চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের শিক্ষার্থী মো. রফিকের বাবার ধানখেত থেকে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয় এক বছর আগে। ফলে শুকনো মৌসুমে জমিতে সেচ দিতে গিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়েন তিনি। নতুন করে ট্রান্সফরমার লাগাতে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয়ের পরও বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাঁকে। বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রফিককে। ট্রান্সফরমার চুরি রোধে বাবাকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়ার কথা চিন্তা করেন তিনি। এ জন্য ইন্টারনেটে প্রয়োজনমতো একটি ডিভাইস খুঁজতে থাকেন তিনি। কিন্তু বাজারে সে ধরনের কোনো ডিভাইসের খোঁজ না পেয়ে নিজেই সেটি বানানোর চিন্তা করেন। 

কয়েক মাসের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টায় রফিক একটি ট্রান্সফরমার সেফটি গার্ড ডিভাইস তৈরি করেন। প্রথমে সেটি তাঁর বাবার খেতের গভীর নলকূপের ট্রান্সফরমারে স্থাপন করেন তিনি। ট্রান্সফরমারে বিদ্যুৎসংযোগ বন্ধ হলেই ডিভাইসটি সচল হয়ে ওঠে। ট্রান্সফরমারে কেউ হাত দিলেই ডিভাইসে রক্ষিত সিমের মাধ্যমে একই সঙ্গে নির্ধারিত তিনটি মোবাইল ফোনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কল চলে যায়। বিষয়টি নিয়ে একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সফলতা পান তিনি। পরে সেটি নিজেদের সেচযন্ত্রে স্থাপন করেন।

রফিকের এই আবিষ্কারের কথা জানতে পেরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) দিনাজপুর অঞ্চলের কর্মকর্তারা রফিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মাঠপর্যায়ে একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ তাদের ঝুঁকিপূর্ণ গভীর নলকূপগুলোতে সেটি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। বিএমডিএ ইঞ্জিনিয়ারদের পরামর্শে ডিভাইসটিতে বেশ কিছু সংশোধন ও পরিমার্জন করেন রফিক। নতুন এ ডিভাইস স্থাপন করার ফলে কেউ যদি ট্রান্সফরমার খোলার চেষ্টা করে, তবে তাৎক্ষণিক নির্ধারিত মোবাইলে কল চলে যাওয়ার পাশাপাশি তীব্র শব্দে হুইসেল বেজে ওঠে। গভীর রাতে সেই শব্দ অনেক দূর থেকে শোনা যায়। ফলে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে ট্রান্সফরমার চুরি অনেকটাই রোধ করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী কর্মকর্তারা। রফিকের আবিষ্কৃত ডিভাইসটি মাত্র ৭ হাজার টাকায় ট্রান্সফরমারে স্থাপন করা সম্ভব।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) জানায়, দিনাজপুরে তাদের মোট ১ হাজার ৭৪৬টি সেচযন্ত্র চালু রয়েছে। এতে দিনাজপুর জেলার প্রায় এক লাখ কৃষক সেচসুবিধা পেয়ে থাকেন। দিনাজপুর জেলার অধিকাংশ জমি তিন ফসলি হওয়ায় প্রায় সারা বছর সেচযন্ত্রগুলো সচল রাখতে হয়। কিন্তু প্রতিবছর শতাধিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়। সাম্প্রতিক সময়ে চুরির প্রবণতা আরও বেড়েছে। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসেই চুরি হয়েছে ৫৩টি ট্রান্সফরমার। এটা নিয়ে কৃষকদের বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেক আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে সেচ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে তাঁদের। রফিকের এই ট্রান্সফরমার সেফটি গার্ড চুরি রোধ করে পুরো বছর সেচসুবিধা নিশ্চিত করবে।

দিনাজপুরের বিরল তেঘরা মহেশপুর এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, বছর দুয়েক আগে তাঁদের গভীর নলকূপের ট্রান্সফরমারটি পাহারা থাকা সত্ত্বেও চুরি হয়ে যায়। এই ডিভাইস লাগানোর ফলে চুরি বন্ধ করা সহজ হবে বলে জানান তিনি।