ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকে ‘ভুয়া’ অ্যাকাউন্ট খুলে ১৭ লাখ টাকার প্রতারণার অভিযোগ

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৩, ২২: ৩৩
আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২৩, ০০: ১৬

বগুড়ার বাসিন্দা মো. তোফায়েল আহমেদ। জেলার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামের একটি কওমি মাদ্রাসায় ৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন। প্রতিবেশী মো. আনারুল ইসলাম ভালো বেতনে ইমামের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তোফায়েলের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতিয়ে নেন। পরে চাকরি তো মেলেনি, উল্টো ঘাড়ে চেপেছে সাড়ে ১৭ লাখ টাকার চেক জালিয়াতির মামলা।

তোফায়েল প্রতারণার প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকে। একই সঙ্গে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলা করেছেন।

ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট মফিজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি তোফায়েল আহমেদ নামে ব্যবসায়ীর সঙ্গে লেনদেন করতেন। তোফায়েল আহমেদের দেওয়া দুটি চেক ডিজঅনার হয়। পরে তিনি তোফায়েলের নামে মামলা করেন। তবে বগুড়ার তোফায়েল আহমেদ বলছেন, প্রতিবেশী আনারুল ইসলাম তাঁর নথিপত্র ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খুলে এই প্রতারণা করেছেন।

মামলার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি থেকে জানা যায়, ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার গুজিয়াম এলাকার বাসিন্দা মফিজুল ইসলামের নামে ইস্যুকৃত ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের দুটি চেক ডিজঅনার হয়েছে। মফিজুল ব্যাংকটির একটি এজেন্ট আউটলেটের প্রোপ্রাইটর। টাকার পরিমাণ ১৭ লাখ ৪৬ হাজার। ২৮১১৫২০০০১৯৯২ নং হিসাবের যথাক্রমে চেক নং ৬৭৮৯১৬২-এর অনুকূলে ৮ লাখ ও ৬৭৮৯১৬৪ নং চেকের অনুকূলে ৯ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। হিসাবধারী ব্যক্তির নাম তোফায়েল আহমেদ। তিনি বগুড়ার সোনাতলা এলাকার বাসিন্দা। এ ঘটনায় ময়মনসিংহের ৮ নং আমলি আদালতে নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট আইনের ১৩৮ ধারায় একটি মামলা হয়েছে। যার নম্বর ৯/২৩। 

এদিকে আদালতের ওয়ারেন্ট আদেশ পেয়ে আসামি তোফায়েল আহমেদ জামিন নেন। এরপর ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যবস্থাপককে একটি আইনি নোটিশ পাঠান। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি অভিযোগ দেন। এতে তিনি দাবি করেন, তাঁর অগোচরে প্রতারণার উদ্দেশ্যে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের ভালুকা সিডস্টোর শাখায় হিসাবটি খোলা হয়েছে। যদিও তিনি কখনোই ময়মনসিংহে যাননি। তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী মফিজুল ইসলামের সঙ্গে একবারও যোগাযোগ হয়নি। 

ভুক্তভোগী তোফায়েল দাবি করে বলেন, নিজস্ব সোর্স ব্যবহার করে তিনি হিসাবের নথিপত্র ব্যাংকের সার্ভার থেকে দেখেছেন। তাতে এনআইডির সঙ্গে ব্যাংক হিসাবের স্বাক্ষরে গরমিল রয়েছে। ব্যাংক হিসাবে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটিও তাঁর নয়। ব্যাংক হিসাবে যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে তা-ও তোফায়েলের নয়। শুধু তাঁর নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিবেশী আনারুল ইমামতির চাকরির কথা বলে তাঁর কাছ থেকে নেওয়া এনআইডি ব্যবহার করে ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে হিসাবটি খুলেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি মফিজুল (তোফায়েলের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী) ও প্রতিবেশী আনারুলের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহের ৮ নং আমলি আদালতে একটি মামলা করেছেন। মামলা নং ৫২৭/২০২৩। 

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ও তোফায়েলের বিরুদ্ধে করা চেক ডিজঅনারের মামলার বাদী মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘মামলায় ব্যবহৃত হিসাবের তথ্য ব্যবহার করে মামলা করেছি। তোফায়েল নামের ব্যক্তির সঙ্গে আমি নিয়মিত লেনদেন করতাম। তিনি স্থানীয় প্রাণ কোম্পানির পণ্যের ডিলার ছিলেন। তিনিই আনারুল কি না, তা আমি জানি না। স্থানীয় সব মানুষ তাঁকে তোফায়েল নামেনই চেনে। আমার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পর হঠাৎ তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন। মাদ্রাসাশিক্ষক তোফায়েল সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই।’

তিনি বলেন, ‘জালিয়াতির মাধ্যমে যদি হিসাব খোলা হয়েও থাকে তা-ও আমি কিছু জানি না। কারণ এই হিসাবটি আমার এজেন্ট আউটলেট খোলা হয়নি। ব্যাংক হিসাবটি (২৮১১৫২০০০১৯৯২) সিডস্টোর শাখায় খোলা হয়েছে।’

গ্রাহকের অনুপস্থিতিতে এনআইডি, ছবি ও স্বাক্ষর ছাড়াই কীভাবে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে জানতে চাইলে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের ভালুকা সিডস্টোর বাজার শাখা ম্যানেজার কামরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার পর নোটিশদাতার কাছে কিছু কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। সামগ্রিক বিষয় প্রধান কার্যালয় দেখভাল করছে।’

এ বিষয়ে জানতে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবুল কাশেম মো. শিরিন এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা হোসাইন মো. সগীর আহমেদের ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।

অভিযুক্ত আনারুলের ফোন নম্বরে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর বাবা ফজলু শেখের ফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত