শাকিলা ববি, সিলেট
সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের মুদিদোকানি মুজিবুর রহমান। কিছুদিন আগে গভীর রাতে তাঁর ভাবির প্রসবব্যথা উঠলে বিপাকে পড়ে যায় পরিবার। কারণ, গ্রামে যে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র আছে সেখানে প্রসবকালীন সেবার ব্যবস্থা নেই। বাধ্য হয়েই গভীর রাতে সিলেট শহরের ওসমানী মেডিকেল কলেজে এনে ভর্তি করান ভাবিকে।
মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মাঝেমধ্যে ডাক্তার আসেন। গ্রামের নারীরা গর্ভকালীন সেবা নিতে পারলেও ডেলিভারি হয় না। যাঁরা কেন্দ্রের দায়িত্বে আছেন, তাঁরাও ঠিক সময়ে আসেন না। দুজন আপা আছেন তাঁরা কখনো ১১টায় আসেন, আবার কখনো ১২টায়। ঘণ্টাখানেক থেকেই আবার চলে যান। এখানকার স্বাস্থ্যসেবা মানে শুধু ভবনটাই আছে। মানুষের সর্দি, জ্বর, কাশি, হাত ভাঙা, পা ভাঙা, ডেলিভারি যাই হোক না কেন শহরেই যেতে হয়।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেট সদর উপজেলার আট ইউনিয়নের মধ্যে টুকেরবাজার, কান্দিগাঁও, মোগলগাঁও, হাটখোলা, জালালাবাদ ইউনিয়নের অবস্থান শহর থেকে বেশ দূরে। দেশের অন্য বিভাগের মতো এখানকার সদর উপজেলায় কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেই। সদর উপজেলা জেলা শহরের কাছাকাছি থাকে, সেই ভাবনা থেকে সেখানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হয়নি। ফলে বছরের পর বছর স্বাস্থ্যসেবার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সদর উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ।
এদিকে, সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ জেলা শহরের মানুষ সরকারি-বেসরকারি—দুই ধরনের পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পেলেও বঞ্চিত আছে জেলাগুলোর প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। প্রাকৃতিকভাবে হাওরবেষ্টিত জনপদ বেশি এই বিভাগে। তাই এই অঞ্চলগুলো অনেক দুর্গম। এ জন্য এখানকার মানুষজনের প্রাপ্য স্বাস্থ্যসেবা পাওয়াও অনেকটাই দুর্লভ। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোথাও হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন থাকলেও সেবা নেই। আবার কোথাও কিছুই নেই।
বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য (বিডিএইচএস) জরিপ ২০১৭-১৮-এর তথ্যমতে, সিলেটে প্রজনন হার বেশি, শিশুমৃত্যু বেশি। এ ছাড়া সিলেটে খর্বকায় শিশু বেশি, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ সবচেয়ে কম, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মা ও শিশুসেবা নেওয়ার প্রবণতাও কম এবং শিশুদের টিকাদানের প্রবণতাও কম।
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার প্রত্যন্ত যোগাযোগবিচ্ছিন্ন সীমান্তঘেঁষা বান্দ্রা গ্রামের শান্তি হাজং বলেন, মধ্যনগরের সঙ্গে যোগাযোগের সড়কটি ভাঙাচোরা হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। কাছে কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র না থাকায় দুর্গম যোগাযোগবিচ্ছিন্ন সড়ক দিয়ে প্রসূতি মা, শিশু ও বয়স্কদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হয়। যার ফলে সড়কের মধ্যেই অনেক রোগী মারা যায় এবং ডেলিভারিও হয়ে যায়।
হবিগঞ্জ বানিয়াচং উপজেলার বাসিন্দারা ছয় মাস পানি ও ছয় মাস ডাঙায় থাকেন। এখানকার বাসিন্দাদের কেউ অসুস্থ হলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন থাকলেও ডাক্তার এবং প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়া দুঃসহ ব্যাপার। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে হবিগঞ্জ নেওয়া ছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসার আর কোনো ব্যবস্থা থাকে না। আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অনেক দূরে। সেখানেও পর্যাপ্ত সেবা পাওয়া যায় না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে অনেকবার কথা বললেও তাঁরা শুধু আশ্বাস দিয়েই যাচ্ছেন।’
শীতকালে মুরাদপুর ইউনিয়নের মানুষকে উপজেলা সদরে আসতে তিনবার নৌকা বদল করে কয়েক কিলোমিটার সড়ক হেঁটে তারপর যানবাহনে উঠতে হয়। গ্রামের নাইম চৌধুরী বলেন, এলাকার পাশে যে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে তাতে কোনো সেবা পাওয়া যায় না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও অনেক দূরে। যোগাযোগব্যবস্থা এতটাই খারাপ যে অনেক প্রসূতিকে জরুরি মুহূর্তে হাসপাতালে নেওয়া যায় না।
এ রকম নানা সংকটে জর্জরিত সিলেট বিভাগের চার জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেটের স্বাস্থ্য খাত অন্যান্য বিভাগের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। চরম জনবলসংকটে ধুঁকছে জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো।
সিলেট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এই বিভাগে জনসংখ্যা এক কোটি আট লাখের বেশি। এখানে ৯০০ শয্যাবিশিষ্ট সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। এ ছাড়া ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল আছে একটি, চার জেলায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল আছে একটি করে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে ৩৪ টি, ২০ শয্যাবিশিষ্ট পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে তিনটি, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র আছে ২৩৪ টি।
সারা বিভাগের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ হাজার ২৮৬টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৭৯৫ জন। স্টাফ নার্সের ৮৩টি পদের বিপরীতে কর্মরত ৩৯ জন, সহকারী নার্সের ৮৬টি পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ছয়জন। নার্সিং সুপারভাইজার, মিডওয়াইফারি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্টসহ প্রায় সব পদেই প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকেরও কম জনবল আছে।
বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা-সম্পর্কিত নানা তথ্য জানতে গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে চার জেলার বিভিন্ন উপজেলা পরিদর্শন করেন এই প্রতিবেদক। সেসব এলাকার শতাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাঁদের এলাকার স্বাস্থ্যব্যবস্থার চিত্র।
জানা গেছে, বিভাগের বেশির ভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ থেকে ৫০ শয্যা করা হলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, রোগ নির্ণয় যন্ত্রপাতি এবং জনবলের অভাবে রোগীরা পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না।
সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক হিমাংশু লাল রায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানকার স্বাস্থ্য খাত অন্য এলাকার তুলনায় পিছিয়ে। জেলা বা উপজেলা সদরের বাসিন্দারা ভালোমানের সেবা নিতে পারলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা দিতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। এসব এলাকায় আমরা মূলত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এই কেন্দ্রগুলোয় আমাদের জনবল বলতে কোনো জায়গায় একজন স্যাকমো আছে, সঙ্গে একজন এফডব্লিউভি, কোনো জায়গায় আয়া, ওয়ার্ডবয় আছে কোনো জায়গায় নেই। কোনো জায়গায় অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট আছে কোনো জায়গায় নাই, নৈশপ্রহরী নেই। এমতাবস্থায়ও আমরা সেবাগুলো নিশ্চিত করছি স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে। ইউনিয়ন পর্যায়ে মা-শিশুকল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে আমরা ২৪ ঘণ্টা ডেলিভারি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
সিলেটের স্বাস্থ্য খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সিলেটের উপযোগী পরিকল্পনা করার ওপর গুরুত্ব দেন ডা. হিমাংশু লাল রায়। তিনি বলেন, জনবলসংকটের পাশাপাশি পিছিয়ে থাকার অন্যতম একটি কারণ হলো সিলেটের ভৌগোলিক অবস্থান। জাতীয় পর্যায়ে অন্যান্য জেলাকে নিয়ে যেভাবে পরিকল্পনা নেওয়া হয় সিলেটকে নিয়ে একই ধরনের পরিকল্পনা নিলে চলবে না। সিলেটের জন্য সিলেটের উপযোগী একটি পরিকল্পনা করতে হবে। যেমন সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলাকে একটি কেন্দ্র বানাতে হবে, ধর্মপাশাকে একটি কেন্দ্র বানাতে হবে। প্রত্যন্ত সব অঞ্চলে সেবা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, প্রতিবেদনটি বিএনএনআরসির তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্য-সাংবাদিকতায় মিডিয়া ফেলোশিপ-এর আওতায় প্রস্তুতকৃত।
সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের মুদিদোকানি মুজিবুর রহমান। কিছুদিন আগে গভীর রাতে তাঁর ভাবির প্রসবব্যথা উঠলে বিপাকে পড়ে যায় পরিবার। কারণ, গ্রামে যে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র আছে সেখানে প্রসবকালীন সেবার ব্যবস্থা নেই। বাধ্য হয়েই গভীর রাতে সিলেট শহরের ওসমানী মেডিকেল কলেজে এনে ভর্তি করান ভাবিকে।
মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মাঝেমধ্যে ডাক্তার আসেন। গ্রামের নারীরা গর্ভকালীন সেবা নিতে পারলেও ডেলিভারি হয় না। যাঁরা কেন্দ্রের দায়িত্বে আছেন, তাঁরাও ঠিক সময়ে আসেন না। দুজন আপা আছেন তাঁরা কখনো ১১টায় আসেন, আবার কখনো ১২টায়। ঘণ্টাখানেক থেকেই আবার চলে যান। এখানকার স্বাস্থ্যসেবা মানে শুধু ভবনটাই আছে। মানুষের সর্দি, জ্বর, কাশি, হাত ভাঙা, পা ভাঙা, ডেলিভারি যাই হোক না কেন শহরেই যেতে হয়।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেট সদর উপজেলার আট ইউনিয়নের মধ্যে টুকেরবাজার, কান্দিগাঁও, মোগলগাঁও, হাটখোলা, জালালাবাদ ইউনিয়নের অবস্থান শহর থেকে বেশ দূরে। দেশের অন্য বিভাগের মতো এখানকার সদর উপজেলায় কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেই। সদর উপজেলা জেলা শহরের কাছাকাছি থাকে, সেই ভাবনা থেকে সেখানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হয়নি। ফলে বছরের পর বছর স্বাস্থ্যসেবার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সদর উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ।
এদিকে, সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ জেলা শহরের মানুষ সরকারি-বেসরকারি—দুই ধরনের পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পেলেও বঞ্চিত আছে জেলাগুলোর প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। প্রাকৃতিকভাবে হাওরবেষ্টিত জনপদ বেশি এই বিভাগে। তাই এই অঞ্চলগুলো অনেক দুর্গম। এ জন্য এখানকার মানুষজনের প্রাপ্য স্বাস্থ্যসেবা পাওয়াও অনেকটাই দুর্লভ। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোথাও হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন থাকলেও সেবা নেই। আবার কোথাও কিছুই নেই।
বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য (বিডিএইচএস) জরিপ ২০১৭-১৮-এর তথ্যমতে, সিলেটে প্রজনন হার বেশি, শিশুমৃত্যু বেশি। এ ছাড়া সিলেটে খর্বকায় শিশু বেশি, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ সবচেয়ে কম, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মা ও শিশুসেবা নেওয়ার প্রবণতাও কম এবং শিশুদের টিকাদানের প্রবণতাও কম।
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার প্রত্যন্ত যোগাযোগবিচ্ছিন্ন সীমান্তঘেঁষা বান্দ্রা গ্রামের শান্তি হাজং বলেন, মধ্যনগরের সঙ্গে যোগাযোগের সড়কটি ভাঙাচোরা হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। কাছে কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র না থাকায় দুর্গম যোগাযোগবিচ্ছিন্ন সড়ক দিয়ে প্রসূতি মা, শিশু ও বয়স্কদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হয়। যার ফলে সড়কের মধ্যেই অনেক রোগী মারা যায় এবং ডেলিভারিও হয়ে যায়।
হবিগঞ্জ বানিয়াচং উপজেলার বাসিন্দারা ছয় মাস পানি ও ছয় মাস ডাঙায় থাকেন। এখানকার বাসিন্দাদের কেউ অসুস্থ হলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন থাকলেও ডাক্তার এবং প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়া দুঃসহ ব্যাপার। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে হবিগঞ্জ নেওয়া ছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসার আর কোনো ব্যবস্থা থাকে না। আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অনেক দূরে। সেখানেও পর্যাপ্ত সেবা পাওয়া যায় না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে অনেকবার কথা বললেও তাঁরা শুধু আশ্বাস দিয়েই যাচ্ছেন।’
শীতকালে মুরাদপুর ইউনিয়নের মানুষকে উপজেলা সদরে আসতে তিনবার নৌকা বদল করে কয়েক কিলোমিটার সড়ক হেঁটে তারপর যানবাহনে উঠতে হয়। গ্রামের নাইম চৌধুরী বলেন, এলাকার পাশে যে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে তাতে কোনো সেবা পাওয়া যায় না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও অনেক দূরে। যোগাযোগব্যবস্থা এতটাই খারাপ যে অনেক প্রসূতিকে জরুরি মুহূর্তে হাসপাতালে নেওয়া যায় না।
এ রকম নানা সংকটে জর্জরিত সিলেট বিভাগের চার জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেটের স্বাস্থ্য খাত অন্যান্য বিভাগের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। চরম জনবলসংকটে ধুঁকছে জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো।
সিলেট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এই বিভাগে জনসংখ্যা এক কোটি আট লাখের বেশি। এখানে ৯০০ শয্যাবিশিষ্ট সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। এ ছাড়া ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল আছে একটি, চার জেলায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল আছে একটি করে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে ৩৪ টি, ২০ শয্যাবিশিষ্ট পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে তিনটি, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র আছে ২৩৪ টি।
সারা বিভাগের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ হাজার ২৮৬টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৭৯৫ জন। স্টাফ নার্সের ৮৩টি পদের বিপরীতে কর্মরত ৩৯ জন, সহকারী নার্সের ৮৬টি পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ছয়জন। নার্সিং সুপারভাইজার, মিডওয়াইফারি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্টসহ প্রায় সব পদেই প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকেরও কম জনবল আছে।
বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা-সম্পর্কিত নানা তথ্য জানতে গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে চার জেলার বিভিন্ন উপজেলা পরিদর্শন করেন এই প্রতিবেদক। সেসব এলাকার শতাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাঁদের এলাকার স্বাস্থ্যব্যবস্থার চিত্র।
জানা গেছে, বিভাগের বেশির ভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ থেকে ৫০ শয্যা করা হলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, রোগ নির্ণয় যন্ত্রপাতি এবং জনবলের অভাবে রোগীরা পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না।
সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক হিমাংশু লাল রায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানকার স্বাস্থ্য খাত অন্য এলাকার তুলনায় পিছিয়ে। জেলা বা উপজেলা সদরের বাসিন্দারা ভালোমানের সেবা নিতে পারলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা দিতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। এসব এলাকায় আমরা মূলত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এই কেন্দ্রগুলোয় আমাদের জনবল বলতে কোনো জায়গায় একজন স্যাকমো আছে, সঙ্গে একজন এফডব্লিউভি, কোনো জায়গায় আয়া, ওয়ার্ডবয় আছে কোনো জায়গায় নেই। কোনো জায়গায় অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট আছে কোনো জায়গায় নাই, নৈশপ্রহরী নেই। এমতাবস্থায়ও আমরা সেবাগুলো নিশ্চিত করছি স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে। ইউনিয়ন পর্যায়ে মা-শিশুকল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে আমরা ২৪ ঘণ্টা ডেলিভারি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
সিলেটের স্বাস্থ্য খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সিলেটের উপযোগী পরিকল্পনা করার ওপর গুরুত্ব দেন ডা. হিমাংশু লাল রায়। তিনি বলেন, জনবলসংকটের পাশাপাশি পিছিয়ে থাকার অন্যতম একটি কারণ হলো সিলেটের ভৌগোলিক অবস্থান। জাতীয় পর্যায়ে অন্যান্য জেলাকে নিয়ে যেভাবে পরিকল্পনা নেওয়া হয় সিলেটকে নিয়ে একই ধরনের পরিকল্পনা নিলে চলবে না। সিলেটের জন্য সিলেটের উপযোগী একটি পরিকল্পনা করতে হবে। যেমন সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলাকে একটি কেন্দ্র বানাতে হবে, ধর্মপাশাকে একটি কেন্দ্র বানাতে হবে। প্রত্যন্ত সব অঞ্চলে সেবা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, প্রতিবেদনটি বিএনএনআরসির তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্য-সাংবাদিকতায় মিডিয়া ফেলোশিপ-এর আওতায় প্রস্তুতকৃত।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া সাইদুর রহমান রয়েল (৪৫) নামে এক ইউপি চেয়ারম্যানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার পৌর এলাকার নিজ বাসার দরজা ভেঙে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
৩ মিনিট আগেইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেছেন, ‘জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মীর কাসেম আলীসহ জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের জনশক্তিকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, কারাগারে হত্যা করা হয়েছে। জুলুম-নির্যাতনের সর্বোচ্চ স্টিম রোলার চালানো হয়েছে ইসলা
৭ মিনিট আগেকক্সবাজারের চকরিয়ায় অবৈধ বালু পরিবহনে ব্যবহৃত দুটি ট্রাক জব্দ করেছে বন বিভাগ। আজ শনিবার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ডুলাহাজারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গাড়ি দুটি জব্দ করা হয়।
১৩ মিনিট আগেসুনামগঞ্জ-পাগলা-জগন্নাথপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের কাটাগাঙ্গ লোহার সেতুর পাটাতন ভেঙে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার ২৭ ঘণ্টা পর যানচলাচল শুরু হয়েছে। আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সেতুটির মেরামত কাজ শেষ হলে যান চলাচল শুরু হয়।
১৫ মিনিট আগে