‘৪০০ বছরের পুরনো’ নবান্ন মেলার প্রধান আকর্ষণ বিশাল আকৃতির মাছ

খালিদ হাসান, শিবগঞ্জ (বগুড়া) 
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩: ১৮
শিবগঞ্জের নবান্ন মেলার বড় আকর্ষণ বিশাল আকারের সব মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা

হেমন্তে নবান্ন উৎসবে মেতেছেন বগুড়ার শিবগঞ্জের মানুষ। বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য নবান্ন উৎসব উপলক্ষে প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে উপজেলার উথুলী বাজারে বসে মেলা। স্থানীয়দের দাবি প্রায় ৪ শ বছরের পুরোনো এই মেলা। আজ রোববার ভোর থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখর হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গন। এ মেলায় নতুন সবজি, মিষ্টির দোকান, কসমেটিকের দোকান ঠাঁই পেলেও প্রধান আকর্ষণ বিশাল আকৃতির বিভিন্ন জাতের মাছ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অগ্রহায়ণ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবার ঘরে নতুন ধান ওঠে। এ উপলক্ষে বসে নবান্নের মেলা। এ সময় বাড়ি বাড়ি মেয়ে-জামাইসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেওয়া হয়। উথুলী গ্রাম ছাড়াও পার্শ্ববর্তী গরীবপুর, বেড়াবালা, বাঘমারা, গণেশপুর, চানপুর, খালিমপুর, মোকামতলাসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।

লস্করপুর গ্রামের বাসিন্দা শতবর্ষী সোলাইমান আলী বলেন, ‘আমার দাদার দাদার আমল থেকে শুনে আসছি এই মেলার কথা। প্রায় ৪ শ বছর আগে থেকে এখানে নবান্নের মেলা বসে।’

রোববার উথুলী নবান্নের মেলায় গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এলাকা জুড়ে মাছের পসরা সাজিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন বিক্রেতারা। থরে থরে সাজানো হয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আনা বড় বড় রুই, কাতল, মৃগেল, বিগহেড, চিতল, সিলভার কার্প ও বোয়ালসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। নবান্ন উৎসবে মাছ কিনতে সকাল থেকেই ক্রেতাদের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

শুধু বগুড়ার শিবগঞ্জ নয়, জয়পুরহাট, গাইবান্ধাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার ক্রেতারাও এ মেলায় মাছ কিনতে এসেছেন।

নবান্ন মেলায় মাটির নানান তৈজসপত্র নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নবান্ন মেলায় মাটির নানান তৈজসপত্র নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

উথুলী পাইকপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম সাড়ে ১৪ কেজি ওজনের একটি বিগহেড মাছ কিনেছেন ৮ হাজার টাকায়। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর নবান্ন আসলে মাছ কেনার জন্য এই মেলায় আসি। তবে এবার মাছের দাম তুলনামূলক বেশি।’

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থেকে মাছ বিক্রির জন্য মেলায় এসেছেন আব্দুল বারী। ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত তিনি ৪৫ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। তিনি বলছেন, মেলায় ছোট মাছের তুলনায় বড় মাছের চাহিদাই বেশি।

আরেক মাছ বিক্রেতা ঠান্ডা মিয়া বলেন, মেলায় বড় কাতলা ও রুই প্রতি কেজি ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি বিগহেড সাড়ে ৩ শ থেকে ৬০০ টাকা, সিলভার কার্প ৪৫০, মৃগেল ২৫০, পাঙাশ ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে নতুন আলু, শাকসবজি, কেশুর আলু ও পানিফল নবান্ন মেলার অন্যতম অনুষঙ্গ। মাছের মেলার পাশাপাশি এসব সবজির পসরাও সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। এ মেলায় প্রতি কেজি নতুন আলু ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টি আলু ও কেশুর বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। সবজি ছাড়াও মিষ্টি, দই, চিড়া, মুড়ি–মুড়কি, কদমা, বাতাসা, নিমকি, জিলাপি, আচারসহ হরেক রকম দোকান ঠাঁই পেয়েছে। শিশুদের খেলনা ও নারীদের জন্য কসমেটিকসের দোকানও আছে। সবার বিনোদনের জন্য আছে নাগরদোলা ও নৌকা দোলনা।

ধোন্দাকোলা গ্রামের মানিক চন্দ্র বলেন, ‘মেলা থেকে কিনে আনা মাছ, নতুন আলুর তরকারি, নতুন চালের ক্ষীর ও পায়েস দিয়ে খাবার খেয়ে আমরা নবান্ন উৎসব উদ্‌যাপন করি।’

উথুলী ছাড়াও নবান্ন উৎসব উপলক্ষে শুক্রবার ভোর থেকে বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলা, মহাস্থানহাট, বুড়িগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে বসেছে মাছের মেলা।

শিবগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, নবান্নের মেলা এই এলাকার একটি বিশেষ ঐতিহ্য। গ্রামে গ্রামে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মেলায় কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা যেন না হয় সে জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের রেকর্ড ভাঙল ১৪ বছর পর

ভারত-বাংলাদেশ আলোচনায় হাসিনা প্রসঙ্গে উত্তপ্ত মুহূর্ত

বাংলাদেশ শিগগিরই বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফিরবে, আশা যুক্তরাজ্যের

কেশবপুরে ২ প্রতিষ্ঠানে দুর্বৃত্তদের লুটপাট-অগ্নিসংযোগ, এলাকায় আতঙ্ক

২৫ টাকায় মাটি পরীক্ষা, ভ্রাম্যমাণ গবেষণাগার যাচ্ছে ৫৬ উপজেলায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত