জোবায়ের রাজু
ড্রয়ার খুলে চিঠির স্তূপ বের করল চৈতি। গুনে গুনে দেখল মোট ৪৮টি চিঠি। এই ৪৮টি চিঠি ৪৮ জনের পাঠানো বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু কোনো ছেলেকেই মনে ধরেনি চৈতির। তাই সবিনয়ে সবগুলো প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সৌরভকে দেখার পর তার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল। ফলে সে বুঝতে পেরেছে এই পৃথিবীতে প্রেম বলে সত্যি সত্যি কোনো এক অদ্ভুত গভীর বিশেষণ আসলেই আছে।
চৈতির বাবার মাইগ্রেনের সমস্যা অনেক দিনের। বাবার জন্য গতকাল নিকটস্থ দোলন ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে যাওয়ার পর সৌরভ ছেলেটিকে দেখে দুচোখ মুগ্ধতায় ভরে গেল চৈতির। এত সুন্দর ছেলেও তাহলে বাংলাদেশে আছে! সৌরভের অসম্ভব সুন্দর দুটো চোখ ব্যাকুল করে চৈতিকে। ছেলেদের চোখেও এত মায়া থাকতে পারে, জানত না সে।
মাইগ্রেনের ওষুধ কিনে টাকা দেওয়ার সময় ক্যাশে বসা সৌরভ মিষ্টি করে হেসে বলল, ‘ধন্যবাদ! আবার আসবেন।’ একজন দোকানদারের এমন ব্যবহারে চৈতি বিস্মিত হতে হতে ভাবে, ছেলেটির আচরণ এত চমৎকার!
বাসায় ফেরার সময় সারাটা পথ সে অবলীলায় কেবল সৌরভকেই ভেবেছে। আশ্চর্যের কথা হচ্ছে, চৈতি রাতে সৌরভকে স্বপ্নে দেখেছে। কোনো এক নিভৃত পল্লির ভাঙা পথের রাঙা ধুলোয় সৌরভের হাত ধরে হাঁটছে। ওই হাত দুটি এত কোমল যে চৈতির ইচ্ছে হলো সারাটি জীবন ওই দুটি হাতে নিজের হাত রেখে বেঁচে থাকতে। স্বপ্নের এইটুকু স্মৃতি মনে থাকলেও পরের অংশগুলো আর মনে করতে পারছে না।
দিন যেতে থাকে। চৈতির অনুভবে সৌরভ ক্রমান্বয়ে কল্পনার এক স্বপ্নযুবক হয়ে ওঠে। ফলে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সৌরভদের ফার্মেসির ওই দিকে হুটহাট চলে আসে সে। শুধু একপলক সৌরভকে দেখার তীব্র বাসনায় চৈতির স্বাপ্নিক চোখ দুটো ব্যাকুল হয়ে ওঠে। রাতে ফেসবুকে সে খুঁজতে থাকে সৌরভকে। ইংরেজি হরফে সৌরভের নামটি লিখে সার্চ দিতেই হাজার হাজার আইডি ছোট্ট মোবাইলের চারকোনা পর্দায় হাজির। দুরুদুরু বুকে প্রোফাইলের দিকে তাকায়। নাহ্, ছেলেগুলোর চেহারায় দোলন ফার্মেসির সৌরভকে শনাক্ত করতে পারে না চৈতি। এবার বাংলা হরফে সৌরভের নাম লিখে সার্চ দেয়। ফলাফল এবারও শূন্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় সৌরভকে খুঁজে পায় না চৈতি। নিরাশ হয়ে ফোনটা রেখে দেয়। ভিন্ন কায়দা মাথায় আসে। ওষুধ কেনার ছলে দোলন ফার্মেসিতে গিয়ে শুধু একবার সৌরভকে দেখার ফন্দি আঁটে। পরদিন থেকে শুরু হয় চৈতির এই নতুন মিশন। সত্যি সত্যি দরকার নেই, তবু ওষুধ কেনার নাম করে নিত্যদিন দোলন ফার্মেসিতে আসা-যাওয়া চলতে থাকে চৈতির। কখনো সর্দির ওষুধ, কখনো গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, কখনো বা বমির। অপ্রয়োজনীয় এসব ওষুধ কেনার অজুহাতে সৌরভের কাছে দৈনিক একবার করে আসাটা দিন দিন স্বভাবে পরিণত হয়। চৈতির হাত থেকে সৌরভ যখন টাকাটা গ্রহণ করে, এক গভীর শিহরণে প্রতিবার তার বুকের জমিনের মাটিও কেঁপে ওঠে। সেই কাঁপনে কত যে না বলা কথার আকুতি লুকিয়ে থাকে, তা কেউ জানে না।
দুই.
আগে চৈতির ড্রয়ার ভরে যেত বিভিন্ন ছেলের পাঠানো প্রেমপত্রে। এখন চৈতির ড্রয়ার ভরে যায় ট্যাবলেটের পাতায় পাতায়। অহেতুক এসব ট্যাবলেটের পাতা কিনে আনার ব্যাকুলতা সে নিজের মধ্যেই চেপে রাখে। রোজ একটি করে ট্যাবলেটের পাতা আসে এই গোপন ড্রয়ারে।
আজ পেটব্যথার ওষুধ কেনার টাকাটা সৌরভের হাতে দিতেই সৌরভ চৈতির হাতে একখানা বিয়ের কার্ড দিয়ে বলল, ‘এই নিন, বিয়ের কার্ড। আগামী শনিবার আমার বিয়ে। বধূয়া কমিউনিটি সেন্টারে আসবেন অবশ্যই।’
সৌরভের কাণ্ড দেখে মাথায় যেন বাজ পড়ল চৈতির। এ কী শুনল সে! সৌরভের বিয়ে! মিথ্যে নয় তো! কিন্তু মিথ্যে হবে কেন? হাতে জলজ্যান্ত একখানা বিয়ের কার্ড সাক্ষী। মিথ্যের কোনো প্রশ্নই আসে না।
চৈতি আমতা-আমতা করে বলল, ‘আপনার বিয়ে?’ সৌরভ মুচকি হেসে বলল, ‘জি। আপনি আমাদের নিয়মিত কাস্টমার। তাই আপনাকে ইনভাইট করলাম। আশা করি আসবেন। আমার হবু বউয়ের নাম অশ্রু। অশ্রু অর্থ কী জানেন? চোখের পানি।’
চৈতির চোখে সত্যি সত্যি পানি এসে যাওয়ার অবস্থা। সৌরভকে সেটা বুঝতে না দিয়ে দ্রুত বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। ফেরার সময় সারাটি পথ সে গোপনে বারবার চোখের পানি মুছে নেয়। এ জীবনে সৌরভকে আর পাওয়া হবে না।
বাড়িতে এসে ড্রয়ার খুলে সবগুলো ট্যাবলেটের পাতা বের করল। তারপর কাঁদতে কাঁদতে সেগুলো ফেলে দিল বাড়ির পুকুরে। আজ থেকে সে আর দোলন ফার্মেসিতে যাবে না ওষুধ কেনার অভিনয় করতে। তার সে পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
টেবিলে পড়ে থাকা সৌরভের বিয়ের কার্ডের দিকে তাকাতেই বুকটা কষ্টে ভাঙতে থাকল। এই বিয়ের কার্ডে সৌরভের অনাগত বৈবাহিক জীবনের সংবাদ। কিন্তু সেই সংবাদ চৈতির জন্য বড় বেদনার। ওই বিয়ের কার্ড দেখলে তার বেদনা বাড়বে। তাই সে ঠিক করল বিয়ের কার্ডটি এখনই ছিঁড়ে কুচিকুচি করে ফেলবে।
ছাদে আসে চৈতি। সৌরভের বিয়ের কার্ডটি ছিঁড়ে ফেলার আগে একবার ভাবল খাম থেকে কার্ডটি বের করে পড়বে। এ কথা ভাবতে গিয়েও চোখ জলে ভিজে গেল। তবু কাঁপা হাতে খাম খুলে বিয়ের কার্ডটি বের করেই টাশকি খেল। এ তো সৌরভের বিয়ের কার্ড নয়। গত এক বছর আগের অন্য কারও বিয়ের পুরোনো কার্ড। কার্ডের ভাঁজে একটি চিরকুট। সৌরভ চিরকুটে লিখেছে, ‘আপনার চোখ দুটো যত সুন্দর, তার চেয়েও অদ্ভুত চোখের ভাষা। মেয়েদের চোখের ভাষা বোঝার ক্ষমতা আমার আছে। তাই যতবার আপনার চোখের দিকে তাকাই, ততবারই আপনার মনের অব্যক্ত গোপন হাহাকার বুঝতে পারি। যেমনটি বুঝতে পারি রোজদিন আপনার অহেতুক ওষুধ কেনার ভণিতা। এত দ্বিধাদ্বন্দ্বে না ভুগে আমাকেই তো সরাসরি বলতে পারতেন ভালোবাসার কথা। আমি কি আপনাকে ফিরিয়ে দিতাম? মোটেও না। আচ্ছা, সত্যি করে বলেন তো, এই ভুয়া বিয়ের কার্ড পেয়ে আপনার কি বিন্দু পরিমাণও কষ্ট হয়নি? ইচ্ছে করেই আপনাকে এই কষ্ট দিয়েছি। থাক সে কথা। অনেক দিন হলো আপনাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি। এখনো বন্ধুর তালিকায় জায়গা দেননি। “সুখী মানুষ” আইডিটি আমার।’
প্রবল এক উত্তেজনায় চৈতির বুক ছটফট করতে শুরু করল। ছাদে আনা হয়নি মোবাইল ফোনটা। দৌড়ে নিচে নামতে থাকে চৈতি। সিঁড়ির মাঝখান বারবার আসতেই পা ফসকে পড়ে যায়। গোড়ালিতে ব্যথা লাগে বেশ। তবু খোঁড়াতে খোঁড়াতে গিয়ে মোবাইলটা বের করে ‘সুখী মানুষ’ আইডি খুঁজে বের করে। দুই মাস আগের পাঠানো রিকোয়েস্ট চোখে পড়েনি চৈতির। দ্রুত একসেপ্ট করে নেয়। প্রোফাইলে সৌরভের ছবিটার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তৎক্ষণাৎ একটা মেসেজও লিখে পাঠায়, ‘কেমন আছেন? আচ্ছা, পায়ে ব্যথা পেয়েছি। কী ওষুধ খাব?’ কিছুক্ষণ পর ওপার থেকে সৌরভের জবাব আসে, ‘এখনো ওষুধ কেনার ভণিতা করছেন? হা হা হা।’ ভীষণ লজ্জা পেল চৈতি। সে কী করে ওপারের সৌরভকে বোঝাবে যে এখন তার সত্যি সত্যি ওষুধ লাগবে। পায়ের ব্যথার ওষুধ।
ড্রয়ার খুলে চিঠির স্তূপ বের করল চৈতি। গুনে গুনে দেখল মোট ৪৮টি চিঠি। এই ৪৮টি চিঠি ৪৮ জনের পাঠানো বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু কোনো ছেলেকেই মনে ধরেনি চৈতির। তাই সবিনয়ে সবগুলো প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সৌরভকে দেখার পর তার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল। ফলে সে বুঝতে পেরেছে এই পৃথিবীতে প্রেম বলে সত্যি সত্যি কোনো এক অদ্ভুত গভীর বিশেষণ আসলেই আছে।
চৈতির বাবার মাইগ্রেনের সমস্যা অনেক দিনের। বাবার জন্য গতকাল নিকটস্থ দোলন ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে যাওয়ার পর সৌরভ ছেলেটিকে দেখে দুচোখ মুগ্ধতায় ভরে গেল চৈতির। এত সুন্দর ছেলেও তাহলে বাংলাদেশে আছে! সৌরভের অসম্ভব সুন্দর দুটো চোখ ব্যাকুল করে চৈতিকে। ছেলেদের চোখেও এত মায়া থাকতে পারে, জানত না সে।
মাইগ্রেনের ওষুধ কিনে টাকা দেওয়ার সময় ক্যাশে বসা সৌরভ মিষ্টি করে হেসে বলল, ‘ধন্যবাদ! আবার আসবেন।’ একজন দোকানদারের এমন ব্যবহারে চৈতি বিস্মিত হতে হতে ভাবে, ছেলেটির আচরণ এত চমৎকার!
বাসায় ফেরার সময় সারাটা পথ সে অবলীলায় কেবল সৌরভকেই ভেবেছে। আশ্চর্যের কথা হচ্ছে, চৈতি রাতে সৌরভকে স্বপ্নে দেখেছে। কোনো এক নিভৃত পল্লির ভাঙা পথের রাঙা ধুলোয় সৌরভের হাত ধরে হাঁটছে। ওই হাত দুটি এত কোমল যে চৈতির ইচ্ছে হলো সারাটি জীবন ওই দুটি হাতে নিজের হাত রেখে বেঁচে থাকতে। স্বপ্নের এইটুকু স্মৃতি মনে থাকলেও পরের অংশগুলো আর মনে করতে পারছে না।
দিন যেতে থাকে। চৈতির অনুভবে সৌরভ ক্রমান্বয়ে কল্পনার এক স্বপ্নযুবক হয়ে ওঠে। ফলে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সৌরভদের ফার্মেসির ওই দিকে হুটহাট চলে আসে সে। শুধু একপলক সৌরভকে দেখার তীব্র বাসনায় চৈতির স্বাপ্নিক চোখ দুটো ব্যাকুল হয়ে ওঠে। রাতে ফেসবুকে সে খুঁজতে থাকে সৌরভকে। ইংরেজি হরফে সৌরভের নামটি লিখে সার্চ দিতেই হাজার হাজার আইডি ছোট্ট মোবাইলের চারকোনা পর্দায় হাজির। দুরুদুরু বুকে প্রোফাইলের দিকে তাকায়। নাহ্, ছেলেগুলোর চেহারায় দোলন ফার্মেসির সৌরভকে শনাক্ত করতে পারে না চৈতি। এবার বাংলা হরফে সৌরভের নাম লিখে সার্চ দেয়। ফলাফল এবারও শূন্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় সৌরভকে খুঁজে পায় না চৈতি। নিরাশ হয়ে ফোনটা রেখে দেয়। ভিন্ন কায়দা মাথায় আসে। ওষুধ কেনার ছলে দোলন ফার্মেসিতে গিয়ে শুধু একবার সৌরভকে দেখার ফন্দি আঁটে। পরদিন থেকে শুরু হয় চৈতির এই নতুন মিশন। সত্যি সত্যি দরকার নেই, তবু ওষুধ কেনার নাম করে নিত্যদিন দোলন ফার্মেসিতে আসা-যাওয়া চলতে থাকে চৈতির। কখনো সর্দির ওষুধ, কখনো গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, কখনো বা বমির। অপ্রয়োজনীয় এসব ওষুধ কেনার অজুহাতে সৌরভের কাছে দৈনিক একবার করে আসাটা দিন দিন স্বভাবে পরিণত হয়। চৈতির হাত থেকে সৌরভ যখন টাকাটা গ্রহণ করে, এক গভীর শিহরণে প্রতিবার তার বুকের জমিনের মাটিও কেঁপে ওঠে। সেই কাঁপনে কত যে না বলা কথার আকুতি লুকিয়ে থাকে, তা কেউ জানে না।
দুই.
আগে চৈতির ড্রয়ার ভরে যেত বিভিন্ন ছেলের পাঠানো প্রেমপত্রে। এখন চৈতির ড্রয়ার ভরে যায় ট্যাবলেটের পাতায় পাতায়। অহেতুক এসব ট্যাবলেটের পাতা কিনে আনার ব্যাকুলতা সে নিজের মধ্যেই চেপে রাখে। রোজ একটি করে ট্যাবলেটের পাতা আসে এই গোপন ড্রয়ারে।
আজ পেটব্যথার ওষুধ কেনার টাকাটা সৌরভের হাতে দিতেই সৌরভ চৈতির হাতে একখানা বিয়ের কার্ড দিয়ে বলল, ‘এই নিন, বিয়ের কার্ড। আগামী শনিবার আমার বিয়ে। বধূয়া কমিউনিটি সেন্টারে আসবেন অবশ্যই।’
সৌরভের কাণ্ড দেখে মাথায় যেন বাজ পড়ল চৈতির। এ কী শুনল সে! সৌরভের বিয়ে! মিথ্যে নয় তো! কিন্তু মিথ্যে হবে কেন? হাতে জলজ্যান্ত একখানা বিয়ের কার্ড সাক্ষী। মিথ্যের কোনো প্রশ্নই আসে না।
চৈতি আমতা-আমতা করে বলল, ‘আপনার বিয়ে?’ সৌরভ মুচকি হেসে বলল, ‘জি। আপনি আমাদের নিয়মিত কাস্টমার। তাই আপনাকে ইনভাইট করলাম। আশা করি আসবেন। আমার হবু বউয়ের নাম অশ্রু। অশ্রু অর্থ কী জানেন? চোখের পানি।’
চৈতির চোখে সত্যি সত্যি পানি এসে যাওয়ার অবস্থা। সৌরভকে সেটা বুঝতে না দিয়ে দ্রুত বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। ফেরার সময় সারাটি পথ সে গোপনে বারবার চোখের পানি মুছে নেয়। এ জীবনে সৌরভকে আর পাওয়া হবে না।
বাড়িতে এসে ড্রয়ার খুলে সবগুলো ট্যাবলেটের পাতা বের করল। তারপর কাঁদতে কাঁদতে সেগুলো ফেলে দিল বাড়ির পুকুরে। আজ থেকে সে আর দোলন ফার্মেসিতে যাবে না ওষুধ কেনার অভিনয় করতে। তার সে পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
টেবিলে পড়ে থাকা সৌরভের বিয়ের কার্ডের দিকে তাকাতেই বুকটা কষ্টে ভাঙতে থাকল। এই বিয়ের কার্ডে সৌরভের অনাগত বৈবাহিক জীবনের সংবাদ। কিন্তু সেই সংবাদ চৈতির জন্য বড় বেদনার। ওই বিয়ের কার্ড দেখলে তার বেদনা বাড়বে। তাই সে ঠিক করল বিয়ের কার্ডটি এখনই ছিঁড়ে কুচিকুচি করে ফেলবে।
ছাদে আসে চৈতি। সৌরভের বিয়ের কার্ডটি ছিঁড়ে ফেলার আগে একবার ভাবল খাম থেকে কার্ডটি বের করে পড়বে। এ কথা ভাবতে গিয়েও চোখ জলে ভিজে গেল। তবু কাঁপা হাতে খাম খুলে বিয়ের কার্ডটি বের করেই টাশকি খেল। এ তো সৌরভের বিয়ের কার্ড নয়। গত এক বছর আগের অন্য কারও বিয়ের পুরোনো কার্ড। কার্ডের ভাঁজে একটি চিরকুট। সৌরভ চিরকুটে লিখেছে, ‘আপনার চোখ দুটো যত সুন্দর, তার চেয়েও অদ্ভুত চোখের ভাষা। মেয়েদের চোখের ভাষা বোঝার ক্ষমতা আমার আছে। তাই যতবার আপনার চোখের দিকে তাকাই, ততবারই আপনার মনের অব্যক্ত গোপন হাহাকার বুঝতে পারি। যেমনটি বুঝতে পারি রোজদিন আপনার অহেতুক ওষুধ কেনার ভণিতা। এত দ্বিধাদ্বন্দ্বে না ভুগে আমাকেই তো সরাসরি বলতে পারতেন ভালোবাসার কথা। আমি কি আপনাকে ফিরিয়ে দিতাম? মোটেও না। আচ্ছা, সত্যি করে বলেন তো, এই ভুয়া বিয়ের কার্ড পেয়ে আপনার কি বিন্দু পরিমাণও কষ্ট হয়নি? ইচ্ছে করেই আপনাকে এই কষ্ট দিয়েছি। থাক সে কথা। অনেক দিন হলো আপনাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি। এখনো বন্ধুর তালিকায় জায়গা দেননি। “সুখী মানুষ” আইডিটি আমার।’
প্রবল এক উত্তেজনায় চৈতির বুক ছটফট করতে শুরু করল। ছাদে আনা হয়নি মোবাইল ফোনটা। দৌড়ে নিচে নামতে থাকে চৈতি। সিঁড়ির মাঝখান বারবার আসতেই পা ফসকে পড়ে যায়। গোড়ালিতে ব্যথা লাগে বেশ। তবু খোঁড়াতে খোঁড়াতে গিয়ে মোবাইলটা বের করে ‘সুখী মানুষ’ আইডি খুঁজে বের করে। দুই মাস আগের পাঠানো রিকোয়েস্ট চোখে পড়েনি চৈতির। দ্রুত একসেপ্ট করে নেয়। প্রোফাইলে সৌরভের ছবিটার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তৎক্ষণাৎ একটা মেসেজও লিখে পাঠায়, ‘কেমন আছেন? আচ্ছা, পায়ে ব্যথা পেয়েছি। কী ওষুধ খাব?’ কিছুক্ষণ পর ওপার থেকে সৌরভের জবাব আসে, ‘এখনো ওষুধ কেনার ভণিতা করছেন? হা হা হা।’ ভীষণ লজ্জা পেল চৈতি। সে কী করে ওপারের সৌরভকে বোঝাবে যে এখন তার সত্যি সত্যি ওষুধ লাগবে। পায়ের ব্যথার ওষুধ।
চারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
৭ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
১৪ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
১৪ দিন আগেদ্য ভেজিটেরিয়ানের পর হান কাঙের পরের উপন্যাস ছিল ‘দ্য উইন্ড ব্লোজ, গো’। এই উপন্যাস লেখার সময়ই ঘটে বিপত্তি! হান অনুভব করেন তিনি আর লিখতে পারছেন না। গত বছর নিজের পঞ্চম উপন্যাস ‘গ্রিক লেসন’ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হলে স্পেনের এল-পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি।
১০ অক্টোবর ২০২৪