৩ দিন পর আবারও বেঁচে উঠবেন, এই বিশ্বাসে মৃত্যুর ৬ দিন পর্যন্ত এক নারীর মরদেহ খাটের নিচে লুকিয়ে রেখেছিল একটি পরিবার। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনের কেউই এ ঘটনা জানতেন না। তবে ওই বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ ছড়ালে পুলিশকে জানায় প্রতিবেশীরা। পরে পুলিশ গিয়ে ওই নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। 

আজ রোববার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। গতকাল শনিবার মধ্যরাতে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা সদরের পৌর এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ওই বাড়ি থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং পরিবারের সদস্যদের থানায় নেওয়া হয়। 

ওই পরিবারটি একটি পীরের মুরিদ বলে জানা গেছে। ওই পরিবারের কর্তা মোক্তার উদ্দীন তালুকদার (৬৫)। তিনি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত  শিক্ষক। তাঁর স্ত্রী শামীমা সুলতানা নাজমা (৫৬) গত সোমবার ভোরে মারা যান। এরপর থেকে তাকে খাটের নিচেই রেখে দেওয়া হয়। মোক্তার-নাজমা দম্পতির ৪ মেয়ে সন্তান রয়েছে। 

ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ ও এলাকাবাসী বলছে, মনোহরদী পৌর এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন মোক্তার উদ্দীন তালুকদার। গত সোমবার ভোরে তাঁর স্ত্রী শামীমা সুলতানা নাজমা মারা যান। মৃত্যুর আগে তাঁর পরিবারের সবাইকে বলে গেছেন, মৃত্যুর ৩-৪ দিন পর তিনি পুনরুজ্জীবিত হবেন। পীরে বিশ্বাসী পরিবারটি এ বিশ্বাসে তাঁর লাশ বসতঘরের খাটের নিচে রেখে খুব স্বাভাবিকভাবে দিন কাটাচ্ছিলেন। এ ঘটনা পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের কেউ আঁচও করতে পারেনি। 

পরে ঘরের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ ছড়ালে পুলিশে খবর দেয় প্রতিবেশীরা। পরে শনিবার মধ্যরাতে পুলিশ ওই বাড়িতে হানা দিয়ে দরজা ভেঙে ঘরের ভেতর খাটের নিচ থেকে শামীমা সুলতানা নাজমার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে। এ সময় মৃতের স্বামী মোক্তার উদ্দীন তালুকদার ও ৪ মেয়ে ঘরের ভেতরেই অবস্থান করছিলেন। 

প্রতিবেশীরা বলছে, পরিবারটির সবাই সারা দিন ঘরের দরজা বন্ধ রেখে ঘরের ভেতরেই অবস্থান করতেন। একটি শিক্ষিত পরিবারের এমন আচরণে এলাকার মানুষ হতভম্ব। তাঁদের প্রতিটি সন্তানই স্নাতক-স্নাতকোত্তর পাস। পুরো পরিবারটিই একটি শিক্ষিত পরিবার। বড় মেয়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তবে ১৮ মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কারণে তাঁর নামে একটি বিভাগীয় মামলা হয়েছে।

এ বিষয়ে মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ উদ্দীন বলেন, ‘পরিবারটি এক পীরের মুরিদ ছিল বলে জানিয়েছে। তাঁরা প্রতিদিন ভোর ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত জিকির করতেন। জিকিররত অবস্থায় নাজমার মৃত্যু ঘটেছে বলে তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পোস্টমর্টেম ও পরবর্তী তদন্তে বিস্তারিত জানা যেতে পারে।’