মো. মিজানুর রহমান রিয়াদ, নোয়াখালী
তাসফিয়া জান্নাতকে (৪) বাবার সঙ্গে গিয়ে ঘুমাতে বলেছিলেন মা জেসমিন আক্তার। কিন্তু না ঘুমিয়ে বাবার সঙ্গে বাড়ির পার্শ্ববর্তী দোকানে যায় তাসফিয়া। এরপর দোকান থেকে হাসপাতাল আর সেখান থেকে লাশ হয়ে বাড়িতে ফেরা।
সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারানো তাসফিয়কে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের গুলিতে ডান চোখ হারানো তাসফিয়ার বাবা মাওলানা আবু জাহের মেয়ের মরদেহ নিয়ে ঢাকা থেকে ফিরে এসে বাড়িতে থেকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করলেও প্রধান আসামি রিমনসহ ঘটনার মূল আসামিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার ও স্বজনেরা।
সেদিন যা ঘটেছিল:
গত বুধবার বিকেলে জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের পূর্ব হাজীপুর গ্রামে তাসফিয়া হত্যাকাণ্ড ঘটে। ওই দিন বেলা ৩টার দিকে তাসফিয়াকে নিয়ে বাড়ির পার্শ্ববর্তী মালেকার বাপের দোকান এলাকার একই বাড়ির মামুনের দোকানে যান তার বাবা মাওলানা আবু জাহের। ওই দোকানে গিয়ে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পর একটি জুস, চিপস ও চকলেট নিয়ে দোকান থেকে বের হচ্ছিলেন তারা। এ সময় মহিন, রিমন, আকবর, নাঈমের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একদল সন্ত্রাসী বাজারে আসে। পরে তারা মামুনের দোকানে এসে ‘তুই (আবু জাহের) ওই দিন বৈঠকে ছিলি’ বলে তাঁঁকে লক্ষ্য করে এক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। কিন্তু পাশে থাকা গ্যাসের সিলিন্ডারে লেগে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দ্রুত তাসফিয়াকে নিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ করলে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয় তাসফিয়া। পরে দোকানি মামুনের সহযোগিতায় তারা বাড়ির দিকে যাওয়ার পথে পেছন থেকে আরও দুই রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীরা। এতে তাসফিয়া ও আবু জাহের গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুলিতে মাথাসহ পুরো শরীর ঝাঁজরা হয়ে যায় তাসফিয়ার। গুলির শব্দ পেয়ে বাড়ি থেকে তাদের পরিবারের লোকজন বের হয়ে আসে। এ সময় গুলিবিদ্ধ তাসফিয়া ও আবু জাহেরকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয় লোকজন। পরে সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেওয়ার পথে কুমিল্লায় পৌঁছালে নানির কোলে মারা যায় তাসফিয়া।
যে ঘটনা নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড:
পূর্ব হাজীপুর গ্রামের রাশেদ মিয়ার বাড়ির খুরশিদ আলম পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের বাদশার কাছে মাটি বিক্রি করেন। কিন্তু বাদশা চুক্তির চেয়ে অতিরিক্ত মাটি কেটে নিতে চাইলে তাতে বাধা দেন আলম ও তাঁর বাড়ির লোকজন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে, যা নিয়ে স্থানীয়ভাবে একটি বৈঠক করে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাতে বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে বৈঠক পণ্ড করে দেন বাদশা। আর এই মাটি কাটা নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধের জেরে প্রাণ হারায় নিরপরাধ শিশু তাসফিয়া। মাটি কাটার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও মাটি কাটা নিয়ে বিরোধের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত ছিলেন না মাওলানা আবু জাহের ও তার মেয়ে তাসফিয়া। মাটি কাটা নিয়ে হওয়া ওই বৈঠকই কাল হলো তাদের। ওই বৈঠকে আবু জাহের ছিলেন এমন অভিযোগে সন্ত্রাসীদের টার্গেট হয় মাওলানা আবু জাহের।
ঘটনার প্রতিবাদ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ, অবরোধ ও মানববন্ধন:
ঘটনার পরদিন নিহত তাসফিয়া জান্নাতের মৃতদেহ নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়িতে নেওয়া হয়। বাড়ি নেওয়ার সময় দুপুর ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের সরুরপোল এলাকা অবরোধ করে তাসফিয়ার মৃতদেহ নিয়ে অবস্থান নেয় এলাকাবাসী। এ সময় তারা তাসফিয়ার হত্যাকারীদের ছবিযুক্ত ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে প্রশাসনকে মূল আসামি গ্রেপ্তারের জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন বিক্ষোভকারীরা। পরে ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনস্থলে পৌঁছে আসামিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন তারা।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা ও আসামি গ্রেপ্তার:
তাসফিয়া হত্যার ঘটনায় তার খালু হুমায়ূন কবির বাদী হয়ে রিমনকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনা ও মামলার পর অভিযান চালিয়ে পৃথক স্থান থেকে সন্দেহজনক তিনজনকে আটক করে পুলিশ। পরে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের মৃত নূর নবীর ছেলে এমাম হোসেন স্বপন, লতিফপুরের সামছুদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিন বাবর, একই গ্রামের দেলওয়ার হোসেনের ছেলে দাউদ হোসেন রবিন। প্রধান আসামি রিমনসহ ঘটনার মূল আসামিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার ও স্বজনেরা।
মাটি কাটা নিয়ে হামলার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে এলেও তা গ্রহণ করেনি পুলিশ, যার পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় হামলা ও এ হত্যাকাণ্ড:
তাসফিয়া হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত সন্ত্রাসী রিমন, মহিন, সুজন, রহিম, বাদশাহ, আকবর এলাকায় মাদক বিক্রি, নারীদেরর উত্ত্যক্তসহ নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাঁদের এসব ঘটনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে থানায় অভিযোগ দিলেও অধিকাংশ সময়ই কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আলমের জমি থেকে বাদশাকে অতিরিক্ত মাটি কাটায় বাধা দেওয়ার জেরে সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাদশার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী রিমনের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী খুরশিদ আলমের ভাই ফিরোজের ঘরে হামলা চালায়।
ভুক্তভোগী ফিরোজ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ভাই খুরশিদ আলম জমির মাঝের অংশের মাটি বিক্রি করে। কিন্তু ক্রেতা বাদশাহ জোরপূর্বক ওই জমির সব মাটি কেটে নেয়। এসব ঘটনায় বাদশার সঙ্গে আমার বাগ্বিতণ্ডা হয়। তখন ওই স্থানে সাগর নামে একজন ছিল। ঘটনাটা সে মিটমাট করে দেবে বলে আরো কিছু লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে। বাদশাও ফোন করে কিছু লোক নিয়ে আসে। বাদশার লোকগুলো এসেই আমার শার্টের কলার চেপে ধরে। তখন আমার চার মেয়ে এগিয়ে এলে তাদের ওপর হামলা করে সন্ত্রাসী রিমন, মহিন, সুজন, রহিম, বাদশাহ, আকবর। এ ঘটনার জেরে সন্ধ্যায় ওই সন্ত্রাসীরা আমাদের বসতঘর লক্ষ করে তিন-চারটি ককটেল নিক্ষেপ করে। আমরা ঘর থেকে বের হয়ে এলে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে তারা। পরে তারা আমার অন্তঃসত্ত্বা বড় মেয়ে মুন্নি আক্তারের (৩০) পেটে লাথি মারে, আমাকে ও আমার ছোট মেয়ে রূপালিকেও (১৭) পিটিয়ে আহত করে। খবর পেয়ে পুলিশের এসআই জসিম এসে গুলির খোসা উদ্ধার করেন।’
ফিরোজ অভিযোগে আরও বলেন, ‘ঘটনায় শনিবার (৯ এপ্রিল) বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনির কাছে একটি অভিযোগপত্র লিখে নিয়ে যাই। ওসি মামলা না নিয়ে আমাকে বলেন, মামলার দরকার নেই, আমরাও তাঁদের খুঁজতেছি। পারলে আপনারাও খুঁজে তাঁদের ধরিয়ে দেন। সেদিন যদি মামলা নিয়ে ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো এবং রিমনকে গ্রেপ্তার করা হতো, তাহলে ১৩ এপ্রিল শিশু তাসফিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটত না।’
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিশু তাসফিয়া হত্যার পর থেকে আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। ইতিমধ্যে মামলায় এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তথ্য পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে অভিযান চালিয়ে সন্দেহজন আরও তিনজনকে আটক করা হয়। পরে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়।’
অভিযোগ না নেওয়ার বিষয়ে ওসি মীর জাহেদুল হক বলেন, ‘মামলা গ্রহণ করিনি এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাঁরা আমার কাছে একটি অভিযোগ নিয়ে আসেন, কিন্তু কোনো ভোটার আইডি আনেননি। ভোটার আইডি নিয়ে তাঁদের আসতে বলার পর তাঁরা আর থানায় আসেননি।’
তাসফিয়া জান্নাতকে (৪) বাবার সঙ্গে গিয়ে ঘুমাতে বলেছিলেন মা জেসমিন আক্তার। কিন্তু না ঘুমিয়ে বাবার সঙ্গে বাড়ির পার্শ্ববর্তী দোকানে যায় তাসফিয়া। এরপর দোকান থেকে হাসপাতাল আর সেখান থেকে লাশ হয়ে বাড়িতে ফেরা।
সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারানো তাসফিয়কে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের গুলিতে ডান চোখ হারানো তাসফিয়ার বাবা মাওলানা আবু জাহের মেয়ের মরদেহ নিয়ে ঢাকা থেকে ফিরে এসে বাড়িতে থেকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করলেও প্রধান আসামি রিমনসহ ঘটনার মূল আসামিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার ও স্বজনেরা।
সেদিন যা ঘটেছিল:
গত বুধবার বিকেলে জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের পূর্ব হাজীপুর গ্রামে তাসফিয়া হত্যাকাণ্ড ঘটে। ওই দিন বেলা ৩টার দিকে তাসফিয়াকে নিয়ে বাড়ির পার্শ্ববর্তী মালেকার বাপের দোকান এলাকার একই বাড়ির মামুনের দোকানে যান তার বাবা মাওলানা আবু জাহের। ওই দোকানে গিয়ে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পর একটি জুস, চিপস ও চকলেট নিয়ে দোকান থেকে বের হচ্ছিলেন তারা। এ সময় মহিন, রিমন, আকবর, নাঈমের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একদল সন্ত্রাসী বাজারে আসে। পরে তারা মামুনের দোকানে এসে ‘তুই (আবু জাহের) ওই দিন বৈঠকে ছিলি’ বলে তাঁঁকে লক্ষ্য করে এক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। কিন্তু পাশে থাকা গ্যাসের সিলিন্ডারে লেগে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দ্রুত তাসফিয়াকে নিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ করলে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয় তাসফিয়া। পরে দোকানি মামুনের সহযোগিতায় তারা বাড়ির দিকে যাওয়ার পথে পেছন থেকে আরও দুই রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীরা। এতে তাসফিয়া ও আবু জাহের গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুলিতে মাথাসহ পুরো শরীর ঝাঁজরা হয়ে যায় তাসফিয়ার। গুলির শব্দ পেয়ে বাড়ি থেকে তাদের পরিবারের লোকজন বের হয়ে আসে। এ সময় গুলিবিদ্ধ তাসফিয়া ও আবু জাহেরকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয় লোকজন। পরে সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেওয়ার পথে কুমিল্লায় পৌঁছালে নানির কোলে মারা যায় তাসফিয়া।
যে ঘটনা নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড:
পূর্ব হাজীপুর গ্রামের রাশেদ মিয়ার বাড়ির খুরশিদ আলম পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের বাদশার কাছে মাটি বিক্রি করেন। কিন্তু বাদশা চুক্তির চেয়ে অতিরিক্ত মাটি কেটে নিতে চাইলে তাতে বাধা দেন আলম ও তাঁর বাড়ির লোকজন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে, যা নিয়ে স্থানীয়ভাবে একটি বৈঠক করে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাতে বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে বৈঠক পণ্ড করে দেন বাদশা। আর এই মাটি কাটা নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধের জেরে প্রাণ হারায় নিরপরাধ শিশু তাসফিয়া। মাটি কাটার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও মাটি কাটা নিয়ে বিরোধের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত ছিলেন না মাওলানা আবু জাহের ও তার মেয়ে তাসফিয়া। মাটি কাটা নিয়ে হওয়া ওই বৈঠকই কাল হলো তাদের। ওই বৈঠকে আবু জাহের ছিলেন এমন অভিযোগে সন্ত্রাসীদের টার্গেট হয় মাওলানা আবু জাহের।
ঘটনার প্রতিবাদ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ, অবরোধ ও মানববন্ধন:
ঘটনার পরদিন নিহত তাসফিয়া জান্নাতের মৃতদেহ নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়িতে নেওয়া হয়। বাড়ি নেওয়ার সময় দুপুর ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের সরুরপোল এলাকা অবরোধ করে তাসফিয়ার মৃতদেহ নিয়ে অবস্থান নেয় এলাকাবাসী। এ সময় তারা তাসফিয়ার হত্যাকারীদের ছবিযুক্ত ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে প্রশাসনকে মূল আসামি গ্রেপ্তারের জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন বিক্ষোভকারীরা। পরে ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনস্থলে পৌঁছে আসামিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন তারা।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা ও আসামি গ্রেপ্তার:
তাসফিয়া হত্যার ঘটনায় তার খালু হুমায়ূন কবির বাদী হয়ে রিমনকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনা ও মামলার পর অভিযান চালিয়ে পৃথক স্থান থেকে সন্দেহজনক তিনজনকে আটক করে পুলিশ। পরে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের মৃত নূর নবীর ছেলে এমাম হোসেন স্বপন, লতিফপুরের সামছুদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিন বাবর, একই গ্রামের দেলওয়ার হোসেনের ছেলে দাউদ হোসেন রবিন। প্রধান আসামি রিমনসহ ঘটনার মূল আসামিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার ও স্বজনেরা।
মাটি কাটা নিয়ে হামলার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে এলেও তা গ্রহণ করেনি পুলিশ, যার পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় হামলা ও এ হত্যাকাণ্ড:
তাসফিয়া হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত সন্ত্রাসী রিমন, মহিন, সুজন, রহিম, বাদশাহ, আকবর এলাকায় মাদক বিক্রি, নারীদেরর উত্ত্যক্তসহ নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাঁদের এসব ঘটনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে থানায় অভিযোগ দিলেও অধিকাংশ সময়ই কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আলমের জমি থেকে বাদশাকে অতিরিক্ত মাটি কাটায় বাধা দেওয়ার জেরে সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাদশার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী রিমনের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী খুরশিদ আলমের ভাই ফিরোজের ঘরে হামলা চালায়।
ভুক্তভোগী ফিরোজ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ভাই খুরশিদ আলম জমির মাঝের অংশের মাটি বিক্রি করে। কিন্তু ক্রেতা বাদশাহ জোরপূর্বক ওই জমির সব মাটি কেটে নেয়। এসব ঘটনায় বাদশার সঙ্গে আমার বাগ্বিতণ্ডা হয়। তখন ওই স্থানে সাগর নামে একজন ছিল। ঘটনাটা সে মিটমাট করে দেবে বলে আরো কিছু লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে। বাদশাও ফোন করে কিছু লোক নিয়ে আসে। বাদশার লোকগুলো এসেই আমার শার্টের কলার চেপে ধরে। তখন আমার চার মেয়ে এগিয়ে এলে তাদের ওপর হামলা করে সন্ত্রাসী রিমন, মহিন, সুজন, রহিম, বাদশাহ, আকবর। এ ঘটনার জেরে সন্ধ্যায় ওই সন্ত্রাসীরা আমাদের বসতঘর লক্ষ করে তিন-চারটি ককটেল নিক্ষেপ করে। আমরা ঘর থেকে বের হয়ে এলে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে তারা। পরে তারা আমার অন্তঃসত্ত্বা বড় মেয়ে মুন্নি আক্তারের (৩০) পেটে লাথি মারে, আমাকে ও আমার ছোট মেয়ে রূপালিকেও (১৭) পিটিয়ে আহত করে। খবর পেয়ে পুলিশের এসআই জসিম এসে গুলির খোসা উদ্ধার করেন।’
ফিরোজ অভিযোগে আরও বলেন, ‘ঘটনায় শনিবার (৯ এপ্রিল) বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনির কাছে একটি অভিযোগপত্র লিখে নিয়ে যাই। ওসি মামলা না নিয়ে আমাকে বলেন, মামলার দরকার নেই, আমরাও তাঁদের খুঁজতেছি। পারলে আপনারাও খুঁজে তাঁদের ধরিয়ে দেন। সেদিন যদি মামলা নিয়ে ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো এবং রিমনকে গ্রেপ্তার করা হতো, তাহলে ১৩ এপ্রিল শিশু তাসফিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটত না।’
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিশু তাসফিয়া হত্যার পর থেকে আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। ইতিমধ্যে মামলায় এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তথ্য পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে অভিযান চালিয়ে সন্দেহজন আরও তিনজনকে আটক করা হয়। পরে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়।’
অভিযোগ না নেওয়ার বিষয়ে ওসি মীর জাহেদুল হক বলেন, ‘মামলা গ্রহণ করিনি এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাঁরা আমার কাছে একটি অভিযোগ নিয়ে আসেন, কিন্তু কোনো ভোটার আইডি আনেননি। ভোটার আইডি নিয়ে তাঁদের আসতে বলার পর তাঁরা আর থানায় আসেননি।’
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে সুজিত দাস (৩০) নামের এক অটোরিকশাচালকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের রানীগঞ্জ সেতু থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
৮ মিনিট আগেরাজধানীর পল্টনে বাস ও ট্রাকের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা মাঝখানে চাপা পড়লে এর আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম জাকির হোসেন ভুইয়া (৫৪)। আজ রোববার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে পল্টন মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মুমূর্ষু অবস্থায় জাকির হোসেনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক সকাল ৭টার দ
১৩ মিনিট আগেঢাকার ধামরাইয়ে থেমে থাকা একটি ট্রাককে পেছনে থেকে একটি পিকআপ ধাক্কা দেয়। এতে পিকআপের চালক ও সহকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সওগাতুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
৪১ মিনিট আগেগাজীপুরের শ্রীপুরে মহাসড়ক পারাপারের সময় দ্রুতগতির একটি বাসের চাপায় এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার সকালে উপজেলার মাদখলা গ্রামের তুলা গবেষণা ইনস্টিটিউট সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আয়ুব আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
১ ঘণ্টা আগে