যশোরে ট্রেন আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, গায়েবানা জানাজা পড়ল আ. লীগ-ছাত্রলীগও

যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৪, ১৮: ৩০

যশোরে ট্রেন আটকে রেখে বিক্ষোভ করেছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার দুপুর সোয়া ৩টার দিকে যশোর শহরের রেলগেটে অবস্থান নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী মহানন্দা লোকাল ট্রেন আটকে তাঁরা এ বিক্ষোভ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা কোটা বিরোধী নানা স্লোগান দেয়। প্রায় ২০ মিনিট পর তাঁরা অবরোধ তুলে নিয়ে শহরের দড়াটানা মোড়ে গিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন।

এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় পৃথক গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে জেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ছাত্রলীগ।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে যশোরের শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরতলীর চাঁচড়া চেকপোস্ট মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। এরপর তাঁরা ৩ ঘণ্টা যশোর-বেনাপোল, যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-খুলনা বাইপাস সড়ক অবরোধ করে রাখে। দুপুর আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারীরা একই স্থানে আন্দোলনে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে গায়েবানা জানাজা আদায় করেন।

এরপর তাঁরা শহর অভিমুখে মিছিল নিয়ে ফেরার পথে সোয়া ৩টার দিকে আন্দোলনকারী কয়েক হাজার শিক্ষার্থী যশোর শহরের রেলগেট এলাকায় অবস্থান নিয়ে রেলপথ অবরোধ করে। এ সময় তাঁরা খুলনা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জমুখী মহানন্দা লোকাল ট্রেনটি আটকে দেয়। ট্রেনটি এগোনোর চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা লাইনের পাথর ছুড়তে থাকেন। এরপর ট্রেনটি থেমে যায়। তাঁরা কোটা বিরোধী নানা স্লোগান দেন। প্রায় ২০ মিনিট পর তারা অবরোধ তুলে নিয়ে শহরের দড়াটানা মোড়ে গিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন।

এদিকে দুপুর ২টার দিকে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় শহরের লাল দীঘির পাড়ে গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে যশোর জেলা বিএনপি। জানাজায় আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু।

তিনি বলেন, ‘নিজেদের দাবি আদায়ে আমাদের ছয়জন সন্তান রাজপথে নিহত হয়েছে। এই আওয়ামী লীগ সরকার তাদের গুন্ডা বাহিনী, ছাত্রলীগ এবং অতি উৎসাহী পুলিশের দ্বারা দেশের মানুষকে জিম্মি করে রাখতে চাইছে। যে আশায় মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছিল, এই সরকারের সময়ে দেশের মানুষের সেই আশা, স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে।’

এ সময় তিনি অবিলম্বে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত দাবির প্রতি জেলাবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।

জানাজায় উপস্থিত ছিলেন—জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, সদস্য অ্যাডভোকেট ইসহাক, মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা প্রমুখ। এ ছাড়া বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

অন্যদিকে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কোটা আন্দোলনে নিহত তিন ছাত্রলীগ কর্মীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে গায়েবানা জানাজা পড়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। শহরের গাড়িখানার দলীয় কার্যালয়ের সামনে এই গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারসহ বিভিন্ন স্তরের নেতারা অংশ নেন। এর আগে গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে জেলা ছাত্রলীগ।

এর আগে বিকেলে শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারা দেশে হামলা ও গুলির প্রতিবাদে প্রেস ক্লাব যশোরের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা। মানববন্ধনে বক্তারা দ্রুতই সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়া আহ্বান জানান। একই সঙ্গে সারা দেশে নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারকে রাষ্ট্র কর্তৃক আর্থিক ক্ষতি পূরণ দেওয়া, হামলার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে প্রকৃত আসামিদের আটক ও শাস্তির দাবি জানান। ২০১৮ ও ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করারও দাবি জানান তাঁরা।

উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ-যুবলীগ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ত্রিমুখী সংঘর্ষে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছয়জন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে চট্টগ্রামের সংঘর্ষে নিহত হন তিনজন। নিহতদের মধ্যে ফারুকের বাড়ি কুমিল্লায়। তিনি ফার্নিচারের দোকানে চাকরি করতেন। আর ওয়াসিম আকরাম ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন বলেও নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী। নিহত ফারুক পথচারী ছিলেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন। অপরজনের পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।

এদিকে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ (২৫) নিহত হন। রাজধানীর ঢাকায় সাইন্সল্যাব এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় সেখানে মারধরের শিকার হয়ে দুই যুবক নিহত হন। তাঁদের একজনের নাম মো. শাহজাহান। তিনি তিনি নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতে ব্যবসা করতেন। অপর আরেক যুবক নীলফামারীর সবুজ আলী (২৫)।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুলিশের ভিন্ন বক্তব্যের পরও সালমা হত্যায় নিজ ভাষ্য়ে অনড় র‍্যাব

ফারুকীরা কীভাবে এই উপদেষ্টা পরিষদে আসে: সারজিস আলম

বাংলাদেশের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জন্য ডাক্তারের তদবিরের ঘোষণা

এই সরকারের সংবিধান সংশোধনের সুযোগ কি আছে, অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রশ্ন

বাংলাদেশ সিরিজের আগে ধাক্কা খেয়েই চলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত