দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার অংশ হিসেবে আগামীকাল মঙ্গলবার রংপুরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারাগঞ্জ এবং পীরগঞ্জে পৃথক নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নগরী সেজেছে ব্যানার-ফেস্টুনে। এছাড়া উজ্জীবিত এই অঞ্চলের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরাও।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ফ্লাইটে আন্তর্জাতিক শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সৈয়দপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। সেখান থেকে তিনি সড়ক যোগে রংপুরের তারাগঞ্জ ওয়াকফস্টেট সরকারি কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।
সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী যাবেন পীরগঞ্জে তাঁর শ্বশুরবাড়ি জয় সদনে। সেখানে প্রয়াত স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত শেষে দুপুরের খাবার খাবেন। এরপর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে মতিবিনিময় করবেন। পরে দুপুর সাড়ে ৩টায় পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত রংপুর-৬ আসনের প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।
রংপুরের ৬টি আসনের মধ্যে রংপুর-১ এবং ৩ আসনে নৌকার প্রার্থী উঠিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও ওই দুটি আসনে প্রার্থিতা দেয়নি নৌকা। তখনো প্রচার চালাতে সশরীরে এসেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
সরেজমিন দেখা গেছে. তারাগঞ্জ এবং পীরগঞ্জের জনসভাস্থল এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে জনসভাস্থল। প্রস্তুত মাঠ-মঞ্চ, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষের জন্য গাড়ি পার্কিং এবং যাতায়াতের রুট ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন উপলক্ষে এবার আরও বেশি সরগরম এলাকা। এবার প্রার্থীরা আরও বেশি সমর্থক নিয়ে জনসভাস্থলগুলোতে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাঁটানো হয়েছে ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড, ফেস্টুন। পুরো বিভাগ জুড়ে সাজানো হয়েছে। জনসভাস্থলে প্রস্তুত নৌকার আদলের মঞ্চ।
এসএসএফসহ রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্কতায় মাঠ ও মঞ্চ প্রস্তুত করেছেন। মঞ্চের পাশেই করা হয়েছে মিডিয়াবক্স, মুক্তিযোদ্ধা ও অতিথি কর্নার। নারীদের জন্য বাঁশের ডিভাইডার দিয়ে আলাদা করা হয়েছে স্থান।
প্রস্তুতি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দি জানান, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু সশরীরে রংপুরে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে আসছেন, এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় তিনি রংপুরের উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করতে চান। জনসভায় লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতির আশা করছেন তিনি।
রংপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে এই এলাকার মানুষ উজ্জীবিত। তারা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতেই বিপুল ভোট দিয়ে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করবে।
রংপুর-৬ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর শ্বশুর বাড়ি পীরগঞ্জ। তিনি রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে কাজ করছেন। এরই মধ্যে সমস্ত উন্নয়ন দৃশ্যমান। আমাকে তিনি তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে শুধু উন্নয়ন দেখভাল করার দায়িত্ব দিয়েছেন। এবারও তিনি আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি তাঁর নিজের লোকজনের কাছে সশরীরে ভোট চাইতে আসছেন। তার এই আগমন পীরগঞ্জের সব মত পথের ভোটারদের একত্রিত করেছে।’
জনসভাকে ঘিরে মাঠসহ আশপাশের এলাকায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। পোশাকি ও সাদা পোশাকের বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে দুটি এলাকায়। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে সৈয়দপুর থেকে পীরগঞ্জ পর্যন্ত সড়ক মহাসড়কগুলোতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী।
রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেন জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে সাত স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে জনসভাস্থল এবং সড়ক মহাসড়কগুলোতে। পোশাকি ছাড়াও সাদা পোশাকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।