গুলিতে নিহত সাংবাদিক মেহেদীকে এখনো খোঁজেন মা

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৯: ২৬

‘ওই দিনের পর থেকে আমরা কেউ ভালো নেই। মেহেদীর মা এবং আমি অনেক অসুস্থ। মেহেদীর মা সারা দিন পাগলের মতো করে মেহেদীর জন্য। গতকাল (বুধবার) ঢাকার বাসা থেকে ওর মা বের হয়ে সেই ওভারব্রিজের নিচে গিয়ে বসে ছিল; যেখানে মেহেদী মারা যায়। ওভারব্রিজের নিচে গিয়ে এখনো মেহেদীকে খোঁজে।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ঢাকা টাইমসের জ্যেষ্ঠ রিপোর্টার হাসান মেহেদীর মায়ের অবস্থা এভাবেই তুলে ধরছিলেন ঢাকায় অবস্থানরত তাঁর বাবা মোশারফ হেসেন। তিনি আরও বলেন, ‘শুধু এটুকু বলতে চাই, আমরা আন্দোলনের কিছু বুঝি না, শুধু বুঝি আর কোনো মায়ের কোল খালি না হোক।’ 

গত ১৮ জুলাই ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ওভারব্রিজের নিচে সহিংসতার মধ্যে পড়ে মারা যান সাংবাদিক হাসান মেহেদী। ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে তাঁর বাবা বলেন, ‘মেহেদীর এক সহকর্মী ফোন করে বলে, ‘আংকেল, আশিক (মেহেদীর ভাই) কোথায়, ওরে একটু ফোন দিতে বলেন জরুরি।’ তখনই আমার মনে কামড় দেয়, আমি জিজ্ঞেস করি—আমার মেহেদী কোথায়? তখন ও বলে, মেহেদী অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেলে আছে। পরে আশিক ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে আমাকে ফোন করে একটা চিৎকার দিয়ে বলে মেহেদী নাই।’

সাংবাদিক হাসান মেহেদী পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামের এক সাধারণ পরিবারের সন্তান। ছোটবেলা থেকেই অভাব-অনটনে বেড়ে উঠেছেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে মেহেদী ছিলেন সবার বড়। তাই তাঁর দায়িত্বও ছিল বেশি। মেহেদীর মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। মা-বাবার চিকিৎসার পাশাপাশি মেহেদীর স্ত্রী ও দুই মেয়ে এবং ছোট দুই ভাইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় এই সাংবাদিকের পরিবার।

গত মঙ্গলবার বিকেলে মেহেদীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে মেহেদীর কবর। পাশে দাঁড়িয়ে স্থানীয়দের কাছে মেহেদীর স্মৃতিচারণা করছিলেন তাঁর খালা মাহিনুর বেগম। তিনি বলেন, ‘মেহেদী বাবায় সাংবাদিক হওয়ার পর আমরা সবাই গর্ব করতাম। হ্যার সাংবাদিকতা কইরা চিন্তা আছেলে কেমনে মা-বাপরে একটু সুখে রাকপে। বাহের চিকিৎসার লইগ্যা সব সময় ব্যস্ত থাকত। আগে দোচালা টিনের ঘর আছেলে, হ্যার বাপ-মা’র লইগ্যা বিল্ডিং করছে সাংবাদিকতার চাকরি কইরা। আর হেই সাংবাদিকতা করতে যাইয়া পোলাডা মইরা গেল, এহন কেডা দেখপে হ্যার অসুস্থ বাপ-মারে।’

স্বজনেরা জানান, মেহেদীর সাত মাস ও চার বছর বয়সী দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জে থাকতেন। মৃত্যুর পর মেহেদীর পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। মেহেদীর মা-বাবা বর্তমানে কেরানীগঞ্জে পুত্রবধূ ও নাতনিদের কাছে রয়েছেন।

মেহেদী ঢাকা টাইমসের হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিটে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতেন। এর আগে তিনি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টি ফোর এবং দৈনিক কালের কণ্ঠে কাজ করেছেন। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের রেকর্ড ভাঙল ১৪ বছর পর

ভারত-বাংলাদেশ আলোচনায় হাসিনা প্রসঙ্গে উত্তপ্ত মুহূর্ত

বাংলাদেশ শিগগিরই বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফিরবে, আশা যুক্তরাজ্যের

কেশবপুরে ২ প্রতিষ্ঠানে দুর্বৃত্তদের লুটপাট-অগ্নিসংযোগ, এলাকায় আতঙ্ক

২৫ টাকায় মাটি পরীক্ষা, ভ্রাম্যমাণ গবেষণাগার যাচ্ছে ৫৬ উপজেলায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত