প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব হলেই আগামীতে সুন্দর পৃথিবী গড়ে উঠবে বলে মনে করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের আগামীর সমস্ত পথ চলা সুন্দর, সৃজনশীলতায়, প্রকৃতি সুরক্ষায়, কাব্যে এবং সংস্কৃতিতে হোক। প্রকৃতিকে আঘাত করার জায়গা থেকে আমরা যেন বের হয়ে আসতে পারি।’

উপাচার্য আরও বলেন, ‘নতুন সমাজ ব্যবস্থার জন্য আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা সেই সমাজে প্রকৃতি এবং মানুষের অপার বন্ধুত্ব নিশ্চিত হলেই সুন্দরতম, শ্রেষ্ঠতম পৃথিবীকে সবাই মিলে অবগাহন করতে পারব।’

আজ শনিবার ঐতিহ্যবাহী নটর ডেম কলেজের নটর ডেম নেচার স্টাডি ক্লাব আয়োজিত ‘১৪ তম জাতীয় নেচার সামিট-২০২৩’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য মশিউর রহমান।

দেশের প্রথিতযশা সমাজবিজ্ঞানী মশিউর রহমান বলেন, ‘মানুষ পৃথিবীতে একটি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। একটি কর্তৃত্ব আরোপ করেছে। যার ওপরে টিকে থাকা সেই প্রকৃতির ওপরে। মানুষ মূলত প্রকৃতির সব সুবিধা নিয়ে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। প্রকৃতি উজাড় করে মানুষকে এই শ্রেষ্ঠত্ব তৈরির সুযোগ করে দিয়েছে। যিনি পৃথিবীতে বড় বিজ্ঞানী হয়েছেন তিনি মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন ঠিকই কিন্তু তিনি নতুন কিছু করেননি প্রকৃতির নিয়মনীতিকে আরও সুন্দর, সুসংগঠিতভাবে উদ্ভাবন করা ছাড়া। অর্থাৎ পৃথিবীতে সেরা বিজ্ঞানীও প্রকৃতির এক ধরনের দান, যে কিনা প্রকৃতিকে বোঝে, প্রকৃতির নিয়মগুলো বোঝে সেরা বিজ্ঞানী হয়েছেন।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কথা বলি, আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কথা বলি-নিশ্চয়ই মানুষের বুদ্ধিমত্তার শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় এখানে আছে। কিন্তু চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কী প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার আরও নতুন কলাকৌশল ছাড়া অন্য কিছু? তাহলে আমার মনে হয় শুরু থেকে আজকের পোস্ট মডার্নিজম সোসাইটি পর্যন্ত পৃথিবীর এগিয়ে চলার প্রতিটি পদে পদে মূলত মানুষ প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবহার করেছে। কিন্তু প্রকৃতি তার শোধ মাঝে মাঝে নিতে চায়। কেননা আমরা মানুষেরা তার অতিব্যবহার, অপব্যবহার এবং তাকে বিনষ্ট করে তুলেছি। এ কারণে প্রকৃতি তা শোধের বার্তা নিয়ে মাঝে মাঝে রুখে দাঁড়ায়।’ 

নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও পিএসসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নটর ডেম নেচার স্টাডি ক্লাবের মডারেটর সহকারী অধ্যাপক বিপ্লব কুমার দেব। দুই দিনব্যাপী (৮ ও ৯ ডিসেম্বর) প্রকৃতি ও প্রতিবেশবিষয়ক সম্মেলন ন্যাশনাল নেচার সামিটের ১৪ তম সংস্করণের আজ ছিল শেষ দিন।

পাইওনিয়ার্স (নার্সারি-দ্বিতীয় শ্রেণি), এক্সপ্রোরার্স (তৃতীয়-পঞ্চম শ্রেণি), ভিশনারিজ (ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণি), চ্যালেঞ্জার্স (নবম-দশম শ্রেণি) এবং ইনোভেটরস (একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি) ও স্কলার্স (বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়)-এই ছয়টি ক্যাটাগরিতে তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। গত ১ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে এই আয়োজন হয়। ৮ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় পর্যায়ের আয়োজন হয়। সব বিজয়ী ৯ ডিসেম্বর জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেন। জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ীদের মধ্যে এ অধিবেশনে পুরস্কার দেওয়া হয়।