গাজীপুরের টঙ্গীতে পোশাকশ্রমিক সংগঠনের শ্রমিকনেতাকে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে সংগঠনটি। ইতিমধ্যে পুলিশ মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। 

আজ সোমবার সকালে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কল্পনা আক্তার বাদী হয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। এরপরই মামলার প্রধান আসামি মাজহারুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাত পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করা হয়। 

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন মাজহারুল (৩৫), আকাশ (৩৮), রাসেল (৩২), রিপন (২৭), সোহেল (২৬) ও কারখানার ম্যানেজার হানিফ (৪০)। 

গতকাল রোববার দিবাগত রাত ১০টার দিকে টঙ্গীর সাতাইশ বাগানবাড়ি এলাকার প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড নামক কারখানায় শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলাম শহিদকে (৪৫) হত্যাচেষ্টা করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত ১১টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ মরদেহ গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। 

শ্রমিকনেতা শহিদুল বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার মিটালু গ্রামের আজগর আলী আফরাদের ছেলে। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কারখানাটিতে প্রায় সাড়ে ৭০০ শ্রমিক কাজ করেন। গত এপ্রিল মাসে ওই কারখানার ৫০ জন শ্রমিকের ৫০ শতাংশ বেতন বকেয়া রাখে কারখানার মালিকপক্ষ। গত মে মাসে আবারও কারখানা সকল শ্রমিকের বেতন-ভাতা বকেয়া রাখে তারা। মঙ্গলবার সকলে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার কথা থাকলেও কারখানার মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেনি। ওই দিন শ্রমিকেরা দিনভর বেতন-ভাতার জন্য অপেক্ষা করে বিকেলের দিকে বিক্ষোভ করে চলে যান। 

পরদিন বুধবার সকালে কারখানার শ্রমিকেরা আবারও কারখানায় এলে কারখানা তালাবদ্ধ দেখতে পান। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা কারখানার সামনে অবস্থান নেন এবং পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের উদ্দেশ্যে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাগানবাড়ি এলাকা থেকে বের হয়ে এগোতে থাকেন। এ সময় মহাসড়কের পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২ রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। 

ঘটনার তিন দিন পর বিষয়টি সমাধান করতে কারখানার শ্রমিকেরা বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের নেতা-কর্মীদের বিষয়টি জানান। গতকাল রোববার রাতে বেতন পরিশোধের বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন শহিদুল ইসলাম। বিষয়টি সুরাহা না হলে আজ সোমবার সকালে শ্রমিকদের নিয়ে কলকারখানা অধিদপ্তরের কার্যালয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে কারখানা থেকে বেরোনোর জন্য প্রধান ফটকের কাছে যান শহিদুল। এ সময় অভিযুক্তরা শহিদুলকে কারখানার প্রধান ফটকের কাছ থেকে ধরে নিয়ে মারধর করতে থাকেন। এ সময় মোস্তফা (২২), শরিফ (৩৫), আক্কাস (৪৩) এগিয়ে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয়। 

• পোশাককর্মীদের ডাকে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ফেরার পথে শ্রমিক নেতা খুন

পরে কারখানার শ্রমিকেরা তাঁদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকার তাইরুন্নেসা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শহিদুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্য আহতদের হাসপাতালটিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। 

এ ঘটনায় বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কল্পনা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পূর্বপরিকল্পনা করেই শহিদুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছে। থানায় মামলা করেছি। আজ দুপুরে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করা হবে।’ 

এ বিষয়ে কারখানার মালিক সাইফুদ্দিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। 

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক (টঙ্গী জোন) ওসমান গনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কয়েক দিন যাবৎ কারখানাটির শ্রমিকেরা বেতন-ভাতার দাবি পরিশোধের দাবি জানিয়ে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করে আসছিলেন। শ্রমিকদের পক্ষে পাওনা আদায় করতে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা-কর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’ 

টঙ্গী পশ্চিম থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি মাজহারুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।