সরকারি চাকরিতে প্রবেশে কোটা নিয়ে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রাখার দাবিতে চলমান থাকা আন্দোলনে যাওয়া যাবে না, আন্দোলনে গেলে হল থেকে বের হুমকি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের নেতারা। গতকাল বুধবার রাত ২টার সময় হলে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন কক্ষে গিয়ে এ হুমকি দেন তারা।

হল শাখার নেতারা হলেন—যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহমেদ ফয়সাল, সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিরুল ইসলাম সাকিব, গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন উপ-সম্পাদক সাকিবুল সুজন ও ঢাবি শাখার সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক হাসান সাইদ।

হল ছাত্রলীগের এ নেতারা শাখা ছাত্রলীগের আসন্ন হল কমিটির শীর্ষপদ প্রত্যাশী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী।

হল ছাত্রলীগ সূত্র জানা গেছে, আসন্ন হল সম্মেলন ও হল কমিটিকে সামনে রেখে আজ রাত ৮টায় বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মিসভা রয়েছে। কর্মিসভায় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত উপস্থিত থাকবেন। ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নির্দেশনা রয়েছে। পাশাপাশি কোটা বিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

যেসব কক্ষে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতারা হুমকি দিয়ে এসেছেন, তাদের একাধিক জনের সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার।

তারা বলেন, ‘রাত ২টার সময়ে এসে ঘুম থেকে তুলে তাঁরা (ছাত্রলীগ নেতারা) আমাদের হুমকি দিয়ে গেছেন। কোটাবিরোধী আন্দোলনে গেলে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হলে থাকতে গেলে বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে থাকতে হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে কোটা আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের অধিকারের সম্পৃক্ততা রয়েছে। দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে কোটাবিরোধী আন্দোলনে যাই। সে জায়গায় আন্দোলনে গেলে ছাত্রলীগ নেতারা হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন এবং বাধ্যতামূলক কর্মিসভায় থাকতে বলা হয়েছে। এ সময় তারা আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণও করেছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আহমেদ ফয়সাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হুমকি দেওয়া হয়নি। কর্মিসভার বিষয়ে বলা হয়েছে।’

এ বিষয়ে অপর অভিযুক্ত শাকিরুল ইসলাম সাকিবকে কল দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে সাকিবুল সুজন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আপনার তথ্যে ভুল আছে। আগ বাড়িয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনে যেতে নিষেধ করা হয়নি। ছাত্রলীগ থেকে এ রকম দিক নির্দেশনা নেই।’ হাসান সাইদ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

তানভীর হাসান সৈকতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে কর্মিসভা রয়েছে। কর্মী সভায় থাকতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হয়তো বলা হয়েছে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে শুনিনি। হলে শিক্ষার্থীরা থাকবে, আমরা দায়িত্বে রয়েছি। বাইরে কী আন্দোলন করবে, সেটা তাদের বিষয়। তবে আমি বিষয়টি দেখব—শিক্ষার্থীরা যেন ডিস্টার্বড না হয়।’