নওশাদ জামিল
আপনি প্রায় দুই দশক ধরে বিদেশে বসবাস করছেন। মূলত বিদেশেই শিল্পচর্চা করছেন। নিজেকে কীভাবে (বাংলাদেশি/প্রবাসী) দেখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
আমি সব সময়ই নিজেকে বাংলাদেশি শিল্পী পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। এখানেই আমার শৈশব, কৈশোর ও বেড়ে ওঠা। এখানেই চিত্রকলা নিয়ে নব্বইয়ের দশকে চারুকলা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা। তারপর চিত্রকলা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা জাপান, নেদারল্যান্ডস ও আমেরিকায়। বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করলেও আমার শিল্পকর্ম ও সমস্ত সত্তাজুড়েই আছে বাংলাদেশ। মূলত আমার চিত্রকর্ম বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যই বহন করে। চিত্রকর্মের মধ্য
দিয়ে বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরতে চাই।
বিদেশে অনেকগুলো একক ও যৌথ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। বিদেশের অসংখ্য আর্ট গ্যালারি, বিভিন্ন শিল্পীর কাজ দেখেছেন। সম্প্রতি ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর বিশেষ উপদেষ্টা হয়েছেন। বিদেশে প্রদর্শনীর অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন শহরে অনেকগুলো প্রদর্শনীতেই অংশ নিয়েছি। আমি আন্তর্জাতিক মানের ও বড় আকারের প্রদর্শনীতে অংশ নিতেই বেশি পছন্দ করি। আন্তর্জাতিক মানের আর্ট বায়েনিয়াল, আর্ট মিউজিয়াম, বিভিন্ন গ্যালারিতে যখন প্রদর্শনী করা হয়, তখন বড় স্পেস ও সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়। তাতে শিল্পকর্ম প্রদর্শনের আধুনিক সুব্যবস্থাও করা হয়; যার ফলে আমার বড় কাজগুলো, ইনস্টলেশনগুলো প্রদর্শন করতে সুবিধা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন খ্যাতিমান ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীর সঙ্গে ছবি প্রদর্শিত হলে নিজের অবস্থান বোঝা যায়, পাশাপাশি নতুন অনেক কিছুর অংশী হওয়া যায়।সাধারণত প্রদর্শনীর স্থান, আয়তন, সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে আর্টওয়ার্ক ইনস্টল করা হয়। বিদেশে যেহেতু বড় স্পেস থাকে, সেহেতু আমি বড় আকারের ইনস্টলেশন আর্ট করি। বিদেশের গ্যালারি, শিল্প জাদুঘর, বায়েনিয়ালে বিভিন্ন মাধ্যমের কাজ প্রদর্শনের সুযোগ রয়েছে। এটা খুবই ভালো দিক।
সম্প্রতি ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আগামী দুই বছর মেয়াদে কাজ করার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আমি ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর তৃতীয় আসর আয়োজনের জন্য আয়োজক কর্তৃপক্ষকে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে প্রদর্শনীতে অংশ নিতে ইচ্ছুক শিল্পী, স্থপতি, শিল্প ইতিহাসবিদ এবং সমালোচকদের বিভিন্ন পরামর্শ ও দিকনির্দেশনাও দেব। যেখানে বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আমার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ড. কোয়ান জেফ বেইস এবং ক্যামেরুনের বারথেলেমি টগুওর নাম উল্লেখ করা হয়। কঙ্গোর রাজধানী কিনসাসায় অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী আফ্রিকা এবং আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীদের মেলবন্ধন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করি।
আপনার চিত্রকর্মে ঔপনিবেশিক, উত্তর-ঔপনিবেশিক আমলের অনেক ইঙ্গিত রয়েছে। ইতিহাসের আলোকে বৃহত্তর বাংলাকে দেখার প্রয়াস রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার আগ্রহ ও কৌতূহল সম্পর্কে জানতে চাই।
বৃহত্তর বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য আমার চিত্রকলার একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে। এ বিষয়টার প্রতি আগ্রহ ও কৌতূহল তৈরি হয়েছিল ছোটবেলাতেই। আমার নানা ইতিহাসবিদ ও শিক্ষক ছিলেন। এক অর্থে সমাজ সংস্কারক ছিলেন। আমার বাবাও প্রাথমিকভাবে শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন। তিনি পরে আইনজীবী হয়েছিলেন। তাঁরা দুজনই বাংলাদেশ অঞ্চলের গল্প ও ইতিহাস, পুরাণ আমাদের শোনাতেন। ছোটবেলায় মনের গহিনে যে বীজ বপন হয়েছিল, বড় হওয়ার পর তার ডালপালা, শেকড়বাকড়, লতাপাতাই বিস্তৃত হয়েছে ক্যানভাসে। আমি সাধারণত নিজস্ব শৈলী দিয়ে, শিল্প-প্রকরণ ও আঙ্গিক দিয়ে ইতিহাসের বাঁকে আলো ফেলতে চেষ্টা করি। মুঘল আমল, ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান শাসনামল ছাড়াও প্রাচীনকালের বৃহত্তর বাংলা অঞ্চলের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদলগুলো উপলব্ধি করি, তারপর কাগজে কিংবা ক্যানভাসে তা তুলে ধরারও চেষ্টা করি।
‘শিল্পের জন্য শিল্প’ নাকি ‘মানুষের জন্য শিল্প’—আপনি কোন ধারাকে বিশ্বাস করেন? আপনার ছবি কোন শ্রেণির মানুষের (দর্শক) জন্য?
‘শিল্পের জন্য শিল্প’ ধারাকে বিশ্বাস করি। পাশাপাশি মনে করি, সাধারণ মানুষের জন্যই আমার শিল্পকর্ম। আমার আর্ট ক্যারিয়ারের শুরুতে প্রায় ১২ হাজারের বেশি স্কেচ, জলরং, প্যাস্টেল রং এবং মিশ্র মাধ্যমে এঁকেছি। কাজগুলো কোথাও প্রকাশ করিনি। শিল্পের জন্য তা এঁকেছি। ভবিষ্যতে তা হয়তো প্রদর্শন করা হবে।
শিল্পকর্মে আপনি জাতীয়তাবাদ, নাকি আন্তর্জাতিকতাবাদে বিশ্বাসী?
শিল্পকর্মে আমি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি। বিদেশে বসবাস ও বিদেশে প্রদর্শনী বেশি করলেও দেশাত্মবোধ আমার মনেপ্রাণে সব সময় কাজ করে। বিদেশ শুধু নয়, দেশেও আমি প্রদর্শনী করেছি। দর্শনার্থী ও শিল্পপিয়াসীদের সাড়াও পেয়েছি। ভবিষ্যতে নিয়মিতই দেশে প্রদর্শনী করতে চাই, দেশের মাটিতে স্বাধীনভাবে কাজও করতে চাই।
এস এম সুলতানের চিত্রকলা আপনার বেশ প্রিয়। তাঁর কাজে আমাদের সাধারণ মানুষের বয়ান যেমন উঠে এসেছে, তেমনি নন্দনবোধের খোরাক হয়েছে, সে ক্ষেত্রে আপনার কাজের ব্যাখ্যা কী?
সুলতান বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী। তাঁর মতো আপাদমস্তক সাধক শিল্পী আমাদের আর আসেনি। তিনি আমাদের গ্রামীণ জীবন, সাধারণ মানুষ, ঐতিহ্য, লোকাচার-ব্রতকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন, চিত্রকর্মে অন্য রকমভাবে তুলে ধরেছেন। সুলতানের চিত্রকলা ও শিল্পদর্শন আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।
আপনার ক্যানভাসে তৈলচিত্র কাজকে ‘লেপা স্টেনসিল পেইন্টিংস’ বলছেন। এ ধারা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
লেপা স্টেনসিল পেইন্টিংস আমার অন্যতম সিগনেচার ধারা। এ ধারায় আমিই প্রথম কাজ করেছি, বিশ্বে তা পরিচিত করেছি। এ ধারায় সাধারণত ক্যানভাস মসৃণ থাকে না, থাকে অসম ও একটু উঁচু-নিচু ক্যানভাসের পার্শ্ব। এ ধারার কাজগুলো সাধারণত বড় আকারের হয় এবং প্রতিটি পেইন্টিংয়ের এক প্রান্তে অসম আকৃতি থাকে। লেপা স্টাইলটা আমি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল থেকে পেয়েছি। দক্ষিণ বাংলার মানুষেরা যেভাবে মাটির ঘর করে, তার দেয়ালে মাটির লেপা থাকে, গোবর, কাদামাটি ও অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে লেপা দেওয়া হয়। আমি তা থেকে উৎসাহিত হয়ে মোটা তেলরঙের আস্তর দিয়ে ক্যানভাসে প্রলেপ দিই, যা আমি স্টেনসিল প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করি। লে-আউট অনুযায়ী স্টেনসিল কাটতে আমি ক্যানভাসে আঠালো টেপ লাগিয়ে রাখি। সেগুলো খোসা ছাড়ার পর, মাটির দেয়ালে যেমন মাটির মিশ্রণ প্লাস্টার করা হয়, তেমনি আমি পুরু তেল রঙের স্তর প্রয়োগ করি।
যতদূর জানি চারুকলায় মেধাবী শিল্পী ও শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রি-বিএফএ, বিএফএ এবং এমএফএ তিন পর্যায়েই আপনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। পরে ইউরোপ-আমেরিকায় শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, পেয়েছেন খ্যাতি ও সম্মান। চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে কেন যোগ দেননি? কিংবা দেশে থাকেননি কেন?
নিজের মতো শিল্পকর্মচর্চা করতেই আগ্রহী ছিলাম বরাবরই। আমার প্রি-বিএফএ, বিএফএ এবং এমএফএ (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) তো অনেক দিন আগের কথা! এখন শুধু ভবিষ্যতের কথাই হোক। স্বাধীনভাবে শিল্পচর্চা এবং প্রদর্শনী করতে চেয়েছি। এ জন্যই পরিশ্রম, একাগ্রতা ও সাধনায় নিজের পথ করে নিয়েছি। অতীত নয় শুধু ভবিষ্যতের পরিকল্পনা আমার মুখ্য চিন্তা। আমেরিকায় থাকলেও প্রায় নিয়মিতই আসার চেষ্টা করি দেশে, ভবিষ্যৎতে দেশে বড় আকারের আর্ট স্টুডিও করার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ ছাড়া বিদেশে থাকলেও মনের গহিনে থাকে বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি।
বাংলাদেশে সমসাময়িক শিল্পচর্চা ও শিক্ষা সম্পর্কে কিছু বলুন।
চিত্রকলা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের আগে ধারণা ছিল সীমিত পর্যায়ের, বর্তমানে ওই ধ্যান-ধারণা বিস্তৃত হয়েছে। চারুকলার সীমাও বৃদ্ধি পেয়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। চিত্রকলার নতুন ভাষার সন্ধান করছেন তরুণেরা। বিভিন্ন মাধ্যমেও কাজ করছেন দারুণভাবে। তরুণদের প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়। বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না পারলেও আধুনিক শিল্পকলার ভাষা ও ব্যাপ্তি বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলো এক দশক ধরে প্রসারিত করেছে। আমাদের চারুকলার পৃষ্ঠপোষকতা, চর্চা ও প্রদর্শনী বৃদ্ধি করেছে শুধু তারাই। দর্শনার্থী ও সমঝদারও বেড়েছে বাংলাদেশে। সর্বোপরি বাংলাদেশের শিল্পকলা অনেক প্রসারিত হয়েছে শুধু নন-গভর্নমেন্টাল অর্গানাইজেশনগুলোর কারণে।
আপনি প্রায় দুই দশক ধরে বিদেশে বসবাস করছেন। মূলত বিদেশেই শিল্পচর্চা করছেন। নিজেকে কীভাবে (বাংলাদেশি/প্রবাসী) দেখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
আমি সব সময়ই নিজেকে বাংলাদেশি শিল্পী পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। এখানেই আমার শৈশব, কৈশোর ও বেড়ে ওঠা। এখানেই চিত্রকলা নিয়ে নব্বইয়ের দশকে চারুকলা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা। তারপর চিত্রকলা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা জাপান, নেদারল্যান্ডস ও আমেরিকায়। বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করলেও আমার শিল্পকর্ম ও সমস্ত সত্তাজুড়েই আছে বাংলাদেশ। মূলত আমার চিত্রকর্ম বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যই বহন করে। চিত্রকর্মের মধ্য
দিয়ে বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরতে চাই।
বিদেশে অনেকগুলো একক ও যৌথ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। বিদেশের অসংখ্য আর্ট গ্যালারি, বিভিন্ন শিল্পীর কাজ দেখেছেন। সম্প্রতি ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর বিশেষ উপদেষ্টা হয়েছেন। বিদেশে প্রদর্শনীর অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন শহরে অনেকগুলো প্রদর্শনীতেই অংশ নিয়েছি। আমি আন্তর্জাতিক মানের ও বড় আকারের প্রদর্শনীতে অংশ নিতেই বেশি পছন্দ করি। আন্তর্জাতিক মানের আর্ট বায়েনিয়াল, আর্ট মিউজিয়াম, বিভিন্ন গ্যালারিতে যখন প্রদর্শনী করা হয়, তখন বড় স্পেস ও সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়। তাতে শিল্পকর্ম প্রদর্শনের আধুনিক সুব্যবস্থাও করা হয়; যার ফলে আমার বড় কাজগুলো, ইনস্টলেশনগুলো প্রদর্শন করতে সুবিধা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন খ্যাতিমান ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীর সঙ্গে ছবি প্রদর্শিত হলে নিজের অবস্থান বোঝা যায়, পাশাপাশি নতুন অনেক কিছুর অংশী হওয়া যায়।সাধারণত প্রদর্শনীর স্থান, আয়তন, সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে আর্টওয়ার্ক ইনস্টল করা হয়। বিদেশে যেহেতু বড় স্পেস থাকে, সেহেতু আমি বড় আকারের ইনস্টলেশন আর্ট করি। বিদেশের গ্যালারি, শিল্প জাদুঘর, বায়েনিয়ালে বিভিন্ন মাধ্যমের কাজ প্রদর্শনের সুযোগ রয়েছে। এটা খুবই ভালো দিক।
সম্প্রতি ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আগামী দুই বছর মেয়াদে কাজ করার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আমি ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য ‘কঙ্গো বায়েনিয়াল’-এর তৃতীয় আসর আয়োজনের জন্য আয়োজক কর্তৃপক্ষকে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে প্রদর্শনীতে অংশ নিতে ইচ্ছুক শিল্পী, স্থপতি, শিল্প ইতিহাসবিদ এবং সমালোচকদের বিভিন্ন পরামর্শ ও দিকনির্দেশনাও দেব। যেখানে বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আমার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ড. কোয়ান জেফ বেইস এবং ক্যামেরুনের বারথেলেমি টগুওর নাম উল্লেখ করা হয়। কঙ্গোর রাজধানী কিনসাসায় অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী আফ্রিকা এবং আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীদের মেলবন্ধন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করি।
আপনার চিত্রকর্মে ঔপনিবেশিক, উত্তর-ঔপনিবেশিক আমলের অনেক ইঙ্গিত রয়েছে। ইতিহাসের আলোকে বৃহত্তর বাংলাকে দেখার প্রয়াস রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার আগ্রহ ও কৌতূহল সম্পর্কে জানতে চাই।
বৃহত্তর বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য আমার চিত্রকলার একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে। এ বিষয়টার প্রতি আগ্রহ ও কৌতূহল তৈরি হয়েছিল ছোটবেলাতেই। আমার নানা ইতিহাসবিদ ও শিক্ষক ছিলেন। এক অর্থে সমাজ সংস্কারক ছিলেন। আমার বাবাও প্রাথমিকভাবে শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন। তিনি পরে আইনজীবী হয়েছিলেন। তাঁরা দুজনই বাংলাদেশ অঞ্চলের গল্প ও ইতিহাস, পুরাণ আমাদের শোনাতেন। ছোটবেলায় মনের গহিনে যে বীজ বপন হয়েছিল, বড় হওয়ার পর তার ডালপালা, শেকড়বাকড়, লতাপাতাই বিস্তৃত হয়েছে ক্যানভাসে। আমি সাধারণত নিজস্ব শৈলী দিয়ে, শিল্প-প্রকরণ ও আঙ্গিক দিয়ে ইতিহাসের বাঁকে আলো ফেলতে চেষ্টা করি। মুঘল আমল, ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান শাসনামল ছাড়াও প্রাচীনকালের বৃহত্তর বাংলা অঞ্চলের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদলগুলো উপলব্ধি করি, তারপর কাগজে কিংবা ক্যানভাসে তা তুলে ধরারও চেষ্টা করি।
‘শিল্পের জন্য শিল্প’ নাকি ‘মানুষের জন্য শিল্প’—আপনি কোন ধারাকে বিশ্বাস করেন? আপনার ছবি কোন শ্রেণির মানুষের (দর্শক) জন্য?
‘শিল্পের জন্য শিল্প’ ধারাকে বিশ্বাস করি। পাশাপাশি মনে করি, সাধারণ মানুষের জন্যই আমার শিল্পকর্ম। আমার আর্ট ক্যারিয়ারের শুরুতে প্রায় ১২ হাজারের বেশি স্কেচ, জলরং, প্যাস্টেল রং এবং মিশ্র মাধ্যমে এঁকেছি। কাজগুলো কোথাও প্রকাশ করিনি। শিল্পের জন্য তা এঁকেছি। ভবিষ্যতে তা হয়তো প্রদর্শন করা হবে।
শিল্পকর্মে আপনি জাতীয়তাবাদ, নাকি আন্তর্জাতিকতাবাদে বিশ্বাসী?
শিল্পকর্মে আমি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি। বিদেশে বসবাস ও বিদেশে প্রদর্শনী বেশি করলেও দেশাত্মবোধ আমার মনেপ্রাণে সব সময় কাজ করে। বিদেশ শুধু নয়, দেশেও আমি প্রদর্শনী করেছি। দর্শনার্থী ও শিল্পপিয়াসীদের সাড়াও পেয়েছি। ভবিষ্যতে নিয়মিতই দেশে প্রদর্শনী করতে চাই, দেশের মাটিতে স্বাধীনভাবে কাজও করতে চাই।
এস এম সুলতানের চিত্রকলা আপনার বেশ প্রিয়। তাঁর কাজে আমাদের সাধারণ মানুষের বয়ান যেমন উঠে এসেছে, তেমনি নন্দনবোধের খোরাক হয়েছে, সে ক্ষেত্রে আপনার কাজের ব্যাখ্যা কী?
সুলতান বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী। তাঁর মতো আপাদমস্তক সাধক শিল্পী আমাদের আর আসেনি। তিনি আমাদের গ্রামীণ জীবন, সাধারণ মানুষ, ঐতিহ্য, লোকাচার-ব্রতকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন, চিত্রকর্মে অন্য রকমভাবে তুলে ধরেছেন। সুলতানের চিত্রকলা ও শিল্পদর্শন আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।
আপনার ক্যানভাসে তৈলচিত্র কাজকে ‘লেপা স্টেনসিল পেইন্টিংস’ বলছেন। এ ধারা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
লেপা স্টেনসিল পেইন্টিংস আমার অন্যতম সিগনেচার ধারা। এ ধারায় আমিই প্রথম কাজ করেছি, বিশ্বে তা পরিচিত করেছি। এ ধারায় সাধারণত ক্যানভাস মসৃণ থাকে না, থাকে অসম ও একটু উঁচু-নিচু ক্যানভাসের পার্শ্ব। এ ধারার কাজগুলো সাধারণত বড় আকারের হয় এবং প্রতিটি পেইন্টিংয়ের এক প্রান্তে অসম আকৃতি থাকে। লেপা স্টাইলটা আমি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল থেকে পেয়েছি। দক্ষিণ বাংলার মানুষেরা যেভাবে মাটির ঘর করে, তার দেয়ালে মাটির লেপা থাকে, গোবর, কাদামাটি ও অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে লেপা দেওয়া হয়। আমি তা থেকে উৎসাহিত হয়ে মোটা তেলরঙের আস্তর দিয়ে ক্যানভাসে প্রলেপ দিই, যা আমি স্টেনসিল প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করি। লে-আউট অনুযায়ী স্টেনসিল কাটতে আমি ক্যানভাসে আঠালো টেপ লাগিয়ে রাখি। সেগুলো খোসা ছাড়ার পর, মাটির দেয়ালে যেমন মাটির মিশ্রণ প্লাস্টার করা হয়, তেমনি আমি পুরু তেল রঙের স্তর প্রয়োগ করি।
যতদূর জানি চারুকলায় মেধাবী শিল্পী ও শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রি-বিএফএ, বিএফএ এবং এমএফএ তিন পর্যায়েই আপনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। পরে ইউরোপ-আমেরিকায় শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, পেয়েছেন খ্যাতি ও সম্মান। চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে কেন যোগ দেননি? কিংবা দেশে থাকেননি কেন?
নিজের মতো শিল্পকর্মচর্চা করতেই আগ্রহী ছিলাম বরাবরই। আমার প্রি-বিএফএ, বিএফএ এবং এমএফএ (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) তো অনেক দিন আগের কথা! এখন শুধু ভবিষ্যতের কথাই হোক। স্বাধীনভাবে শিল্পচর্চা এবং প্রদর্শনী করতে চেয়েছি। এ জন্যই পরিশ্রম, একাগ্রতা ও সাধনায় নিজের পথ করে নিয়েছি। অতীত নয় শুধু ভবিষ্যতের পরিকল্পনা আমার মুখ্য চিন্তা। আমেরিকায় থাকলেও প্রায় নিয়মিতই আসার চেষ্টা করি দেশে, ভবিষ্যৎতে দেশে বড় আকারের আর্ট স্টুডিও করার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ ছাড়া বিদেশে থাকলেও মনের গহিনে থাকে বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি।
বাংলাদেশে সমসাময়িক শিল্পচর্চা ও শিক্ষা সম্পর্কে কিছু বলুন।
চিত্রকলা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের আগে ধারণা ছিল সীমিত পর্যায়ের, বর্তমানে ওই ধ্যান-ধারণা বিস্তৃত হয়েছে। চারুকলার সীমাও বৃদ্ধি পেয়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। চিত্রকলার নতুন ভাষার সন্ধান করছেন তরুণেরা। বিভিন্ন মাধ্যমেও কাজ করছেন দারুণভাবে। তরুণদের প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়। বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না পারলেও আধুনিক শিল্পকলার ভাষা ও ব্যাপ্তি বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলো এক দশক ধরে প্রসারিত করেছে। আমাদের চারুকলার পৃষ্ঠপোষকতা, চর্চা ও প্রদর্শনী বৃদ্ধি করেছে শুধু তারাই। দর্শনার্থী ও সমঝদারও বেড়েছে বাংলাদেশে। সর্বোপরি বাংলাদেশের শিল্পকলা অনেক প্রসারিত হয়েছে শুধু নন-গভর্নমেন্টাল অর্গানাইজেশনগুলোর কারণে।
চারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
৭ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
১৪ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
১৪ দিন আগেদ্য ভেজিটেরিয়ানের পর হান কাঙের পরের উপন্যাস ছিল ‘দ্য উইন্ড ব্লোজ, গো’। এই উপন্যাস লেখার সময়ই ঘটে বিপত্তি! হান অনুভব করেন তিনি আর লিখতে পারছেন না। গত বছর নিজের পঞ্চম উপন্যাস ‘গ্রিক লেসন’ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হলে স্পেনের এল-পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি।
১০ অক্টোবর ২০২৪