চবিতে নিয়ম ভেঙে দৈনিক মজুরিতে চাকরি পেলেন সহকারী প্রক্টরের স্ত্রী

চবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৩, ২২: ১৩
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৩, ২৩: ০৮

আবারও দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ। এবার কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়া নিয়োগ পেলেন দুজন সহকারী প্রক্টরের স্ত্রী। চলতি আগস্টে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁদের নিয়োগপত্রের কপি আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে। এ ছাড়া গত দুই মাসে আরও অর্ধশতাধিক নিয়োগের খবর পাওয়া গেছে। 

নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন—সহকারী প্রক্টর অরূপ বড়ুয়ার স্ত্রী অভি বড়ুয়া, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরে রিসার্চ ফেলোর (পালি, সংস্কৃত) শূন্য পদে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে ঊর্ধ্বতন সহকারী এবং সহকারী প্রক্টর আহসানুল কবির পলাশের স্ত্রী শারমিন জাহান চবি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখার খণ্ডকালীন ইংরেজির শিক্ষক। 

আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে ইস্যু করা এক অফিস আদেশে অভি বড়ুয়াকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) সৈয়দ মনোয়ার আলী। একইদিন শারমিন জাহান ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

এর আগে গত ২৬ জুলাই সহকারী প্রক্টর আহসানুল কবির পলাশের শ্যালক ইয়াসির আরাফাত হিসাব নিয়ামক শাখায় দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নিয়োগ পান। 

দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নিয়োগে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ইউজিসি সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুমতি ছাড়া অ্যাডহক, দৈনিক মজুরি ভিত্তিক ও মাস্টাররোলে নিয়োগ না দেওয়ার নির্দেশনা দেয়। 

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের এক সদস্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপাচার্য ইউজিসির কোনো নির্দেশনার তোয়াক্কা করেন না। গত কয়েক মাসে উপাচার্য শতাধিক কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে।’ 

অভি বড়ুয়া এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পালি বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেন। আবেদনপত্রে তিনি এমএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম বলে উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে বিভাগের পরিকল্পনা কমিটি আবেদনপত্র যাচাইয়ের পর দেখে, তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হননি। তাই পরিকল্পনা কমিটি তথ্য গোপন ও ভুল তথ্য দেওয়াকে ‘জালিয়াতি’ উল্লেখ করে আবেদনপত্রটি বাতিল করে। 

এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রবেশপত্র দেয়। শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড তাঁকে নিয়োগের জন্য এক নম্বরে সুপারিশও করে। পরে সিন্ডিকেটের ৫৪৪ তম সভায় নির্বাচনী বোর্ডের এই সুপারিশও বাতিল করা হয়। 

এ বিষয়ে সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলতে পারি সিন্ডিকেট সভায়। কিন্তু উপাচার্য সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করছেন না। আমরা নির্বাচিত হওয়ার পাঁচ মাসে মাত্র একবার সিন্ডিকেট সভায় বসতে পেরেছি।’ 

শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে চবি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) নাসিমা পারভীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একজন শিক্ষক যোগদান করেছেন।’ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব বলতে আমি বাধ্য নই। শিক্ষকের দরকার হয়েছে, প্রশাসন নিয়োগ দিয়েছে।’ 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কেএম নুর আহমদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যে কোনো নিয়োগের আগে ইউজিসির আর্থিক ও প্রশাসনিক অনুমোদন লাগে। অনুমোদন পাওয়ার পর কিছু শর্ত বলা থাকে। এরপর দুটো পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। এরপর একটা প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। এটা না মানলে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটবে।’ 

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতারকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত