যশোরের আ. লীগ নেতার বাড়িতে দেড় ঘণ্টা আটকে রেখে প্রধান শিক্ষককে নির্যাতনের অভিযোগ

যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ২১: ৩২
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ২২: ০৪

যশোরে এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে দেড় ঘণ্টা ধরে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। গত বুধবার সকালে চেয়ারম্যানের বাড়িতে ডেকে নিয়ে এই নির্যাতন করা হয়। নিয়োগ–বাণিজ্যের সুযোগ করে না দেওয়া এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ওই শিক্ষকের।

অভিযুক্ত মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আর অভিযোগকারী মোহাম্মদ নুরুল আমিন যশোর আদর্শ বহুমুখী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। 

এর আগে, গত সপ্তাহে উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি জিডি করেছিলেন নুরুল আমিন। 

আগামী ডিসেম্বরে যশোর আদর্শ বহুমুখী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। নিয়ম অনুযায়ী কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়টির কয়েকশ গজ দূরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর বাড়ি। এ কারণে বিদ্যালয়টিতে সভাপতি হতে চান তিনি। কিন্তু তাঁকে সভাপতির পদ নিশ্চিত না করে নির্বাচন করার উদ্যোগ নেওয়ায় ক্ষিপ্ত হন তিনি। 

এ জন্য প্রধান শিক্ষককে একাধিকবার ফোন করে ও ক্যাডার পাঠিয়ে গালাগালি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। এমনকি তাঁর ক্যাডারদের ভয়ে বিদ্যালয়টির সভাপতি মোকাররম হোসেন টিপু স্কুলে যেতে পারছেন না। 

প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, বিদ্যালয়টিতে সম্প্রতি তিনজন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি তাদের নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু নিয়োগের আগেই উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী তাঁকে একাধিকবার ফোন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য বলেন। পরবর্তীতে নিয়োগ হয়ে গেলে উপজেলা চেয়ারম্যান ফোন করে প্রধান শিক্ষককে নিয়োগপ্রাপ্তদের তাঁর বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। 

কিন্তু কর্মচারীরা না যাওয়াই চেয়ারম্যান ফরিদ প্রধান শিক্ষকের ওপর ক্ষিপ্ত হন। এরপর থেকে তিনি একাধিকবার ফোন করে হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি তাঁর ক্যাডারদের স্কুলে পাঠিয়ে শিক্ষককে হুমকি দেন। 

বাধ্য হয়ে গত বুধবার সকাল ১০টার দিকে প্রধান শিক্ষক উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে যান। প্রধান শিক্ষক সেখানে গেলে তাঁর দোতলার বাসভবনে নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান তাঁকে গালাগালি করেন। পরে তাঁর ক্যাডারদের ফোন করে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করতে নির্দেশ দেন। 

ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর উপস্থিতিতে ওই ক্যাডাররা দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে প্রধান শিক্ষককে নির্যাতন করেন। একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষক শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

পরে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যশোর কুইন্স হাসপাতালের ডা. সুমন কবীরের কাছে চিকিৎসা দেন। তাঁর চিকিৎসাপত্রে শারীরিক নির্যাতনের উপসর্গ উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া তাঁকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন তিনি।

এ বিষয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার পার্থ প্রতীম চক্রবর্তী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই শিক্ষক মারধরে আহত হয়ে যশোরের একটি বেসরকারি ক্লিনিক থেকে আগে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। তারপর যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন।

আদর্শ বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, ‘আমি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে এর আগে জিডি করেছিলাম। এই ঘটনাও থানায় অভিযোগ দেব। তবে অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়াতে বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। দ্রুত অভিযোগ দেব।’ 

এই বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর মোবাইলে কয়েকবার ফোন করেও তিনি রিসিভ করেননি। 

তবে তাঁর স্ত্রী শিরিন সুলতানা মোবাইল ফোনে বলেন, ‘এই ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। যা অভিযোগ করা হচ্ছে সব মিথ্যা।’ 

বিষয়টি নিয়ে জানতে বিদ্যালয়টির সভাপতি মোকাররম হোসেন টিপুকে কল দেওয়া হলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাফুজুল ইসলাম বলেন, ‘সাংবাদিকদের কাছে শুনেছি বিষয়টি। ভুক্তভোগী শিক্ষক এখনো কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ 

যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহসান হাবিব বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিনকে দেড় ঘণ্টা ধরে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্যাতন চালিয়েছেন। ঘটনাটি আমি প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে শুনেছি। বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয়।’ 

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত