দর্শন আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শকে সমর্থন করে, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই সরকার তথা ক্ষমতাসীন দলের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কেননা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আওয়ামী লীগ ভিন্ন চিন্তা ও মতাদর্শের ব্যাপারে অনেক বেশি কঠোর হয়েছে। সে এখন নিঃশর্ত আনুগত্য চায়।
কিন্তু মেরুদণ্ডসম্পন্ন লোক কোনো ব্যক্তি বা দলের প্রতি নিঃশর্ত অনুগত হতে পারে না। কেননা তাঁকে দেশ ও জনকল্যাণবিরোধী যেকোনো সিদ্ধান্ত, নীতি ও পরিকল্পনার বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করতে হয়। নিঃশর্ত অনুগত হলে তাঁকে সব বিষয়ে হ্যাঁ বলতে হয়।
নিঃশর্ত আনুগত্য রাজনীতির জন্যও কল্যাণকর নয়। দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিঃশর্ত আনুগত্য একটি দলকে অগণতান্ত্রিক, অসহিষ্ণু ও বেপরোয়া করে তোলে। নির্ভয় করে তোলে। মনে রাখতে হবে, দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকের সংখ্যা যা-ই হোক না কেন, দিন শেষে তাদের সাধারণ মানুষের কাছেই যেতে হয়। যারা সংখ্যাগুরু। সেই সংখ্যাগুরুদের প্রতি সম্মান, ভালোবাসা এবং একই সঙ্গে ভয় থাকতে হয়। রাজনৈতিক দলগুলো যদি জনগণকে ভালো না বাসে এবং একই সঙ্গে তাদের সমীহ না করে, তাহলে সেই দেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। রাজনীতি অন্ধকার গলিতে ঢুকে গেলে এমন সব পক্ষ সেই অন্ধকারের সুযোগ নেয়, যারা পুরো দেশকেই অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারে।
পরিশেষে, আওয়ামী লীগের মতো একটি প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী এবং সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলের জন্মদিন তথা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শুধু তার নিজের উদ্যাপনের বিষয় নয়; বরং এটি দেশের আপামর জনসাধারণেরও আনন্দের উপলক্ষ। অতএব দেশের মানুষ যাতে দলমত-নির্বিশেষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আওয়ামী লীগের জন্মদিন বা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে পারে, আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব তো বটেই, স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদেরও সেভাবেই নিজেদের গড়ে তোলা দরকার। প্রশাসন বা বন্দুকের জোরে নয়; বরং আওয়ামী লীগ যে জনগণের শক্তিতেই টিকে আছে—সেটিও জোর গলায় বলতে পারার মতো নৈতিক জোর থাকা দরকার।
সাংবাদিক ও লেখক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে