কামরুল হাসান, ঢাকা
অপরাধবিষয়ক রিপোর্টারদের কাছে মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে যাওয়া-আসাটা ডালভাতের মতো। কাজে- অকাজে প্রায়ই যেতে হয়। অনেকে সেখানে দীর্ঘ সময়ও কাটান। কিন্তু পুলিশ-সাংবাদিকের বাইরেও কিছু লোক মিন্টো রোডের আশপাশে ঘুরঘুর করেন। সে রকমই একজন ছিলেন মোকাররম হোসেন দরদি। তিনি ঠিক কী করতেন, তা তখনো জানি না, তবে প্রায়ই তাঁকে ডিবি অফিসে দেখতাম; বিশেষ করে এসি আকরাম হোসেনের (রুবেল হত্যা মামলার আসামি) সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল চোখে পড়ার মতো। এসি আকরামের গাড়িতে তাঁকে ডিবি অফিসে ঢুকতে ও বেরোতে দেখা যেত। আকরামের কারণে অন্য কর্মকর্তারাও তাঁকে খুব সমীহ করতেন। আর সেই একই কারণে মোকাররম হোসেন দরদি কাউকে পাত্তা দিতেন না।
একদিন সকালে ডিবি অফিসে এক কর্মকর্তার রুমে বসে আছি, সেখানে ঢুকলেন মোকাররম হোসেন দরদি। সেই কর্মকর্তা তাঁকে খুব একটা পছন্দ করতেন না। আমি অনেকটা যেচেই মোকাররমের সঙ্গে পরিচিত হলাম। যাওয়ার সময় একটি ভিজিটিং কার্ড আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। দেখি, তিনি শাহজালাল কো-অপারেটিভ সোসাইটির এমডি। মোকাররম চলে যাওয়ার পর সেই কর্মকর্তা আমার হাতে অনেকগুলো ফটোকপি করা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললেন, মোকাররম উত্তরার ছয় বিঘা জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করছেন। অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে আছেন বলে কেউ কিছু বলতে পারছে না। আমি কাগজগুলো হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলাম।
তিন-চার দিন পর গেলাম সেই জমি দেখতে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক লাগোয়া উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের একটি খালি প্লট। এয়ারপোর্ট থেকে উত্তরার দিকে যেতে মাসকট প্লাজার ঠিক আগে ডান দিকে ছয় বিঘার প্লট। সামনের সাইনবোর্ডে লেখা শাহজালাল সুপার মার্কেট। চারদিক টিন দিয়ে ঘেরা। তার ভেতরে ছোট ছোট দোকান বানানো হচ্ছে। টিনের শব্দে কান পাতা দায়। সব দোকানের আকার প্রায় একই রকম। অবস্থা দেখে মনে হলো, সাংবাদিক পরিচয়ে গেলে কাজ হবে না। তার চেয়ে দোকানের ক্রেতা সেজে কথা বললে মন্দ হয় না। একজনের কাছে গেলাম ক্রেতা সেজে। তিনি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব দেখালেন আর বললেন, এখানে ৫১৮টি টিনশেড দোকান হবে। এক মাসের মধ্যে সব হস্তান্তর করা হবে।
প্রতি দোকানের জন্য পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে, বুকিংয়ের জন্য এখনই দিতে হবে দেড় লাখ টাকা। তাঁর বক্তব্য হলো, দোকানের বরাদ্দ প্রায় শেষ হয়ে গেছে।
সরেজমিনে যা পাওয়ার পেয়ে গেলাম। আমার দরকার এর সঙ্গে কারা জড়িত, তা জানা। লোকটাকে বললাম, ভাই, এত টাকা বিনিয়োগ করব, মালিক কারা জানতে হবে। তিনি আমাকে নিয়ে পাশের একটি ভবনের নিচতলায় গেলেন। সেখানে আরও কয়েকজন বসে ছিলেন। তাঁদের একজনকে ম্যানেজার বলে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সেই ম্যানেজার আমাকে নানা প্রশ্ন করার পর কিছু কাগজ দিলেন। দেখি সেই কাগজে শাহজালাল কো-অপারেটিভ সোসাইটির শেয়ারহোল্ডারদের নাম-পরিচয় আছে। প্রথম নামটি দীপু চৌধুরী, পিতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। এরপরে আছেন মোকাররম হোসেন দরদি। আছে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির স্ত্রী ও পুত্রের নাম। ম্যানেজার আমাকে বললেন, এর মধ্যে ৩০ কোটি টাকার দোকান বিক্রি হয়ে গেছে। আমি বললাম, ভাই, এটা নাকি সরকারি জমি। তিনি আমাকে ধমকের সুরে বললেন, কারা আছে দেখছেন না? কেউ কিছু করতে পারব?
যে জমিতে দোকানগুলো উঠছে, তার একটু দূরেই রাজউকের উত্তরা কার্যালয়, গেলাম সেখানে। এক কর্মকর্তা সব ধরনের সহযোগিতা করে বললেন, আপনারা লিখলে কাজ হবে। তথ্যপ্রমাণগুলো জোগাড়ের পর ফোন দিলাম দীপু চৌধুরীকে। বললেন, সব দেখাশোনা করছেন মোকাররম হোসেন দরদি, তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। মোকাররম হোসেন দরদিকে ফোন দিতেই তিনি যা বললেন, তা আর না বলি। পরদিন ২০০০ সালের ৫ জুন প্রথম পাতায় ঢাউস করে ছাপা হলো, ‘গায়ের জোরে দখল করে নেওয়া উত্তরার ছ’ বিঘা জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে বিশাল মার্কেট’। সেই খবর প্রকাশের পর সকাল থেকে শুরু হলো ‘মধুর’ অত্যাচার। পরিচিত দু-একজন ফোন করে বললেন, কাজটা ঠিক হয়নি।
সেদিন সকাল থেকে ভয়ে ভয়ে আছি। ফোনও ধরছি নম্বর দেখে দেখে। এর মধ্যে দুপুরের দিকে একজন ফোন করে বকাঝকা করলেন, ভয়ও দেখালেন। ভয় অবশ্য তেমন পাইনি, কিন্তু মনে হলো, আজ আর অন্য কোথাও যাওয়া ঠিক হবে না। মিন্টো রোডের জনসংযোগ শাখা থেকে বেরিয়ে সোজা চলে এলাম ইস্কাটনে, জনকণ্ঠ অফিসে। মোটরসাইকেল পার্ক করে নিউজরুমে উঠে দেখি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা নাসির আহমেদের তিনটি মিসড কল। ফিরতি কল করতেই বললেন, এক্ষুনি মন্ত্রণালয়ে চলে আসেন, মন্ত্রী আপনাকে খুঁজছেন। এবার সত্যিই একটু ভয় পেলাম।
জনকণ্ঠে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিট করতেন আহমেদ দীপু। আমি শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অংশটুকু দেখতাম। আর অগ্রজ সাংবাদিক ওবায়দুল কবীর করতেন আওয়ামী লীগ বিট। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে তাঁর অনেক ভাব। আমাকে মন্ত্রীর খোঁজ করার বিষয়টি তাঁকে জানাতেই বললেন, চলে যান, ভয় নেই। রাজনীতির জল-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা মোহাম্মদ নাসিম সাংবাদিকদের অসীম স্নেহ করতেন, কিন্তু ভুলত্রুটি পেলে ধোলাই দিতেও ছাড়তেন না। আমি যখন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছালাম, দেখি তিনি দলবল নিয়ে গাড়িতে উঠছেন। আমাকে দেখে বললেন, ...ওই মিয়া, এত দেরি করলা, চলো। কোথায় যাব তা আর জিজ্ঞাসা না করেই মন্ত্রীর গাড়ির পেছনে ছুটতে শুরু করলাম।
সচিবালয় থেকে বেরিয়ে আমরা চলেছি ফার্মগেটের দিকে, এরপর এয়ারপোর্ট রোড ধরে বিমানবন্দরের দিকে। ধীরে ধীরে সাহস বাড়ছে। মন ভালো হয়ে যাচ্ছে। আমার আর বুঝতে বাকি থাকল না যে খবর প্রকাশের কারণে আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তিনি তার শেষ দেখতে যাচ্ছেন। মন্ত্রীর বহর এসে থামল ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক লাগোয়া উত্তরার সেই প্লটের কাছে। আমি মনে করেছিলাম, মন্ত্রী আমাকে নিয়ে নিজে অবস্থা দেখতে এসেছেন। কিন্তু এখানে এসে দেখি এলাহি কাণ্ড। আগে থেকেই রাজউকের ম্যাজিস্ট্রেট এবং অনেক পুলিশ দাঁড়িয়ে। সঙ্গে তিনটা বুলডোজার। মন্ত্রী আসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো ‘ধ্বংসযজ্ঞ’। তিন দিক থেকে তিনটি বুলডোজার চোখের পলকে গুঁড়িয়ে দিল পুরো মার্কেট। এক ঘণ্টার মধ্যে উন্মুক্ত মাঠ আবার আলো-বাতাসের মুখ দেখল।
উচ্ছেদ অভিযান শেষ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে ডেকে বললেন, ফলোআপটা ভালো কইরা কইরো। আমি বললাম, জি, আচ্ছা। ততক্ষণে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। মোটরসাইকেল টান দিলাম অফিসের উদ্দেশে।
এখনো উত্তরার দিকে গেলে সেই জমিটার দিকে তাকাই। জমিটা ফাঁকাই আছে। শুধু সিটি করপোরেশন আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য একটি দোতলা টিনের ঘর বানিয়েছে। সরকারি জমি দখল এখনো হয়, উচ্ছেদও হয়। কিন্তু সবই হয় লোকদেখানো। এরপর কিছুদিন যেতে না যেতেই দেখি, যথা পূর্বং তথা পরম্।
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
অপরাধবিষয়ক রিপোর্টারদের কাছে মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে যাওয়া-আসাটা ডালভাতের মতো। কাজে- অকাজে প্রায়ই যেতে হয়। অনেকে সেখানে দীর্ঘ সময়ও কাটান। কিন্তু পুলিশ-সাংবাদিকের বাইরেও কিছু লোক মিন্টো রোডের আশপাশে ঘুরঘুর করেন। সে রকমই একজন ছিলেন মোকাররম হোসেন দরদি। তিনি ঠিক কী করতেন, তা তখনো জানি না, তবে প্রায়ই তাঁকে ডিবি অফিসে দেখতাম; বিশেষ করে এসি আকরাম হোসেনের (রুবেল হত্যা মামলার আসামি) সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল চোখে পড়ার মতো। এসি আকরামের গাড়িতে তাঁকে ডিবি অফিসে ঢুকতে ও বেরোতে দেখা যেত। আকরামের কারণে অন্য কর্মকর্তারাও তাঁকে খুব সমীহ করতেন। আর সেই একই কারণে মোকাররম হোসেন দরদি কাউকে পাত্তা দিতেন না।
একদিন সকালে ডিবি অফিসে এক কর্মকর্তার রুমে বসে আছি, সেখানে ঢুকলেন মোকাররম হোসেন দরদি। সেই কর্মকর্তা তাঁকে খুব একটা পছন্দ করতেন না। আমি অনেকটা যেচেই মোকাররমের সঙ্গে পরিচিত হলাম। যাওয়ার সময় একটি ভিজিটিং কার্ড আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। দেখি, তিনি শাহজালাল কো-অপারেটিভ সোসাইটির এমডি। মোকাররম চলে যাওয়ার পর সেই কর্মকর্তা আমার হাতে অনেকগুলো ফটোকপি করা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললেন, মোকাররম উত্তরার ছয় বিঘা জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করছেন। অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে আছেন বলে কেউ কিছু বলতে পারছে না। আমি কাগজগুলো হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলাম।
তিন-চার দিন পর গেলাম সেই জমি দেখতে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক লাগোয়া উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের একটি খালি প্লট। এয়ারপোর্ট থেকে উত্তরার দিকে যেতে মাসকট প্লাজার ঠিক আগে ডান দিকে ছয় বিঘার প্লট। সামনের সাইনবোর্ডে লেখা শাহজালাল সুপার মার্কেট। চারদিক টিন দিয়ে ঘেরা। তার ভেতরে ছোট ছোট দোকান বানানো হচ্ছে। টিনের শব্দে কান পাতা দায়। সব দোকানের আকার প্রায় একই রকম। অবস্থা দেখে মনে হলো, সাংবাদিক পরিচয়ে গেলে কাজ হবে না। তার চেয়ে দোকানের ক্রেতা সেজে কথা বললে মন্দ হয় না। একজনের কাছে গেলাম ক্রেতা সেজে। তিনি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব দেখালেন আর বললেন, এখানে ৫১৮টি টিনশেড দোকান হবে। এক মাসের মধ্যে সব হস্তান্তর করা হবে।
প্রতি দোকানের জন্য পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে, বুকিংয়ের জন্য এখনই দিতে হবে দেড় লাখ টাকা। তাঁর বক্তব্য হলো, দোকানের বরাদ্দ প্রায় শেষ হয়ে গেছে।
সরেজমিনে যা পাওয়ার পেয়ে গেলাম। আমার দরকার এর সঙ্গে কারা জড়িত, তা জানা। লোকটাকে বললাম, ভাই, এত টাকা বিনিয়োগ করব, মালিক কারা জানতে হবে। তিনি আমাকে নিয়ে পাশের একটি ভবনের নিচতলায় গেলেন। সেখানে আরও কয়েকজন বসে ছিলেন। তাঁদের একজনকে ম্যানেজার বলে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সেই ম্যানেজার আমাকে নানা প্রশ্ন করার পর কিছু কাগজ দিলেন। দেখি সেই কাগজে শাহজালাল কো-অপারেটিভ সোসাইটির শেয়ারহোল্ডারদের নাম-পরিচয় আছে। প্রথম নামটি দীপু চৌধুরী, পিতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। এরপরে আছেন মোকাররম হোসেন দরদি। আছে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির স্ত্রী ও পুত্রের নাম। ম্যানেজার আমাকে বললেন, এর মধ্যে ৩০ কোটি টাকার দোকান বিক্রি হয়ে গেছে। আমি বললাম, ভাই, এটা নাকি সরকারি জমি। তিনি আমাকে ধমকের সুরে বললেন, কারা আছে দেখছেন না? কেউ কিছু করতে পারব?
যে জমিতে দোকানগুলো উঠছে, তার একটু দূরেই রাজউকের উত্তরা কার্যালয়, গেলাম সেখানে। এক কর্মকর্তা সব ধরনের সহযোগিতা করে বললেন, আপনারা লিখলে কাজ হবে। তথ্যপ্রমাণগুলো জোগাড়ের পর ফোন দিলাম দীপু চৌধুরীকে। বললেন, সব দেখাশোনা করছেন মোকাররম হোসেন দরদি, তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। মোকাররম হোসেন দরদিকে ফোন দিতেই তিনি যা বললেন, তা আর না বলি। পরদিন ২০০০ সালের ৫ জুন প্রথম পাতায় ঢাউস করে ছাপা হলো, ‘গায়ের জোরে দখল করে নেওয়া উত্তরার ছ’ বিঘা জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে বিশাল মার্কেট’। সেই খবর প্রকাশের পর সকাল থেকে শুরু হলো ‘মধুর’ অত্যাচার। পরিচিত দু-একজন ফোন করে বললেন, কাজটা ঠিক হয়নি।
সেদিন সকাল থেকে ভয়ে ভয়ে আছি। ফোনও ধরছি নম্বর দেখে দেখে। এর মধ্যে দুপুরের দিকে একজন ফোন করে বকাঝকা করলেন, ভয়ও দেখালেন। ভয় অবশ্য তেমন পাইনি, কিন্তু মনে হলো, আজ আর অন্য কোথাও যাওয়া ঠিক হবে না। মিন্টো রোডের জনসংযোগ শাখা থেকে বেরিয়ে সোজা চলে এলাম ইস্কাটনে, জনকণ্ঠ অফিসে। মোটরসাইকেল পার্ক করে নিউজরুমে উঠে দেখি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা নাসির আহমেদের তিনটি মিসড কল। ফিরতি কল করতেই বললেন, এক্ষুনি মন্ত্রণালয়ে চলে আসেন, মন্ত্রী আপনাকে খুঁজছেন। এবার সত্যিই একটু ভয় পেলাম।
জনকণ্ঠে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিট করতেন আহমেদ দীপু। আমি শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অংশটুকু দেখতাম। আর অগ্রজ সাংবাদিক ওবায়দুল কবীর করতেন আওয়ামী লীগ বিট। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে তাঁর অনেক ভাব। আমাকে মন্ত্রীর খোঁজ করার বিষয়টি তাঁকে জানাতেই বললেন, চলে যান, ভয় নেই। রাজনীতির জল-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা মোহাম্মদ নাসিম সাংবাদিকদের অসীম স্নেহ করতেন, কিন্তু ভুলত্রুটি পেলে ধোলাই দিতেও ছাড়তেন না। আমি যখন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছালাম, দেখি তিনি দলবল নিয়ে গাড়িতে উঠছেন। আমাকে দেখে বললেন, ...ওই মিয়া, এত দেরি করলা, চলো। কোথায় যাব তা আর জিজ্ঞাসা না করেই মন্ত্রীর গাড়ির পেছনে ছুটতে শুরু করলাম।
সচিবালয় থেকে বেরিয়ে আমরা চলেছি ফার্মগেটের দিকে, এরপর এয়ারপোর্ট রোড ধরে বিমানবন্দরের দিকে। ধীরে ধীরে সাহস বাড়ছে। মন ভালো হয়ে যাচ্ছে। আমার আর বুঝতে বাকি থাকল না যে খবর প্রকাশের কারণে আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তিনি তার শেষ দেখতে যাচ্ছেন। মন্ত্রীর বহর এসে থামল ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক লাগোয়া উত্তরার সেই প্লটের কাছে। আমি মনে করেছিলাম, মন্ত্রী আমাকে নিয়ে নিজে অবস্থা দেখতে এসেছেন। কিন্তু এখানে এসে দেখি এলাহি কাণ্ড। আগে থেকেই রাজউকের ম্যাজিস্ট্রেট এবং অনেক পুলিশ দাঁড়িয়ে। সঙ্গে তিনটা বুলডোজার। মন্ত্রী আসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো ‘ধ্বংসযজ্ঞ’। তিন দিক থেকে তিনটি বুলডোজার চোখের পলকে গুঁড়িয়ে দিল পুরো মার্কেট। এক ঘণ্টার মধ্যে উন্মুক্ত মাঠ আবার আলো-বাতাসের মুখ দেখল।
উচ্ছেদ অভিযান শেষ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে ডেকে বললেন, ফলোআপটা ভালো কইরা কইরো। আমি বললাম, জি, আচ্ছা। ততক্ষণে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। মোটরসাইকেল টান দিলাম অফিসের উদ্দেশে।
এখনো উত্তরার দিকে গেলে সেই জমিটার দিকে তাকাই। জমিটা ফাঁকাই আছে। শুধু সিটি করপোরেশন আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য একটি দোতলা টিনের ঘর বানিয়েছে। সরকারি জমি দখল এখনো হয়, উচ্ছেদও হয়। কিন্তু সবই হয় লোকদেখানো। এরপর কিছুদিন যেতে না যেতেই দেখি, যথা পূর্বং তথা পরম্।
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
রাজধানীর বিমানবন্দরে শরীরে বিশেষ কৌশলে গাঁজা নিয়ে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তিনজন কিশোর। তাঁরা বর্তমানে কিশোর সংশোধনাগারের রয়েছে।
১০ দিন আগেপরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে সিঙ্গাপুরে যান দুই ভাই উজ্জ্বল মিয়া ও মো. ঝন্টু। সেখানে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে ভাবির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান ছোট ভাই মো. ঝন্টু। পরে দেশে ফিরে ভাবিকে বিয়ে করার জন্য আপন বড় ভাই উজ্জ্বল মিয়াকে খুন করে ছোট ভাই।
১০ দিন আগেরাজধানীর গেণ্ডারিয়ায় গত দুই মাসে দুই অটোরিকশা চালককে হত্যা করে রিকশা ছিনিয়ে নেওয়া ঘটনা ঘটেছে। পৃথক এই দুই ঘটনায় তদন্তে নেমে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
১০ দিন আগেপাবনার পদ্মা নদী থেকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ১২ বছরের এক কিশোর এবং ২২ বছরের এক তরুণীর অর্ধগলিত দুইটি মরদেহ উদ্ধার করেছে নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি। উদ্ধারের দুইদিনেও কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইদুর রহমান।
১৪ দিন আগে