কুড়িগ্রামে চালের জন্য হাহাকার

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২২, ২১: ০৯

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারি উদ্যোগে খোলা বাজারে বিক্রি কার্যক্রমে (ওএমএস) চালের জন্য হাহাকার করছে মানুষ। ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেও চাল না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন অনেকে। ডিলাররা বলছেন, বরাদ্দের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় অনেককে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। আজ বুধবার সকালে কুড়িগ্রাম শহরের পৌর এলাকার ভোকেশনাল মোড়ে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

খাদ্য অধিদপ্তরে খোলা বাজারে চাল বিক্রি কর্মসূচি ডিলারদের বিপণন কেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন কয়েকশ নারী-পুরুষ ও শিশু। চাল প্রত্যাশিদের ভিড় সামলাতে ডিলারের প্রতিনিধিরা হিমশিম খাচ্ছেন। চালের জন্য স্থানীয় নিম্ন আয়ের মানুষ ছাড়াও অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে ব্যাগ নিয়ে এসেছেন।

লাইন দাঁড়ানো অনেকের অভিযোগ, ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও চাল পাচ্ছেন না তাঁরা। অনেকে দুই-তিন দিন ধরে চাল না পেয়ে আবারও এসেছেন। চাল না পেয়ে ফিরে যেতেও দেখা গেছে অনেককে। এ অবস্থায় দৈনিক চালের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি ডিলারদের।

পৌর এলাকার টেক্সটাইল মোড়ের বাসিন্দা রুবিনা খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার চাল নিয়া গেছি। তিন দিন পর আজ আবার চাল নিতে আসলেও চাল পাইনি। একই অভিযোগ করেন কেতার মোড় এলাকার আকলিমা।

দুই দিন লাইনে দাঁড়িয়ে চাল না পেয়ে ফিরে গিয়েছিলেন বালাটারি গ্রামের বাসিন্দা মনির মিয়া (৬৫)। তৃতীয় দিন এসে পাঁচ কেজি চালের নাগাল পেয়েছেন তিনি। আপাতত মনে স্বস্তি থাকলেও আগামী দিনে চাল প্রাপ্তি নিয়ে সংশয় তাঁর। মনির মিয়া বলেন, ‘বাবা, হামার গুলার জন্যে কিছু করো। বাজারের চাউল কিনি খাওয়ার সাধ্য নাই। এটেই কম দামে চাউল কিনবার আসি। কিন্তু সেই চাউল যদি না পাই তাইলে কী খায়া বাঁচমো।’ 

এদিকে চাল কিনতে আসা নিম্ন আয়ের মানুষদের অভিযোগ, ডিলারের লোকজন চাল নাই বললেও অনেক দোকানদার এসে চাল কিনে নিয়ে যায়। পরে তাঁরা সেগুলো বেশি দামে বিক্রি করেন। কে চাল পাবে আর কে পাবে না তা নিয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের কোনো তদারকি নেই।

বিক্রয় পয়েন্টে ডিলারের প্রতিনিধি রাসেল জানান, ওই পয়েন্টে পর্যায়ক্রমে দুজন ডিলার চাল বিক্রি করেন। তাদের প্রত্যেকের জন্য প্রতিদিনের বরাদ্দ ৯০০ কেজি। সে হিসেবে প্রতিদিন ১৮০ জন ব্যক্তি ৩০ টাকা কেজিতে পাঁচ কেজি করে চাল কিনতে পারেন। এর অতিরিক্ত লোক আসলে তাঁদেরকে ফিরে যেতে হয়। বাজারে চালের দাম বেশি থাকায় ওএমএস ডিলার পয়েন্টে প্রতিদিনই বরাদ্দের চেয়ে চাহিদা বেশি থাকে। এ জন্য অনেকে চাল না পেয়ে ফিরে যান।

ডিলার পয়েন্টে তদারকির দায়িত্বে থাকা খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মচারী আল মুনতাসিন বিল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাজারে চালের দাম বেশি থাকায় ওএমএস কার্যক্রমে মানুষের চাপ বেড়েছে। বরাদ্দের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় অনেকে চাল না পেয়ে ফিরে যান। আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

চাল বাড়ানোর বিষয়ে সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক বলেন, ‘কুড়িগ্রাম শহরের পৌর এলাকায় ওএমএস কার্যক্রমে প্রতিদিন ৯ টন চাল বিক্রি হয়। আগে এটা ৫ টন ছিল। কর্তৃপক্ষ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলে তখন আবারও বাড়ানো হবে।’ এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

পরে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আবু বকরের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী চালু হতে যাচ্ছে। পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায়েও ওএমএস কর্মসূচী চালু হতে পারে। তখন পৌর এলাকার ডিলার পয়েন্ট গুলোতে এমন চাপ থাকবে না। সকলে তখন সরকারের এসব সকর্মসূচীর সুবিধা নিতে পারবেন। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত