পদ্মা সেতু: জুনের অপেক্ষায় লঞ্চযাত্রীরা

ইমতিয়াজ আহমেদ, শিবচর (মাদারীপুর)
প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ১৩

প্রমত্তা পদ্মার মৃদু ঢেউ তোলা জল কেটে লঞ্চটি শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশে এগিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা নদীর জল ছোঁয়া মৃদুমন্দ বাতাসে ভেসে আসে শীতলতা। হালকা কুয়াশার আস্তরণ দূরদৃষ্টিতে কিছু অসচ্ছলতা এনে দেয়। লঞ্চের ভেতরে ‘ইলিশ’ ভাজার ঝাঁজালো ঘ্রাণ আর ইঞ্জিনের একটানা বিরক্তিকর শব্দ। লঞ্চ বেশ দ্রুততার সঙ্গে পদ্মা সেতুর কাছে আসতেই যাত্রীদের মধ্যে শুরু হয় চঞ্চলতা। জানালার ফাঁক দিয়ে ছবি তোলার চেষ্টা ও মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকা। 

সেতুর নিচ দিয়ে লঞ্চটি পার হতেই সেতু নিয়ে সাধারণ যাত্রীদের আলোচনা শুরু। কেউ কেউ বলছেন, ‘আর মাত্র তিন-চার মাস বাকি, তার পরই ওপর দিয়ে যাওয়া যাবে।’ 

ঠিক ওই মুহূর্তেই লঞ্চের ভাড়া নিয়ে এক বয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে নিজেকেই সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘আর বেশি দিন নাই। যাত্রীদের হয়রানির দিন শেষের পথে। জুনেই চালু হবে পদ্মা সেতু।’ 

আজ বুধবার সকাল ৯টায় মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশে লঞ্চে অবস্থানকালে পদ্মা সেতু নিয়ে সাধারণ যাত্রীদের মুগ্ধতা আর প্রত্যাশার আলাপ-আলোচনা এভাবেই শোনা যায়। 

লঞ্চযাত্রী মো. আবুল বাশার বলেন, ঢাকায় যেতে-আসতে নৌপথে বেশির ভাগ সময়ই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বৈরী আবহাওয়ায় বন্ধ থাকে নৌচলাচল। ফেরিঘাটে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। সব মিলিয়ে নৌপথের দীর্ঘদিনের এই ভোগান্তি সেতু চালু হলেই দূর হবে। এখন শুধু অল্প কিছুদিনের অপেক্ষা। 

জাহানারা বেগম নামে এক যাত্রী বলেন, লঞ্চে ওঠানামা করতে ঝামেলা হয়। ব্যাগ-বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে পড়তে হয় নানা সমস্যায়। সেতু চালু হলে আমাদের সব দুর্ভোগ দূর হবে। 

লঞ্চের ডেকে দাঁড়িয়ে শিশুসন্তান কোলে নিয়ে পদ্মা সেতু দেখাচ্ছিলেন মাদারীপুরের কামরুজ্জামান নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের স্বপ্নের সেতু। সেতুর দিকে তাকালে মনে প্রশান্তি আসে। তাই সন্তানকে দেখাচ্ছি। আশা করছি জুনেই সেতুর ওপর দিয়ে যেতে পারব। 

বাংলাবাজার ঘাটের একাধিক লঞ্চশ্রমিক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লঞ্চে কাজ করছি। সেতু চালু হলে এই রুটে আর লঞ্চের দরকার হবে না। হয়তো কাজের জায়গাটি হারাব। তবে সেতু চালু হলে এই অঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়ন হবে। আমাদের উন্নয়ন দরকার। 

বিআইডব্লিউটিএর বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা যায়, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে ৮৭টি ছোট-বড় লঞ্চ চলাচল করছে। এ ছাড়া বৈধ স্পিডবোট রয়েছে প্রায় দেড় শ। ধারণক্ষমতা মেনে নৌযানগুলো যাত্রী পারাপার করছে। 

বিআইডব্লিউটিএর বাংলাবাজার ঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আক্তার হোসেন বলেন, ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম রুট হচ্ছে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া। পদ্মা সেতু চালু হলে যোগাযোগব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটবে। বর্তমানে লঞ্চে বেশিসংখ্যক যাত্রী পার হচ্ছে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু কাছ থেকে দেখতে লঞ্চে পার হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এ কারণেও লঞ্চে বেশি যাত্রী পারাপার হচ্ছে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত