বাংলাদেশকে কাবু করতে ভারত পানিকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে: মির্জা ফখরুল 

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৪, ২২: ২৯

বাংলাদেশকে কাবু করতে ভারত পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মূল সমস্যা হচ্ছে আমরা ভাটির দেশ। উজান থেকে যে পানি আসে তার বেশির ভাগই ভারত থেকে আসে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকার পানি সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো আজ পর্যন্ত পানির সমস্যার সমাধান হয়নি। সুতরাং, এটা একধরনের ‘অস্ত্র’, যেকোনো সময় এটা দিয়ে বাংলাদেশকে কাবু করে রাখা যায়।’

আজ রোববার সিলেট নগরীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা এসব নিয়ে বারবার কথা বলেছি। আপনারা জানেন, টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে আমরা কথা বলেছিলাম। সিলেট থেকে এই পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল। এম ইলিয়াস আলী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে তাকে গুম করা হয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমানে দেশের একটি অংশ ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। গত ১৫ বছরে এমন আকস্মিক বন্যা আমরা দেখিনি। ভারত তাদের বাঁধ খুলে দেওয়ায় এই ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। তারা বাঁধ খুলে দেওয়ার আগে কোনো পূর্বাভাসও দেয়নি।’

আগামীতে বিএনপি-জামায়াত একসঙ্গে না আলাদা নির্বাচন করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো অ্যালায়েন্স আছে? না থাকলে বাদ। যখন নির্বাচন আসবে তখন বোঝা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি ইতিমধ্যে কিছু কিছু সংগঠন, হয়তো সরকারি কিছু সংগঠন, গ্রাম পুলিশ, শিক্ষকদের অনেকে হঠাৎ করে তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ছে। এত দিন তারা কোথায় ছিলেন? এই একটা সরকার আসছে, তারা কাজ করার চেষ্টা করছে। তাদের সেই সুযোগ না দিয়েই তারা রাস্তায় নেমে গেছেন দাবিদাওয়া নিয়ে। এটাকে আমার কাছে কিছুটা স্বার্থপরতা মনে হচ্ছে।

‘অবশ্যই দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলবেন। সেই দাবিদাওয়া পূরণও করবে সরকার। একটা নির্বাচন হোক। এই নির্বাচন পরে একটা নির্বাচিত সরকার আসুক। আসলে তারা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলবেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকারকে জঞ্জাল পরিষ্কার করার সুযোগ দেন। আমি এই কথা বারবার আপনাদের মাধ্যমেও বলতে চাই। এই ধরনের দাবিদাওয়াগুলো এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তুলে ধরা কোনোভাবেই যুক্তিসংগত না।’

তিনি বলেন, ‘প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার যখন দেশকে একটি স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, দেশ যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তখন ভারতে বসে শেখ হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করছেন। এটি সফল হবে না।

‘অতীতের সব জঞ্জালে পরিষ্কার করে সত্যিকারার্থে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে হবে। এ জন্য রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই, তবে এটি অনির্দিষ্টকালের জন্য নয়। বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার মাত্র তিন মাসে জঞ্জাল দূর করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়েছিলেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭২ থেকে ’৭৫ পর্যন্ত তারা জনসমর্থন হীনভাবে ক্ষমতায় ছিল, যার ফলে তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল কায়েম করে দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা শুরু করেছিল। এবারও তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা করার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছিল। কিন্তু দেশের সাধারণ ছাত্র–জনতার প্রতিরোধেরমুখে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

‘মানুষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভয়ে মুখ খুলে কথা বলতে পারত না। সাংবাদিকেরা ও গণমাধ্যমে এই আইনে দমন করা হতো। এখন মানুষ বাক্‌স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। আমরা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে বাতিল করে দেব।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্র–জনতার এই বিপ্লবে সিলেট সাংবাদিক আবু তুরাবসহ অসংখ্য মানুষ পুলিশের গুলিতে শাহাদাত বরণ করেছেন। আমরা তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

‘২০১২ সাল থেকে আমরা এই সংগ্রাম করছি। সেই থেকে আমাদের প্রায় প্রায় ৭০০ জন গুম করা হয়েছে, প্রায় ২ হাজার নেতা–কর্মী শহীদ হয়েছেন। প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছে, এসব মামলায় বিএনপির ৬০ লাখ নেতা–কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হয়েছেন, তিনি কখনো মাথানত করেননি। আমাদের নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা আইনিভাবে মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি। আমরা এম ইলিয়াস আলীসহ গুম হওয়া সকলকে নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন, জাতিসংঘের একটি তদন্ত দলও এসেছে। আমরা এখন আশাবাদী সঠিক তথ্য পাব। সরকারও সুনির্দিষ্টভাবে এখনো কিছু বলেনি। আমরা তাদের অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে জানতে চাই।’

এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদির লুনা, ড. এনামুল হক চৌধুরী ও আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ্ সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত