রাশেদ নিজাম
মানুষকে বোকা বানানোতে ওস্তাদ শিশির! রাতে যতক্ষণ না ঘুমায়, তার চেয়ে বেশি চিন্তা করে নতুন নতুন কী ফন্দি আঁটা যায়, মানুষকে কীভাবে বোকা বানানো যায়। পরিবারের সদস্য ছাড়াও বন্ধুবান্ধব, ক্যাম্পাস সব জায়গায় শিশিরের এই খবর রটে গেছে।
গত কয়েক দিন ধরে মাথায় ঢুকেছে নতুন এক আইডিয়া। বাসার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে, রিকশা আসামাত্রই ডাক দেয়—‘এই খালি!’ মজাটা অন্য জায়গায়। যে রিকশাগুলোতে যাত্রী থাকে, শুধু ওগুলোকেই ডাকে। যেন কেউ নেই। যাত্রীদের অভিব্যক্তিগুলো খুবই দেখার মতো হয়, সেটাতেই তো মজা।
সেদিন সকালে এক রিকশাওয়ালা বিরক্ত হয়ে বলল, ‘মামা, দেখেন না যাত্রী আছে, বারবার ডাকতাছেন ক্যান!’ খুবই অবাক চেহারা নিয়ে শিশির উত্তর দেয়, ‘কই, আমি তো ফাঁকা দেখছি। কেউ নেই।’
মুহূর্তেই সিটের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলানো হাসি চালকের। যিনি বসে ছিলেন, তাঁর অবস্থা ছিল করুণ। নিজের গায়ে-মুখে হাত দিয়ে উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার কী আপ্রাণ চেষ্টা!
ক্যাম্পাসে এসে বন্ধুদের চুটিয়ে সেই গল্পই বলল শিশির। সবাই হেসে কুটিকুটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ অবশ্য এমনিতেই হাসাহাসির বছরই হয়। সবই নতুন। খোলা পরিবেশ, ক্লাসের প্যারা নেই। নতুন বন্ধু-বান্ধবী। পড়াশোনার চাপ নেই। অল্পতেই হেসে খুন হওয়া যায়।
এমন মজা করা নিয়ে বাসায় যে বিচার যায় না এমন নয়। বছর তিনেক আগের কথা। এলাকার এক মুরব্বিকে ভুল ঠিকানা দিয়ে সিএনজি অটোরিকশায় তুলে দেওয়ার ঘটনা তো খুবই জটিল রূপ নিয়েছিল। দুই বাড়ি পরের হাশেম আংকেল যাবেন আসাদগেটে। তেমন হাঁটতে পারেন না। চোখেও কম দেখেন। হাসপাতালে যাওয়ার কথা চেকআপ করাতে। সেখানেই তাঁর ছেলে ডাক্তার দেখাবেন। তাঁকে ফার্মগেটের কথা বলে অটোরিকশায় তুলে দিয়েছিল শিশির। মুরব্বির কাছে মোবাইল ফোনও ছিল না।
সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও সেদিন হাশেম আংকেল বাসায় ফেরেননি। এলাকায় খোঁজাখুঁজি শুরু হলো। মাইকিং শুরু হলো। পরে রাত ৯টার দিকে তাঁকে পাওয়া গেল ফার্মগেট এলাকায়। বাসায় ফেরার পথে ওনার এক ভাতিজা তাঁকে দেখতে পেয়ে নিয়ে আসেন। ইচ্ছে করেই কাজটা করেছিল শিশির। কিন্তু ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে হাশেম সাহেবের বয়সের সুযোগ নিয়েছিল সে। সবাইকে বলেছে, আসাদগেটকে ফার্মগেট শুনেছিল।
ঘটনার তিন মাস পরের এক রাত। মাথায় ঘোমটা দিয়ে বাসায় ঢুকছিলেন গলির শেষের বাড়ির নিম্নি আপু। হঠাৎ কী মাথায় এল, চোর চোর বলে চিৎকার শুরু করল শিশির। নিজের বাসায় ঢোকার সময় এমন অবস্থার মুখে পড়বেন কখনো ভাবেননি তিনি। হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিলেন। পুরো এলাকা গরম। পরে অন্ধকারে চোর মনে হয়েছিল বলে কোনোমতে পার পায় ওই যাত্রায়।
বাবা-মায়ের বিয়ের ১৪ বছর পরের সন্তান শিশির। মাঝে মারা গেছে এক বোন ও ভাই। তাই তেমন কড়া শাসনও করেন না ব্যাংকার বাবা ও শিক্ষিকা মা। আর ছোটবেলা থেকে মারামারি করারও তেমন অভিযোগ নেই তার বিরুদ্ধে। ক্লাস থ্রিতে সাইকেল, এইটে গেম খেলার পিএসপি সবই পেয়েছে চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই। এক সন্তানের সুবিধার যা যা নেওয়া দরকার সবই আদায় করতে পটু সে।
আজ সন্ধ্যায় বাসায় ঢুকে মায়ের মন ভার দেখে কিছুটা চুপসে যায় শিশির। মাথায় তখন রাজ্যের চিন্তা। গত এক সপ্তাহে কী কী দুষ্টুমি করেছে, তার একটা রিভিশনও দিয়ে ফেলে। কেউ কি অভিযোগ করেছে? মায়ের স্কুলে কিছু হয়েছে?
রাতে খাওয়ার সময় প্রথমে মুখ খুললেন মা, ‘তুই নাকি রিকশায় মানুষ থাকার পরেও খালি বলে ডাকিস? বড় হয়েছিস, মানুষজনকে বিব্রত করে কী মজা পাস!’
বাবার মুখে প্রথমে হাসি থাকলেও কিছুটা বিরক্তির চিহ্ন। এক ফাঁকে পরিস্থিতি বুঝে নিল চোখ ঘুরিয়ে। মা বললেন, ‘আর করবি না বাবা! এখন বড় হয়েছিস। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাস, বাদ দে।’
এই সুযোগেই ছিল শিশির। ‘মা, প্রতিদিন অনেক দেরি হয় ক্লাসে যেতে। বন্ধুবান্ধব অনেকেরই বাইক আছে। আমার একটা লাগবে।’
বাবা মুখ খুললেন, ‘ঠিক আছে, বাইক কিনে দেব। কিন্তু আর কারও সঙ্গে দুষ্টুমি করবি না। রাজি?’
নিমকষ্টে সম্মতি শিশিরের।
পরের দিনই চকচকে একটি লাল মোটরসাইকেল কেনা হলো। বাসায় আনার পরপরই খালাকে দেখাতে যাওয়ার জন্য ছুটল। চোখে-মুখে আনন্দ। কাল ক্যাম্পাসে যাবে নতুন বাইক নিয়ে।
সংসদ ভবনের মোড়টা ঘুরতেই বড় বাসটায় ধাক্কা। লাল রক্তে নতুন মোটরসাইকেলটি ভিজে রক্তবর্ণ।
পেরিয়েছে দশ দিন। কাটেনি শোক, কিন্তু সময় কাটাতে যেতে হবে স্কুলে। সকালে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে শিশিরের মা যেই ডাক দিলেন—‘এই খালি!’ মনে হলো খালি রিকশাটায়ও বুঝি ছেলেটা বসে আছে!
মানুষকে বোকা বানানোতে ওস্তাদ শিশির! রাতে যতক্ষণ না ঘুমায়, তার চেয়ে বেশি চিন্তা করে নতুন নতুন কী ফন্দি আঁটা যায়, মানুষকে কীভাবে বোকা বানানো যায়। পরিবারের সদস্য ছাড়াও বন্ধুবান্ধব, ক্যাম্পাস সব জায়গায় শিশিরের এই খবর রটে গেছে।
গত কয়েক দিন ধরে মাথায় ঢুকেছে নতুন এক আইডিয়া। বাসার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে, রিকশা আসামাত্রই ডাক দেয়—‘এই খালি!’ মজাটা অন্য জায়গায়। যে রিকশাগুলোতে যাত্রী থাকে, শুধু ওগুলোকেই ডাকে। যেন কেউ নেই। যাত্রীদের অভিব্যক্তিগুলো খুবই দেখার মতো হয়, সেটাতেই তো মজা।
সেদিন সকালে এক রিকশাওয়ালা বিরক্ত হয়ে বলল, ‘মামা, দেখেন না যাত্রী আছে, বারবার ডাকতাছেন ক্যান!’ খুবই অবাক চেহারা নিয়ে শিশির উত্তর দেয়, ‘কই, আমি তো ফাঁকা দেখছি। কেউ নেই।’
মুহূর্তেই সিটের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলানো হাসি চালকের। যিনি বসে ছিলেন, তাঁর অবস্থা ছিল করুণ। নিজের গায়ে-মুখে হাত দিয়ে উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার কী আপ্রাণ চেষ্টা!
ক্যাম্পাসে এসে বন্ধুদের চুটিয়ে সেই গল্পই বলল শিশির। সবাই হেসে কুটিকুটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ অবশ্য এমনিতেই হাসাহাসির বছরই হয়। সবই নতুন। খোলা পরিবেশ, ক্লাসের প্যারা নেই। নতুন বন্ধু-বান্ধবী। পড়াশোনার চাপ নেই। অল্পতেই হেসে খুন হওয়া যায়।
এমন মজা করা নিয়ে বাসায় যে বিচার যায় না এমন নয়। বছর তিনেক আগের কথা। এলাকার এক মুরব্বিকে ভুল ঠিকানা দিয়ে সিএনজি অটোরিকশায় তুলে দেওয়ার ঘটনা তো খুবই জটিল রূপ নিয়েছিল। দুই বাড়ি পরের হাশেম আংকেল যাবেন আসাদগেটে। তেমন হাঁটতে পারেন না। চোখেও কম দেখেন। হাসপাতালে যাওয়ার কথা চেকআপ করাতে। সেখানেই তাঁর ছেলে ডাক্তার দেখাবেন। তাঁকে ফার্মগেটের কথা বলে অটোরিকশায় তুলে দিয়েছিল শিশির। মুরব্বির কাছে মোবাইল ফোনও ছিল না।
সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও সেদিন হাশেম আংকেল বাসায় ফেরেননি। এলাকায় খোঁজাখুঁজি শুরু হলো। মাইকিং শুরু হলো। পরে রাত ৯টার দিকে তাঁকে পাওয়া গেল ফার্মগেট এলাকায়। বাসায় ফেরার পথে ওনার এক ভাতিজা তাঁকে দেখতে পেয়ে নিয়ে আসেন। ইচ্ছে করেই কাজটা করেছিল শিশির। কিন্তু ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে হাশেম সাহেবের বয়সের সুযোগ নিয়েছিল সে। সবাইকে বলেছে, আসাদগেটকে ফার্মগেট শুনেছিল।
ঘটনার তিন মাস পরের এক রাত। মাথায় ঘোমটা দিয়ে বাসায় ঢুকছিলেন গলির শেষের বাড়ির নিম্নি আপু। হঠাৎ কী মাথায় এল, চোর চোর বলে চিৎকার শুরু করল শিশির। নিজের বাসায় ঢোকার সময় এমন অবস্থার মুখে পড়বেন কখনো ভাবেননি তিনি। হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিলেন। পুরো এলাকা গরম। পরে অন্ধকারে চোর মনে হয়েছিল বলে কোনোমতে পার পায় ওই যাত্রায়।
বাবা-মায়ের বিয়ের ১৪ বছর পরের সন্তান শিশির। মাঝে মারা গেছে এক বোন ও ভাই। তাই তেমন কড়া শাসনও করেন না ব্যাংকার বাবা ও শিক্ষিকা মা। আর ছোটবেলা থেকে মারামারি করারও তেমন অভিযোগ নেই তার বিরুদ্ধে। ক্লাস থ্রিতে সাইকেল, এইটে গেম খেলার পিএসপি সবই পেয়েছে চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই। এক সন্তানের সুবিধার যা যা নেওয়া দরকার সবই আদায় করতে পটু সে।
আজ সন্ধ্যায় বাসায় ঢুকে মায়ের মন ভার দেখে কিছুটা চুপসে যায় শিশির। মাথায় তখন রাজ্যের চিন্তা। গত এক সপ্তাহে কী কী দুষ্টুমি করেছে, তার একটা রিভিশনও দিয়ে ফেলে। কেউ কি অভিযোগ করেছে? মায়ের স্কুলে কিছু হয়েছে?
রাতে খাওয়ার সময় প্রথমে মুখ খুললেন মা, ‘তুই নাকি রিকশায় মানুষ থাকার পরেও খালি বলে ডাকিস? বড় হয়েছিস, মানুষজনকে বিব্রত করে কী মজা পাস!’
বাবার মুখে প্রথমে হাসি থাকলেও কিছুটা বিরক্তির চিহ্ন। এক ফাঁকে পরিস্থিতি বুঝে নিল চোখ ঘুরিয়ে। মা বললেন, ‘আর করবি না বাবা! এখন বড় হয়েছিস। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাস, বাদ দে।’
এই সুযোগেই ছিল শিশির। ‘মা, প্রতিদিন অনেক দেরি হয় ক্লাসে যেতে। বন্ধুবান্ধব অনেকেরই বাইক আছে। আমার একটা লাগবে।’
বাবা মুখ খুললেন, ‘ঠিক আছে, বাইক কিনে দেব। কিন্তু আর কারও সঙ্গে দুষ্টুমি করবি না। রাজি?’
নিমকষ্টে সম্মতি শিশিরের।
পরের দিনই চকচকে একটি লাল মোটরসাইকেল কেনা হলো। বাসায় আনার পরপরই খালাকে দেখাতে যাওয়ার জন্য ছুটল। চোখে-মুখে আনন্দ। কাল ক্যাম্পাসে যাবে নতুন বাইক নিয়ে।
সংসদ ভবনের মোড়টা ঘুরতেই বড় বাসটায় ধাক্কা। লাল রক্তে নতুন মোটরসাইকেলটি ভিজে রক্তবর্ণ।
পেরিয়েছে দশ দিন। কাটেনি শোক, কিন্তু সময় কাটাতে যেতে হবে স্কুলে। সকালে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে শিশিরের মা যেই ডাক দিলেন—‘এই খালি!’ মনে হলো খালি রিকশাটায়ও বুঝি ছেলেটা বসে আছে!
চারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
৭ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
১৪ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
১৪ দিন আগেদ্য ভেজিটেরিয়ানের পর হান কাঙের পরের উপন্যাস ছিল ‘দ্য উইন্ড ব্লোজ, গো’। এই উপন্যাস লেখার সময়ই ঘটে বিপত্তি! হান অনুভব করেন তিনি আর লিখতে পারছেন না। গত বছর নিজের পঞ্চম উপন্যাস ‘গ্রিক লেসন’ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হলে স্পেনের এল-পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি।
১০ অক্টোবর ২০২৪