ফরিদপুরে চাঁদাবাজির অভিযোগে ওসিসহ ২ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২২, ২২: ৩৫
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২২, ২২: ৫৫

ফরিদপুরে মারপিট, চাঁদাবাজি ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ওসিসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। আজ রোববার জেলার ছয় নম্বর আমলি আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের ঠেনঠেনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. মুরাদ মোল্লা (৪৬)। 

মুরাদ মোল্লা গট্টি ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং মো. তকি মোল্লার ছেলে। 

অভিযুক্তরা হলেন—সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুজ্জামান ও ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হান্নান। 

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী ইব্রাহিম হোসেন মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করার জন্য ফরিদপুর পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) দায়িত্ব দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন। এ ছাড়া অভিযোগটি বিভাগীয় তদন্তের জন্য ডিআইজি (ঢাকা রেঞ্জ) এবং ফরিদপুরের পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেওয়ার আবেদন জানান। আদালত এ মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৮ এপ্রিল ধার্য করেছেন। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মুরাদ মোল্লা গট্টি ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের তিনবারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য। ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের আগে সালথা থানার ওসি তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দাবি করেন। তাঁর দাবি করা টাকা না দিলে তাঁকে নির্বাচন করতে দেবে না বলে ভয়ভীতি দেখায়। এতে মুরাদ বাধ্য হয়ে ওসিকে ৭৫ হাজার টাকা দেন। পরবর্তীতে ওসি তাঁর কাছে বিভিন্ন সময় আরও এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। মুরাদ চাঁদার টাকা না দেওয়ায় ক্ষোভে ওসি তাঁকে ৩টি মিথ্যা মামলায় আসামি করেন। 

অভিযোগে বলা হয়, গত ১৪ মার্চ রাত আনুমানিক ১টার দিকে পূর্ব আক্রোশের জেরে ওসি তাঁর ভাই জিহাদকে পুলিশ দিয়ে কোনো মামলা বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই সালথা থানায় নিয়ে যায়। মুরাদ পরদিন সকাল ৮টার দিকে সালথা থানায় গিয়ে থানার হাজতখানায় মোট ৮ জন লোককে দেখতে যান। সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে ওসি তাঁর বাস ভবন থেকে অফিসে আসার পথে মুরাদের সঙ্গে দেখা হয়। তখন মুরাদ ওসিকে তাঁর ভাইকে ধরে আনার কারণ জানতে চাইলে ওসি অপরাধের কথা না বলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য মুরাদের কাছে ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। ওসি তখন মুরাদকে বলেন, টাকা না দিলে তাঁর মতো তাঁর ভাইকেও ৩টা মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করে দেবেন। ওই সময় মুরাদ চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাঁকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখান ওসি। এরপর তিনি থানা থেকে চলে আসেন। 

অভিযোগে আরও বলা হয়, মুরাদ ওসির দাবি করা চাঁদার টাকা না দিলে তাঁর আদেশে এসআই হান্নান তাঁর ভাই জিহাদকে থানা হাজতখানা থেকে বের করে ভিন্ন রুমে নিয়ে রুমের জানালার সঙ্গে হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে শক্ত লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে জখম করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁর ভাই জিহাদকে মিথ্যা মামলায় আসামি করে আদালতে প্রেরণ করা হয়। ওই মামলায় গত বুধবার তাঁর ভাই জামিনে বের হন। গুরুতর আঘাত পাওয়ায় তাঁকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

এদিকে আদালতে মামলার পরপরই আজ রোববার বিকেলে সালথা থানায় সংবাদ সম্মেলন করেন ওসি মো. আশিকুজ্জামান। 

সংবাদ সম্মেলনে ওসি লিখিত বক্তব্যে জানান, গত ১৩ মার্চ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গট্টি ইউনিয়নের বাসুয়ারকান্দি গ্রামে বলা মিয়া ও ইকব শেখের মধ্যে গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে মারামারি হয়। ওই মারামারি ঘটনায় বেশ কয়েকজন মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়। এই ঘটনার জেরে গট্টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মধ্যে বিরোধ ছড়িয়ে পড়ায় বড় ধরনের সংঘাত সৃষ্টি, খুন ও জখম হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। গত ১৩ মার্চ দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে গোপন সংবাদ পাওয়া যায় যে, অলিন ফকির ও শাজাহান মাতুব্বরের নেতৃত্বে একটি দল ও নুরু মাতুব্বরের নেতৃত্বে অপর একটি দল লোকজন নিয়ে মারামারির উদ্দেশে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসহ বালিয়াগট্টি সার্কিনের মুসল্লী বাড়ির সামনে অবস্থান করছেন। 

এই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাত্রিকালীন ডিউটিতে নিয়োজিত অফিসার এসআই মো. শরীয়ত উল্লাহকে ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তিনি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ সমবেত হতে থাকা উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ হওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু উচ্ছৃঙ্খল জনতা ছত্রভঙ্গ না হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ওই সময় ওসি পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সবাইকে ছত্রভঙ্গ হওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু উপস্থিত দুই পক্ষের লোকজনই পুলিশি নির্দেশ অমান্য করে পুলিশের ওপর বেপরোয়াভাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। একপর্যায়ে লাঠিপেটা করে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করা হয়। এরপর ঘটনাস্থল থেকে এ ঘটনায় জড়িত মো. আক্কাস শেখ, মজনু ফকির, জিহাদ মোল্লা, সজিব মিয়াদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং ঘটনাস্থল থেকে আসামিদের ব্যবহৃত ফেলে রাখা ৫টি বেতের ঢাল, ১০ টি ইটের টুকরা, ৩ টি বাঁশের লাঠি জব্দ করা হয়। 

ওসি জানান, আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে, উভয় পক্ষের বাড়িঘর তল্লাশি করে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৩০টি ঢাল ও ২৫টি কাতরা উদ্ধার করা হয়। 

এ ঘটনায় এসআই শরীয়ত উল্লাহ বাদী হয়ে সালথা থানার মামলা দায়ের করেন।। মামলার পর আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের আদালতে প্রেরণ করা হয়। 

ওসি দাবি করে বলেন, ওই দিন পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার এবং দেশীয় অস্ত্রগুলো উদ্ধার না করলে গট্টি ইউপি এলাকায় খুন জখমসহ ব্যাপক দাঙ্গা হাঙ্গামার সম্ভাবনা ছিল। 

লিখিত অভিযোগে ওসি আশিকুজ্জামান দাবি করে বলেন, মো. মুরাদ মোল্লা গট্টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ তাঁর ভাই জিহাদকে থানা হাজত থেকে তদবির করেও ছাড়িয়ে নিতে না পেরে মুরাদ মোল্লার দীর্ঘদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ভাঙা পা জনসম্মুখে দেখিয়ে মানুষের মনে সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করেন। এ ছাড়া আসামি জিহাদ মোল্লাকে মারপিট করে টাকা দাবি করার মনগড়া, বানোয়াট এবং মিথ্যা ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করেন। 

এ ব্যাপারে ফরিদপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ আমরা এখনো পাইনি। আদালতের নির্দেশ পেলে এ ব্যাপারে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’ 

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় জেলা পুলিশ এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। দোষী প্রমাণিত হলে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধ করলে কাউকে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত