মাহমুদুল মাসুদ, মুক্তিযোদ্ধা
বাংলাদেশের অনেক শিক্ষিত লোক এখন কিছু ইংরেজি শব্দের সঙ্গে মোটামুটি পরিচিত। যেমন:
প্রো-অ্যাকটিভ
কোনো বিষয়ে আগাম পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিকে এককথায় প্রো-অ্যাকটিভ বলা চলে। স্বাভাবিকভাবে এর সঙ্গে আরও কিছু শব্দ চলে আসে। যেমন ইনিশিয়েটিভ বা উদ্যোগ, ডাইনামিক বা উদ্যমী। কেউ যদি কোনো অভিনব ধারণা দিয়ে কোনো সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হন এবং উদ্যমী ও সাহসী হয়ে কোনো কঠিন কাজ করতে এগিয়ে আসেন, তখন তাঁকে আমরা বলি ডাইনামিক, তাঁর ইনিশিয়েটিভ আছে। পুরো প্রক্রিয়া বা পদক্ষেপকে বলি প্রো-অ্যাকটিভ। বাস্তব দৃষ্টান্ত: ঢাকা উত্তরের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। অতি অল্প সময়ে তিনি অনেক কিছু নিজে থেকে করে দেখিয়েছেন যে ইনিশিয়েটিভ ও ডাইনামিজম কী রকম। ওপরের নির্দেশের দিকে তাকিয়ে না থেকে ওপরকে সঙ্গে নিয়ে প্রো-অ্যাকটিভ ছিলেন। গা বাঁচিয়ে চুপচাপ বসে বসে পাঁচ বছর কাটিয়ে দিতে পারতেন তাঁর পূর্ব ও উত্তরসূরিদের মতো।
উল্লেখযোগ্য আরেকজন হলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যতম সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশিদ আলম, যাঁর প্রো-অ্যাকটিভ ভূমিকায় এবং প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয় সম্ভব হয়েছে। প্রশাসনের সবাই এ রকম প্রো-অ্যাকটিভ হলে ঢাকার চারপাশের এবং অন্যত্র নদীদূষণ ও দখল হতো না। এখানে একটি প্রো-অ্যাকটিভের বাস্তব বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে। আশির দশকে ঢাকার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার রাস্তার নম্বরগুলো সামরিক শাসকেরা হঠাৎ বদল করে একটি জগাখিচুড়ি অবস্থার সৃষ্টি করেন। উদ্দেশ্য—ধানমন্ডি ৩২ নম্বর পরিবর্তন করা, যাতে বাংলাদেশের জন্মস্থান মানুষ ভুলে যায়।
সেই পাকিস্তানি বুদ্ধি! যেমন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বরিশাল শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অশ্বিনীকুমার টাউন হললাগোয়া রুচিরা রেস্টুরেন্ট ভেঙে সেখানে মসজিদ তুলে ফেলে। কারণ, সেটা ছিল আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের জনপ্রিয় মিলনকেন্দ্র। এর আগে আইয়ুব আমলে অশ্বিনীকুমার টাউন হলের নাম মুছে সুকৌশলে এ কে টাউন হল করা হয়, যাতে কেউ শয়তানিটা ধরতে না পারে। অনেকে তখন মনে করত, ওটি আইয়ুব খান টাউন হল। এখান থেকেই ১৯০৫ সালে বঙ্গীয় কংগ্রেস সভাপতি স্যার সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন।
বঙ্কিম চন্দ্র যথার্থই বলেছিলেন, ‘বাঙালি ইতিহাসবিমুখ জাতি; ৩২ নম্বর যখন ১১ নম্বর করা হলো, কেউ টুঁ শব্দটি করল না। এমনকি আওয়ামী শাসনামলেও না। বিষয়টিকে কেউ গুরুত্বই দিল না। শেষ পর্যন্ত উচ্চপর্যায়ে দেনদরবার করে ৩২ নম্বর পুনর্বহাল করা হয়। বাকি নম্বরগুলো একই থাকল। এই বদমায়েশির উদ্দেশ্য একটাই—যাতে মানুষ জাতির পিতাকে ভুলে যায়। আজ থেকে এক শ বছর পর বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস বিকৃতভাবে উপস্থাপিত হতে পারত, যে সম্ভাবনা এখনো রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের চোখের সামনেই যেভাবে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল তা মানুষ দেখেছে।
রি-অ্যাকটিভ
কোনো কিছু ঘটে যাওয়ার পর কারও নড়েচড়ে বসাকে বলা যেতে পারে রি-অ্যাকটিভ। ব্যক্তির চৈতন্যোদয় হয় পরে। তাঁরা সব সময় ওপরের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকেন অথবা নিচ থেকে নীল কাগজে সারসংক্ষেপ এলে দাঁড়ি-কমা-বানান দেখে ওপরে পাঠানোই তাঁদের কাজ। নিজ থেকে কিছু করার সাহস নেই। সব সময় ঝামেলা এড়িয়ে চলেন। বাস্তব দৃষ্টান্ত: আগের রেলমন্ত্রী। রেলগেট নেই, লাইনের নিচে পাথর নেই, বাঁকাচোরা লাইন। দুর্ঘটনা ঘটছে একের পর এক। রেলে আগুন। রেল পুলিশ থেকেও নেই। অজুহাতের সীমা নেই।
অর্থসংকট, লোকসংকট—আরও কত-কী! অথচ বিদেশ থেকে পাথর আমদানি না করে নিজস্ব মধ্যপাড়া কঠিন শিলা দেশের সব রেললাইন ও রাস্তাঘাটে ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমান ডলারসংকটে এতে বৈদেশিক মুদ্রারও সাশ্রয় হবে। কিন্তু ওসব বিষয়ে আগ্রহ নেই। প্রি-এম্পটিভ মেজার বা আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস বা উদ্যোগের অভাব সুস্পষ্ট অনেক ক্ষেত্রে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে’ অবস্থা।
লোহা গরম থাকতে থাকতে তাকে আঘাত করতে হয়। ঠান্ডা হলে আঘাতে কাজ করে না। যে অভাবনীয় রায় জনগণ সাম্প্রতিক নির্বাচনে দিয়েছে, তাতে বহু অসমাপ্ত কাজ ঝটপট করে পুঞ্জীভূত জঞ্জাল সাফ করার এমন সুযোগ হাতছাড়া করা এখন ঠিক হবে না। এ কথা মনে রেখে আগামী এক শ দিনের কর্মসূচিতে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করা যেতে পারে:
১. ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূল নীতিগুলোতে ফিরে যাওয়া। অনুচ্ছেদ ২ক বাতিল করা।
২. অর্পিত সম্পত্তির বিষয়টি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্থায়ী সুষ্ঠু সমাধান করা।
৩. পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যার সমাধান করা।
৪. একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা করা। ভয় পেলে এটি কোনো দিন হবে না।
৫. নারীনীতির পূর্ণ বাস্তবায়ন করা। এখানেও ভয় পেলে চলবে না।
৬. জাতির পিতা এবং জাতীয় সংগীত যারা এখনো মানে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানার ব্যবস্থা করা।
৭. জনগণের বিচার চাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা, অর্থাৎ কোনো বিচার প্রার্থনা বা অভিযোগ স্থগিত না করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ন্যায্য-অন্যায্য সুরাহা করা, যেন বিচারের বাণী নিভৃতে না কাঁদে।
৮. বিচারে তারিখের পর তারিখ ফেলার প্রথা রহিত করে বিচারের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া। জাতির পিতা বলতেন যা এখনো টেলিভিশনে দেখানো হয়, ‘উকিল শ্বশুর অবসরে যাবার সময় উকিল জামাইকে তার মামলাগুলো দিয়ে যায়, যাতে জামাই সেগুলো দিয়ে জীবন কাটিয়ে দিতে পারে।’ এই ব্যবস্থা পরিবর্তন করার সময় তাঁকে দেওয়া হয়নি।
৯. সংবিধানে যেসব ক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন করার কথা বলা আছে, সেই সব ক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন করা।
১০. চাঁদাবাজি বন্ধ করা। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ চাঁদাবাজি।
১১. দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ।
১২. দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ।
১৩. বচন নিয়ন্ত্রণ। কবি জীবনানন্দ দাশের মা কবি কুসুম কুমারী দাশের অমর বিলাপ, ‘আমাদের সেই ছেলে কবে বড় হবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে’ মাথায় রাখতে হবে।
১৪. ২০১৪, ২০২৩-২৪সহ সব সময়ের আগুন-সন্ত্রাস ও হত্যা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা। এগুলো যেন শুধু রাজনৈতিক বক্তব্যের মধ্যেই সীমিত না থাকে।
নতুন (!) সরকারে অনেকেই পুরোনো। নতুন-পুরোনো মিলিয়ে প্রো-অ্যাকটিভ কজন, সেটাই দেখার বিষয়। জনগণ তাঁদের পাঠিয়েছে কাজ করার জন্য, ক্ষমতা ভোগের জন্য নয়। অতীতে দেখা গেছে, মন্ত্রিসভায় দু-একজন ছাড়া বেশির ভাগই রি-অ্যাকটিভ। রুটিনকাজ করে সময় পার করেন। কোনো ইনিশিয়েটিভ নেই। প্রধানমন্ত্রীকে খুশি রাখা ছাড়া কিছু করার নেই। যে জনগণ তাঁদের নির্বাচন করেছে, তাদের কথা মনে থাকে না।
তবে বাচালতায় অনেকেই পিছিয়ে নেই। গণমাধ্যমে মনোযোগ পাওয়ার জন্য অতিকথন অতিসাধারণ ব্যাপার। অনেক গণমাধ্যমকর্মী নিজেদের কৃতিত্ব দেখাতে এবং চাকরি বাঁচাতে জেনেশুনে অবান্তর প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন মন্ত্রীদের। যাঁর যে বিষয় নয়, তিনি সেই বিষয়ে বলতে থাকেন। আজ পর্যন্ত কাউকে বলতে শোনা গেল না যে ‘এটি আমার বিষয় নয়। এ বিষয়ে আমার জানা নেই বা আমি বলতে পারব না।’
বাংলাদেশের সরকার তথা প্রশাসনের সদস্য-মন্ত্রী বা আমলাদের ক্ষমতা অনেক। ইচ্ছা করলে অনেক কিছু করা যায়। কিন্তু অনেকেই দায়িত্ব এড়িয়ে যান। ব্যতিক্রমী কয়েকজন ছাড়া সবকিছু প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলে পাশ কাটিয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী অনেকগুলো মন্ত্রণালয় এবং সংস্থা সরাসরি দেখেন। মেট্রোরেল তৈরি করা থেকে মসলিন পুনরুদ্ধার করা পর্যন্ত সবই তাঁকে দেখতে হয়। এরপর যদি অন্যদের কাজও তাঁকে করতে হয়, তবে দেশ চালাবেন কী করে? তিনিও মানুষ, দশভুজা নন।
বাংলাদেশে তিনিই সব থেকে দক্ষ এবং সফল, যিনি গা বাঁচিয়ে সময় পার করে দেন! একটি প্রচলিত গল্প এখানে উল্লেখযোগ্য। এক নেতা সম্পর্কে দুই গ্রামবাসীর আলোচনা হচ্ছে। একজন বলল, ‘উনি খুব ভালো মানুষ। জীবনে কারও অপকার করেননি।’ অন্যজন বলল, ‘তা ঠিক। তবে, উনি কারও উপকারও করেননি।’
সবার পারফরম্যান্স ইনডিকেটর বা মূল্যায়ন হওয়া উচিত যে কে কত প্রো-অ্যাকটিভ। অতীতের বিবেচনায় দেখা যায়, মন্ত্রিসভায় প্রো-অ্যাকটিভ হিসেবে সর্বাগ্রে যে নামটি আসে তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী।
মাহমুদুল মাসুদ, মুক্তিযোদ্ধা
বাংলাদেশের অনেক শিক্ষিত লোক এখন কিছু ইংরেজি শব্দের সঙ্গে মোটামুটি পরিচিত। যেমন:
প্রো-অ্যাকটিভ
কোনো বিষয়ে আগাম পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিকে এককথায় প্রো-অ্যাকটিভ বলা চলে। স্বাভাবিকভাবে এর সঙ্গে আরও কিছু শব্দ চলে আসে। যেমন ইনিশিয়েটিভ বা উদ্যোগ, ডাইনামিক বা উদ্যমী। কেউ যদি কোনো অভিনব ধারণা দিয়ে কোনো সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হন এবং উদ্যমী ও সাহসী হয়ে কোনো কঠিন কাজ করতে এগিয়ে আসেন, তখন তাঁকে আমরা বলি ডাইনামিক, তাঁর ইনিশিয়েটিভ আছে। পুরো প্রক্রিয়া বা পদক্ষেপকে বলি প্রো-অ্যাকটিভ। বাস্তব দৃষ্টান্ত: ঢাকা উত্তরের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। অতি অল্প সময়ে তিনি অনেক কিছু নিজে থেকে করে দেখিয়েছেন যে ইনিশিয়েটিভ ও ডাইনামিজম কী রকম। ওপরের নির্দেশের দিকে তাকিয়ে না থেকে ওপরকে সঙ্গে নিয়ে প্রো-অ্যাকটিভ ছিলেন। গা বাঁচিয়ে চুপচাপ বসে বসে পাঁচ বছর কাটিয়ে দিতে পারতেন তাঁর পূর্ব ও উত্তরসূরিদের মতো।
উল্লেখযোগ্য আরেকজন হলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যতম সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশিদ আলম, যাঁর প্রো-অ্যাকটিভ ভূমিকায় এবং প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয় সম্ভব হয়েছে। প্রশাসনের সবাই এ রকম প্রো-অ্যাকটিভ হলে ঢাকার চারপাশের এবং অন্যত্র নদীদূষণ ও দখল হতো না। এখানে একটি প্রো-অ্যাকটিভের বাস্তব বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে। আশির দশকে ঢাকার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার রাস্তার নম্বরগুলো সামরিক শাসকেরা হঠাৎ বদল করে একটি জগাখিচুড়ি অবস্থার সৃষ্টি করেন। উদ্দেশ্য—ধানমন্ডি ৩২ নম্বর পরিবর্তন করা, যাতে বাংলাদেশের জন্মস্থান মানুষ ভুলে যায়।
সেই পাকিস্তানি বুদ্ধি! যেমন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বরিশাল শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অশ্বিনীকুমার টাউন হললাগোয়া রুচিরা রেস্টুরেন্ট ভেঙে সেখানে মসজিদ তুলে ফেলে। কারণ, সেটা ছিল আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের জনপ্রিয় মিলনকেন্দ্র। এর আগে আইয়ুব আমলে অশ্বিনীকুমার টাউন হলের নাম মুছে সুকৌশলে এ কে টাউন হল করা হয়, যাতে কেউ শয়তানিটা ধরতে না পারে। অনেকে তখন মনে করত, ওটি আইয়ুব খান টাউন হল। এখান থেকেই ১৯০৫ সালে বঙ্গীয় কংগ্রেস সভাপতি স্যার সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন।
বঙ্কিম চন্দ্র যথার্থই বলেছিলেন, ‘বাঙালি ইতিহাসবিমুখ জাতি; ৩২ নম্বর যখন ১১ নম্বর করা হলো, কেউ টুঁ শব্দটি করল না। এমনকি আওয়ামী শাসনামলেও না। বিষয়টিকে কেউ গুরুত্বই দিল না। শেষ পর্যন্ত উচ্চপর্যায়ে দেনদরবার করে ৩২ নম্বর পুনর্বহাল করা হয়। বাকি নম্বরগুলো একই থাকল। এই বদমায়েশির উদ্দেশ্য একটাই—যাতে মানুষ জাতির পিতাকে ভুলে যায়। আজ থেকে এক শ বছর পর বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস বিকৃতভাবে উপস্থাপিত হতে পারত, যে সম্ভাবনা এখনো রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের চোখের সামনেই যেভাবে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল তা মানুষ দেখেছে।
রি-অ্যাকটিভ
কোনো কিছু ঘটে যাওয়ার পর কারও নড়েচড়ে বসাকে বলা যেতে পারে রি-অ্যাকটিভ। ব্যক্তির চৈতন্যোদয় হয় পরে। তাঁরা সব সময় ওপরের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকেন অথবা নিচ থেকে নীল কাগজে সারসংক্ষেপ এলে দাঁড়ি-কমা-বানান দেখে ওপরে পাঠানোই তাঁদের কাজ। নিজ থেকে কিছু করার সাহস নেই। সব সময় ঝামেলা এড়িয়ে চলেন। বাস্তব দৃষ্টান্ত: আগের রেলমন্ত্রী। রেলগেট নেই, লাইনের নিচে পাথর নেই, বাঁকাচোরা লাইন। দুর্ঘটনা ঘটছে একের পর এক। রেলে আগুন। রেল পুলিশ থেকেও নেই। অজুহাতের সীমা নেই।
অর্থসংকট, লোকসংকট—আরও কত-কী! অথচ বিদেশ থেকে পাথর আমদানি না করে নিজস্ব মধ্যপাড়া কঠিন শিলা দেশের সব রেললাইন ও রাস্তাঘাটে ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমান ডলারসংকটে এতে বৈদেশিক মুদ্রারও সাশ্রয় হবে। কিন্তু ওসব বিষয়ে আগ্রহ নেই। প্রি-এম্পটিভ মেজার বা আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস বা উদ্যোগের অভাব সুস্পষ্ট অনেক ক্ষেত্রে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে’ অবস্থা।
লোহা গরম থাকতে থাকতে তাকে আঘাত করতে হয়। ঠান্ডা হলে আঘাতে কাজ করে না। যে অভাবনীয় রায় জনগণ সাম্প্রতিক নির্বাচনে দিয়েছে, তাতে বহু অসমাপ্ত কাজ ঝটপট করে পুঞ্জীভূত জঞ্জাল সাফ করার এমন সুযোগ হাতছাড়া করা এখন ঠিক হবে না। এ কথা মনে রেখে আগামী এক শ দিনের কর্মসূচিতে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করা যেতে পারে:
১. ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূল নীতিগুলোতে ফিরে যাওয়া। অনুচ্ছেদ ২ক বাতিল করা।
২. অর্পিত সম্পত্তির বিষয়টি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্থায়ী সুষ্ঠু সমাধান করা।
৩. পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যার সমাধান করা।
৪. একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা করা। ভয় পেলে এটি কোনো দিন হবে না।
৫. নারীনীতির পূর্ণ বাস্তবায়ন করা। এখানেও ভয় পেলে চলবে না।
৬. জাতির পিতা এবং জাতীয় সংগীত যারা এখনো মানে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানার ব্যবস্থা করা।
৭. জনগণের বিচার চাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা, অর্থাৎ কোনো বিচার প্রার্থনা বা অভিযোগ স্থগিত না করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ন্যায্য-অন্যায্য সুরাহা করা, যেন বিচারের বাণী নিভৃতে না কাঁদে।
৮. বিচারে তারিখের পর তারিখ ফেলার প্রথা রহিত করে বিচারের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া। জাতির পিতা বলতেন যা এখনো টেলিভিশনে দেখানো হয়, ‘উকিল শ্বশুর অবসরে যাবার সময় উকিল জামাইকে তার মামলাগুলো দিয়ে যায়, যাতে জামাই সেগুলো দিয়ে জীবন কাটিয়ে দিতে পারে।’ এই ব্যবস্থা পরিবর্তন করার সময় তাঁকে দেওয়া হয়নি।
৯. সংবিধানে যেসব ক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন করার কথা বলা আছে, সেই সব ক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন করা।
১০. চাঁদাবাজি বন্ধ করা। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ চাঁদাবাজি।
১১. দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ।
১২. দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ।
১৩. বচন নিয়ন্ত্রণ। কবি জীবনানন্দ দাশের মা কবি কুসুম কুমারী দাশের অমর বিলাপ, ‘আমাদের সেই ছেলে কবে বড় হবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে’ মাথায় রাখতে হবে।
১৪. ২০১৪, ২০২৩-২৪সহ সব সময়ের আগুন-সন্ত্রাস ও হত্যা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা। এগুলো যেন শুধু রাজনৈতিক বক্তব্যের মধ্যেই সীমিত না থাকে।
নতুন (!) সরকারে অনেকেই পুরোনো। নতুন-পুরোনো মিলিয়ে প্রো-অ্যাকটিভ কজন, সেটাই দেখার বিষয়। জনগণ তাঁদের পাঠিয়েছে কাজ করার জন্য, ক্ষমতা ভোগের জন্য নয়। অতীতে দেখা গেছে, মন্ত্রিসভায় দু-একজন ছাড়া বেশির ভাগই রি-অ্যাকটিভ। রুটিনকাজ করে সময় পার করেন। কোনো ইনিশিয়েটিভ নেই। প্রধানমন্ত্রীকে খুশি রাখা ছাড়া কিছু করার নেই। যে জনগণ তাঁদের নির্বাচন করেছে, তাদের কথা মনে থাকে না।
তবে বাচালতায় অনেকেই পিছিয়ে নেই। গণমাধ্যমে মনোযোগ পাওয়ার জন্য অতিকথন অতিসাধারণ ব্যাপার। অনেক গণমাধ্যমকর্মী নিজেদের কৃতিত্ব দেখাতে এবং চাকরি বাঁচাতে জেনেশুনে অবান্তর প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন মন্ত্রীদের। যাঁর যে বিষয় নয়, তিনি সেই বিষয়ে বলতে থাকেন। আজ পর্যন্ত কাউকে বলতে শোনা গেল না যে ‘এটি আমার বিষয় নয়। এ বিষয়ে আমার জানা নেই বা আমি বলতে পারব না।’
বাংলাদেশের সরকার তথা প্রশাসনের সদস্য-মন্ত্রী বা আমলাদের ক্ষমতা অনেক। ইচ্ছা করলে অনেক কিছু করা যায়। কিন্তু অনেকেই দায়িত্ব এড়িয়ে যান। ব্যতিক্রমী কয়েকজন ছাড়া সবকিছু প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলে পাশ কাটিয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী অনেকগুলো মন্ত্রণালয় এবং সংস্থা সরাসরি দেখেন। মেট্রোরেল তৈরি করা থেকে মসলিন পুনরুদ্ধার করা পর্যন্ত সবই তাঁকে দেখতে হয়। এরপর যদি অন্যদের কাজও তাঁকে করতে হয়, তবে দেশ চালাবেন কী করে? তিনিও মানুষ, দশভুজা নন।
বাংলাদেশে তিনিই সব থেকে দক্ষ এবং সফল, যিনি গা বাঁচিয়ে সময় পার করে দেন! একটি প্রচলিত গল্প এখানে উল্লেখযোগ্য। এক নেতা সম্পর্কে দুই গ্রামবাসীর আলোচনা হচ্ছে। একজন বলল, ‘উনি খুব ভালো মানুষ। জীবনে কারও অপকার করেননি।’ অন্যজন বলল, ‘তা ঠিক। তবে, উনি কারও উপকারও করেননি।’
সবার পারফরম্যান্স ইনডিকেটর বা মূল্যায়ন হওয়া উচিত যে কে কত প্রো-অ্যাকটিভ। অতীতের বিবেচনায় দেখা যায়, মন্ত্রিসভায় প্রো-অ্যাকটিভ হিসেবে সর্বাগ্রে যে নামটি আসে তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী।
মাহমুদুল মাসুদ, মুক্তিযোদ্ধা
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
১ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে