আজাদুল আদনান, ঢাকা
জ্বর, কোমরব্যথা ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে বাড়ির পাশের কমিউনিটি ক্লিনিকে এসেছিলেন মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার অন্বয়পুর ইউনিয়নের আনুলিয়া গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব মালা বেগম। বেলা সাড়ে ১১টায় গিয়ে দেখেন, ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত (প্রোভাইডার) চিকিৎসক সৈয়দ আফরোজ কল্প নেই। দুজন সহকারী সবকিছু গুটিয়ে ক্লিনিক বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এই প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে মালা বেগম খুব আক্ষেপ করে বললেন, ‘এত কষ্ট করি আইল্যাম, এহন দেখি ডাক্তার নাই। ওমন হলে গরিব মানুষ কেমনে বাঁচে বাবা?’
বৃদ্ধার কথা শুনে ক্লিনিকের সহকারী দুজন চুপচাপ। চলে যাওয়ার মুহূর্তে রোগী আসায় তাঁরা বিরক্ত। একই সঙ্গে তাঁদের মুখে অসহায়ের সুর, এখানে তো ওষুধ নেই, চিকিৎসা হবে কীভাবে?
সেখান থেকে একটু দূরে গোয়ালখালী কমিউনিটি ক্লিনিক। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক নিগার সুলতানা বললেন, ‘দেখুন, এ জায়গায় বয়স্ক ও গর্ভবতীদের আসার কোনো ব্যবস্থা নেই। বর্ষা হলে অবস্থা বেহাল। চারদিকে পানি থাকে, কেউ আসতে পারে না।’
তারপরও যাঁরা আসেন, তাঁরা কি চিকিৎসা পান? এমন প্রশ্নের জবাবে নিগার সুলতানা বলেন, ‘আমাদের কাছে যে পরিমাণ ওষুধ আসে, তাতে ২০ শতাংশ মানুষকেও সেবা দিতে পারি না। দেখতেই পাচ্ছেন, জটিল রোগের চিকিৎসা তো দূরের কথা, গর্ভবতী মায়েদের ওজন মাপার যন্ত্রটি পর্যন্ত নেই।’
চরবেষ্টিত তেওতা ইউনিয়নের ত্রিশুণ্ডি গ্রামের ২০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা হলো সেখানকার কমিউনিটি ক্লিনিক। কিন্তু ক্লিনিক বলতে চরের মাঝে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি টিনের ঘর। মাসে দু-একবার খোলা হয়, বন্ধ থাকে বেশির ভাগ সময়।
কমিউনিটি ক্লিনিকের এই বেহাল অবস্থা দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নিজের জেলা মানিকগঞ্জের। দেশের অন্য জেলার চিত্র কী তা মনে হয় আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মানিকগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী অবশ্য নিজেও এসব দুর্দশার কথা স্বীকার করলেন। তিনি বলেন, আগের চেয়ে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ওষুধপত্রের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বললেন, মানিকগঞ্জ জেলার সাত উপজেলায় ১৬৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। নতুন করে আরও ২টি ক্লিনিকের কাজ চলছে। তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল, স্বাস্থ্যসেবা না দিয়ে শুধু ক্লিনিকের সংখ্যা বাড়িয়ে কী লাভ? জবাবে তিনি বললেন, ‘আমাদের সামর্থ্যও বুঝতে হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে এসব ক্লিনিক গড়ে তোলা হলেও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে শুরু থেকেই ঘাটতি দেখা গেছে। কোথাও অনেকটা ভালোমতো চললেও অধিকাংশ জায়গাতেই অব্যবস্থাপনা। সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তদারকিতে, যা নেই বললেই চলে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এগুলোতে নজর দেন না, এটাই বড় সমস্যা।
তৃণমূল পর্যায়ের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবা ট্রাস্ট গঠন করে সরকার। এই ট্রাস্টের কাজই হলো গ্রামপর্যায়ে গড়ে তোলা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো দেখভাল করা। ১৫ সদস্যের এই ট্রাস্টের প্রধান ড. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। সারা দেশে বর্তমানে ১৪ হাজার ১৪১টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, এসব ক্লিনিক দেখার কেউ নেই। কোথাও চিকিৎসক নেই, কোথাও ওষুধ নেই, আবার কোথাও চিকিৎসার সরঞ্জামও নেই। শুধু নেই আর নেই নিয়েই আছে কমিউনিটি ক্লিনিক। স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান সরকারের মহৎ উদ্দেশ্যই ব্যাহত হচ্ছে।
প্রান্তিক স্বাস্থ্যসেবার এমন অবস্থার বিষয়টি স্বীকার করেছেন কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোদাচ্ছের আলী। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের এমন দুরবস্থার বিষয়টি সবারই জানা। নতুন করে দায়িত্বে আসার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও চিঠি পাঠিয়েছি বহুবার। আজও (গতকাল) চিঠি দিয়েছি। ফাইল আটকে রয়েছে, কাজ না বোঝার কারণেই এমন হচ্ছে।’
এই প্রতিবেদক অন্তত ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে দেখতে পান, সর্বত্র একই দশা। বেশির ভাগ ক্লিনিকেই কোনো তদারকি নেই। ফলে স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন মানুষ। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হলো প্রসূতি মায়েদের ক্ষেত্রে। এসব ক্লিনিকে প্রসূতি মা ও বয়স্ক ব্যক্তিদের সেবার দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও তাঁরা কোনো সেবাই পাচ্ছেন না।
কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের একটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেল, সেখানে দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার একমাত্র ভরসা হলো কমিউনিটি ক্লিনিক (সিসি)। কিন্তু এখানে না আছে ওষুধ, না আছে চিকিৎসক।
বগুড়া সদরে ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকের বেশির ভাগ ভবনই জরাজীর্ণ। পৌর এলাকায় সেবার মান নিয়ে কিছুটা সন্তোষজনক তথ্য পাওয়া গেলেও গ্রামীণ ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে আছে রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং চাহিদামতো ওষুধ না দেওয়ার অভিযোগ।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকে মানুষের সেবা না-পাওয়ার চিত্র সারা দেশে কিন্তু এক রকম না। এলাকাভেদে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা আছে। কোথাও বিদ্যুৎ নাই, কোথাও বসার জায়গা নাই, কোথাও আবার ওষুধ ফুরিয়ে গেছে, এসব সমস্যা সমাধানে প্রথমত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব নিয়ে সমাধান করতে হবে। তাঁদের সঙ্গে প্রশাসনিক কাজ করবেন সংশ্লিষ্ট উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তারা। তাঁরা যদি সমস্যা সমাধান করতে না পারেন, পর্যায়ক্রমে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট সমাধান করবে।’
কুমিল্লার তিতাস উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা কোনো নিয়মনীতি মানছেন না। ইচ্ছেমতো আসেন, ইচ্ছেমতোই চলে যান। তাঁদের ওপর কারও কোনো তদারকিও নেই।
তবে ভালো খবরও আছে। হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় প্রসূতি মায়েদের ভরসাই হলো সেখানকার কমিউনিটি ক্লিনিক। যদিও সব ক্লিনিক এখনো প্রসূতির নিরাপদ সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা করতে পারেনি। তবে এই অঞ্চলের ক্লিনিকগুলো প্রসূতি মায়েদের জন্য আশা জাগিয়েছে।
জামালগঞ্জ উপজেলায় উপজেলার প্রায় ২ লাখ জনগোষ্ঠীর বিশাল একটা অংশের হাওরে বাস। যাদের হেমন্তে পা আর বর্ষায় নৌকা যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। এই অঞ্চলটির প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় কাজ করে যাচ্ছেন কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীরা। সেখানে অস্থায়ী পরিবার পরিকল্পনাসহ বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে ওষুধ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সরকারিভাবে ‘হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার, একজন পরিকল্পনাকর্মী ও স্বাস্থ্য সহকারী ছাড়া আর কোনো পদ নেই। সে কারণে ক্লিনিকের আসবাব রক্ষণাবেক্ষণসহ সুইপার ও ঝাড়ুদারের কাজও তাঁদেরই করতে হয়।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের গবেষণায় উঠে এসেছে, ছয় বছর আগেও এসব ক্লিনিকে যে সেবা পাওয়া যেত, এখনো তা-ই আছে। শুধু গ্রাম নয়, শহরাঞ্চলেও সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পর্যাপ্ত নয়। আর এ কারণে রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
আর বিশ্বব্যাংকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা বৈশ্বিক অনুশীলনের জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বুশরা বিনতে আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার কাঠামো অনেক সুন্দর। প্রান্তিক পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল এবং বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। তারপরও কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবার মানের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এটি করতে পারলে আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অনেক বড় উপকার হবে।’
জ্বর, কোমরব্যথা ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে বাড়ির পাশের কমিউনিটি ক্লিনিকে এসেছিলেন মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার অন্বয়পুর ইউনিয়নের আনুলিয়া গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব মালা বেগম। বেলা সাড়ে ১১টায় গিয়ে দেখেন, ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত (প্রোভাইডার) চিকিৎসক সৈয়দ আফরোজ কল্প নেই। দুজন সহকারী সবকিছু গুটিয়ে ক্লিনিক বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এই প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে মালা বেগম খুব আক্ষেপ করে বললেন, ‘এত কষ্ট করি আইল্যাম, এহন দেখি ডাক্তার নাই। ওমন হলে গরিব মানুষ কেমনে বাঁচে বাবা?’
বৃদ্ধার কথা শুনে ক্লিনিকের সহকারী দুজন চুপচাপ। চলে যাওয়ার মুহূর্তে রোগী আসায় তাঁরা বিরক্ত। একই সঙ্গে তাঁদের মুখে অসহায়ের সুর, এখানে তো ওষুধ নেই, চিকিৎসা হবে কীভাবে?
সেখান থেকে একটু দূরে গোয়ালখালী কমিউনিটি ক্লিনিক। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক নিগার সুলতানা বললেন, ‘দেখুন, এ জায়গায় বয়স্ক ও গর্ভবতীদের আসার কোনো ব্যবস্থা নেই। বর্ষা হলে অবস্থা বেহাল। চারদিকে পানি থাকে, কেউ আসতে পারে না।’
তারপরও যাঁরা আসেন, তাঁরা কি চিকিৎসা পান? এমন প্রশ্নের জবাবে নিগার সুলতানা বলেন, ‘আমাদের কাছে যে পরিমাণ ওষুধ আসে, তাতে ২০ শতাংশ মানুষকেও সেবা দিতে পারি না। দেখতেই পাচ্ছেন, জটিল রোগের চিকিৎসা তো দূরের কথা, গর্ভবতী মায়েদের ওজন মাপার যন্ত্রটি পর্যন্ত নেই।’
চরবেষ্টিত তেওতা ইউনিয়নের ত্রিশুণ্ডি গ্রামের ২০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা হলো সেখানকার কমিউনিটি ক্লিনিক। কিন্তু ক্লিনিক বলতে চরের মাঝে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি টিনের ঘর। মাসে দু-একবার খোলা হয়, বন্ধ থাকে বেশির ভাগ সময়।
কমিউনিটি ক্লিনিকের এই বেহাল অবস্থা দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নিজের জেলা মানিকগঞ্জের। দেশের অন্য জেলার চিত্র কী তা মনে হয় আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মানিকগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী অবশ্য নিজেও এসব দুর্দশার কথা স্বীকার করলেন। তিনি বলেন, আগের চেয়ে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ওষুধপত্রের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বললেন, মানিকগঞ্জ জেলার সাত উপজেলায় ১৬৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। নতুন করে আরও ২টি ক্লিনিকের কাজ চলছে। তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল, স্বাস্থ্যসেবা না দিয়ে শুধু ক্লিনিকের সংখ্যা বাড়িয়ে কী লাভ? জবাবে তিনি বললেন, ‘আমাদের সামর্থ্যও বুঝতে হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে এসব ক্লিনিক গড়ে তোলা হলেও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে শুরু থেকেই ঘাটতি দেখা গেছে। কোথাও অনেকটা ভালোমতো চললেও অধিকাংশ জায়গাতেই অব্যবস্থাপনা। সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তদারকিতে, যা নেই বললেই চলে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এগুলোতে নজর দেন না, এটাই বড় সমস্যা।
তৃণমূল পর্যায়ের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবা ট্রাস্ট গঠন করে সরকার। এই ট্রাস্টের কাজই হলো গ্রামপর্যায়ে গড়ে তোলা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো দেখভাল করা। ১৫ সদস্যের এই ট্রাস্টের প্রধান ড. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। সারা দেশে বর্তমানে ১৪ হাজার ১৪১টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, এসব ক্লিনিক দেখার কেউ নেই। কোথাও চিকিৎসক নেই, কোথাও ওষুধ নেই, আবার কোথাও চিকিৎসার সরঞ্জামও নেই। শুধু নেই আর নেই নিয়েই আছে কমিউনিটি ক্লিনিক। স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান সরকারের মহৎ উদ্দেশ্যই ব্যাহত হচ্ছে।
প্রান্তিক স্বাস্থ্যসেবার এমন অবস্থার বিষয়টি স্বীকার করেছেন কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোদাচ্ছের আলী। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের এমন দুরবস্থার বিষয়টি সবারই জানা। নতুন করে দায়িত্বে আসার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও চিঠি পাঠিয়েছি বহুবার। আজও (গতকাল) চিঠি দিয়েছি। ফাইল আটকে রয়েছে, কাজ না বোঝার কারণেই এমন হচ্ছে।’
এই প্রতিবেদক অন্তত ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে দেখতে পান, সর্বত্র একই দশা। বেশির ভাগ ক্লিনিকেই কোনো তদারকি নেই। ফলে স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন মানুষ। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হলো প্রসূতি মায়েদের ক্ষেত্রে। এসব ক্লিনিকে প্রসূতি মা ও বয়স্ক ব্যক্তিদের সেবার দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও তাঁরা কোনো সেবাই পাচ্ছেন না।
কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের একটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেল, সেখানে দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার একমাত্র ভরসা হলো কমিউনিটি ক্লিনিক (সিসি)। কিন্তু এখানে না আছে ওষুধ, না আছে চিকিৎসক।
বগুড়া সদরে ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকের বেশির ভাগ ভবনই জরাজীর্ণ। পৌর এলাকায় সেবার মান নিয়ে কিছুটা সন্তোষজনক তথ্য পাওয়া গেলেও গ্রামীণ ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে আছে রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং চাহিদামতো ওষুধ না দেওয়ার অভিযোগ।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকে মানুষের সেবা না-পাওয়ার চিত্র সারা দেশে কিন্তু এক রকম না। এলাকাভেদে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা আছে। কোথাও বিদ্যুৎ নাই, কোথাও বসার জায়গা নাই, কোথাও আবার ওষুধ ফুরিয়ে গেছে, এসব সমস্যা সমাধানে প্রথমত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব নিয়ে সমাধান করতে হবে। তাঁদের সঙ্গে প্রশাসনিক কাজ করবেন সংশ্লিষ্ট উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তারা। তাঁরা যদি সমস্যা সমাধান করতে না পারেন, পর্যায়ক্রমে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট সমাধান করবে।’
কুমিল্লার তিতাস উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা কোনো নিয়মনীতি মানছেন না। ইচ্ছেমতো আসেন, ইচ্ছেমতোই চলে যান। তাঁদের ওপর কারও কোনো তদারকিও নেই।
তবে ভালো খবরও আছে। হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় প্রসূতি মায়েদের ভরসাই হলো সেখানকার কমিউনিটি ক্লিনিক। যদিও সব ক্লিনিক এখনো প্রসূতির নিরাপদ সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা করতে পারেনি। তবে এই অঞ্চলের ক্লিনিকগুলো প্রসূতি মায়েদের জন্য আশা জাগিয়েছে।
জামালগঞ্জ উপজেলায় উপজেলার প্রায় ২ লাখ জনগোষ্ঠীর বিশাল একটা অংশের হাওরে বাস। যাদের হেমন্তে পা আর বর্ষায় নৌকা যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। এই অঞ্চলটির প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় কাজ করে যাচ্ছেন কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীরা। সেখানে অস্থায়ী পরিবার পরিকল্পনাসহ বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে ওষুধ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সরকারিভাবে ‘হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার, একজন পরিকল্পনাকর্মী ও স্বাস্থ্য সহকারী ছাড়া আর কোনো পদ নেই। সে কারণে ক্লিনিকের আসবাব রক্ষণাবেক্ষণসহ সুইপার ও ঝাড়ুদারের কাজও তাঁদেরই করতে হয়।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের গবেষণায় উঠে এসেছে, ছয় বছর আগেও এসব ক্লিনিকে যে সেবা পাওয়া যেত, এখনো তা-ই আছে। শুধু গ্রাম নয়, শহরাঞ্চলেও সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পর্যাপ্ত নয়। আর এ কারণে রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
আর বিশ্বব্যাংকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা বৈশ্বিক অনুশীলনের জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বুশরা বিনতে আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার কাঠামো অনেক সুন্দর। প্রান্তিক পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল এবং বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। তারপরও কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবার মানের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এটি করতে পারলে আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অনেক বড় উপকার হবে।’
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
১ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে