নেশার টাকা জোগাতে নানা অপরাধে পথশিশু

ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ১১
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯: ২৮

ফেনী শহরে শতাধিক পথশিশু ড্যান্ডির (গাম) নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। একজনের দেখাদেখি অন্যজন এই নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। নেশা করে কিংবা নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে করছে নানা অপরাধও। তবে এ নিয়ে সম্প্রতি পুলিশের একটি বিশেষ দল শহরে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।

শহরের হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী মহিন উদ্দিন বলেন, ড্যান্ডি হলো একপ্রকার গাম বা আঠাজাতীয় উদ্বায়ী পদার্থ, যা সাধারণ তাপমাত্রায় সহজেই বাষ্পে পরিণত হয়। বিভিন্ন প্রকার রাবার ও চামড়াজাতীয় পদার্থ—যেমন জুতা, চাকার রাবার, টিউব প্রভৃতির মেরামতকল্পে সংযোজক হিসেবে এর বহুল ব্যবহার বিদ্যমান। প্রতিটি গামের ছোট কৌটা ৫০ টাকা এবং বড় কৌটা ১৩০ টাকা। নেশায় আসক্ত পথশিশুরা কতিপয় অসাধু হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ীর দোকান থেকে এটি সংগ্রহ করে। কৌটার গাম পলিথিনে সংরক্ষণ করে পথশিশুরা নেশায় বুঁদ হয়।

পথশিশু জনি জানায়, তার পরিবার চট্টগ্রামের রেল কলোনিতে থাকত। সে ট্রেনে চড়ে ফেনী আসে। এর পর ফেনী শহরের রেলস্টেশনে থেকেছে। স্টেশনেই তার কয়েকজন বন্ধু হয়। তাদের মধ্যে অধিকাংশই ড্যান্ডিতে আসক্ত। অপর পথশিশু রহমত বলে, তারা চলাচলরত ট্রেন কিংবা দোকান বা বাড়ির মালপত্র চুরি করে ওই টাকায় নেশা করত।

এদিকে পথশিশু শরিয়ত উল্লাহ জানায়, প্রতিদিন গড়ে তার দুই থেকে তিন কৌটা গাম লাগে। এসব জোগাড় করতে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষা, চুরি-ছিনতাই ও ভাঙারি মাল বিক্রি করে নেশার টাকা সংগ্রহ করে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ফেনী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, এসব পথশিশুকে মাদকের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

এ ব্যাপারে ফেনী জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক ও মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক শহিদ উল্যাহ বলেন, বিষয়টি জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশের একটি বিশেষ দল ফেনী শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনার পর হাজী হার্ডওয়্যারের মালিক সাইফুল ইসলাম, মোল্লা হার্ডওয়্যারের গিয়াস উদ্দিন, ডি. কে হার্ডওয়্যারের মালিক অমিত কর্মকারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকে আনা হয়। পরে তাঁরা পথশিশুদের কাছে গামের কৌটা বিক্রি করবেন না বলে আশ্বাস দেন এবং তাঁদের কর্মচারীরাও কোনোভাবে ড্যান্ডি বিক্রি করবেন না বলে অঙ্গীকার করেন।

জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আবদুল্লা আল মামুন বলেন, পথশিশু কিংবা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছে যাচাই-বাছাই না করে গাম বিক্রি যাতে না করা হয়, সে জন্য গত শনিবার সকালে এক বৈঠকে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। পথশিশুরা যাতে নেশায় আসক্ত হতে না পারে, সে জন্য সামাজিক সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হবে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত