আরিফ আবেদ আদিত্য
নন-ইংলিশ স্পিকিং দেশের কান যেভাবে ইংরেজি শুনে অভ্যস্ত, তা প্রথম ধাক্কাতেই ভিরমি খাবে বিলাতে এসে। আমারও তেমনটি হয়েছে। ব্রিটিশদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বারবার শুধু মনে হচ্ছিল স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কী ইংরেজি ভাষা শিখলাম! কীসের আইইএলটিএস দিলাম! সবকিছু অনর্থ মনে হচ্ছিল, যখন নেটিভ ইংলিশরা আমার সঠিক ব্যাকরণে বলা কথা বুঝতে না পেরে বারবার বলছিল—পারডন! মাফ করবে—কী বললে? এরা কথায় কথায় পারডন, অ্যাপোলজি ইত্যাদি শব্দ বলবেই। আর আলাপের মাঝখানে পারডন, অ্যাপোলজি ইত্যাদি বললে কার আর বেশি কথা বলার খেই থাকে। ফলে, মুখ এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়—নিজেকে তখন বোবা বোবা লাগে। প্রথম কয়েক সপ্তাহ তাই ‘ইয়েস’ ‘নো’ ‘ভেরি গুড’ দিয়েই চালিয়ে নিতে হয়।
নেটিভ ব্রিটিশরা এত দ্রুত ও এমন উচ্চারণে কথা বলে যে মনে হয় ভিন্ন কোনো ভাষায় কথা বলছে। চলতি পথে কারও সঙ্গে চোখাচোখি হলে এরা একটা মুচকি হাসি ফেরত দেবে—কখনো কখনো ‘হাই’ বলে সম্ভাষণ করবে। আর সামান্য পরিচিত হলে এরা বলে ‘হ্যালো মেট’ বা ‘হাই দেয়ার’। আবার কেউ কেউ বলে—আর ইউ অল রাইট? (এরা উচ্চারণ করে এভাবে ‘আ’অয়াইট’)—এই উচ্চারণ ধরতেই আমার এক সপ্তাহ লেগেছিল। ইংল্যান্ডের যত উত্তরে যাওয়া হবে, ততই উচ্চারণের এই পার্থক্য ধরা পড়ে।
ইংল্যান্ডে ইংরেজি ভাষার উচ্চারণ বৈচিত্র্যের কারণে নিজেকে প্রথম দিকে মনে হয়েছে ভিনগ্রহের কোনো আগন্তুক। মাঝে মাঝে মনে হতো, এই জীবনে আমি কোনো দিন ইংরেজি ভাষা শুনিনি, শেখা তো দূরের কথা। প্রথম কয়েক দিন নেটিভ ব্রিটিশদের অর্ধ-উচ্চারিত শব্দ ও বাক্য শুনে প্রায় বোবা হয়ে যেতাম। এদিকে আমি যতই গ্র্যামার-অ্যাকসেন্ট ঠিক করে কথা বলি, এরা এমন ভান করত, আমি যেন কোনো অজানা ভাষায় কমিউনিকেট করছি। অথচ ক্লাস-লেকচারে প্রফেসরদের কথা ঠিকই বুঝতাম, নোট নিতাম। যাহোক, ধীরে ধীরে আয়ত্তে আসতে থাকে।
লন্ডনের টেমস নদীর উত্তর পাড়ে পড়েছে ইস্ট-মিডল্যান্ড এলাকা এবং দক্ষিণ পাড়ে পড়েছে কেন্ট। আমি থাকি দক্ষিণাঞ্চলে। ইংরেজি ভাষার ডায়ালেক্ট এতই বৈচিত্র্যময় যে এ নিয়ে নানা কৌতুকের চল আছে। যেমন, তিন আমেরিকান, অস্ট্রেলিয়ান ও ব্রিটিশ এক বারে বসে গল্প করছে।
প্রথমে আমেরিকান বলল, জানো, আমেরিকা কত বড়? তুমি গাড়িতে চার দিন ধরে একই দিকে যাবে—চার দিন পরও তুমি একই প্রদেশে থাকবে।
তা শোনে অস্ট্রেলিয়ান বলল, আরে, এ আর তেমন কী? অস্ট্রেলিয়া কেমন জানো? চার ঘণ্টা ধরে প্লেনে যাবে; তারপরও দেখবে তুমি একই প্রদেশে আছ।
তখন ব্রিটিশ অট্টহাসি দিতে দিতে বলে, তোমাদের কথা শুনে হাসি থামাতেই পারছি না। শোনো, ইংল্যান্ডে তুমি মাত্র দুই ঘণ্টা হাঁটলে ইংরেজি ভাষার দশ রকমের উচ্চারণ পাবে।
উপভাষা বুঝো হে? উপভাষার ভূগোল জেনে গপ্পো দাও প্লিজ!
ইংল্যান্ডের নেটিভ স্পিকারদের ভাষার ক্ষেত্রে মিডল-নর্দার্ন-সাউথ-ইস্ট-ওয়েস্ট অঞ্চলের যেমন আলাদা উচ্চারণ আছে, তেমনি ব্ল্যাক কান্ট্রি, বার্মিংহাম, নটিংহ্যাম, স্কটিশ, আইরিশ ইত্যাদি আরও নানা উপভাষা আছে। এখানে ইংরেজি উচ্চারণ শুনেই ধরে নেওয়া যায়, ব্যক্তিটি কোন অঞ্চলের বাসিন্দা। আফ্রিকান-আরব-ইন্ডিয়ান-চাইনিজদের ইংরেজি উচ্চারণের কথা বলাই বাহুল্য—নিজেদের দেশের বাক্ভঙ্গি এরা ব্যবহার করে। ফলে খুব সহজেই বলে দেওয়া যায় কে কোন বংশোদ্ভূত জাতি। আবার ইউরোপের বাসিন্দা যেমন, রোমানিয়া, পোলিশ, ফরাসি এদের ইংরেজি উচ্চারণও আলাদা।
সেন্ট্রাল লন্ডনে যেখানে বিগবেন টাওয়ার দৃশ্যমান, টেমস নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থিত—সেখানে ইস্ট-মিডল্যান্ড এলাকায় জন্ম আধুনিক ইংরেজি ভাষার জনক জেফ্রি চসারের (১৩৪০-১৪০০)। নিজের এলাকার সর্বসাধারণের মুখের ভাষাতেই তিনি ১৩৮৭-১৪০০ সময়কালে লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত গল্পসংগ্রহ ‘দ্য ক্যানটারবারি টেইলস’। তখন মানুষের মুখের বুলিতে সাহিত্য রচনা করা যায়—তা কল্পনাও করা যেত না। ইস্ট-মিডল্যান্ড এলাকার ‘বুলি’ বা স্থানীয় ভাষা গড়ে উঠেছিল নরমান-শাসনের (১০৬৬) আগেই। স্মর্তব্য, ইংল্যান্ডের ইতিহাস পড়ানো হয় এই ১০৬৬ থেকে।
টেমসের উত্তর পাড়ের সাধারণ মানুষেরা আনুমানিক ১১৫০ থেকে ১৫০০ সাল পর্যন্ত তাদের দৈনন্দিন জীবনে, চলাফেরায়, হাটবাজারে পরস্পরের সঙ্গে ভাব বিনিময়ের জন্য এই ভাষা ব্যবহার করত। চসারের সময়ে রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে গেলেও ক্যাথলিক চার্চের প্রভাব থাকায় ইস্ট-মিডল্যান্ড এলাকার মানুষকেও আনুষ্ঠানিকতা বা ভ্রমণ, সবই করতে হয়েছে লাতিন ভাষায় (কারণ, ধর্মীয় শাস্ত্র ছিল লাতিন ভাষায়)। যদিও শাসক নরমানদের ফরমান করা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ভাষা ফরাসিতে।
বাংলা ভাষা বা সর্বসাধারণের ‘বুলি’ মধ্যযুগে ঠিক এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল। মোগল শাসকদের দাপ্তরিক ভাষা ছিল ফারসি এবং বেদ-গীতা-উপনিষদ ছিল সংস্কৃত ভাষায়। ফলে, সাহিত্যের ভাষা সংগত কারণেই ফারসি-সংস্কৃত মিশ্রিত হয়েছে। অন্যদিকে, ব্রিটিশ আমলে ফারসির পরিবর্তে নতুন শাসকের ভাষা সরকারি দপ্তরে স্থান করে নেয়। ফারসি-সংস্কৃতের মধ্যে তখন ইংরেজির প্রবেশ ঘটে (ইউরোপীয় অন্যান্য দেশের শব্দও যুক্ত হয়)। কলোনিয়াল যুগে বাঙালি মুসলমান সমাজ সাহিত্যচর্চায় এগিয়ে এলে বাংলা ভাষায় যোগ হয় আরবি শব্দের।
যাহোক, ইংল্যান্ডে নরমান-শাসন অবসান হলে লন্ডনের ইস্ট-মিডল্যান্ড এলাকার অনানুষ্ঠানিক এই ভাষাই পরে পুরো ইংল্যান্ডে ‘মিডল ইংলিশ ভাষা’ হিসেবে আনুষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। আধুনিক ইংরেজি ভাষা মূলত এটিকে অনুসরণ করেই গড়ে উঠেছে। বিবিসি যে সংবাদ উপস্থাপন করে সেটা এই মিডল ইংলিশেই—তাই এই ইংরেজি আমাদের সহজে বোধগম্য হয়। আমেরিকান ইংরেজি ও ব্রিটিশ ইংরেজিতে বড় পার্থক্য হলো এই উচ্চারণে। ব্রিটিশরা অত্যন্ত সুমধুর বাক্ভঙ্গিতে ইংরেজি বলে—যেটি আমেরিকানরা করে না। ব্রিটিশদের সুর তুলে ইংরেজি বলার স্টাইল অনেকের কাছে প্রথম প্রথম কর্কশ মনে হলেও পরে সয়ে যায়—বিশেষ করে ককনিদের উচ্চারণ। তবে অভিজাত শ্রেণির ইংলিশ বলার ধরন বেশ সুশ্রাব্য বৈকি!
ঔপনিবেশিক ফরাসি ও লাতিন ছুড়ে ফেলে দিয়ে চসার টেমসের উত্তর পাড়ের এলাকার মানুষের মুখের ভাষায় সাহিত্য রচনার মাধ্যমে কেবল তৎকালীন রোমান ও নরমান-ফরাসিদের উপনিবেশবাদের অবদমনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেননি; মূলত তাঁর প্রচেষ্টা আধুনিক ইংরেজি ভাষার গোড়াপত্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যার কারণে পরে আমরা পৃথিবী বিখ্যাত সব ইংরেজ কবি-সাহিত্যিক পেয়েছি। অপরদিকে, মধ্যযুগে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠার জন্য কবি আব্দুল হাকিমকে লড়াই করতে হয়েছে। আধুনিক যুগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বাংলাকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন। বাংলা কথ্যরীতি বা ‘বুলি’ অন্য ভাষাকে ‘অপর’ না করে আপন করে নিয়ে নিজের মতো করে একটা ছাঁচ দিয়েছে। বাংলা ভাষা নানান যুগ ও শাসনামলে আগত/প্রযুক্ত বিদেশি ভাষাকে আত্মসাৎ করেছে, বাংলা ভাষার এমন বিদেশি ভাষাকে নিপুণভাবে হজম করার অপূর্ব ক্ষমতায় মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না।
আরও পড়ুন:
নন-ইংলিশ স্পিকিং দেশের কান যেভাবে ইংরেজি শুনে অভ্যস্ত, তা প্রথম ধাক্কাতেই ভিরমি খাবে বিলাতে এসে। আমারও তেমনটি হয়েছে। ব্রিটিশদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বারবার শুধু মনে হচ্ছিল স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কী ইংরেজি ভাষা শিখলাম! কীসের আইইএলটিএস দিলাম! সবকিছু অনর্থ মনে হচ্ছিল, যখন নেটিভ ইংলিশরা আমার সঠিক ব্যাকরণে বলা কথা বুঝতে না পেরে বারবার বলছিল—পারডন! মাফ করবে—কী বললে? এরা কথায় কথায় পারডন, অ্যাপোলজি ইত্যাদি শব্দ বলবেই। আর আলাপের মাঝখানে পারডন, অ্যাপোলজি ইত্যাদি বললে কার আর বেশি কথা বলার খেই থাকে। ফলে, মুখ এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়—নিজেকে তখন বোবা বোবা লাগে। প্রথম কয়েক সপ্তাহ তাই ‘ইয়েস’ ‘নো’ ‘ভেরি গুড’ দিয়েই চালিয়ে নিতে হয়।
নেটিভ ব্রিটিশরা এত দ্রুত ও এমন উচ্চারণে কথা বলে যে মনে হয় ভিন্ন কোনো ভাষায় কথা বলছে। চলতি পথে কারও সঙ্গে চোখাচোখি হলে এরা একটা মুচকি হাসি ফেরত দেবে—কখনো কখনো ‘হাই’ বলে সম্ভাষণ করবে। আর সামান্য পরিচিত হলে এরা বলে ‘হ্যালো মেট’ বা ‘হাই দেয়ার’। আবার কেউ কেউ বলে—আর ইউ অল রাইট? (এরা উচ্চারণ করে এভাবে ‘আ’অয়াইট’)—এই উচ্চারণ ধরতেই আমার এক সপ্তাহ লেগেছিল। ইংল্যান্ডের যত উত্তরে যাওয়া হবে, ততই উচ্চারণের এই পার্থক্য ধরা পড়ে।
ইংল্যান্ডে ইংরেজি ভাষার উচ্চারণ বৈচিত্র্যের কারণে নিজেকে প্রথম দিকে মনে হয়েছে ভিনগ্রহের কোনো আগন্তুক। মাঝে মাঝে মনে হতো, এই জীবনে আমি কোনো দিন ইংরেজি ভাষা শুনিনি, শেখা তো দূরের কথা। প্রথম কয়েক দিন নেটিভ ব্রিটিশদের অর্ধ-উচ্চারিত শব্দ ও বাক্য শুনে প্রায় বোবা হয়ে যেতাম। এদিকে আমি যতই গ্র্যামার-অ্যাকসেন্ট ঠিক করে কথা বলি, এরা এমন ভান করত, আমি যেন কোনো অজানা ভাষায় কমিউনিকেট করছি। অথচ ক্লাস-লেকচারে প্রফেসরদের কথা ঠিকই বুঝতাম, নোট নিতাম। যাহোক, ধীরে ধীরে আয়ত্তে আসতে থাকে।
লন্ডনের টেমস নদীর উত্তর পাড়ে পড়েছে ইস্ট-মিডল্যান্ড এলাকা এবং দক্ষিণ পাড়ে পড়েছে কেন্ট। আমি থাকি দক্ষিণাঞ্চলে। ইংরেজি ভাষার ডায়ালেক্ট এতই বৈচিত্র্যময় যে এ নিয়ে নানা কৌতুকের চল আছে। যেমন, তিন আমেরিকান, অস্ট্রেলিয়ান ও ব্রিটিশ এক বারে বসে গল্প করছে।
প্রথমে আমেরিকান বলল, জানো, আমেরিকা কত বড়? তুমি গাড়িতে চার দিন ধরে একই দিকে যাবে—চার দিন পরও তুমি একই প্রদেশে থাকবে।
তা শোনে অস্ট্রেলিয়ান বলল, আরে, এ আর তেমন কী? অস্ট্রেলিয়া কেমন জানো? চার ঘণ্টা ধরে প্লেনে যাবে; তারপরও দেখবে তুমি একই প্রদেশে আছ।
তখন ব্রিটিশ অট্টহাসি দিতে দিতে বলে, তোমাদের কথা শুনে হাসি থামাতেই পারছি না। শোনো, ইংল্যান্ডে তুমি মাত্র দুই ঘণ্টা হাঁটলে ইংরেজি ভাষার দশ রকমের উচ্চারণ পাবে।
উপভাষা বুঝো হে? উপভাষার ভূগোল জেনে গপ্পো দাও প্লিজ!
ইংল্যান্ডের নেটিভ স্পিকারদের ভাষার ক্ষেত্রে মিডল-নর্দার্ন-সাউথ-ইস্ট-ওয়েস্ট অঞ্চলের যেমন আলাদা উচ্চারণ আছে, তেমনি ব্ল্যাক কান্ট্রি, বার্মিংহাম, নটিংহ্যাম, স্কটিশ, আইরিশ ইত্যাদি আরও নানা উপভাষা আছে। এখানে ইংরেজি উচ্চারণ শুনেই ধরে নেওয়া যায়, ব্যক্তিটি কোন অঞ্চলের বাসিন্দা। আফ্রিকান-আরব-ইন্ডিয়ান-চাইনিজদের ইংরেজি উচ্চারণের কথা বলাই বাহুল্য—নিজেদের দেশের বাক্ভঙ্গি এরা ব্যবহার করে। ফলে খুব সহজেই বলে দেওয়া যায় কে কোন বংশোদ্ভূত জাতি। আবার ইউরোপের বাসিন্দা যেমন, রোমানিয়া, পোলিশ, ফরাসি এদের ইংরেজি উচ্চারণও আলাদা।
সেন্ট্রাল লন্ডনে যেখানে বিগবেন টাওয়ার দৃশ্যমান, টেমস নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থিত—সেখানে ইস্ট-মিডল্যান্ড এলাকায় জন্ম আধুনিক ইংরেজি ভাষার জনক জেফ্রি চসারের (১৩৪০-১৪০০)। নিজের এলাকার সর্বসাধারণের মুখের ভাষাতেই তিনি ১৩৮৭-১৪০০ সময়কালে লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত গল্পসংগ্রহ ‘দ্য ক্যানটারবারি টেইলস’। তখন মানুষের মুখের বুলিতে সাহিত্য রচনা করা যায়—তা কল্পনাও করা যেত না। ইস্ট-মিডল্যান্ড এলাকার ‘বুলি’ বা স্থানীয় ভাষা গড়ে উঠেছিল নরমান-শাসনের (১০৬৬) আগেই। স্মর্তব্য, ইংল্যান্ডের ইতিহাস পড়ানো হয় এই ১০৬৬ থেকে।
টেমসের উত্তর পাড়ের সাধারণ মানুষেরা আনুমানিক ১১৫০ থেকে ১৫০০ সাল পর্যন্ত তাদের দৈনন্দিন জীবনে, চলাফেরায়, হাটবাজারে পরস্পরের সঙ্গে ভাব বিনিময়ের জন্য এই ভাষা ব্যবহার করত। চসারের সময়ে রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে গেলেও ক্যাথলিক চার্চের প্রভাব থাকায় ইস্ট-মিডল্যান্ড এলাকার মানুষকেও আনুষ্ঠানিকতা বা ভ্রমণ, সবই করতে হয়েছে লাতিন ভাষায় (কারণ, ধর্মীয় শাস্ত্র ছিল লাতিন ভাষায়)। যদিও শাসক নরমানদের ফরমান করা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ভাষা ফরাসিতে।
বাংলা ভাষা বা সর্বসাধারণের ‘বুলি’ মধ্যযুগে ঠিক এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল। মোগল শাসকদের দাপ্তরিক ভাষা ছিল ফারসি এবং বেদ-গীতা-উপনিষদ ছিল সংস্কৃত ভাষায়। ফলে, সাহিত্যের ভাষা সংগত কারণেই ফারসি-সংস্কৃত মিশ্রিত হয়েছে। অন্যদিকে, ব্রিটিশ আমলে ফারসির পরিবর্তে নতুন শাসকের ভাষা সরকারি দপ্তরে স্থান করে নেয়। ফারসি-সংস্কৃতের মধ্যে তখন ইংরেজির প্রবেশ ঘটে (ইউরোপীয় অন্যান্য দেশের শব্দও যুক্ত হয়)। কলোনিয়াল যুগে বাঙালি মুসলমান সমাজ সাহিত্যচর্চায় এগিয়ে এলে বাংলা ভাষায় যোগ হয় আরবি শব্দের।
যাহোক, ইংল্যান্ডে নরমান-শাসন অবসান হলে লন্ডনের ইস্ট-মিডল্যান্ড এলাকার অনানুষ্ঠানিক এই ভাষাই পরে পুরো ইংল্যান্ডে ‘মিডল ইংলিশ ভাষা’ হিসেবে আনুষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। আধুনিক ইংরেজি ভাষা মূলত এটিকে অনুসরণ করেই গড়ে উঠেছে। বিবিসি যে সংবাদ উপস্থাপন করে সেটা এই মিডল ইংলিশেই—তাই এই ইংরেজি আমাদের সহজে বোধগম্য হয়। আমেরিকান ইংরেজি ও ব্রিটিশ ইংরেজিতে বড় পার্থক্য হলো এই উচ্চারণে। ব্রিটিশরা অত্যন্ত সুমধুর বাক্ভঙ্গিতে ইংরেজি বলে—যেটি আমেরিকানরা করে না। ব্রিটিশদের সুর তুলে ইংরেজি বলার স্টাইল অনেকের কাছে প্রথম প্রথম কর্কশ মনে হলেও পরে সয়ে যায়—বিশেষ করে ককনিদের উচ্চারণ। তবে অভিজাত শ্রেণির ইংলিশ বলার ধরন বেশ সুশ্রাব্য বৈকি!
ঔপনিবেশিক ফরাসি ও লাতিন ছুড়ে ফেলে দিয়ে চসার টেমসের উত্তর পাড়ের এলাকার মানুষের মুখের ভাষায় সাহিত্য রচনার মাধ্যমে কেবল তৎকালীন রোমান ও নরমান-ফরাসিদের উপনিবেশবাদের অবদমনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেননি; মূলত তাঁর প্রচেষ্টা আধুনিক ইংরেজি ভাষার গোড়াপত্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যার কারণে পরে আমরা পৃথিবী বিখ্যাত সব ইংরেজ কবি-সাহিত্যিক পেয়েছি। অপরদিকে, মধ্যযুগে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠার জন্য কবি আব্দুল হাকিমকে লড়াই করতে হয়েছে। আধুনিক যুগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বাংলাকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন। বাংলা কথ্যরীতি বা ‘বুলি’ অন্য ভাষাকে ‘অপর’ না করে আপন করে নিয়ে নিজের মতো করে একটা ছাঁচ দিয়েছে। বাংলা ভাষা নানান যুগ ও শাসনামলে আগত/প্রযুক্ত বিদেশি ভাষাকে আত্মসাৎ করেছে, বাংলা ভাষার এমন বিদেশি ভাষাকে নিপুণভাবে হজম করার অপূর্ব ক্ষমতায় মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না।
আরও পড়ুন:
চারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
৭ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
১৪ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
১৪ দিন আগেদ্য ভেজিটেরিয়ানের পর হান কাঙের পরের উপন্যাস ছিল ‘দ্য উইন্ড ব্লোজ, গো’। এই উপন্যাস লেখার সময়ই ঘটে বিপত্তি! হান অনুভব করেন তিনি আর লিখতে পারছেন না। গত বছর নিজের পঞ্চম উপন্যাস ‘গ্রিক লেসন’ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হলে স্পেনের এল-পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি।
১০ অক্টোবর ২০২৪