কামরুল হাসান
নতুন ফোন কিনে ঘরে আনার পর চোখ থেকে ঘুম উবে গেছে হাফিজুলের। গ্যালাক্সি এম০২ মডেলের স্মার্টফোন। কেনার পর কিছুদিন গেছে সামনের আর পেছনের প্রটেক্টর পছন্দ করতে। রং পছন্দ হয় তো দামে মেলে না। যেটার দাম কম, সেটা আবার পছন্দ হয় না। শেষমেশ মোতালিব প্লাজা থেকে লাল রঙের চায়নিজ প্রটেক্টর কিনে ফোনে লাগিয়েছে। ঘরে ফিরে একটু পরপর ফোনটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে, এটা-সেটা দেখছে, আবার রেখে দিচ্ছে। এখন ফোনটার দিকে তাকিয়ে থাকতে বেশ আরাম লাগছে হাফিজুলের।
মোবাইল ফোন নিয়ে এই মাতামাতির ব্যাপারটা হাফিজুল নিজেও ভেতরে-ভেতরে টের পাচ্ছে। মনে হচ্ছে, কোনো একটা নেশায় পড়েছে সে। হাতে আর মাত্র দুই দিন সময়, তারপরই মালিক আসবেন বিদেশ থেকে। তখন সকাল-রাত টানা ডিউটি করতে হবে। নাওয়া-খাওয়ার উপায় থাকবে না। গাড়ি চালানোর চাকরি যে কতটা কঠিন, হাফিজুল সেটা হাড়ে হাড়ে জানে। কিন্তু এ ছাড়া যে তার আর কোনো পথ নেই। তবে মালিক খুব ভালো। করোনার দেড় বছরে তিনি বসে বসে ড্রাইভারের বেতন দিয়ে গেছেন। সেই টাকার কিছু অংশ গ্রামের নতুন বউ ও মায়ের জন্য পাঠিয়েছিল হাফিজুল। সে সময় মালিক বেতন না দিলে কী দুর্দশাই না হতো! হাফিজুলের মনে পড়ে, করোনার সময় গরিব আর বড়লোকের ফারাকটা তার কাছে কী রকম উলঙ্গ হয়ে পড়েছিল। যার আছে তার অনেক আছে, যার নেই তার কিছুই নেই।
হাফিজুলের অনেক দিনের শখ একটা স্মার্টফোন কেনার। ইস্কাটনের কারিগর অ্যাপার্টমেন্টের সব ড্রাইভারের হাতে টাচফোন। শুধু হাফিজুলের হাতে নকিয়ার পুরোনো বোতাম লাগানো বেসিক ফোন। এই কমপ্লেক্সের ড্রাইভার মালেক এ নিয়ে খুব হাসাহাসি করে। লোকজনের সামনে ঠাট্টা করে বলে, ‘এই মাল তো জাদুঘরে ছিল, পাইলে ক্যামনে…।’ মালেকের বস কাস্টমস অফিসার আলহাজ হায়দার আলী নতুন মডেলের আইফোন ১০ কেনার পর তাঁর নিজের ব্যবহার করা পুরোনো ফোনটি ড্রাইভারকে দিয়েছেন। মালেকের তা নিয়ে গর্বের শেষ নেই। এসব শুনে হাফিজুলের মন খারাপ হয়। কিন্তু হাতে কোনো বাড়তি টাকা নেই। শেষ পর্যন্ত ঈদ বোনাসের সঙ্গে তুলে রাখা কিছু টাকা যোগ করে স্যামসাংয়ের এই সেটটা কিনেছে। ফোন নিয়ে মনের ভেতরে এত যে গোপন ব্যথা ছিল তা আগে বুঝতেই পারেনি হাফিজুল।
অ্যাপার্টমেন্টের শতাধিক ড্রাইভারের মধ্যে নজুকে সবাই ওস্তাদ মানে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ইমোর মতো অ্যাপের সবকিছু তার হাতের তালুতে। কারও ফোনে কোনো ঝামেলা হলেই নজুর ডাক পড়ে। নজু বিজ্ঞের মতো সমাধান করে দেয়, বিনিময়ে চা-বিড়ি। নতুন ফোন কেনার পর হাফিজুলও নজুর কাছে গিয়েছিল। নজু একটা ফেসবুক আইডি খুলে দিয়েছে। বলেছে, ‘আগে ফেসবুকটা ভালো কইরা শিখ্যা ল।’ সেই থেকে ফেসবুকই হাফিজুলের ধ্যান-জ্ঞান।
ফেসবুক আইডি খোলার সময় নজু প্রোফাইল পিকচার হিসেবে হাফিজুলের একটি ছবি সেঁটে দিয়েছে। তাতে তোবড়ানো গাল, খোঁচা খোঁচা দাড়ি দেখা যাচ্ছে। ছবি তোলার সময় আশপাশের ড্রাইভাররা বারণ করেছিল। বলেছিল, ‘গলির সেলুনে গিয়ে আগে শেভ কর, তারপর ছবি তুলিস।’ হাফিজুলের এখন খুব আফসোস হচ্ছে। গলির মুখের লাভলি হেয়ার ড্রেসারের নরসুন্দর রতনও সে কথা বলেছিল। রতনের কথা তখন শোনেনি হাফিজুল। এখন নিজেকে বেশ বোকা বোকা মনে হচ্ছে। তার ধারণা, এই ছবির কারণেই কেউ তাকে মেসেঞ্জারে নক করছে না। অথচ তার চেয়েও ভাঙা চেহারার অনেক ড্রাইভার প্রতিদিন নতুন নতুন চ্যাট করে। একজন তো ভিডিও চ্যাটও করে।
ড্রাইভাররা একে বলে মুরগি ধরা। রতন ড্রাইভার একদিন রেস্টরুমে বলেছিল, ভালো মুরগিগুলো রাতের বেলা সহজে ধরা দেয়। এরা হলো বড়লোকদের বউ-মেয়ে। রাতে বড়লোকেরা মদ গিলে বিছানায় মড়ার মতো পড়ে থাকে আর তাদের বউয়েরা অন্য লোকের সঙ্গে ফেসবুক-মেসেঞ্জারে চ্যাট করে। সেই চ্যাটের কথা মনে করলে ভেতরে কেমন যেন শিহরণ জাগে হাফিজুলের। তার মনে হয়, পৃথিবীটা যে এত সুন্দর, ফেসবুকে না এলে সেটা বুঝতেই পারত না।
গত দুই রাতে না ঘুমিয়ে মুরগি ধরার অনেক চেষ্টা করেছে হাফিজুল; কিন্তু কেউ তার ডাকে সাড়া দেয়নি। আজ রাতেও সে এভাবেই চেষ্টা করে যাবে, যদি কেউ আসে। সন্ধ্যা থেকে ক্রমাগত ফোন হাতিয়ে যাচ্ছে হাফিজুল। এতে কোনো ক্লান্তি নেই। এর মধ্যে হঠাৎ টপ করে একটি শব্দ হলো। হাফিজুল তার ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে, একটা কমেন্ট এসেছে। ‘সুনয়না’ নামের একজন লিখেছে, ‘দেখতে একদম শাকিব খান’। হাফিজুলের বুকটা ধপাস করে ওঠে।
সুনয়নার প্রোফাইল পিকচারে হাত ছোঁয়ায় হাফিজুল। এখানে কোনো মানুষ নেই, শুধু ফুলের ছবি। সুনয়না কেন নিজের ছবি না দিয়ে ফুলের ছবি দিল? হাফিজুলের খুব রাগ হয়। এই ফুলের ভেতর থেকে কীভাবে সে সুনয়নাকে বের করে আনবে?
ফুলের ছবি দেখতে দেখতে হাফিজুলের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। সকালে গ্রামের পথ ধরে হেঁটে স্কুলে যাওয়ার সময় তার বয়সী একটি মেয়ে রোজ ফুল তুলে আনত। ডালা ভরে জুঁই, বেলি আর জবা। মেয়েটির চলে যাওয়ার সময় তার পথের দিকে তাকিয়ে থাকত হাফিজুল। খুব ইচ্ছে করত তাকে নিজের সাইকেলের রডে তুলে এগিয়ে দেওয়ার। তারপর কোথাও একটু নিরিবিলি পেলে মেয়েটির কানের ডগায় আলতো করে কামড়ে দেবে। অলৌকিক উচ্চারণে সে বলে উঠবে, ধ্যাত। সাইকেল ছুটে যাবে কাশবনের ছায়াঘেরা নিরুদ্দেশের দিকে।
হাফিজুলের জীবনে এসবের কিছুই হয়নি। ছোটবেলায় তার প্রায় সব বন্ধু সাইকেলে করে স্কুলে গেলেও তাকে যেতে হতো পদাতিক সৈনিকের মতো, হেঁটে। তারপর একদিন অকালে বাপটাও মরে গেল। স্কুলে যাওয়া বন্ধ। বড় হয়ে সে এখন হাউজ ড্রাইভার। ফুলের সাজি হাতে বাড়িফেরা মেয়েটিকে সে আর কোনো দিনই ছুঁতে পারবে না।
আজ কোনো ডিউটি নেই হাফিজুলের। তবু সকাল সকাল মেস থেকে বেরিয়ে অ্যাপার্টমেন্টের নিচে এসেছে নজুকে ধরতে। অ্যাপার্টমেন্টের ট্যাক্সিওয়েতে স্টার্ট করা গাড়িতে বসে আছে নজু। তার হাতে সময় নেই। নজুর বস একটু পরই বের হবেন। কিন্তু হাফিজুল নাছোড়। তার ফোনটা দেখতেই হবে। নজু ফোনটা হাতে নিয়ে বলে, তোর সমস্যাডা কী? হাফিজুল বলে, ফেসবুকের এই সুনয়নাটা কে, খুঁজে দাও। নজু খানিকক্ষণ মোবাইল ঘাঁটে। কিছু পায় না। বলে, এই মুরগির তো কোনো কিছু পাই না মামা। প্রভাতি বিদ্যালয়ে পড়েছে, এটুকুই শুধু লেখা আছে। হাফিজুল তার পরও সুনয়নার সবকিছু জানতে চায়। নজু বিরক্ত হয়ে বলে, তুই এক কাজ কর, মোড়ের হাবিব ফার্মেসির রাহাতের কাছে যা। ওর কাছে ১৫-২০টা সিম আছে। সে সারা দিন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে। সব মুরগি তার হাতের তালুতে থাকে।
হাফিজুল কারিগর কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে ওষুধের দোকানে গিয়ে দেখে, রাহাত তখনো আসেনি। অন্য একজন কর্মচারী কেবল ঝাঁপ খুলে ঝাড়মোছ করছে। আধা ঘণ্টা পরে রাহাত আসে। হাফিজুলকে দেখেই রাহাত বলে ওঠে, ‘কী রে ড্রাইভার, তুই নাকি নতুন ফোন কিন্ছস?’ ‘হ, এই দ্যাখো’, বলেই ফোনটা রাহাতের হাতে দেয় হাফিজুল। তার কাছে জানতে চায়, ‘তুই কি সুনয়নাকে চিনস?’ রাহাত ফোনের ফেসবুক খুলে হাফিজুলের প্রোফাইল পিকচারের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে, ‘মামা, ছবিতে তো তোমাকে শাহরুখ খানের মতো লাগছে।’ হাফিজুল চমকে ওঠে। বলে কী? শাহরুখ খান! রাহাতের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিজের ছবি নিজেই দেখে। একবার, বারবার। তোবড়ানো গাল। খোঁচা খোঁচা দাড়ি। নিজেকে বেশ গ্ল্যামারাস লাগছে। সুনয়না তো ভুল বলেনি।
রাহাতের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে একটা বিড়ি ধরাল হাফিজুল। তারা মাথা কাজ করছে না। বিড়িতে কয়েকটা সুখটান দিয়েই সে সোজা হাঁটা দিল গলির আবুলের দোকানের দিকে। ইস্কাটন মসজিদের মুখে মুরাদের সঙ্গে দেখা। সবজি বিক্রেতা মুরাদ হাফিজুলকে দেখে একটা হাঁক দিয়ে বলে, ‘ড্রাইভার সাব, যাও কই?’ হাফিজুল দুবার বলে ‘সুনয়না, সুনয়না।’ মুরাদ কিছু না বুঝে বলে ওঠে, ‘কি রে, মাথাডা গেল নাকি! কী কস?’
হাফিজুলের ফোনে আবার টুস শব্দ। নতুন মেসেজ এসেছে। ফোনে হাত ছোঁয়াতেই একটা কমেন্ট ভেসে ওঠে, ‘চুম্মা’। লিখেছে ‘আলো তুমি আলেয়া’। হাফিজুল সঙ্গে সঙ্গে আলো তুমি আলেয়ার ছবিতে হাত ছোঁয়ায়। একটা পান্ডার ছবি ভেসে ওঠে। কিন্তু হাফিজুল দমে যায় না। এত সহজে দমবার পাত্র সে নয়।
ইস্কাটন মসজিদ মার্কেটের নিচতলায় নতুন একটি ফোনের দোকান। সস্তা ধরনের ফোনই বেশি। সেই দোকানের কর্মচারী বাবুল ফোনের সবকিছু জানে। সানমার অ্যাপার্টমেন্টের ড্রাইভার মইদুল সে কথা একদিন হাফিজুলকে বলেছিল। হাফিজুল যায় মইদুলের কাছে। সকালের দিকে দোকানে কোনো খদ্দের নেই। মইদুল দোকানে বসে আছে একা। কাছে গিয়ে ফোনটা দিয়ে জানতে চায়—‘মামা, দেখো তো, এই সুনয়নাটা কে? তাকে খুঁজে বের করে দাও।’ মইদুল তার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। বলে, ‘আরে বোকাচোদা, তুই রূপসী নুরজাহান, নিতুমনি, বিবি রাহেলা, সুন্দরী আয়েশা—এসব আইডি চিনস?’ হাফিজুল হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। মইদুলের দোকান থেকে বেরিয়ে পথে নামতেই আবার সুনয়নার কমেন্ট, ‘ঘুম কেড়ে নিয়েছ আমার।’ হাফিজুল কী করবে বুঝতে পারছে না। কারিগর অ্যাপার্টমেন্টের নিচতলায় ড্রাইভারদের বিশ্রামের যে ঘর আছে, সেখানে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে।
এই দুই দিনে কমপ্লেক্সটির সব ড্রাইভারের মুখে মুখে রটে গেছে, মুরগি ধরতে গিয়ে হাফিজুল পাগল হয়ে গেছে। সবাই তাকে এ নিয়ে ঠাট্টা-রসিকতা করছে। ড্রাইভারদের মধ্যে ফজল আলী আজেবাজে কথাও বলেছে। আজ সামনে পেয়ে বলে, ‘কি রে মামা, তুই নাকি মুরগি ধরতে গিয়া পাগল হইয়া গেছস! তা গেরামে যে বিয়াটা করছস, তার কী হইব?’ ফজলের কথা হাফিজুলের কানে ঢোকে না। কিছু না বলে সে বেরিয়ে যায়।
গাড়ির মালিকের স্ত্রী আজ তাকে একগাদা কাপড় ধরিয়ে দিয়েছে। সেগুলো এখনই কবিতা লন্ড্রিতে দিয়ে আসতে হবে। কাপড় হাতে নিয়ে গলিতে লন্ড্রির দিকে যেতে থাকে হাফিজুল। লন্ড্রির মালিক রঞ্জিত রায় খুবই ব্যস্ত। তার সামনে কাপড়ের স্তূপ। পাশের বাড়িতে নতুন এক ভাড়াটে এসেছে। তাদের জানালার সব পর্দা এসেছে। বিকেলের মধ্যে সেগুলো ডেলিভারি দিতে হবে। রঞ্জিত পর্দাগুলো ইস্ত্রি করছে মনোযোগ দিয়ে। হাফিজুল দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু রঞ্জিতের চোখ গরম ইস্ত্রির দিকে। এ সময় কুরিয়ারের পার্সেল হাতে এক তরুণ এসে জানতে চায়, ‘এখানে সুনয়না রায় নামে কেউ আছেন? তার নামে পার্সেল আছে।’ রঞ্জিত কুরিয়ারের ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘সে তো আমার বউ। কী আছে, দাও।’
নামটা শুনেই চমকে ওঠে হাফিজুল। কী নাম—সুনয়না? বাকি আর কিছু না শুনেই সে দৌড় দেয়। মনে মনে ভাবে, রঞ্জিতের স্ত্রী তাকে লিখেছে, ‘শাকিব খানের মতো লাগছে।’ এ কথা বিশ্বাসই হয় না হাফিজুলের। রঞ্জিতের স্ত্রীকে একদিন লন্ড্রিতে দেখেছিল সে। রূপ যেন গলে পড়ে। সুন্দরী বলে দেমাগে কারও সঙ্গে কথা বলে না। সেই সুনয়না তাকে নক করেছে। কাপড়ের স্লিপটা হাতে নিয়ে দৌড়াতে থাকে হাফিজুল। দৌড়াতে দৌড়াতে চলে যায় গলির মাস্টারের মুদি দোকানে। দোকানের ছেলেটিকে বলে, ‘মামা, সুনয়নার খোঁজ পাইছি।’ দোকানের ছেলেটা হাঁ করে শুনে বলে, ‘কার খোঁজ?’ হাফিজুল হেসে বলে, ‘ও তুমি বুঝবা না। আমাকে একটা দামি সাবান আর মিনি শ্যাম্পু দাও।’ এরপর চলে যায় ওষুধের দোকানের রাহাতের কাছে। তাকে বলে, ‘তুই নাকি ওই সব ট্যাবলেট বিক্রি করস? দে আমারে এক পাতা।’ রাহাত খুব অবাক হয়। হাফিজুল আরও অবাক। তার মোবাইল ফোনে একের পর এক কমেন্ট আসছে, ‘আজ কিছু হতে চলছে, বুক জ্বলে যায়, ঢেলে দেব...।’
ওষুধের দোকান থেকে বেরোতেই হাফিজুলের ফোন বেজে ওঠে। স্ত্রী লুৎফার ফোন। ফোনের দিকে তাকায় হাফিজুল। ফোনটা বেজেই চলেছে। এখন লুৎফার ফোন ধরার কোনো ইচ্ছে নেই হাফিজুলের। ফোনটা হাতে নিয়ে কমপ্লেক্সের দিকে দৌড়াতে থাকে। এত দিনে সত্যিকারের মুরগি পেয়েছে। দ্রুত পা চালিয়ে কারিগর অ্যাপার্টমেন্টের দিকে যেতে থাকে। সেখানে ড্রাইভারদের বিশ্রামাগারে বসে সুনয়নার সঙ্গে সুখের সাগরে ভাসবে।
হাফিজুলের মনে হচ্ছে, সে হাঁটছে না, দৌড়াচ্ছে না—উড়ছে, হাওয়ায় ভাসছে। ভেসে ভেসে কোনো এক অজানার দিকে চলে যাচ্ছে। যে পথ আগে সে কখনো চোখেও দেখেনি।
নতুন ফোন কিনে ঘরে আনার পর চোখ থেকে ঘুম উবে গেছে হাফিজুলের। গ্যালাক্সি এম০২ মডেলের স্মার্টফোন। কেনার পর কিছুদিন গেছে সামনের আর পেছনের প্রটেক্টর পছন্দ করতে। রং পছন্দ হয় তো দামে মেলে না। যেটার দাম কম, সেটা আবার পছন্দ হয় না। শেষমেশ মোতালিব প্লাজা থেকে লাল রঙের চায়নিজ প্রটেক্টর কিনে ফোনে লাগিয়েছে। ঘরে ফিরে একটু পরপর ফোনটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে, এটা-সেটা দেখছে, আবার রেখে দিচ্ছে। এখন ফোনটার দিকে তাকিয়ে থাকতে বেশ আরাম লাগছে হাফিজুলের।
মোবাইল ফোন নিয়ে এই মাতামাতির ব্যাপারটা হাফিজুল নিজেও ভেতরে-ভেতরে টের পাচ্ছে। মনে হচ্ছে, কোনো একটা নেশায় পড়েছে সে। হাতে আর মাত্র দুই দিন সময়, তারপরই মালিক আসবেন বিদেশ থেকে। তখন সকাল-রাত টানা ডিউটি করতে হবে। নাওয়া-খাওয়ার উপায় থাকবে না। গাড়ি চালানোর চাকরি যে কতটা কঠিন, হাফিজুল সেটা হাড়ে হাড়ে জানে। কিন্তু এ ছাড়া যে তার আর কোনো পথ নেই। তবে মালিক খুব ভালো। করোনার দেড় বছরে তিনি বসে বসে ড্রাইভারের বেতন দিয়ে গেছেন। সেই টাকার কিছু অংশ গ্রামের নতুন বউ ও মায়ের জন্য পাঠিয়েছিল হাফিজুল। সে সময় মালিক বেতন না দিলে কী দুর্দশাই না হতো! হাফিজুলের মনে পড়ে, করোনার সময় গরিব আর বড়লোকের ফারাকটা তার কাছে কী রকম উলঙ্গ হয়ে পড়েছিল। যার আছে তার অনেক আছে, যার নেই তার কিছুই নেই।
হাফিজুলের অনেক দিনের শখ একটা স্মার্টফোন কেনার। ইস্কাটনের কারিগর অ্যাপার্টমেন্টের সব ড্রাইভারের হাতে টাচফোন। শুধু হাফিজুলের হাতে নকিয়ার পুরোনো বোতাম লাগানো বেসিক ফোন। এই কমপ্লেক্সের ড্রাইভার মালেক এ নিয়ে খুব হাসাহাসি করে। লোকজনের সামনে ঠাট্টা করে বলে, ‘এই মাল তো জাদুঘরে ছিল, পাইলে ক্যামনে…।’ মালেকের বস কাস্টমস অফিসার আলহাজ হায়দার আলী নতুন মডেলের আইফোন ১০ কেনার পর তাঁর নিজের ব্যবহার করা পুরোনো ফোনটি ড্রাইভারকে দিয়েছেন। মালেকের তা নিয়ে গর্বের শেষ নেই। এসব শুনে হাফিজুলের মন খারাপ হয়। কিন্তু হাতে কোনো বাড়তি টাকা নেই। শেষ পর্যন্ত ঈদ বোনাসের সঙ্গে তুলে রাখা কিছু টাকা যোগ করে স্যামসাংয়ের এই সেটটা কিনেছে। ফোন নিয়ে মনের ভেতরে এত যে গোপন ব্যথা ছিল তা আগে বুঝতেই পারেনি হাফিজুল।
অ্যাপার্টমেন্টের শতাধিক ড্রাইভারের মধ্যে নজুকে সবাই ওস্তাদ মানে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ইমোর মতো অ্যাপের সবকিছু তার হাতের তালুতে। কারও ফোনে কোনো ঝামেলা হলেই নজুর ডাক পড়ে। নজু বিজ্ঞের মতো সমাধান করে দেয়, বিনিময়ে চা-বিড়ি। নতুন ফোন কেনার পর হাফিজুলও নজুর কাছে গিয়েছিল। নজু একটা ফেসবুক আইডি খুলে দিয়েছে। বলেছে, ‘আগে ফেসবুকটা ভালো কইরা শিখ্যা ল।’ সেই থেকে ফেসবুকই হাফিজুলের ধ্যান-জ্ঞান।
ফেসবুক আইডি খোলার সময় নজু প্রোফাইল পিকচার হিসেবে হাফিজুলের একটি ছবি সেঁটে দিয়েছে। তাতে তোবড়ানো গাল, খোঁচা খোঁচা দাড়ি দেখা যাচ্ছে। ছবি তোলার সময় আশপাশের ড্রাইভাররা বারণ করেছিল। বলেছিল, ‘গলির সেলুনে গিয়ে আগে শেভ কর, তারপর ছবি তুলিস।’ হাফিজুলের এখন খুব আফসোস হচ্ছে। গলির মুখের লাভলি হেয়ার ড্রেসারের নরসুন্দর রতনও সে কথা বলেছিল। রতনের কথা তখন শোনেনি হাফিজুল। এখন নিজেকে বেশ বোকা বোকা মনে হচ্ছে। তার ধারণা, এই ছবির কারণেই কেউ তাকে মেসেঞ্জারে নক করছে না। অথচ তার চেয়েও ভাঙা চেহারার অনেক ড্রাইভার প্রতিদিন নতুন নতুন চ্যাট করে। একজন তো ভিডিও চ্যাটও করে।
ড্রাইভাররা একে বলে মুরগি ধরা। রতন ড্রাইভার একদিন রেস্টরুমে বলেছিল, ভালো মুরগিগুলো রাতের বেলা সহজে ধরা দেয়। এরা হলো বড়লোকদের বউ-মেয়ে। রাতে বড়লোকেরা মদ গিলে বিছানায় মড়ার মতো পড়ে থাকে আর তাদের বউয়েরা অন্য লোকের সঙ্গে ফেসবুক-মেসেঞ্জারে চ্যাট করে। সেই চ্যাটের কথা মনে করলে ভেতরে কেমন যেন শিহরণ জাগে হাফিজুলের। তার মনে হয়, পৃথিবীটা যে এত সুন্দর, ফেসবুকে না এলে সেটা বুঝতেই পারত না।
গত দুই রাতে না ঘুমিয়ে মুরগি ধরার অনেক চেষ্টা করেছে হাফিজুল; কিন্তু কেউ তার ডাকে সাড়া দেয়নি। আজ রাতেও সে এভাবেই চেষ্টা করে যাবে, যদি কেউ আসে। সন্ধ্যা থেকে ক্রমাগত ফোন হাতিয়ে যাচ্ছে হাফিজুল। এতে কোনো ক্লান্তি নেই। এর মধ্যে হঠাৎ টপ করে একটি শব্দ হলো। হাফিজুল তার ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে, একটা কমেন্ট এসেছে। ‘সুনয়না’ নামের একজন লিখেছে, ‘দেখতে একদম শাকিব খান’। হাফিজুলের বুকটা ধপাস করে ওঠে।
সুনয়নার প্রোফাইল পিকচারে হাত ছোঁয়ায় হাফিজুল। এখানে কোনো মানুষ নেই, শুধু ফুলের ছবি। সুনয়না কেন নিজের ছবি না দিয়ে ফুলের ছবি দিল? হাফিজুলের খুব রাগ হয়। এই ফুলের ভেতর থেকে কীভাবে সে সুনয়নাকে বের করে আনবে?
ফুলের ছবি দেখতে দেখতে হাফিজুলের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। সকালে গ্রামের পথ ধরে হেঁটে স্কুলে যাওয়ার সময় তার বয়সী একটি মেয়ে রোজ ফুল তুলে আনত। ডালা ভরে জুঁই, বেলি আর জবা। মেয়েটির চলে যাওয়ার সময় তার পথের দিকে তাকিয়ে থাকত হাফিজুল। খুব ইচ্ছে করত তাকে নিজের সাইকেলের রডে তুলে এগিয়ে দেওয়ার। তারপর কোথাও একটু নিরিবিলি পেলে মেয়েটির কানের ডগায় আলতো করে কামড়ে দেবে। অলৌকিক উচ্চারণে সে বলে উঠবে, ধ্যাত। সাইকেল ছুটে যাবে কাশবনের ছায়াঘেরা নিরুদ্দেশের দিকে।
হাফিজুলের জীবনে এসবের কিছুই হয়নি। ছোটবেলায় তার প্রায় সব বন্ধু সাইকেলে করে স্কুলে গেলেও তাকে যেতে হতো পদাতিক সৈনিকের মতো, হেঁটে। তারপর একদিন অকালে বাপটাও মরে গেল। স্কুলে যাওয়া বন্ধ। বড় হয়ে সে এখন হাউজ ড্রাইভার। ফুলের সাজি হাতে বাড়িফেরা মেয়েটিকে সে আর কোনো দিনই ছুঁতে পারবে না।
আজ কোনো ডিউটি নেই হাফিজুলের। তবু সকাল সকাল মেস থেকে বেরিয়ে অ্যাপার্টমেন্টের নিচে এসেছে নজুকে ধরতে। অ্যাপার্টমেন্টের ট্যাক্সিওয়েতে স্টার্ট করা গাড়িতে বসে আছে নজু। তার হাতে সময় নেই। নজুর বস একটু পরই বের হবেন। কিন্তু হাফিজুল নাছোড়। তার ফোনটা দেখতেই হবে। নজু ফোনটা হাতে নিয়ে বলে, তোর সমস্যাডা কী? হাফিজুল বলে, ফেসবুকের এই সুনয়নাটা কে, খুঁজে দাও। নজু খানিকক্ষণ মোবাইল ঘাঁটে। কিছু পায় না। বলে, এই মুরগির তো কোনো কিছু পাই না মামা। প্রভাতি বিদ্যালয়ে পড়েছে, এটুকুই শুধু লেখা আছে। হাফিজুল তার পরও সুনয়নার সবকিছু জানতে চায়। নজু বিরক্ত হয়ে বলে, তুই এক কাজ কর, মোড়ের হাবিব ফার্মেসির রাহাতের কাছে যা। ওর কাছে ১৫-২০টা সিম আছে। সে সারা দিন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে। সব মুরগি তার হাতের তালুতে থাকে।
হাফিজুল কারিগর কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে ওষুধের দোকানে গিয়ে দেখে, রাহাত তখনো আসেনি। অন্য একজন কর্মচারী কেবল ঝাঁপ খুলে ঝাড়মোছ করছে। আধা ঘণ্টা পরে রাহাত আসে। হাফিজুলকে দেখেই রাহাত বলে ওঠে, ‘কী রে ড্রাইভার, তুই নাকি নতুন ফোন কিন্ছস?’ ‘হ, এই দ্যাখো’, বলেই ফোনটা রাহাতের হাতে দেয় হাফিজুল। তার কাছে জানতে চায়, ‘তুই কি সুনয়নাকে চিনস?’ রাহাত ফোনের ফেসবুক খুলে হাফিজুলের প্রোফাইল পিকচারের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে, ‘মামা, ছবিতে তো তোমাকে শাহরুখ খানের মতো লাগছে।’ হাফিজুল চমকে ওঠে। বলে কী? শাহরুখ খান! রাহাতের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিজের ছবি নিজেই দেখে। একবার, বারবার। তোবড়ানো গাল। খোঁচা খোঁচা দাড়ি। নিজেকে বেশ গ্ল্যামারাস লাগছে। সুনয়না তো ভুল বলেনি।
রাহাতের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে একটা বিড়ি ধরাল হাফিজুল। তারা মাথা কাজ করছে না। বিড়িতে কয়েকটা সুখটান দিয়েই সে সোজা হাঁটা দিল গলির আবুলের দোকানের দিকে। ইস্কাটন মসজিদের মুখে মুরাদের সঙ্গে দেখা। সবজি বিক্রেতা মুরাদ হাফিজুলকে দেখে একটা হাঁক দিয়ে বলে, ‘ড্রাইভার সাব, যাও কই?’ হাফিজুল দুবার বলে ‘সুনয়না, সুনয়না।’ মুরাদ কিছু না বুঝে বলে ওঠে, ‘কি রে, মাথাডা গেল নাকি! কী কস?’
হাফিজুলের ফোনে আবার টুস শব্দ। নতুন মেসেজ এসেছে। ফোনে হাত ছোঁয়াতেই একটা কমেন্ট ভেসে ওঠে, ‘চুম্মা’। লিখেছে ‘আলো তুমি আলেয়া’। হাফিজুল সঙ্গে সঙ্গে আলো তুমি আলেয়ার ছবিতে হাত ছোঁয়ায়। একটা পান্ডার ছবি ভেসে ওঠে। কিন্তু হাফিজুল দমে যায় না। এত সহজে দমবার পাত্র সে নয়।
ইস্কাটন মসজিদ মার্কেটের নিচতলায় নতুন একটি ফোনের দোকান। সস্তা ধরনের ফোনই বেশি। সেই দোকানের কর্মচারী বাবুল ফোনের সবকিছু জানে। সানমার অ্যাপার্টমেন্টের ড্রাইভার মইদুল সে কথা একদিন হাফিজুলকে বলেছিল। হাফিজুল যায় মইদুলের কাছে। সকালের দিকে দোকানে কোনো খদ্দের নেই। মইদুল দোকানে বসে আছে একা। কাছে গিয়ে ফোনটা দিয়ে জানতে চায়—‘মামা, দেখো তো, এই সুনয়নাটা কে? তাকে খুঁজে বের করে দাও।’ মইদুল তার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। বলে, ‘আরে বোকাচোদা, তুই রূপসী নুরজাহান, নিতুমনি, বিবি রাহেলা, সুন্দরী আয়েশা—এসব আইডি চিনস?’ হাফিজুল হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। মইদুলের দোকান থেকে বেরিয়ে পথে নামতেই আবার সুনয়নার কমেন্ট, ‘ঘুম কেড়ে নিয়েছ আমার।’ হাফিজুল কী করবে বুঝতে পারছে না। কারিগর অ্যাপার্টমেন্টের নিচতলায় ড্রাইভারদের বিশ্রামের যে ঘর আছে, সেখানে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে।
এই দুই দিনে কমপ্লেক্সটির সব ড্রাইভারের মুখে মুখে রটে গেছে, মুরগি ধরতে গিয়ে হাফিজুল পাগল হয়ে গেছে। সবাই তাকে এ নিয়ে ঠাট্টা-রসিকতা করছে। ড্রাইভারদের মধ্যে ফজল আলী আজেবাজে কথাও বলেছে। আজ সামনে পেয়ে বলে, ‘কি রে মামা, তুই নাকি মুরগি ধরতে গিয়া পাগল হইয়া গেছস! তা গেরামে যে বিয়াটা করছস, তার কী হইব?’ ফজলের কথা হাফিজুলের কানে ঢোকে না। কিছু না বলে সে বেরিয়ে যায়।
গাড়ির মালিকের স্ত্রী আজ তাকে একগাদা কাপড় ধরিয়ে দিয়েছে। সেগুলো এখনই কবিতা লন্ড্রিতে দিয়ে আসতে হবে। কাপড় হাতে নিয়ে গলিতে লন্ড্রির দিকে যেতে থাকে হাফিজুল। লন্ড্রির মালিক রঞ্জিত রায় খুবই ব্যস্ত। তার সামনে কাপড়ের স্তূপ। পাশের বাড়িতে নতুন এক ভাড়াটে এসেছে। তাদের জানালার সব পর্দা এসেছে। বিকেলের মধ্যে সেগুলো ডেলিভারি দিতে হবে। রঞ্জিত পর্দাগুলো ইস্ত্রি করছে মনোযোগ দিয়ে। হাফিজুল দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু রঞ্জিতের চোখ গরম ইস্ত্রির দিকে। এ সময় কুরিয়ারের পার্সেল হাতে এক তরুণ এসে জানতে চায়, ‘এখানে সুনয়না রায় নামে কেউ আছেন? তার নামে পার্সেল আছে।’ রঞ্জিত কুরিয়ারের ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘সে তো আমার বউ। কী আছে, দাও।’
নামটা শুনেই চমকে ওঠে হাফিজুল। কী নাম—সুনয়না? বাকি আর কিছু না শুনেই সে দৌড় দেয়। মনে মনে ভাবে, রঞ্জিতের স্ত্রী তাকে লিখেছে, ‘শাকিব খানের মতো লাগছে।’ এ কথা বিশ্বাসই হয় না হাফিজুলের। রঞ্জিতের স্ত্রীকে একদিন লন্ড্রিতে দেখেছিল সে। রূপ যেন গলে পড়ে। সুন্দরী বলে দেমাগে কারও সঙ্গে কথা বলে না। সেই সুনয়না তাকে নক করেছে। কাপড়ের স্লিপটা হাতে নিয়ে দৌড়াতে থাকে হাফিজুল। দৌড়াতে দৌড়াতে চলে যায় গলির মাস্টারের মুদি দোকানে। দোকানের ছেলেটিকে বলে, ‘মামা, সুনয়নার খোঁজ পাইছি।’ দোকানের ছেলেটা হাঁ করে শুনে বলে, ‘কার খোঁজ?’ হাফিজুল হেসে বলে, ‘ও তুমি বুঝবা না। আমাকে একটা দামি সাবান আর মিনি শ্যাম্পু দাও।’ এরপর চলে যায় ওষুধের দোকানের রাহাতের কাছে। তাকে বলে, ‘তুই নাকি ওই সব ট্যাবলেট বিক্রি করস? দে আমারে এক পাতা।’ রাহাত খুব অবাক হয়। হাফিজুল আরও অবাক। তার মোবাইল ফোনে একের পর এক কমেন্ট আসছে, ‘আজ কিছু হতে চলছে, বুক জ্বলে যায়, ঢেলে দেব...।’
ওষুধের দোকান থেকে বেরোতেই হাফিজুলের ফোন বেজে ওঠে। স্ত্রী লুৎফার ফোন। ফোনের দিকে তাকায় হাফিজুল। ফোনটা বেজেই চলেছে। এখন লুৎফার ফোন ধরার কোনো ইচ্ছে নেই হাফিজুলের। ফোনটা হাতে নিয়ে কমপ্লেক্সের দিকে দৌড়াতে থাকে। এত দিনে সত্যিকারের মুরগি পেয়েছে। দ্রুত পা চালিয়ে কারিগর অ্যাপার্টমেন্টের দিকে যেতে থাকে। সেখানে ড্রাইভারদের বিশ্রামাগারে বসে সুনয়নার সঙ্গে সুখের সাগরে ভাসবে।
হাফিজুলের মনে হচ্ছে, সে হাঁটছে না, দৌড়াচ্ছে না—উড়ছে, হাওয়ায় ভাসছে। ভেসে ভেসে কোনো এক অজানার দিকে চলে যাচ্ছে। যে পথ আগে সে কখনো চোখেও দেখেনি।
চারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
৭ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
১৪ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
১৪ দিন আগেদ্য ভেজিটেরিয়ানের পর হান কাঙের পরের উপন্যাস ছিল ‘দ্য উইন্ড ব্লোজ, গো’। এই উপন্যাস লেখার সময়ই ঘটে বিপত্তি! হান অনুভব করেন তিনি আর লিখতে পারছেন না। গত বছর নিজের পঞ্চম উপন্যাস ‘গ্রিক লেসন’ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হলে স্পেনের এল-পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি।
১০ অক্টোবর ২০২৪