রাজশাহী জেলায় গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে ১৫ জন নারী ও শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। এঁদের মধ্যে ১০ জন নারী এবং পাঁচজন শিশু। জেলাজুড়ে নিহত ১০ নারীর মধ্যে চারজন ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া যৌতুকের জন্য তিনজন এবং অন্য পারিবারিক কারণে তিনজন স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), রাজশাহী আজ বুধবার এক মতবিনিময় সভায় এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত নগরীর একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহযোগিতায় আসকের অগ্নি প্রকল্পের আওতায় এই সভার আয়োজন করা হয়। প্রকল্পে সহযোগী সংস্থা হিসেবে আছে ব্র্যাক।

সভায় বেসরকারি সংস্থা পরিবর্তনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদ রিপন, আসকের অগ্নি প্রকল্পের জেলা ব্যবস্থাপক হাসিবুল হাসান পল্লব ও ডেটা ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট সাব্বির ইসলাম তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। তাঁরা জানান, ওই ছয় মাসে রাজশাহীতে যৌন হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১৪ জন নারী। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৯ জন। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে তিনজনকে। আর ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন পাঁচজন নারী।

পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ২২ জন। যৌতুকের জন্য নির্যাতিত হয়েছেন আটজন। এ ছয় মাসে সালিস ও ফতোয়ার মাধ্যমে ছয়জন নারীকে নির্যাতন করা হয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যে অ্যাসিড নিক্ষেপের মতো কোনো ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এ ছয় মাসে ১৭ শিশুকে নির্যাতন করা হয়েছে।

এ ছয় মাসে সারা দেশে ৬৮ নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩৭৪টি। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৬৮ জনকে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৩ জনকে। ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ছয়জন। এই সময়ে স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন ১০৫ জন। আর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ২৫৪ শিশু। নির্যাতিত হয়েছে আরও ৪৪৬ জন।

সভায় আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন রাজশাহী জেলা জজ আদালতের আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম বাবু। তিনি বলেন, নানা রকম হয়রানির কারণে মানুষ বিচার পাচ্ছে না। বিচার পেতেও হয়রানির শিকার হচ্ছে। ফলে নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটলেও অনেকেই আইনের আশ্রয় নেয় না। ফলে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে।