নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা (ঢাকা)
রাজধানীর তুরাগের বাউনিয়া আব্দুল জলিল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সামাদ ও অফিস সহকারী মো. নুরুল ইসলাম এবং বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা মো. খোরশেদ আলম মাদবরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজকের পত্রিকার দীর্ঘ অনুসন্ধানে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিদ্যালয়টির সব শিক্ষকের নামে ভবিষ্যৎ কল্যাণের জন্য জনতা ব্যাংকের উত্তরা করপোরেট শাখায় প্রভিডেন্ট ফান্ডের (পিএফ) জন্য পৃথক সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়। পিএফের টাকা প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ ও অফিস সহকারী নুরুল ইসলামের মাধ্যমে ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা যৌথভাবে ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শিক্ষকদের ৫৪ মাসের প্রায় ১৫ লাখ টাকা ফান্ডে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন, যার মধ্যে সিনিয়র শিক্ষক আলমাছ উদ্দিনের ৪৩ হাজার ২০০ টাকা, শামসুল হকের ৫৯ হাজার ৪০০ টাকা, সিনিয়র শিক্ষিকা তাসলিমা আখতারের ৫৯ হাজার ৪০০ টাকা, জিয়াসমিন ফারজানার ৪৩ হাজার ২০০ টাকা, সহকারী শিক্ষক ফারুক হোসেনের ৩৪ হাজার ৫৬০ টাকা, আতিকুর রহমানের ৪৩ হাজার ২০০ টাকা টাকা আত্মসাৎ করার ব্যাংক স্টেটমেন্ট আজকের পত্রিকার হাতে রয়েছে। অন্যদিকে ২০২০ সালে ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পরিচয়পত্রের নামে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে, কিন্তু কোনো পরিচয়পত্র দেওয়া হয়নি।
এ ছাড়া বাউনিয়া আব্দুল জলিল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামাদ ও অফিস সহকারী নুরুল যোগসাজশ করে করোনার অজুহাত দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সব শিক্ষক ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের এক বছরের বেতনের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা করছেন। কিন্তু করোনাকালে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন ঠিকই আদায় করা হয়েছে।
অন্যদিকে ছয়জন শিক্ষকের বকেয়া বেতনের একটি তালিকা আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে। সেখানে সিনিয়র শিক্ষক আলমাছ উদ্দিনের তিন বছরে ২ লাখ ১২ হাজার, শামসুল হকের দুই বছরে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬০০ টাকা, তাসলিমা আখতারের দুই বছরে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬০০ টাকা, জিয়াসমিন ফারজানার দুই বছরে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ টাকা, সহকারী শিক্ষক ফারুক হোসেনের দুই বছরে ৯৩ হাজার ১২০ টাকা এবং আতিকুর রহমানের দুই বছরে ১ লাখ ৬ হাজার ২০০ টাকা বকেয়ার দাবি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষকেরা চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ব্যাংক স্টেটমেন্ট তুলে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আত্মসাতের তথ্য জানতে পারেন। পরবর্তীতে সময়ে ভুক্তভোগীদের মধ্যে আটজন শিক্ষক-শিক্ষিকা অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে গত ২২ মার্চ স্থানীয় সংসদ সদস্য, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জেলা প্রশাসক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের উপপরিচালক এবং জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদন করেন।
কিন্তু তবু কোনো সুরাহা না পেয়ে ভুক্তভোগীদের মধ্যে শিক্ষক আলমাছ উদ্দিন চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে একটি মামলা (সিআর মামলা নং-১০৬ / ২২) করেন। বাদী ওই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে এবং তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
টাকা আত্মসাতের ঘটনায় করা মামলার বাদী আলমাছ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সামাদ বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকে এ পর্যন্ত আমাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমরা আগে জানি নাই বুঝি নাই, শুধু জমার শিটে স্বাক্ষর করেছিলাম। পরে একেক করে সবাই ব্যাংক স্টেটমেন্ট তোলার পর জানছি। এ ঘটনায় সব জায়গায় অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা না পেয়ে আদালতে গিয়ে মামলা করছি।’
আলমাছ উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিবাদ করায় গত ২৬ মার্চ স্কুলের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে অফিসে ডেকে নিয়ে সবার সামনেই আমাকে বলেছে, ‘‘আগামীকাল থেকে আপনি আর স্কুলে আসবেন না। আসলে ফুটবলের মতো লাথি দিয়ে বের করমু।’’ তাই তাঁদের ভয়ে কেউ সহজে মুখ খুলে প্রতিবাদ করতে চায় না। প্রতিবাদ করায় আমাকে মৌখিক কয়েকবার সাসপেন্ড করছে, আবার জয়েন্ট করছে।’
মামলার বাদী অভিযোগ করে বলেন, ‘টাকা আত্মসাৎ করার ব্যাংক স্টেটমেন্ট থাকার পরও পিবিআই অফিসার চার্জশিট নিয়ে পাঁয়তারা করছেন। দেয়-দিচ্ছে এমন করছে। আবার চার্জশিটে টাকা আত্মসাতের বিষয় দিতে পারবে না তা বলছে।’
অন্যান্য শিক্ষক জানান, কেউ মুখ খুললেই চাকরি থাকে না। খণ্ডকালীন শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করে দেওয়া হয়। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। সবকিছুই চলে মৌখিক আর প্রভাবের বলে। এভাবেই তারা আমাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।’
টাকা আত্মসাৎ প্রসঙ্গে বাউনিয়া আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সামাদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি গাড়িতে আছি। পরে কথা বলি।’ পরে আবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি। তারপর তাকে খুদেবার্তা পাঠালে তিনি বলেন, ‘আমি গাজীপুরে। মা অসুস্থ। পরে বলি।’ পরে আবার খুদে বার্তায় তিনি বলেন, ‘মামলা তদন্তাধীন। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক নয়।’
অন্যদিকে অফিস সহকারী মো. নুরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিহিংসার কারণে মামলা করা হয়েছে। প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা কেউ আত্মসাৎ করেনি, বকেয়া রয়েছে। আসতে আসতে দিয়ে দেওয়া হবে।’
প্রতিষ্ঠানটিন অ্যাডহক কমিটির সভাপতি আলহাজ্ মাহবুবুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। পরে তাঁকে খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা খোরশেদ আলম মাদবরের বিরুদ্ধে অন্যের জমি জালিয়াতি করে বিক্রি, মিথ্যা মামলায় হয়রানি, মার্কেটের দোকান দখল, মসজিদের জমি দখল, বাউন্ডারি ভাঙচুর, হামলা, আপন বোনকে এলাকাছাড়া, পৈতৃক সম্পত্তি থেকে ভাই-বোনদের বঞ্চিত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দানসহ বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, খোরশেদ আলম তারই আপন ভাই আব্দুল আজিজ জজের স্বাক্ষর জাল করে বসতবাড়ির চার কাঠা জমি ফকির মো. আবুল হাশেম ও মো. জালাল উদ্দিনের কাছে ১৯৮০ সালে বিক্রি করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি ২০২১ সালে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুটি মামলা (সিআর মামলা নং-৮৫৯ / ২০২১ এবং ৮৬২ / ২০২১) করেন। মামলার তদন্তে সিআইডি জানায়, কথিত জাল দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রির সময় আব্দুল আজিজ নাবালক ছিলেন। তার দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রির কোনো আইনগত ক্ষমতা ছিল না। আব্দুল আজিজের সম্পত্তি আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে দলিল লেখক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণের সহযোগিতায় বাদীর দস্তখত ও টিপ জাল করে দলিলটি করা হয়েছে।
ওই দুই মামলায় সিআইডির পরিদর্শক মো. আব্দুল বাতেন ২০২২ সালের ১৬ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করেন। পরে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় চলতি বছরের ৮ জুন বাউনিয়া থেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন খোরশেদ আলম মাদবর।
রাতের আঁধারে বাউনিয়া মাদবরবাড়ির বাইতুর রশিদ জামে মসজিদের বাউন্ডারি এবং অজুখানা ও বাথরুমের ভেঙে ফেলার অভিযোগে খোরশেদের বিরুদ্ধে ঢাকার প্রথম সহকারী জজ আদালতে মামলা (সিআর মামলা নং-১০১ / ২০২০) এবং একই অভিযোগে তুরাগ থানায় তিনটি জিডি রয়েছে। বাউনিয়ার ডায়না সুপার মার্কেটে অন্যের দোকান দখল করার অভিযোগে একটি জিডি রয়েছে।
এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, ১৯৭৯ সালে আব্দুল জলিল মাদবর একটি জমি ক্রয় করেন। এর কয়েক মাস পরেই তিনি আট ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী রেখে মৃত্যুবরণ করেন। তখন একমাত্র সাবালক খোরশেদ আলম ভাই-বোনদের বঞ্চিত করে একাই ‘আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়’-এর কাছে ওই জমি দান করে প্রতিষ্ঠা হন। এ নিয়ে আব্দুল আজিজ জজ ও সাইদুল আলম ২০২০ সালে ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেন (সিআর মামলা নং-৭৬৫ / ২০২০)।
শুধু তাই নয়, খোরশেদ মাদবরের এক ভাই ক্যানসারের রোগী, অন্য দুই ভাই পঙ্গু এবং পঙ্গুর মধ্যে একজন পাগলপ্রায়। তবু সম্পত্তির লোভে পঙ্গু ও অসুস্থ ভাইদের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলা (নং-৯১ / ২০) করেন খোরশেদ। পরে মামলাটির তদন্ত শেষে সিআইডি ফাইনাল রিপোর্ট দিলে আদালত তা খারিজ করে দেন। এ ছাড়া সিটি জরিপ চলাকালে খোরশেদ আলম তার পঙ্গু ও অসুস্থ তিন ভাইকে ঠকিয়ে পৈতৃক সম্পত্তির আড়াই শ অযুতাংশের বেশি তার নামে রেকর্ড করিয়ে নেন। এ ঘটনায় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা (সিআর মামলা নং-৮৬ / ২০১৯) বিচারাধীন রয়েছে।
বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী আব্দুল আজিজ জজ বলেন, ‘আমাদের খোরশেদ আলম মাদবর মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। আমার স্বাক্ষর জাল করে সম্পত্তি দখল করেছে। ছোট বোন রোকেয়া বেগম ময়নাকে অত্যাচার করে নামমাত্র দাম দিয়ে ক্রয় করে তাঁকে এলাকাছাড়া করেছে। সেই শোকে মারা গেছেন ময়না। আবার পারিবারিক উপার্জনের টাকা দিয়ে একার নামে কোটি কোটি টাকার জমি কিনেছেন।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে হাজি মো. খোরশেদ আলম মাদবর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আপনি এসব তথ্য কোথায় পাইছেন, কে দিয়েছে? আপনি রিপোর্ট করলে কী হবে? আপনি আমার সামনে আসেন, আইস্যা তারপর কথা বলেন।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের (অর্গানাইজড ক্রাইম) এসআই নুরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামলার তদন্তে আমরা মৌখিকভাবে চাকরিচ্যুত এবং ভয়ভীতির হুমকি-ধমকির বিষয়টি পেয়েছি। কিন্তু প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অডিট রিপোর্ট ছাড়া বলতে পারছি না। অডিট রিপোর্টে তারা দেখায়নি। অডিট রিপোর্ট হয়তো টাকা-পয়সা খাওয়াইয়া করে দিছে।’ এক বছরের পাওনা বেতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্কুলের ফান্ডে যদি টাকা আসে, আর যদি শিক্ষকদের বেতন না দেওয়া হয়, তাহলে দুর্নীতির বিষয়টি বলা যাবে।’
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মজিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার নলেজে আসেনি। মামলা হলে তো প্রতিকার হবেই। আর টাকা যদি প্রতিষ্ঠানে থাকে, তাহলে আগে যে হারে বেতন পাইতেন, সেই হারেই দিয়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করি।’
রাজধানীর তুরাগের বাউনিয়া আব্দুল জলিল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সামাদ ও অফিস সহকারী মো. নুরুল ইসলাম এবং বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা মো. খোরশেদ আলম মাদবরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজকের পত্রিকার দীর্ঘ অনুসন্ধানে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিদ্যালয়টির সব শিক্ষকের নামে ভবিষ্যৎ কল্যাণের জন্য জনতা ব্যাংকের উত্তরা করপোরেট শাখায় প্রভিডেন্ট ফান্ডের (পিএফ) জন্য পৃথক সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়। পিএফের টাকা প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ ও অফিস সহকারী নুরুল ইসলামের মাধ্যমে ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা যৌথভাবে ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শিক্ষকদের ৫৪ মাসের প্রায় ১৫ লাখ টাকা ফান্ডে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন, যার মধ্যে সিনিয়র শিক্ষক আলমাছ উদ্দিনের ৪৩ হাজার ২০০ টাকা, শামসুল হকের ৫৯ হাজার ৪০০ টাকা, সিনিয়র শিক্ষিকা তাসলিমা আখতারের ৫৯ হাজার ৪০০ টাকা, জিয়াসমিন ফারজানার ৪৩ হাজার ২০০ টাকা, সহকারী শিক্ষক ফারুক হোসেনের ৩৪ হাজার ৫৬০ টাকা, আতিকুর রহমানের ৪৩ হাজার ২০০ টাকা টাকা আত্মসাৎ করার ব্যাংক স্টেটমেন্ট আজকের পত্রিকার হাতে রয়েছে। অন্যদিকে ২০২০ সালে ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পরিচয়পত্রের নামে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে, কিন্তু কোনো পরিচয়পত্র দেওয়া হয়নি।
এ ছাড়া বাউনিয়া আব্দুল জলিল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামাদ ও অফিস সহকারী নুরুল যোগসাজশ করে করোনার অজুহাত দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সব শিক্ষক ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের এক বছরের বেতনের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা করছেন। কিন্তু করোনাকালে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন ঠিকই আদায় করা হয়েছে।
অন্যদিকে ছয়জন শিক্ষকের বকেয়া বেতনের একটি তালিকা আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে। সেখানে সিনিয়র শিক্ষক আলমাছ উদ্দিনের তিন বছরে ২ লাখ ১২ হাজার, শামসুল হকের দুই বছরে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬০০ টাকা, তাসলিমা আখতারের দুই বছরে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬০০ টাকা, জিয়াসমিন ফারজানার দুই বছরে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ টাকা, সহকারী শিক্ষক ফারুক হোসেনের দুই বছরে ৯৩ হাজার ১২০ টাকা এবং আতিকুর রহমানের দুই বছরে ১ লাখ ৬ হাজার ২০০ টাকা বকেয়ার দাবি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষকেরা চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ব্যাংক স্টেটমেন্ট তুলে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আত্মসাতের তথ্য জানতে পারেন। পরবর্তীতে সময়ে ভুক্তভোগীদের মধ্যে আটজন শিক্ষক-শিক্ষিকা অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে গত ২২ মার্চ স্থানীয় সংসদ সদস্য, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জেলা প্রশাসক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের উপপরিচালক এবং জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদন করেন।
কিন্তু তবু কোনো সুরাহা না পেয়ে ভুক্তভোগীদের মধ্যে শিক্ষক আলমাছ উদ্দিন চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে একটি মামলা (সিআর মামলা নং-১০৬ / ২২) করেন। বাদী ওই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে এবং তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
টাকা আত্মসাতের ঘটনায় করা মামলার বাদী আলমাছ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সামাদ বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকে এ পর্যন্ত আমাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমরা আগে জানি নাই বুঝি নাই, শুধু জমার শিটে স্বাক্ষর করেছিলাম। পরে একেক করে সবাই ব্যাংক স্টেটমেন্ট তোলার পর জানছি। এ ঘটনায় সব জায়গায় অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা না পেয়ে আদালতে গিয়ে মামলা করছি।’
আলমাছ উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিবাদ করায় গত ২৬ মার্চ স্কুলের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে অফিসে ডেকে নিয়ে সবার সামনেই আমাকে বলেছে, ‘‘আগামীকাল থেকে আপনি আর স্কুলে আসবেন না। আসলে ফুটবলের মতো লাথি দিয়ে বের করমু।’’ তাই তাঁদের ভয়ে কেউ সহজে মুখ খুলে প্রতিবাদ করতে চায় না। প্রতিবাদ করায় আমাকে মৌখিক কয়েকবার সাসপেন্ড করছে, আবার জয়েন্ট করছে।’
মামলার বাদী অভিযোগ করে বলেন, ‘টাকা আত্মসাৎ করার ব্যাংক স্টেটমেন্ট থাকার পরও পিবিআই অফিসার চার্জশিট নিয়ে পাঁয়তারা করছেন। দেয়-দিচ্ছে এমন করছে। আবার চার্জশিটে টাকা আত্মসাতের বিষয় দিতে পারবে না তা বলছে।’
অন্যান্য শিক্ষক জানান, কেউ মুখ খুললেই চাকরি থাকে না। খণ্ডকালীন শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করে দেওয়া হয়। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। সবকিছুই চলে মৌখিক আর প্রভাবের বলে। এভাবেই তারা আমাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।’
টাকা আত্মসাৎ প্রসঙ্গে বাউনিয়া আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সামাদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি গাড়িতে আছি। পরে কথা বলি।’ পরে আবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি। তারপর তাকে খুদেবার্তা পাঠালে তিনি বলেন, ‘আমি গাজীপুরে। মা অসুস্থ। পরে বলি।’ পরে আবার খুদে বার্তায় তিনি বলেন, ‘মামলা তদন্তাধীন। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক নয়।’
অন্যদিকে অফিস সহকারী মো. নুরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিহিংসার কারণে মামলা করা হয়েছে। প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা কেউ আত্মসাৎ করেনি, বকেয়া রয়েছে। আসতে আসতে দিয়ে দেওয়া হবে।’
প্রতিষ্ঠানটিন অ্যাডহক কমিটির সভাপতি আলহাজ্ মাহবুবুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। পরে তাঁকে খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা খোরশেদ আলম মাদবরের বিরুদ্ধে অন্যের জমি জালিয়াতি করে বিক্রি, মিথ্যা মামলায় হয়রানি, মার্কেটের দোকান দখল, মসজিদের জমি দখল, বাউন্ডারি ভাঙচুর, হামলা, আপন বোনকে এলাকাছাড়া, পৈতৃক সম্পত্তি থেকে ভাই-বোনদের বঞ্চিত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দানসহ বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, খোরশেদ আলম তারই আপন ভাই আব্দুল আজিজ জজের স্বাক্ষর জাল করে বসতবাড়ির চার কাঠা জমি ফকির মো. আবুল হাশেম ও মো. জালাল উদ্দিনের কাছে ১৯৮০ সালে বিক্রি করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি ২০২১ সালে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুটি মামলা (সিআর মামলা নং-৮৫৯ / ২০২১ এবং ৮৬২ / ২০২১) করেন। মামলার তদন্তে সিআইডি জানায়, কথিত জাল দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রির সময় আব্দুল আজিজ নাবালক ছিলেন। তার দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রির কোনো আইনগত ক্ষমতা ছিল না। আব্দুল আজিজের সম্পত্তি আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে দলিল লেখক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণের সহযোগিতায় বাদীর দস্তখত ও টিপ জাল করে দলিলটি করা হয়েছে।
ওই দুই মামলায় সিআইডির পরিদর্শক মো. আব্দুল বাতেন ২০২২ সালের ১৬ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করেন। পরে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় চলতি বছরের ৮ জুন বাউনিয়া থেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন খোরশেদ আলম মাদবর।
রাতের আঁধারে বাউনিয়া মাদবরবাড়ির বাইতুর রশিদ জামে মসজিদের বাউন্ডারি এবং অজুখানা ও বাথরুমের ভেঙে ফেলার অভিযোগে খোরশেদের বিরুদ্ধে ঢাকার প্রথম সহকারী জজ আদালতে মামলা (সিআর মামলা নং-১০১ / ২০২০) এবং একই অভিযোগে তুরাগ থানায় তিনটি জিডি রয়েছে। বাউনিয়ার ডায়না সুপার মার্কেটে অন্যের দোকান দখল করার অভিযোগে একটি জিডি রয়েছে।
এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, ১৯৭৯ সালে আব্দুল জলিল মাদবর একটি জমি ক্রয় করেন। এর কয়েক মাস পরেই তিনি আট ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী রেখে মৃত্যুবরণ করেন। তখন একমাত্র সাবালক খোরশেদ আলম ভাই-বোনদের বঞ্চিত করে একাই ‘আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়’-এর কাছে ওই জমি দান করে প্রতিষ্ঠা হন। এ নিয়ে আব্দুল আজিজ জজ ও সাইদুল আলম ২০২০ সালে ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেন (সিআর মামলা নং-৭৬৫ / ২০২০)।
শুধু তাই নয়, খোরশেদ মাদবরের এক ভাই ক্যানসারের রোগী, অন্য দুই ভাই পঙ্গু এবং পঙ্গুর মধ্যে একজন পাগলপ্রায়। তবু সম্পত্তির লোভে পঙ্গু ও অসুস্থ ভাইদের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলা (নং-৯১ / ২০) করেন খোরশেদ। পরে মামলাটির তদন্ত শেষে সিআইডি ফাইনাল রিপোর্ট দিলে আদালত তা খারিজ করে দেন। এ ছাড়া সিটি জরিপ চলাকালে খোরশেদ আলম তার পঙ্গু ও অসুস্থ তিন ভাইকে ঠকিয়ে পৈতৃক সম্পত্তির আড়াই শ অযুতাংশের বেশি তার নামে রেকর্ড করিয়ে নেন। এ ঘটনায় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা (সিআর মামলা নং-৮৬ / ২০১৯) বিচারাধীন রয়েছে।
বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী আব্দুল আজিজ জজ বলেন, ‘আমাদের খোরশেদ আলম মাদবর মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। আমার স্বাক্ষর জাল করে সম্পত্তি দখল করেছে। ছোট বোন রোকেয়া বেগম ময়নাকে অত্যাচার করে নামমাত্র দাম দিয়ে ক্রয় করে তাঁকে এলাকাছাড়া করেছে। সেই শোকে মারা গেছেন ময়না। আবার পারিবারিক উপার্জনের টাকা দিয়ে একার নামে কোটি কোটি টাকার জমি কিনেছেন।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে হাজি মো. খোরশেদ আলম মাদবর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আপনি এসব তথ্য কোথায় পাইছেন, কে দিয়েছে? আপনি রিপোর্ট করলে কী হবে? আপনি আমার সামনে আসেন, আইস্যা তারপর কথা বলেন।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের (অর্গানাইজড ক্রাইম) এসআই নুরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামলার তদন্তে আমরা মৌখিকভাবে চাকরিচ্যুত এবং ভয়ভীতির হুমকি-ধমকির বিষয়টি পেয়েছি। কিন্তু প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অডিট রিপোর্ট ছাড়া বলতে পারছি না। অডিট রিপোর্টে তারা দেখায়নি। অডিট রিপোর্ট হয়তো টাকা-পয়সা খাওয়াইয়া করে দিছে।’ এক বছরের পাওনা বেতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্কুলের ফান্ডে যদি টাকা আসে, আর যদি শিক্ষকদের বেতন না দেওয়া হয়, তাহলে দুর্নীতির বিষয়টি বলা যাবে।’
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মজিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার নলেজে আসেনি। মামলা হলে তো প্রতিকার হবেই। আর টাকা যদি প্রতিষ্ঠানে থাকে, তাহলে আগে যে হারে বেতন পাইতেন, সেই হারেই দিয়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করি।’
বগুড়ায় চলতি আমন মৌসুমে ৩৩ টাকা কেজি দরে ধান এবং ৪৭ টাকা কেজি দরে চাল কিনবে খাদ্য বিভাগ। ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধান এবং ১৭ নভেম্বর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সিদ্ধ ও আতপ চাল সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে।
৫ মিনিট আগেরাজশাহীতে যুবলীগ কর্মী মিম (২৮) হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে এ কর্মসূচির আয়োজন করে নিহতের পরিবার। মানববন্ধন থেকে মিম হত্যা মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।
৬ মিনিট আগেনাছিমা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামীর একার উপার্জনেই দুই সন্তানসহ আমাদের চারজনের সংসার চলে। সহায়-সম্পত্তি না থাকায় বাধ্য হয়ে তিনি ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঢাকার সাভারে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে কয়েকজন একসঙ্গে থাকেন। আমার জানামতে তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও সম্পৃক্ত নন। কিন্তু ১৬ নভেম্বর.
৮ মিনিট আগেখুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ইংরেজি ডিসিপ্লিনের উদ্যোগে ‘মুগ্ধ ওয়াটার কর্নার’ উদ্বোধন করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। আজ রোববার বিকেলে কবি জীবনানন্দ দাশ একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রধান অতিথি হিসেবে ফিতা কেটে এর উদ্বোধন করেন তিনি।
৯ মিনিট আগে