‘পুলিশবিহীন’ চট্টগ্রাম নগরে ফিরতে শুরু করেছে কর্মচাঞ্চল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৪, ১৪: ৪৮

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে এবং শেখ হাসিনার পদত্যাগ পরবর্তী বিভিন্ন সহিংস ঘটনা শেষে স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসতে শুরু করেছে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন দোকানপাট, মার্কেট, বিপণিবিতান খোলার পাশাপাশি গণপরিবহন চলেছে। মানুষ যে যার মতো কর্মব্যস্ততায় রয়েছে। পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত চসিকের গাড়িসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের গাড়িগুলো এদিক-সেদিক ছুটছে। তবে পুরো নগর যেন পুলিশবিহীন। সড়কের মোড়ে নেই চিরচেনা ট্রাফিক পুলিশ, নেই পুলিশের টহল গাড়ি, থানাগুলোও পুলিশ-শূন্য। 

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও, বহদ্দারহাট, চকবাজার, ওয়াসা, কাজীর দেউড়িসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। 

সকালে মুরাদপুরে একদল জনতাকে মিছিল করতে দেখা গেছে। বেশির ভাগ দোকানি তাঁদের দোকান খুলতে শুরুর করেছেন। কিছু কিছু মার্কেট ও বিপণিবিতানও খুলেছে। বহদ্দারহাটে মোড়ে যেখানে গণপরিবহনের যাত্রী ওঠানামা করা হয়, সেখানে ছিল মানুষের জটলা। যাত্রী ওঠাতে বিভিন্ন গণপরিবহনের হাঁকডাক ছিল। এ সময় গাড়িতে চড়ে যে যার গন্তব্যে চলে যায়। বহদ্দারহাট থেকে টাইগার পাস পর্যন্ত এমন চিত্র ছিল। 

বহদ্দারহাটে ১০ নম্বর রুটের গাড়িচালক মালেক বলেন, আন্দোলনের কারণে কদিন ধরে রাস্তায় একেবারে গাড়ি নামাতে পারিনি। এখন সব স্বাভাবিক শুনে আবার রাস্তায় নেমেছি। যাত্রী মোটামুটি ভালো পাওয়া যাচ্ছে। 

গণপরিবহনের পাশাপাশি বিভিন্ন মালবাহী গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, অটোটেম্পো, প্রাইভেট কারসহ সব ধরনের যানবাহন চলতে দেখা যায়। তবে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যদের কাউকে দেখা যায়নি। নগরের বহদ্দারহাট থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত সব কটি মোড়ে ট্রাফিক বক্সগুলো ধ্বংসস্তূপের মতো পড়ে রয়েছে। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে বহদ্দারহাট মোড়ে কয়েক দফা সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এই এলাকাতেই গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিল অনেকেই। মোড়টির পাশেই রয়েছে চসিক মেয়রের বাসভবন। আরেকটু সামান্য দূরে রয়েছে চান্দগাঁও থানা। আন্দোলনের হটস্পট হিসেবে পরিচিত পাওয়া এলাকাটি এখন শান্ত থাকলেও সড়কে এলোমেলোভাবে পড়ে রয়েছে ধ্বংসযজ্ঞের নানা চিহ্ন। মোড়েই থাকা বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সটির ইটের কাঠামো জানালা-দরজাবিহীন দাঁড়িয়ে আছে। সহিংসতার সময় এই পুলিশ বক্সটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। 

এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম ও ছবিসহ ছেঁড়া ব্যানার এদিক-সেদিক পড়ে রয়েছে। বিভিন্ন দোকানপাট ভাঙচুরের চিহ্নও এখনো-সেখানে আছে। অনেক দোকান মালিক তাঁদের দোকানের ভাঙা কাচের টুকরো জড়ো করে পরিষ্কার করার চেষ্টা করছেন। আজ মঙ্গলবার চসিকের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের এলাকায় ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা গেছে। 

অন্যদিকে মেয়রের বাসভবনের প্রধান ফটকটি শেকল ও বড় তালা ঝোলানো। বহদ্দারহাট থেকে ৫০০ গজ দূরে অবস্থিত চান্দগাঁও থানা পুলিশশূন্য মূল ফটক ভেতর থেকে লাগানো। ভেতরে থানার সামনে গিয়ে কয়েকজন সাধারণ মানুষকে বসে থাকতে দেখা গেছে। 

জিইসি গরীবুল্লাহ শাহ মাজার মোড়ে অবস্থিত সেন্টমার্টিন ছাড়া দূরপাল্লার সব বাস কাউন্টারগুলো বন্ধ ছিল। সেন্টমার্টিনের কাউন্টারের সামনে একটি দূরপাল্লার বাস রাখা ছিল। 

বাস কাউন্টার লাগোয়া রয়েছে দামপাড়া পুলিশ লাইন। এগুলোর প্রধান দুটি ফটক বন্ধ করে রাখা হয়েছে। বাইরে থেকে উঁকি মেরে ভেতরে কোনো পুলিশ সদস্যকে বাহিনীর পোশাক পরিহিত ও সশস্ত্র অবস্থায় দেখা যায়নি। ভেতরে সিভিল পোশাক পরা ছয়-সাতজনকে গেটের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। সাড়ে ১০টা নাগাদ সেনাবাহিনীর দুটি গাড়ি দামপাড়া পুলিশ লাইন থেকে বের হয়ে আসতে দেখা গেছে। 

সোমবার রাতে ছাত্র-জনতার মিছিলের একটি অংশ দামপাড়া পুলিশ লাইনস ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। এ সময় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা চালানো হয়। একপর্যায়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। রাতভর এই হামলার চেষ্টা করা হয়। 

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) কাজী মো. তারেক আজিজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা আপাতত যে যার মতো করে সেফে থাকছি। নিজেদের আত্মরক্ষার চেষ্টা করছি। কোনো দায়িত্ব পালন করছি না।’ 

তবে এখন মোটামুটি পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও দুষ্কৃতকারীরা সুযোগ পেলেই পুলিশের স্থাপনায় ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করছে। মঙ্গলবার সকালেও সিএমপি উপপুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে বলে জানান মো. তারেক আজিজ। 

পুলিশ কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, সাধারণ জনগণের সঙ্গে মিশে তৃতীয় কোনো পক্ষ পুলিশের ওপর হামলা ও অস্ত্র লুট করছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুলিশের ভিন্ন বক্তব্যের পরও সালমা হত্যায় নিজ ভাষ্য়ে অনড় র‍্যাব

ফারুকীরা কীভাবে এই উপদেষ্টা পরিষদে আসে: সারজিস আলম

বাংলাদেশের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জন্য ডাক্তারের তদবিরের ঘোষণা

এই সরকারের সংবিধান সংশোধনের সুযোগ কি আছে, অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রশ্ন

বাংলাদেশ সিরিজের আগে ধাক্কা খেয়েই চলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত