হাতে মেহেদি পরার ‘অপরাধে’ ছাত্রীকে পিটিয়ে অজ্ঞান করলেন প্রধান শিক্ষক

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭: ৩৩

গাজীপুরের শ্রীপুরে হাতে মেহেদি পরার অপরাধে অভিভাবকের সামনেই এক স্কুলছাত্রীকে পিটিয়ে আহত করেছেন প্রধান শিক্ষক। পিটুনিতে অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে ছাত্রী। বড় বোনের চিৎকারের অন্য শিক্ষকে এসে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করায়।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে উপজেলার পৌর শহরের আবেদ আলী গার্লস স্কুলে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী তাইমুন নুসরাত হাসি (১৪) বিজ্ঞান বিভাগের নবম শ্রেণির ছাত্রী। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের নাম মশিউর রহমান।

ভুক্তভোগী বলে, ‘জীববিজ্ঞান ক্লাস চলাকালে আমার পেটে ব্যথা অনুভব করি। এরপর স্কুলের ডায়েরিতে বিষয়টি লিপিবদ্ধ করে প্রধান শিক্ষকে জানাই। এরপর স্কুলের সংশ্লিষ্টরা আমার অভিভাবককে স্কুলে আসতে বলে। তখন আমার বোন সিফাত স্কুলে আসে। এরপর আমাকে প্রধান শিক্ষক তাঁর রুমে ডেকে নেন এবং ছুটির কারণ জানতে চান। এ সময় আমার বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলে মেহেদি দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে যান প্রধান শিক্ষক। এরপর লাঠি হাতে আমার হাতে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন। এ সময় আমার বোন পাশেই দাঁড়ানো ছিল। আমি অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ি। এরপর কী হয়েছে বলতে পারিনি।’

ভুক্তভোগী ছাত্রীর বড় বোন সিফাত বলেন, ‘স্কুল থেকে ফোন করে আমার বোন অসুস্থ হওয়ার খবর দেয়। স্কুলে যাওয়ার পর প্রধান শিক্ষক আমার বোনকে ডেকে নেয়। পরবর্তীতে হাতের আঙুলে মেহেদি দেখে প্রধান শিক্ষক উত্তেজিত হয়ে বলতে শুরু করে, “মেহেদি পরতে পারো আবার পেটে ব্যথা কি? ” এই বলে লাঠি হাতে নিয়ে পেটাতে থাকে আমার বোনকে। এরপর অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। তখন প্রধান শিক্ষককে প্রশ্ন করলাম আপনি, এভাবে মারলেন কেন? তিনি বলেন, মন চাইছে তাই মারছি।’

শিক্ষকের এমন আচরণ ক্ষুব্ধ তাইমুন নুসরাতের বাবা মো. কাজল মিয়া বলেন, ‘আমার মেয়ে কোনো অন্যায় করলে তিনি শাসন করতে পারেন। কিন্তু মেয়ে অসুস্থ অবস্থায় মেহেদি পরার জন্য মারতে পারে না। আমি এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবেদ আলী গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক মশিউর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা দুষ্টুমি করলে আমরা শিক্ষক হিসেবে একটু শাসন করে থাকি। তবে বেশি মারধর করা হয়নি।’

ছাত্রীটি তো অসুস্থ ছিল। ছুটি চেয়ে আবেদন করেছে। তার অভিভাবককেও ডেকে এনেছেন। এরপর মারধর করলেন তার বোনের সামনে, এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘মেহেদি পরা আমার স্কুলের নিয়ম নেই। এ জন্য একটু শাসন করেছি।’

ছাত্রীকে তার বড় বোনের সামনে পিটিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে শিক্ষক মশিউর রহমান বলেন, ‘না, এটা মিথ্যা কথা, তেমন ভাবে পেটানো হয়নি।’ 

মাওনা এ কে মেমোরিয়াল হসপিটালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. অনিক বলেন, ‘একজন ছাত্রী অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে এসেছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নূরুল আমিন বলেন, ‘এ বিষয়ে একজন অভিভাবক আমাকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাঠিপেটা করার কোনো সুযোগ নেই।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত