মোস্তফা মনন
‘এ খাঁচা ভাঙব আমি কেমন করে’—সত্তরের দশকে জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে খান আতার গানটি এখনো প্রাসঙ্গিক মনে হয়। বিশেষ করে, চলচ্চিত্রের সেন্সর নামক খাঁচায় ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রি আটকে আছে। বিভিন্ন সেক্টরে দেশ অনেক এগিয়ে গেলেও শিল্প-সংস্কৃতিতে আরও উন্নতি করার সুযোগ ছিল।
আমরা মনে করি, এই সেক্টরে সরকার যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে। গত এক দশকে সিনেমার বিশ্ববাজারের দিকে তাকালে দেখতে পাব, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ ভারত এবং তুরস্কের ফিল্ম/টিভি ইন্ডাষ্ট্রি বাণিজ্যিকভাবে বেশ সফল। যথাযথ পদক্ষেপ নিলে আমরাও বাণিজ্যিকভাবে সফল হতে পারব। বিশেষ করে, সময়োপযোগী সেন্সরবোর্ডের নীতিমালা না হলে ধ্বংস হওয়া চলচ্চিত্র ইন্ডাষ্ট্রি আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না।
এই সেন্সর নীতিমালা জটিলতায় আটকে আছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’। প্রায় তিন বছর ধরে সেন্সর ছাড়পত্র পাচ্ছে না। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর প্রায় সব সিনেমাই দেখানো হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৯ সালে ‘শনিবার বিকেল’ মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ৪১তম আসরে দুটি পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়া স্থান পেয়েছে বুসান ও সিডনি উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশনে।
দেশীয় নির্মাতাদের মধ্যে যাঁরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে খ্যাতি অর্জন করেছেন, তাঁদের অন্যতম মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে তাঁর নির্মিত সিনেমাকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে দেখে। ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার একটি বিশেষ দিক হলো সিঙ্গেলশট ফিল্ম (পুরো সিনেমা এক শটে নির্মিত), যা বাংলা সিনেমায় প্রথম। বাংলাদেশের জন্য খ্যাতি বয়ে আনা এমন একজন পরিচালকের সিনেমা সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাচ্ছে না, এই সংবাদ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এলে আমাদের লজ্জিত হতে হবে।
প্রশ্ন হলো, কেন সেন্সর ছাড়পত্র পাচ্ছে না? নির্মাতার বিভিন্ন সময়ের কথোপকথন থেকে জানা যায়, তাঁর কাছে বিষয়টি পরিস্কার না। তাহলে কি সেন্সরবোর্ড বিষয়টি পরিস্কার করতে পারছে না নাকি সেন্সরবোর্ডের কথার সাথে নির্মাতা একমত নন? তবে অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, সেন্সরবোর্ড কী কারণে আটকে রেখেছে বা ছাড়পত্র দিচ্ছে না, এই বিষয় তারা এড়িয়ে যাচ্ছে। আবারও প্রশ্ন করা যায়, কেন?
আমার ধারণা, বিষয়টি রাজনৈতিক। এই রাজনৈতিক কারনে ‘শনিবার বিকেল’ সেন্সর ছাড়পত্র পাচ্ছে না। এখন খতিয়ে দেখার বিষয় হলো, শনিবার বিকেলে রাজনীতির কী আছে? আদৌ আছে কি না? আমি মনে করি, রাজনীতি হলো সময়ের। সরকার মনে করে, কোন সময়ে কী ধরণের সিনেমা মুক্তি পাওয়া দরকার বা কী ধরণের সিনেমা মুক্তি পেলে তাদের পরিকল্পনায় ব্যঘাত ঘটবে না, এই সব হিসাব-নিকাশ করে সিনেমা মুক্তি দেয়—যা মুক্তচিন্তার পরিপন্থি। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এই কাজটা করতে পারে না। এর উদাহরণ আমাদের পাশের দেশ ভারত, আরেকটু দূরে দক্ষিণ কোরিয়া। তারা তাদের সিনেমায় নিজেদের মতো করে গল্প বলতে পারে। এজন্য তাদের সিনেমা আমাদের কাছে পাঠ্য, আর আমাদের সিনেমা ক্রমশ ধ্বংসের পথে। তাদের দৃষ্টিতে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ রোগ-শোকে আর বন্যার পানিতে সব সময় হাবুডুবু খাই। দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে বেশ কয়েকজন নির্মাতা চেষ্টা করে যাচ্ছেন, তার ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকা প্রয়োজন।
যে কোনো সত্যি ঘটনা থেকে সিনেমার প্লট হতে পারে, এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় না, বরং উজ্জল হয়। বিশ্ববাসী দেখতে পায়, সে দেশে কথা বলার স্বাধীনতা, শিল্পের স্বাধীনতা রয়েছে। তাছাড়া গল্পের দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবলেও প্রতিটি ঘটে যাওয়া ঘটনায় কিছু ইউনিক দিক থাকে। অন্য দেশ আমাদের ইউনিক দিকগুলো নিয়ে সিনেমা দেখতে চায়, তারা আমাদের গল্প দেখতে চায়, এই অঞ্চলের কালচারের সাথে পরিচিত হতে চায়, তারা কখনোই আমাদের সিনেমায় তাদের গল্প দেখতে চাইবে না। সিনেমার রাজনীতিটা এখানেই।
যদিও বেশিরভাগ মানুষ মনে করে, সিনেমা বিনোদনের জন্য, এখানে রাজনীতি এল কোথা থেকে? আসলে জীবন-যাপনের কোনো অংশ, কোনো মুহূর্ত রাজনীতির বাইরে না। জীবন যাপনে, সমাজ ব্যবস্থায় রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের একটা ক্ষুদ্র অংশ হলো বিনোদন। একজন নাগরিক কতটুকু বিনোদন পাবে, কী কী উপায়ে পাবে, কোন কোন মাধ্যমে পাবে, তা রাষ্ট্র ঠিক করে দেয়। কীভাবে দেয়?
ফ্রাংকফুর্ট স্কুলের দুই তাত্ত্বিক থিয়োডর এডর্নো এবং তাঁর সহকর্মী ম্যাক্স হর্কহেইমার ১৯৭৩ সালে ‘কালচারাল ইন্ডাস্ট্রি-এর ধারণা দেন। একে পুঁজিবাদ পরিচালিত বিনোদন কারখানা বলে অভিহিত করেন এবং এর আলোকে স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন বা মানপ্রমিতকরণ তত্ত্বের ব্যাখ্যা দেন। (বিশেষ করে সিনেমা এবং সংগীতের ক্ষেত্রে)। কিন্তু এই কালচালার ইন্ড্রাস্ট্রি থেকে যা উৎপন্ন হচ্ছে, তা নিছকই জঞ্জাল বা অর্থহীন ভাষা। (এডর্নো ও হর্কহেইমার, ১৯৭৩:১২১)
তাঁরা বলেন, সংস্কৃতি কারখানা থেকে যা উৎপন্ন করে, ভোক্তারা তা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। এগুলো আবার সাধারণ মানুষকে দমন করতে ও সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে নিস্ক্রিয় করে রাখতেও ব্যবহৃত হয়। এই সংস্কৃতি কারখানা হলো অসীম ক্ষমতা অধিকারী। এর ভোক্তারা হলেন কর্মজীবী, চাকুরীজীবী, কৃষক, নিম্নমধ্যবিত্ত শেণি। এই পুঁজিবাদী উৎপাদিত বস্তু তাঁদেরকে আত্মিকভাবে অবরোধ করে। তখন তাঁরা কেবল অসহায় ভোক্তাতে পরিণত হন। (এডর্নে ও হর্কহেইমার, ১৯৭৩:১৩৩)।
পুজিঁবাদী গোষ্ঠী বিনোদনের নামে বিরাজমান সমাজকে স্বাভাবিক বলে চালায়। পুনরুৎপাদন ও পুনরাবৃত্তির কারণে সেগুলোকেই মানুষ স্বাভাবিক বলে মনে করে। একই পণ্যকে নানা স্তরের লোকের জন্য সামান্য পরিবর্তন করে উৎপন্ন করে, যা একটি মিথ্যা চৈতন্য সৃষ্টি করে তুষ্টি সঞ্চার করে এবং শাসক শ্রেণির সঙ্গে সহমত স্থাপন করে। এই ক্ষমতাশীল পুঁজিবাদ জনপ্রিয় ন্যারেটিভ ও মেলোড্রামা তৈরি করে, যার মধ্য দিয়ে সামাজিক দ্বন্দ্বের সমাধান দেওয়া হয়। এই বিষয়টিকে থিয়োডর এডর্নো এবং ম্যাক্স হর্কহেইমার নাম দিয়েছেন মানপ্রমিতকরণ (স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন)। তাঁদের মতে, সংস্কৃতি কারখানা অন্য সব কারখানা যেমন: স্টিল, পেট্রোলিয়াম, বিদ্যুৎ বা রাসায়নিক কারখানা থেকে অধিক ক্ষমতাশীল (এডর্নে ও হর্কহেইমার, ১৯৭৩:১২২)।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যায়, কোন কোন পেশার মানুষ, কী কী বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারবে, কতটুকু বলতে পারবে তা বিভিন্ন আইন দ্বারা সীমিত করা। কার্টুন হবে কি হবে না, চিত্রশিল্পীর চিত্রের বিষয় কী হবে, গায়কের গানে ফুল-লতা-পাতা-ভালোবাসা ছাড়া অন্য কোনো শব্দ থাকবে কি না, সিনেমার গল্প কেমন হবে, কবিতা কেমন হবে, তা রাষ্ট্র পরোক্ষভাবে ঠিক করে দেয়। সংস্কৃতিচর্চার একটি অনন্য মাধ্যম হলো সিনেমা। গত একশ বছরে এই মাধ্যম যত প্রভাব বিস্তার করেছে, আর কোনো মাধ্যম এত প্রভাবশালী ছিল না। সে হিসেবে বাংলাদেশে মৃতপ্রায় সিনেমা ইন্ড্রাষ্ট্রি সচলে যাঁরা মূখ্য ভূমিকা রাখবেন, তাঁদেরকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করছে কোনো কোনো মহল বা গোষ্ঠী বা সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান। তেমনি একটা প্রতিষ্ঠান বা ব্যবস্থাপনা হলো সেন্সরশীপ।
সারা দুনিয়ায় উন্নত সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে গ্রেডেশন পদ্ধতি চালু আছে, সেখানে বাংলাদেশে রয়েছে সেই পুরোনো আইন। বলা হয়ে থাকে সংস্কৃতিবান্ধব সরকার। গত চৌদ্দ বছরে এই সরকার সিনেমার সেন্সরশীপ পদ্ধতি বদলে কোনো ভূমিকা রাখলো না, তাহলে আমরা কার কাছে প্রত্যাশা করব?
দেশীয় চলচ্চিত্র উন্নত হওয়ার স্বার্থে আমরা অনতিবিলম্বে ‘শনিবার বিকেল’-এর সেন্সর ছাড়পত্রের দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে একদিন ‘এ খাঁচা’ আমরাই ভেঙ্গে দেব।
লেখক: মোস্তফা মনন, চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতা
‘এ খাঁচা ভাঙব আমি কেমন করে’—সত্তরের দশকে জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে খান আতার গানটি এখনো প্রাসঙ্গিক মনে হয়। বিশেষ করে, চলচ্চিত্রের সেন্সর নামক খাঁচায় ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রি আটকে আছে। বিভিন্ন সেক্টরে দেশ অনেক এগিয়ে গেলেও শিল্প-সংস্কৃতিতে আরও উন্নতি করার সুযোগ ছিল।
আমরা মনে করি, এই সেক্টরে সরকার যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে। গত এক দশকে সিনেমার বিশ্ববাজারের দিকে তাকালে দেখতে পাব, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ ভারত এবং তুরস্কের ফিল্ম/টিভি ইন্ডাষ্ট্রি বাণিজ্যিকভাবে বেশ সফল। যথাযথ পদক্ষেপ নিলে আমরাও বাণিজ্যিকভাবে সফল হতে পারব। বিশেষ করে, সময়োপযোগী সেন্সরবোর্ডের নীতিমালা না হলে ধ্বংস হওয়া চলচ্চিত্র ইন্ডাষ্ট্রি আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না।
এই সেন্সর নীতিমালা জটিলতায় আটকে আছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’। প্রায় তিন বছর ধরে সেন্সর ছাড়পত্র পাচ্ছে না। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর প্রায় সব সিনেমাই দেখানো হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৯ সালে ‘শনিবার বিকেল’ মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ৪১তম আসরে দুটি পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়া স্থান পেয়েছে বুসান ও সিডনি উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশনে।
দেশীয় নির্মাতাদের মধ্যে যাঁরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে খ্যাতি অর্জন করেছেন, তাঁদের অন্যতম মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে তাঁর নির্মিত সিনেমাকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে দেখে। ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার একটি বিশেষ দিক হলো সিঙ্গেলশট ফিল্ম (পুরো সিনেমা এক শটে নির্মিত), যা বাংলা সিনেমায় প্রথম। বাংলাদেশের জন্য খ্যাতি বয়ে আনা এমন একজন পরিচালকের সিনেমা সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাচ্ছে না, এই সংবাদ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এলে আমাদের লজ্জিত হতে হবে।
প্রশ্ন হলো, কেন সেন্সর ছাড়পত্র পাচ্ছে না? নির্মাতার বিভিন্ন সময়ের কথোপকথন থেকে জানা যায়, তাঁর কাছে বিষয়টি পরিস্কার না। তাহলে কি সেন্সরবোর্ড বিষয়টি পরিস্কার করতে পারছে না নাকি সেন্সরবোর্ডের কথার সাথে নির্মাতা একমত নন? তবে অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, সেন্সরবোর্ড কী কারণে আটকে রেখেছে বা ছাড়পত্র দিচ্ছে না, এই বিষয় তারা এড়িয়ে যাচ্ছে। আবারও প্রশ্ন করা যায়, কেন?
আমার ধারণা, বিষয়টি রাজনৈতিক। এই রাজনৈতিক কারনে ‘শনিবার বিকেল’ সেন্সর ছাড়পত্র পাচ্ছে না। এখন খতিয়ে দেখার বিষয় হলো, শনিবার বিকেলে রাজনীতির কী আছে? আদৌ আছে কি না? আমি মনে করি, রাজনীতি হলো সময়ের। সরকার মনে করে, কোন সময়ে কী ধরণের সিনেমা মুক্তি পাওয়া দরকার বা কী ধরণের সিনেমা মুক্তি পেলে তাদের পরিকল্পনায় ব্যঘাত ঘটবে না, এই সব হিসাব-নিকাশ করে সিনেমা মুক্তি দেয়—যা মুক্তচিন্তার পরিপন্থি। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এই কাজটা করতে পারে না। এর উদাহরণ আমাদের পাশের দেশ ভারত, আরেকটু দূরে দক্ষিণ কোরিয়া। তারা তাদের সিনেমায় নিজেদের মতো করে গল্প বলতে পারে। এজন্য তাদের সিনেমা আমাদের কাছে পাঠ্য, আর আমাদের সিনেমা ক্রমশ ধ্বংসের পথে। তাদের দৃষ্টিতে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ রোগ-শোকে আর বন্যার পানিতে সব সময় হাবুডুবু খাই। দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে বেশ কয়েকজন নির্মাতা চেষ্টা করে যাচ্ছেন, তার ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকা প্রয়োজন।
যে কোনো সত্যি ঘটনা থেকে সিনেমার প্লট হতে পারে, এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় না, বরং উজ্জল হয়। বিশ্ববাসী দেখতে পায়, সে দেশে কথা বলার স্বাধীনতা, শিল্পের স্বাধীনতা রয়েছে। তাছাড়া গল্পের দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবলেও প্রতিটি ঘটে যাওয়া ঘটনায় কিছু ইউনিক দিক থাকে। অন্য দেশ আমাদের ইউনিক দিকগুলো নিয়ে সিনেমা দেখতে চায়, তারা আমাদের গল্প দেখতে চায়, এই অঞ্চলের কালচারের সাথে পরিচিত হতে চায়, তারা কখনোই আমাদের সিনেমায় তাদের গল্প দেখতে চাইবে না। সিনেমার রাজনীতিটা এখানেই।
যদিও বেশিরভাগ মানুষ মনে করে, সিনেমা বিনোদনের জন্য, এখানে রাজনীতি এল কোথা থেকে? আসলে জীবন-যাপনের কোনো অংশ, কোনো মুহূর্ত রাজনীতির বাইরে না। জীবন যাপনে, সমাজ ব্যবস্থায় রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের একটা ক্ষুদ্র অংশ হলো বিনোদন। একজন নাগরিক কতটুকু বিনোদন পাবে, কী কী উপায়ে পাবে, কোন কোন মাধ্যমে পাবে, তা রাষ্ট্র ঠিক করে দেয়। কীভাবে দেয়?
ফ্রাংকফুর্ট স্কুলের দুই তাত্ত্বিক থিয়োডর এডর্নো এবং তাঁর সহকর্মী ম্যাক্স হর্কহেইমার ১৯৭৩ সালে ‘কালচারাল ইন্ডাস্ট্রি-এর ধারণা দেন। একে পুঁজিবাদ পরিচালিত বিনোদন কারখানা বলে অভিহিত করেন এবং এর আলোকে স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন বা মানপ্রমিতকরণ তত্ত্বের ব্যাখ্যা দেন। (বিশেষ করে সিনেমা এবং সংগীতের ক্ষেত্রে)। কিন্তু এই কালচালার ইন্ড্রাস্ট্রি থেকে যা উৎপন্ন হচ্ছে, তা নিছকই জঞ্জাল বা অর্থহীন ভাষা। (এডর্নো ও হর্কহেইমার, ১৯৭৩:১২১)
তাঁরা বলেন, সংস্কৃতি কারখানা থেকে যা উৎপন্ন করে, ভোক্তারা তা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। এগুলো আবার সাধারণ মানুষকে দমন করতে ও সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে নিস্ক্রিয় করে রাখতেও ব্যবহৃত হয়। এই সংস্কৃতি কারখানা হলো অসীম ক্ষমতা অধিকারী। এর ভোক্তারা হলেন কর্মজীবী, চাকুরীজীবী, কৃষক, নিম্নমধ্যবিত্ত শেণি। এই পুঁজিবাদী উৎপাদিত বস্তু তাঁদেরকে আত্মিকভাবে অবরোধ করে। তখন তাঁরা কেবল অসহায় ভোক্তাতে পরিণত হন। (এডর্নে ও হর্কহেইমার, ১৯৭৩:১৩৩)।
পুজিঁবাদী গোষ্ঠী বিনোদনের নামে বিরাজমান সমাজকে স্বাভাবিক বলে চালায়। পুনরুৎপাদন ও পুনরাবৃত্তির কারণে সেগুলোকেই মানুষ স্বাভাবিক বলে মনে করে। একই পণ্যকে নানা স্তরের লোকের জন্য সামান্য পরিবর্তন করে উৎপন্ন করে, যা একটি মিথ্যা চৈতন্য সৃষ্টি করে তুষ্টি সঞ্চার করে এবং শাসক শ্রেণির সঙ্গে সহমত স্থাপন করে। এই ক্ষমতাশীল পুঁজিবাদ জনপ্রিয় ন্যারেটিভ ও মেলোড্রামা তৈরি করে, যার মধ্য দিয়ে সামাজিক দ্বন্দ্বের সমাধান দেওয়া হয়। এই বিষয়টিকে থিয়োডর এডর্নো এবং ম্যাক্স হর্কহেইমার নাম দিয়েছেন মানপ্রমিতকরণ (স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন)। তাঁদের মতে, সংস্কৃতি কারখানা অন্য সব কারখানা যেমন: স্টিল, পেট্রোলিয়াম, বিদ্যুৎ বা রাসায়নিক কারখানা থেকে অধিক ক্ষমতাশীল (এডর্নে ও হর্কহেইমার, ১৯৭৩:১২২)।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যায়, কোন কোন পেশার মানুষ, কী কী বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারবে, কতটুকু বলতে পারবে তা বিভিন্ন আইন দ্বারা সীমিত করা। কার্টুন হবে কি হবে না, চিত্রশিল্পীর চিত্রের বিষয় কী হবে, গায়কের গানে ফুল-লতা-পাতা-ভালোবাসা ছাড়া অন্য কোনো শব্দ থাকবে কি না, সিনেমার গল্প কেমন হবে, কবিতা কেমন হবে, তা রাষ্ট্র পরোক্ষভাবে ঠিক করে দেয়। সংস্কৃতিচর্চার একটি অনন্য মাধ্যম হলো সিনেমা। গত একশ বছরে এই মাধ্যম যত প্রভাব বিস্তার করেছে, আর কোনো মাধ্যম এত প্রভাবশালী ছিল না। সে হিসেবে বাংলাদেশে মৃতপ্রায় সিনেমা ইন্ড্রাষ্ট্রি সচলে যাঁরা মূখ্য ভূমিকা রাখবেন, তাঁদেরকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করছে কোনো কোনো মহল বা গোষ্ঠী বা সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান। তেমনি একটা প্রতিষ্ঠান বা ব্যবস্থাপনা হলো সেন্সরশীপ।
সারা দুনিয়ায় উন্নত সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে গ্রেডেশন পদ্ধতি চালু আছে, সেখানে বাংলাদেশে রয়েছে সেই পুরোনো আইন। বলা হয়ে থাকে সংস্কৃতিবান্ধব সরকার। গত চৌদ্দ বছরে এই সরকার সিনেমার সেন্সরশীপ পদ্ধতি বদলে কোনো ভূমিকা রাখলো না, তাহলে আমরা কার কাছে প্রত্যাশা করব?
দেশীয় চলচ্চিত্র উন্নত হওয়ার স্বার্থে আমরা অনতিবিলম্বে ‘শনিবার বিকেল’-এর সেন্সর ছাড়পত্রের দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে একদিন ‘এ খাঁচা’ আমরাই ভেঙ্গে দেব।
লেখক: মোস্তফা মনন, চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতা
বিনোদন জগতে একের পর এক বিচ্ছেদের খবর। ২৯ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টেনে সম্প্রতি এ আর রহমান এবং তার স্ত্রী সাইরা বানু বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন। এই খবরের রেশ কাটতে না কাটতেই রহমানের ব্যান্ডের বিখ্যাত বেজ গিটারিস্ট ও সহকর্মী মোহিনী দে তাঁর স্বামী স্যাক্সোফোনিস্ট মার্ক হার্টসাচের সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘোষণা দ
৩ ঘণ্টা আগেতারকাদের বিচ্ছেদের খবর সব সময় আগ্রহ এবং উদ্বেগের বিষয়। বেশ কিছুদিন ধরে চর্চায় ছিলেন দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির তারকা নাগা চৈতন্য। অভিনেত্রী সামান্থার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে বহু আগেই। তবে নতুন করে বিয়ে পিঁড়িতে বসার খবরে আবারও আলোচনায় এই জুটি। সম্প্রতি. .
৬ ঘণ্টা আগেঅস্কারজয়ী সংগীত পরিচালক ও শিল্পী এ আর (আল্লাহ রাকা) রহমানের ৩০ বছরের দাম্পত্য শেষ হয়ে যাচ্ছে। স্ত্রী সায়রা বানুর সঙ্গে দীর্ঘ সময়ের দাম্পত্যের গভীর সম্পর্কের মাঝেও টানাপোড়েন ও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, যা কোনোভাবেই ঠিক করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা। সম্প্রতি বিবাহ বিচ্ছেদের বিষয়টি এক বিবৃতির...
১০ ঘণ্টা আগে