আবু তাহের খান
২০১১ সালে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণ-দেনার পরিমাণ ছিল ২৭ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মাত্র এক যুগের ব্যবধানে সেটি সাড়ে তিন গুণের বেশি বেড়ে ২০২৩ সালের মার্চে এসে দাঁড়িয়েছে ৯৫ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে সবশেষের মাত্র দুই বছরেই বেড়েছে ৩২ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংক)।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যেসব ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেগুলোর আওতাধীন সমুদয় অর্থ ছাড় হলে এই দেনার পরিমাণ শিগগিরই আরও বহুলাংশে বেড়ে যাবে। তা ছাড়া শুধু বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি মোকাবিলার জন্য অতিসম্প্রতি যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের অনুকূলে বৈদেশিক ঋণগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, শেষ পর্যন্ত তা পাওয়া গেলে সেটিও উল্লিখিত ঋণ-দেনার পরিমাণকে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়ে তুলবে। মোটকথা, বাংলাদেশের বর্তমান বৈদেশিক ঋণ-দেনার পরিমাণ ইতিমধ্যে এমন এক বিশাল আকৃতি ধারণ করেছে যে তা পরিশোধের প্রকৃত সামর্থ্য এ দেশের জনগণের আছে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, বৈদেশিক ঋণগ্রহণের এ পরিমাণ হঠাৎ করেই এতটা বেড়ে গেল কেন? এর সবটাই কি যথাযথ প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই করে এসবের প্রয়োজন-অপ্রয়োজন তথা উপকার-অনুপকার নিরূপণ করে সেই অনুযায়ী গ্রহণ করা হয়েছে? এসব ঋণ যেসব প্রকল্প বা কর্মসূচির অনুকূলে গ্রহণ করা হয়েছে, সুদ-আসলে তা ফেরতদানের সামর্থ্য কি ওই সব প্রকল্প বা কর্মসূচির আছে? এসব ঋণগ্রহণের ক্ষেত্রে কি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে? বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪৫ (ক) অনুচ্ছেদে ব--লা আছে যে ‘বিদেশের সহিত সম্পাদিত সকল চুক্তি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হইবে এবং রাষ্ট্রপতি তাহা সংসদে পেশ করিবার ব্যবস্থা করিবেন।’
কিন্তু এসব ঋণের বিষয়ে সম্পাদিত চুক্তিগুলো কি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হয়েছে কিংবা করা হয়ে থাকলে সেগুলো কি সংসদে উপস্থাপিত হয়েছিল? জাতীয় সংসদের অধিবেশন-কার্যক্রম যেহেতু অনেকটাই প্রকাশ্য, সেহেতু চর্মচক্ষুর অভিজ্ঞতা থেকে মোটামুটি নিশ্চিত করেই বলা যায়, বৈদেশিক ঋণগ্রহণ নিয়ে সেখানে এ ধরনের কোনো আলোচনা কখনোই হয়নি। এর মানে হচ্ছে, বৈদেশিক ঋণগ্রহণ নিয়ে সব আমলেই সংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে ও হচ্ছে।
বিদেশ থেকে এসব ঋণ জনগণের স্বার্থ তথা তাদের জীবনমানের উন্নয়নের কথা বলে আনা হলেও এগুলোর বড় অংশই নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবসায়ী শ্রেণি, ঠিকাদার, ঋণদাতা দেশ ও প্রতিষ্ঠান, যন্ত্রপাতি ও মালামাল সরবরাহকারী, নীতিনির্ধারক রাজনীতিক ও আমলা প্রভৃতি শ্রেণি ও পেশার লোকজনের স্বার্থে। ফলে এসব ঋণ উল্লিখিত শ্রেণি-গোষ্ঠীর লোকজনের উদ্দেশ্য হাসিলে পুরোপুরি সফল হলেও এর খুব সামান্য অংশই জনগণের প্রকৃত উপকারে এসেছে। আর এসব ঋণের একটি বড় অংশই ব্যয় হয়েছে তথাকথিত পরামর্শসেবা, বিদেশ ভ্রমণ, যানবাহন ক্রয়, সভা-সেমিনার আয়োজন ইত্যাদির পেছনে, যেগুলোর তেমন কোনো বাস্তব উপযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। অন্যদিকে উল্লিখিত ঋণের যেটুকু বাস্তব কাজে ব্যয় হয়েছে, সেখানেও আবার রয়েছে পদ্ধতিজনিত ক্ষয় (সিস্টেম লস)। নানাজনের ভাগ, চাঁদা ও কমিশন শেষে শেষ পর্যন্ত যতটুকু টিকছে, তা আর যা-ই হোক, জাতীয় দেনা বৃদ্ধির পরিমাণের সঙ্গে মোটেও সংগতিপূর্ণ নয়, যদিও এ দেনা কড়ায়-গন্ডায় এ দেশের জনগণকেই পরিশোধ করতে হবে।
এটা ঠিক যে বিত্তবানের পরিবর্তে সাধারণ জনগণের ওপর বাড়তি করের বোঝা চাপিয়ে হলেও বাংলাদেশ এ পর্যন্ত প্রায় নিয়মিতভাবেই বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে এসেছে। এত দিন পর্যন্ত যেসব কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে, তা করা হয়েছে মূলত ২০১২-১৩ অর্থবছরের আগ পর্যন্ত সময়ে নেওয়া ঋণের বিপরীতে। কিন্তু ১০ বছর ধরে এই ঋণের পরিমাণ যেভাবে লাগামহীন হারে বেড়ে চলেছে, তাতে আগামী বছর পাঁচেকের মধ্যে এই কিস্তি পরিশোধের বার্ষিক পরিমাণ হঠাৎ করেই বিস্ময়কর হারে বেড়ে যাবে, যা ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তখন তা বর্তমানের মতো অত সহজ ধারায় পরিশোধ করা সম্ভব হবে কি না, সে নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এমনকি কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে সৃষ্ট সমস্যা থেকে পরে, অর্থাৎ ২০৩০ সালের পর থেকে তা সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে মোকাবিলা-অযোগ্য স্তরে নিয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
এ অবস্থায় ঋণগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা এবং সংশ্লিষ্ট ঋণের উপকার-অনুপকারের বিষয়গুলো পর্যাপ্ত সতর্কতার সঙ্গে বিচার-বিশ্লেষণ না করেই যখন-তখন বৈদেশিক ঋণগ্রহণের বর্তমান লাগামহীন ধারাকে অবিলম্বে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে শেষ পর্যন্ত তা দেশকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে পারে। কিন্তু চলমান সংকটময় অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে, যখন বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি মোকাবিলায় সরকার অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের অনুকূলে বৈদেশিক ঋণগ্রহণের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে, তখন সেই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা কীভাবে ও কতটুকু সম্ভব হবে তা একটি গুরুতর প্রশ্ন বৈকি। এ ক্ষেত্রে সরকার যদি শুধু নিজেদের মেয়াদকালকেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পুরো আয়ুষ্কাল ভাবে, তাহলে এরূপ ঋণগ্রহণের বিষয়টি হয়তো ঠিকই আছে। কিন্তু তা না হয়ে বিষয়টি যদি এমন হয় যে এরপরও বাংলাদেশ টিকে থাকবে এবং এই ঋণ এ দেশের সাধারণ জনগণকেই পরিশোধ করতে হবে, তাহলে এরূপ যথেচ্ছ ধারায় বৈদেশিক ঋণগ্রহণের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সরকার স্বীকারই করতে চায় না যে বৈদেশিক ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ এই মুহূর্তে একটি গুরুতর সমস্যার মধ্যে আছে।
সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন এবং ঋণগ্রহণ ও ঋণযুক্ত প্রকল্প অনুমোদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরগুলো যদি বৈদেশিক ঋণের বিষয়টিতে যথার্থই কঠোর না হয়, তাহলে এ-সংক্রান্ত নিকট ভবিষ্যতের পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
অন্যদিকে, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত জাতীয় সংসদ। কিন্তু প্রায় একদলীয় জাতীয় সংসদে বিষয়টি কেউ আলোচনার জন্য উত্থাপন করবেন, এমন বাস্তবতা একেবারেই নেই। আর জাতীয় সংসদের বাইরে এ নিয়ে টুকটাক আলোচনা থাকলেও এ বিষয়ে জোরালো জনমত গড়ে তোলার মাধ্যমে সরকারকে সচেতন হতে বাধ্য করার মতো ব্যাপকভিত্তিক আলোচনারও ঘাটতি রয়েছে। অধ্যাপক মইনুল ইসলাম এ নিয়ে প্রায় একা আর কতটা লড়বেন? আসলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে এ ক্ষেত্রে আর কোনো চেষ্টাই তেমন কোনো কাজে আসবে বলে মনে হয় না।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক
২০১১ সালে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণ-দেনার পরিমাণ ছিল ২৭ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মাত্র এক যুগের ব্যবধানে সেটি সাড়ে তিন গুণের বেশি বেড়ে ২০২৩ সালের মার্চে এসে দাঁড়িয়েছে ৯৫ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে সবশেষের মাত্র দুই বছরেই বেড়েছে ৩২ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংক)।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যেসব ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেগুলোর আওতাধীন সমুদয় অর্থ ছাড় হলে এই দেনার পরিমাণ শিগগিরই আরও বহুলাংশে বেড়ে যাবে। তা ছাড়া শুধু বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি মোকাবিলার জন্য অতিসম্প্রতি যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের অনুকূলে বৈদেশিক ঋণগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, শেষ পর্যন্ত তা পাওয়া গেলে সেটিও উল্লিখিত ঋণ-দেনার পরিমাণকে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়ে তুলবে। মোটকথা, বাংলাদেশের বর্তমান বৈদেশিক ঋণ-দেনার পরিমাণ ইতিমধ্যে এমন এক বিশাল আকৃতি ধারণ করেছে যে তা পরিশোধের প্রকৃত সামর্থ্য এ দেশের জনগণের আছে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, বৈদেশিক ঋণগ্রহণের এ পরিমাণ হঠাৎ করেই এতটা বেড়ে গেল কেন? এর সবটাই কি যথাযথ প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই করে এসবের প্রয়োজন-অপ্রয়োজন তথা উপকার-অনুপকার নিরূপণ করে সেই অনুযায়ী গ্রহণ করা হয়েছে? এসব ঋণ যেসব প্রকল্প বা কর্মসূচির অনুকূলে গ্রহণ করা হয়েছে, সুদ-আসলে তা ফেরতদানের সামর্থ্য কি ওই সব প্রকল্প বা কর্মসূচির আছে? এসব ঋণগ্রহণের ক্ষেত্রে কি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে? বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪৫ (ক) অনুচ্ছেদে ব--লা আছে যে ‘বিদেশের সহিত সম্পাদিত সকল চুক্তি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হইবে এবং রাষ্ট্রপতি তাহা সংসদে পেশ করিবার ব্যবস্থা করিবেন।’
কিন্তু এসব ঋণের বিষয়ে সম্পাদিত চুক্তিগুলো কি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হয়েছে কিংবা করা হয়ে থাকলে সেগুলো কি সংসদে উপস্থাপিত হয়েছিল? জাতীয় সংসদের অধিবেশন-কার্যক্রম যেহেতু অনেকটাই প্রকাশ্য, সেহেতু চর্মচক্ষুর অভিজ্ঞতা থেকে মোটামুটি নিশ্চিত করেই বলা যায়, বৈদেশিক ঋণগ্রহণ নিয়ে সেখানে এ ধরনের কোনো আলোচনা কখনোই হয়নি। এর মানে হচ্ছে, বৈদেশিক ঋণগ্রহণ নিয়ে সব আমলেই সংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে ও হচ্ছে।
বিদেশ থেকে এসব ঋণ জনগণের স্বার্থ তথা তাদের জীবনমানের উন্নয়নের কথা বলে আনা হলেও এগুলোর বড় অংশই নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবসায়ী শ্রেণি, ঠিকাদার, ঋণদাতা দেশ ও প্রতিষ্ঠান, যন্ত্রপাতি ও মালামাল সরবরাহকারী, নীতিনির্ধারক রাজনীতিক ও আমলা প্রভৃতি শ্রেণি ও পেশার লোকজনের স্বার্থে। ফলে এসব ঋণ উল্লিখিত শ্রেণি-গোষ্ঠীর লোকজনের উদ্দেশ্য হাসিলে পুরোপুরি সফল হলেও এর খুব সামান্য অংশই জনগণের প্রকৃত উপকারে এসেছে। আর এসব ঋণের একটি বড় অংশই ব্যয় হয়েছে তথাকথিত পরামর্শসেবা, বিদেশ ভ্রমণ, যানবাহন ক্রয়, সভা-সেমিনার আয়োজন ইত্যাদির পেছনে, যেগুলোর তেমন কোনো বাস্তব উপযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। অন্যদিকে উল্লিখিত ঋণের যেটুকু বাস্তব কাজে ব্যয় হয়েছে, সেখানেও আবার রয়েছে পদ্ধতিজনিত ক্ষয় (সিস্টেম লস)। নানাজনের ভাগ, চাঁদা ও কমিশন শেষে শেষ পর্যন্ত যতটুকু টিকছে, তা আর যা-ই হোক, জাতীয় দেনা বৃদ্ধির পরিমাণের সঙ্গে মোটেও সংগতিপূর্ণ নয়, যদিও এ দেনা কড়ায়-গন্ডায় এ দেশের জনগণকেই পরিশোধ করতে হবে।
এটা ঠিক যে বিত্তবানের পরিবর্তে সাধারণ জনগণের ওপর বাড়তি করের বোঝা চাপিয়ে হলেও বাংলাদেশ এ পর্যন্ত প্রায় নিয়মিতভাবেই বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে এসেছে। এত দিন পর্যন্ত যেসব কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে, তা করা হয়েছে মূলত ২০১২-১৩ অর্থবছরের আগ পর্যন্ত সময়ে নেওয়া ঋণের বিপরীতে। কিন্তু ১০ বছর ধরে এই ঋণের পরিমাণ যেভাবে লাগামহীন হারে বেড়ে চলেছে, তাতে আগামী বছর পাঁচেকের মধ্যে এই কিস্তি পরিশোধের বার্ষিক পরিমাণ হঠাৎ করেই বিস্ময়কর হারে বেড়ে যাবে, যা ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তখন তা বর্তমানের মতো অত সহজ ধারায় পরিশোধ করা সম্ভব হবে কি না, সে নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এমনকি কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে সৃষ্ট সমস্যা থেকে পরে, অর্থাৎ ২০৩০ সালের পর থেকে তা সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে মোকাবিলা-অযোগ্য স্তরে নিয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
এ অবস্থায় ঋণগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা এবং সংশ্লিষ্ট ঋণের উপকার-অনুপকারের বিষয়গুলো পর্যাপ্ত সতর্কতার সঙ্গে বিচার-বিশ্লেষণ না করেই যখন-তখন বৈদেশিক ঋণগ্রহণের বর্তমান লাগামহীন ধারাকে অবিলম্বে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে শেষ পর্যন্ত তা দেশকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে পারে। কিন্তু চলমান সংকটময় অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে, যখন বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি মোকাবিলায় সরকার অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের অনুকূলে বৈদেশিক ঋণগ্রহণের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে, তখন সেই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা কীভাবে ও কতটুকু সম্ভব হবে তা একটি গুরুতর প্রশ্ন বৈকি। এ ক্ষেত্রে সরকার যদি শুধু নিজেদের মেয়াদকালকেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পুরো আয়ুষ্কাল ভাবে, তাহলে এরূপ ঋণগ্রহণের বিষয়টি হয়তো ঠিকই আছে। কিন্তু তা না হয়ে বিষয়টি যদি এমন হয় যে এরপরও বাংলাদেশ টিকে থাকবে এবং এই ঋণ এ দেশের সাধারণ জনগণকেই পরিশোধ করতে হবে, তাহলে এরূপ যথেচ্ছ ধারায় বৈদেশিক ঋণগ্রহণের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সরকার স্বীকারই করতে চায় না যে বৈদেশিক ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ এই মুহূর্তে একটি গুরুতর সমস্যার মধ্যে আছে।
সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন এবং ঋণগ্রহণ ও ঋণযুক্ত প্রকল্প অনুমোদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরগুলো যদি বৈদেশিক ঋণের বিষয়টিতে যথার্থই কঠোর না হয়, তাহলে এ-সংক্রান্ত নিকট ভবিষ্যতের পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
অন্যদিকে, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত জাতীয় সংসদ। কিন্তু প্রায় একদলীয় জাতীয় সংসদে বিষয়টি কেউ আলোচনার জন্য উত্থাপন করবেন, এমন বাস্তবতা একেবারেই নেই। আর জাতীয় সংসদের বাইরে এ নিয়ে টুকটাক আলোচনা থাকলেও এ বিষয়ে জোরালো জনমত গড়ে তোলার মাধ্যমে সরকারকে সচেতন হতে বাধ্য করার মতো ব্যাপকভিত্তিক আলোচনারও ঘাটতি রয়েছে। অধ্যাপক মইনুল ইসলাম এ নিয়ে প্রায় একা আর কতটা লড়বেন? আসলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে এ ক্ষেত্রে আর কোনো চেষ্টাই তেমন কোনো কাজে আসবে বলে মনে হয় না।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে