বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘আমরা যখন চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে চাই, পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে এয়ারপোর্টে গেলে দেড়-দুই ঘণ্টা বসিয়ে রাখে। আর তাকে (বেনজীর) জামাই-আদর করে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে তুলে দিয়েছে। এই সরকার হচ্ছে চোরের রাজা বাটপার। যারা চুরি করেছে, তাদের সব সময় প্রশ্রয় দিয়েছে।’ 

আজ শনিবার গাজীপুর চৌরাস্তায় সাগর-সৈকত কনভেনশন হলে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মহানগর বিএনপির সভাপতি মো. শওকত হোসেন সরকারের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ছাইয়্যেদুল আলম বাবুল, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, ডা. মাজহারুল ইসলাম, ড. অ্যাডভোকেট শহিদুজ্জামান প্রমুখ। 

ফখরুল ইসলাম উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘আজকে খবরের কাগজ খুললেই কী দেখেন আপনারা?’ পরে তিনি নিজেই উত্তর দিয়ে বলেন, ‘দেখবেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ তাঁর হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি। কখন করেছেন? যখন তিনি র‍্যাবের ডিজি ছিলেন, পুলিশে আইজি ছিলেন তখন তৈরি করেছেন।

যাঁর বেতন সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার বেশি হয় না, সেই লোকের এখন দেখা যাচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। যখন এটা ফাঁস হলো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন দিল, তারপর কিন্তু তাঁকে তারা আইজিপি করে সমস্ত দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন সরকারকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, তোমরা তো দুর্নীতিপরায়ণ লোকগুলো—যারা মানুষের অধিকারকে খুন করেছে, যারা মানুষকে হত্যা করেছে, গুম করেছে, তাদের পুরস্কৃত করছ। সুতরাং তোমাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিব।’ 

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই বেনজীর মে মাসের ৪ তারিখে পুরো পরিবার নিয়ে সিঙ্গাপুর চলে গেছে। কাগজে-কলমে বলছে, মাত্র কয়েকটা ব্যাংকের যে অ্যাকাউন্ট, সেখান থেকে ৬০ কোটি টাকা তুলে নিয়ে গেছে। ৬০ কোটি টাকাই নয়, আরও অসংখ্য টাকা তুলে নিয়ে গেছে। ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট কি চোখে আঙুল দিয়ে বসে ছিল? সরকার কি চোখে আঙুল দিয়ে বসে ছিল? 
 
সাবেক সেনাপ্রধান সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা গেল একজনের কথা, আরেকজনের কথা বাইরে বেরিয়ে এসেছে। হঠাৎ করে আমরা দেখলাম, সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল আজিজ। যাঁর একটা ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল আল জাজিরাতে। তিনি কীভাবে তাঁর ভাইদের রক্ষা করার জন্য প্রভাব খাটিয়ে তাঁদের মুক্ত করে পাসপোর্ট দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে আমেরিকা স্যাংশন দেওয়ার পরে এখন তাদের টনক নড়েছে। এখন বলছে, আমরা এখন তদন্ত করব।’ 

তিনি বলেন, ‘আজকে দেশে যে ভূখণ্ডে বাস করি, আমরা তাকে বলি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশটা স্বাধীন করবার জন্য যাদের দায়িত্ব ছিল, তখন তারা দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। যখন পাক বাহিনী আক্রমণ করেছে, তাদের বেশির ভাগ নেতাই পালিয়ে চলে গেছে এবং মূল নেতা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।’ 

বিএনপির নেতা বলেন, ‘এ কথাগুলো বললে তারা খুব ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তাদের ভালো লাগে না। কিন্তু এটাই হলো চিরন্তন সত্য। শহীদ জিয়া নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। শহীদ জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাই করেননি, এরপর যখন দেশের সামনে আরও বড় সংকট উপস্থিত হয়েছে ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর, তখন শহীদ জিয়া মানুষের সামনে ত্রাণকর্তা হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন।’ 

আওয়ামী লীগের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী, যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, আওয়ামী লীগ সেদিন ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তারাই কিন্তু ক্ষমতায় ছিল। ওই ৪-৫ বছরের মধ্যে তারা বাংলাদেশে একটা দুঃশাসনের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল, এতে বাংলাদেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল। 

তাদের দুর্নীতি, অযোগ্যতা এবং দুঃশাসনের কারণে সেদিন দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়েছিল। না খেতে পেয়ে সেদিন লাখ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। কাপড় ছিল না, রংপুরের বাসন্তী তার লজ্জা নিবারণের জন্য এক টুকরো জাল দিয়ে তার লজ্জা নিবারণ করেছিল। এই হচ্ছে ইতিহাস, এই হচ্ছে সত্য কথা। এই কথাগুলো কখনোই তারা বলে না। আমাদের ছেলে-মেয়েরা কেউ কথাগুলো জানে না। কথাগুলো যদি বলে, তাকে আবার জেলের মধ্যে পুরে দেবে অথবা সংবিধানবিরোধী বলে মামলা করবে।’