মহিউদ্দিন খান মোহন
‘শিক্ষক’। তিন অক্ষরের এই শব্দটির মহিমা অপরিসীম। সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা অনন্য। শিক্ষক মানে তিনি হবেন সব রকম লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষিত করার ব্রতে আত্মনিবেদিত একজন মানুষ। একজন শিক্ষক কোনো দুর্নীতি, অপরাধ করতে পারেন, এটা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল।
আমরা যখন স্কুল-কলেজের ছাত্র ছিলাম, তখন দেখতাম স্যাররা কী রকম সৎ জীবনযাপন করতেন। তাঁরা নিজেরা সৎ থেকেছেন, ছাত্রদেরও সৎ জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করতেন। তাঁরা আমাদের কাছে ছিলেন অনুকরণীয়, অনুসরণীয়। এখন সময় বদলেছে। বিত্তবৈভবের লোভ মানুষকে এমনভাবে গ্রাস করেছে যে নীতিনৈতিকতার ঠাঁই হয়েছে ডাস্টবিনে। কেউ আর ওসবের ধার ধারে না। সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন তাঁর ‘বিষাদ সিন্ধু’ উপন্যাসে লিখেছেন, ‘হায় রে পাতকী অর্থ! তুই যত অনর্থের মূল’। ১৩২ বছর আগে করা তাঁর সেই উক্তির যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই। টাকার লোভ মানুষকে মুহূর্তে অমানুষ করে তুলতে পারে। এই লোভে পড়ে মানুষ দুর্নীতি-অপকর্মে লিপ্ত হতে দ্বিধা করে না। এমনকি অপরের প্রাণ সংহারেও তাদের হাত কাঁপে না। সাধারণ মানুষের দুর্নীতিতে লিপ্ত হওয়ার খবরে কেউ খুব একটা অবাক হন না। কেননা, অবক্ষয়ের করালগ্রাসে নিপতিত সমাজে এটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কিন্তু যখন শোনা যায় একজন শিক্ষক একই কাজে প্রবৃত্ত হয়েছেন, তখন কপাল চাপড়ে বিলাপ করা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। কেননা, জাতির ভবিষ্যৎ নাগরিকদের সৎ ও নিষ্ঠাবান হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব যাঁর কাঁধে ন্যস্ত, তিনিই যদি অসাধুতা রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে তাঁর কাছ থেকে কি মানুষ তৈরির আশা করা যায়? শিক্ষক সে প্রাইমারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যে-ই হোন না কেন, তিনি তাঁর কর্মকাণ্ডের জন্য সমাজের শ্রদ্ধার আসনে উপবিষ্ট হবেন, এটাই সাধারণ প্রত্যাশা। কিন্তু সে প্রত্যাশা এখন চরম হতাশায় পর্যবসিত হচ্ছে।
তেমনই একটি হতাশাজনক খবর এসেছে অতিসম্প্রতি। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক উপাচার্যের বিরুদ্ধে চরম দুর্নীতি ও অসততার খবর প্রকাশিত হয়েছে গত ২০ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে। ‘ভার্সিটি না, অনিয়মের কারখানা’ শীর্ষ ওই খবরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’-এর সাবেক উপাচার্য ড. আবুল হাসান মোহাম্মদ সাদেকের দুর্নীতি-অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে। সাবেক এই উপাচার্য মহোদয়ের অনিয়ম-দুর্নীতির তালিকায় রয়েছে নিজের মতিঝিলের বাড়িকে ক্যাম্পাস দেখিয়ে ভাড়া বাবদ ২০ কোটি ৬৪ লাখ ৫২ হাজার ৪৬২ টাকা আত্মসাৎ, উত্তরার বাড়িকে ক্যাম্পাস দেখিয়ে পকেটে পুরেছেন ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৮ টাকা, উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সড়কের ২৫ নম্বর বাড়িকে ট্রাস্টি বোর্ডের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে ৩ কোটি ৬৪ লখ ১২ হাজার ৮০০ টাকা। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো বৈধ অনুমোদন ছাড়াই তিনি ১০ বছর বিশ্ববিদ্যালয়টির ভাইস চ্যান্সেলরের চেয়ার দখল করে ছিলেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে। ইউজিসি তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে সংঘটিত অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। তা ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়টির সনদেরও মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর বৈধ ও আইনগত কোনো এখতিয়ার নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অবৈধ ভিসির স্বাক্ষরিত সনদের বৈধতা এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। ফলে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ সর্বনাশের কবলে পড়েছে। পুরো প্রতিবেদনটি পাঠ করলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সাবেক ওই ভিসির নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দুর্নীতি-অনিয়মের আখড়ায় পরিণত করেছিল। এদিকে গত ২২ জুন আজকের পত্রিকার এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। এসব অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব ড. মো. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে এ ধরনের খবর নতুন কিছু নয়। শুধু বেসরকারি কেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কি এর ব্যতিক্রম? সাম্প্রতিককালে বহুসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সম্পর্কে এ ধরনের অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতাদের টেন্ডারবাজিতে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা ওই ভিসির অপসারণের দাবিতে তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তবে গোড়া শক্ত থাকায় ভিসি মহোদয়ার কেশাগ্রও কেউ স্পর্শ করতে পারেননি। দেশের উত্তরাঞ্চলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সম্পর্কে অভিযোগ ছিল, তিনি তাঁর মেয়াদে দু-চার দিনের বেশি ক্যাম্পাসে যাননি। তবে ক্যাম্পাসে না গেলেও বেতন-ভাতা, মিটিং-ভাতা তুলতে তাঁকে বেগ পেতে হয়নি। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ওই ভিসি সাহেব আবার একটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার প্রধান। ফলে সরকারি মহলের সঙ্গে তাঁর দহরম মহরম সহজেই অনুমেয়। নির্বাচনের সময় তাঁর সংস্থার পর্যবেক্ষণ পক্ষে থাকলে সুবিধা—এই বিবেচনায় বছরের পর বছর অনুপস্থিত থেকেও তিনি প্রতিষ্ঠানপ্রধানের দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
গত ২৪ জুন আজকের পত্রিকায় বেরিয়েছে আরেক কীর্তিমান ভিসির কাহিনি। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ করেছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের চাকরিপ্রার্থী শাহাবুবুল আলম। দুদক চেয়ারম্যানের বরাবর করা অভিযোগে তিনি বলেছেন, একাডেমিক ফলাফল এবং অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকলেও ভিসি তাঁকে নিয়োগ না দিয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন দুজনকে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন। দুদক এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি সাহেবদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। তাঁরা কেউ চেয়ারে থাকাকালীন এ ধরনের কর্ম করে থাকেন। আবার কেউ বিদায়ের আগে গণনিয়োগ দিয়ে সংবাদের শিরোনাম হন।
একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যিনি প্রধান হন, তাঁর প্রতি মানুষের প্রত্যাশা থাকে তিনি মেধা, সততা ও দক্ষতা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে মর্যাদাবান করে তুলবেন। পাশাপাশি নিজের সততা দিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবেন। কিন্তু নির্মম হলেও সত্যি যে, বর্তমান সময়ে তেমন ভাইস চ্যান্সেলর পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে। এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের নাম শুনলে শ্রদ্ধায় মাথা আপনাআপনি নত হয়ে আসত। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী, বোস প্রফেসর আবুল মতিন চৌধুরী, অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক, ড. ফজলুল হালিম চৌধুরী, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিয়ার মতো নিষ্ঠাবান শিক্ষক ও প্রশাসকেরা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দিকেনির্দেশনা দিতেন। তাঁরা গর্বিত হতেন কৃতী শিক্ষার্থীদের নিয়ে। আর আজকাল কোনো কোনো মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলরকে গর্ব করতে শোনা যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যানটিনে ১০ টাকায় চা, শিঙাড়া, সমুচা পাওয়া যায় বলে। এটা নাকি আমাদের দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ঐতিহ্য!
এসব নিয়ে কথা বলছিলাম প্রবীণ এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি ছোট্ট একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, সবখানেই যখন পচন ধরেছে, তখন বিশ্ববিদ্যালয় আর বাকি থাকবে কেন? আগে ছাত্ররা শিক্ষকদের কাছে সততা, নৈতিকতার পাঠ নিত। এখন অবৈধপথে অর্থ আয়ের শিক্ষা নেবে। জাতির ভবিষ্যৎ তো আর এমনি এমনি অন্ধকার হচ্ছে না!
মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
‘শিক্ষক’। তিন অক্ষরের এই শব্দটির মহিমা অপরিসীম। সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা অনন্য। শিক্ষক মানে তিনি হবেন সব রকম লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষিত করার ব্রতে আত্মনিবেদিত একজন মানুষ। একজন শিক্ষক কোনো দুর্নীতি, অপরাধ করতে পারেন, এটা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল।
আমরা যখন স্কুল-কলেজের ছাত্র ছিলাম, তখন দেখতাম স্যাররা কী রকম সৎ জীবনযাপন করতেন। তাঁরা নিজেরা সৎ থেকেছেন, ছাত্রদেরও সৎ জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করতেন। তাঁরা আমাদের কাছে ছিলেন অনুকরণীয়, অনুসরণীয়। এখন সময় বদলেছে। বিত্তবৈভবের লোভ মানুষকে এমনভাবে গ্রাস করেছে যে নীতিনৈতিকতার ঠাঁই হয়েছে ডাস্টবিনে। কেউ আর ওসবের ধার ধারে না। সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন তাঁর ‘বিষাদ সিন্ধু’ উপন্যাসে লিখেছেন, ‘হায় রে পাতকী অর্থ! তুই যত অনর্থের মূল’। ১৩২ বছর আগে করা তাঁর সেই উক্তির যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই। টাকার লোভ মানুষকে মুহূর্তে অমানুষ করে তুলতে পারে। এই লোভে পড়ে মানুষ দুর্নীতি-অপকর্মে লিপ্ত হতে দ্বিধা করে না। এমনকি অপরের প্রাণ সংহারেও তাদের হাত কাঁপে না। সাধারণ মানুষের দুর্নীতিতে লিপ্ত হওয়ার খবরে কেউ খুব একটা অবাক হন না। কেননা, অবক্ষয়ের করালগ্রাসে নিপতিত সমাজে এটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কিন্তু যখন শোনা যায় একজন শিক্ষক একই কাজে প্রবৃত্ত হয়েছেন, তখন কপাল চাপড়ে বিলাপ করা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। কেননা, জাতির ভবিষ্যৎ নাগরিকদের সৎ ও নিষ্ঠাবান হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব যাঁর কাঁধে ন্যস্ত, তিনিই যদি অসাধুতা রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে তাঁর কাছ থেকে কি মানুষ তৈরির আশা করা যায়? শিক্ষক সে প্রাইমারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যে-ই হোন না কেন, তিনি তাঁর কর্মকাণ্ডের জন্য সমাজের শ্রদ্ধার আসনে উপবিষ্ট হবেন, এটাই সাধারণ প্রত্যাশা। কিন্তু সে প্রত্যাশা এখন চরম হতাশায় পর্যবসিত হচ্ছে।
তেমনই একটি হতাশাজনক খবর এসেছে অতিসম্প্রতি। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক উপাচার্যের বিরুদ্ধে চরম দুর্নীতি ও অসততার খবর প্রকাশিত হয়েছে গত ২০ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে। ‘ভার্সিটি না, অনিয়মের কারখানা’ শীর্ষ ওই খবরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’-এর সাবেক উপাচার্য ড. আবুল হাসান মোহাম্মদ সাদেকের দুর্নীতি-অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে। সাবেক এই উপাচার্য মহোদয়ের অনিয়ম-দুর্নীতির তালিকায় রয়েছে নিজের মতিঝিলের বাড়িকে ক্যাম্পাস দেখিয়ে ভাড়া বাবদ ২০ কোটি ৬৪ লাখ ৫২ হাজার ৪৬২ টাকা আত্মসাৎ, উত্তরার বাড়িকে ক্যাম্পাস দেখিয়ে পকেটে পুরেছেন ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৮ টাকা, উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সড়কের ২৫ নম্বর বাড়িকে ট্রাস্টি বোর্ডের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে ৩ কোটি ৬৪ লখ ১২ হাজার ৮০০ টাকা। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো বৈধ অনুমোদন ছাড়াই তিনি ১০ বছর বিশ্ববিদ্যালয়টির ভাইস চ্যান্সেলরের চেয়ার দখল করে ছিলেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে। ইউজিসি তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে সংঘটিত অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। তা ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়টির সনদেরও মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর বৈধ ও আইনগত কোনো এখতিয়ার নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অবৈধ ভিসির স্বাক্ষরিত সনদের বৈধতা এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। ফলে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ সর্বনাশের কবলে পড়েছে। পুরো প্রতিবেদনটি পাঠ করলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সাবেক ওই ভিসির নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দুর্নীতি-অনিয়মের আখড়ায় পরিণত করেছিল। এদিকে গত ২২ জুন আজকের পত্রিকার এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। এসব অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব ড. মো. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে এ ধরনের খবর নতুন কিছু নয়। শুধু বেসরকারি কেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কি এর ব্যতিক্রম? সাম্প্রতিককালে বহুসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সম্পর্কে এ ধরনের অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতাদের টেন্ডারবাজিতে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা ওই ভিসির অপসারণের দাবিতে তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তবে গোড়া শক্ত থাকায় ভিসি মহোদয়ার কেশাগ্রও কেউ স্পর্শ করতে পারেননি। দেশের উত্তরাঞ্চলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সম্পর্কে অভিযোগ ছিল, তিনি তাঁর মেয়াদে দু-চার দিনের বেশি ক্যাম্পাসে যাননি। তবে ক্যাম্পাসে না গেলেও বেতন-ভাতা, মিটিং-ভাতা তুলতে তাঁকে বেগ পেতে হয়নি। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ওই ভিসি সাহেব আবার একটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার প্রধান। ফলে সরকারি মহলের সঙ্গে তাঁর দহরম মহরম সহজেই অনুমেয়। নির্বাচনের সময় তাঁর সংস্থার পর্যবেক্ষণ পক্ষে থাকলে সুবিধা—এই বিবেচনায় বছরের পর বছর অনুপস্থিত থেকেও তিনি প্রতিষ্ঠানপ্রধানের দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
গত ২৪ জুন আজকের পত্রিকায় বেরিয়েছে আরেক কীর্তিমান ভিসির কাহিনি। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ করেছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের চাকরিপ্রার্থী শাহাবুবুল আলম। দুদক চেয়ারম্যানের বরাবর করা অভিযোগে তিনি বলেছেন, একাডেমিক ফলাফল এবং অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকলেও ভিসি তাঁকে নিয়োগ না দিয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন দুজনকে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন। দুদক এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি সাহেবদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। তাঁরা কেউ চেয়ারে থাকাকালীন এ ধরনের কর্ম করে থাকেন। আবার কেউ বিদায়ের আগে গণনিয়োগ দিয়ে সংবাদের শিরোনাম হন।
একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যিনি প্রধান হন, তাঁর প্রতি মানুষের প্রত্যাশা থাকে তিনি মেধা, সততা ও দক্ষতা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে মর্যাদাবান করে তুলবেন। পাশাপাশি নিজের সততা দিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবেন। কিন্তু নির্মম হলেও সত্যি যে, বর্তমান সময়ে তেমন ভাইস চ্যান্সেলর পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে। এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের নাম শুনলে শ্রদ্ধায় মাথা আপনাআপনি নত হয়ে আসত। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী, বোস প্রফেসর আবুল মতিন চৌধুরী, অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক, ড. ফজলুল হালিম চৌধুরী, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিয়ার মতো নিষ্ঠাবান শিক্ষক ও প্রশাসকেরা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দিকেনির্দেশনা দিতেন। তাঁরা গর্বিত হতেন কৃতী শিক্ষার্থীদের নিয়ে। আর আজকাল কোনো কোনো মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলরকে গর্ব করতে শোনা যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যানটিনে ১০ টাকায় চা, শিঙাড়া, সমুচা পাওয়া যায় বলে। এটা নাকি আমাদের দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ঐতিহ্য!
এসব নিয়ে কথা বলছিলাম প্রবীণ এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি ছোট্ট একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, সবখানেই যখন পচন ধরেছে, তখন বিশ্ববিদ্যালয় আর বাকি থাকবে কেন? আগে ছাত্ররা শিক্ষকদের কাছে সততা, নৈতিকতার পাঠ নিত। এখন অবৈধপথে অর্থ আয়ের শিক্ষা নেবে। জাতির ভবিষ্যৎ তো আর এমনি এমনি অন্ধকার হচ্ছে না!
মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
রাজধানীর বিমানবন্দরে শরীরে বিশেষ কৌশলে গাঁজা নিয়ে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তিনজন কিশোর। তাঁরা বর্তমানে কিশোর সংশোধনাগারের রয়েছে।
১২ দিন আগেপরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে সিঙ্গাপুরে যান দুই ভাই উজ্জ্বল মিয়া ও মো. ঝন্টু। সেখানে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে ভাবির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান ছোট ভাই মো. ঝন্টু। পরে দেশে ফিরে ভাবিকে বিয়ে করার জন্য আপন বড় ভাই উজ্জ্বল মিয়াকে খুন করে ছোট ভাই।
১২ দিন আগেরাজধানীর গেণ্ডারিয়ায় গত দুই মাসে দুই অটোরিকশা চালককে হত্যা করে রিকশা ছিনিয়ে নেওয়া ঘটনা ঘটেছে। পৃথক এই দুই ঘটনায় তদন্তে নেমে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
১২ দিন আগেপাবনার পদ্মা নদী থেকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ১২ বছরের এক কিশোর এবং ২২ বছরের এক তরুণীর অর্ধগলিত দুইটি মরদেহ উদ্ধার করেছে নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি। উদ্ধারের দুইদিনেও কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইদুর রহমান।
১৬ দিন আগে